রঙ্ধনু আকাশ (১০ম পর্ব)

ইঞ্জা ২৮ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার, ০৯:০৪:২৩অপরাহ্ন গল্প ২৭ মন্তব্য

চলো অনেক রাত হয়ে গেছে, রুদ্র বললো।

কি বলো, বলেই ঘড়ি দেখলো অনিলা, হায় হায় সত্যি তো রাত এগারোটা বেজে গেছে। 

হাঁ চলো তোমাকে বাসায় পোঁছে দিয়ে তারপর বাসায় ফিরবো।

এসময় রুদ্রর ফোন বেজে উঠলে রুদ্র ডায়ালে দেখে রিসিভ করে বললো, মম বলো, হাঁ একটু বাইরে আছি, ঘন্টা খানেকের মধ্যে পোঁছে যাবো, হাঁ তোমরা খেয়ে নাও, রাখছি।

ফোন ডিসকানেট করে ওয়েটারকে ইশারা করলো চেক (বিল) দেওয়ার জন্য, ওয়েটার বিল নিয়ে এলে রুদ্র কার্ড দিলো।

কিছু সময়ের মধ্যে ওয়েটার কার্ড পাঞ্চ করে স্লিপ নিয়ে ফিরে আসলে রুদ্র সাইন করে ওকে টিপস দিয়ে অনিলাকে বললো, চলো। 

দুজনেই হোটেল থেকে বেরিয়ে পার্কিংয়ে এলে রুদ্র চাবিটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো, নাও তোমার শখ মিটাও।

অনিলার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, ফিক করে হেসে দিয়ে চাবি নিলো।

গাড়িতে উঠে সুইচে হালকা চাপ দিতেই জিটিআর স্টার্ট হলে, অনিলা এক্সেলেটরে চাপ বাড়লো, ওরা হোটেল থেকে বেড়িয়ে গুলশান একের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলো।

ভালোই চালাতে পারো দেখছি, রুদ্র বললো।

আমি গাড়ি চালাচ্ছি প্রায় আঠারো বছর বয়স থেকে। 

বেশ বেশ। 

অনিলার বাসার সামনে এসে দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে এলো, অনিলা বললো, ধন্যবাদ তোমাকে আজকের রাতটা আমার স্বরণীয় হয়ে থাকবে আমার।

 

ভালো লেগেছে তোমার? 

অবশ্যই ভালো লেগেছে, আমি অনেকদিন পর এমন একটা সন্ধ্যা পেলাম যেখানে একজন নায়ক, রক্ষাকর্তা, ফাইটার, বন্ধু পেলাম, সত্যি স্মরণীয় একটা সময় কাটালাম আমি, জানিনা এমন দিন আমার জীবনে আর আসবে কিনা? 

কেন এমন বলছো, জীবন তো আর ফুরিয়ে যায়নি।

না ফুরিয়ে যায়নি তা সত্য, কিন্তু আজকের মতো মুক্ত বিহঙ্গ হিসাবে নয়। 

মানে কি?

আসলে আগামী মাসে আমার বিয়ে, ছেলে আমেরিকাতে সেটেল্ড বলেই ওরা দ্রুত বিয়ে চাইছে।

কি বলো, এতো তাড়াতাড়ি, রুদ্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো। 

মনমরা হয়ে গেলো অনিলা, বললো বাবাই ঠিক করেছেন। 

ওহ আই সি, এনিওয়ে বেস্ট উইশেস পর ইউর কনজুগাল লাইফ, আসি আজ।

শুভরাত্রি। 

শুভরাত্রি, বলে রুদ্র বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলো।

মনমরা হয়ে অনিলা নিজের ঘরে প্রবেশ করে সোজা নিজ রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো, মনে মিনে আজকের কথা মনে করে স্মৃতিচারণ করতে লাগলো।

 

পনেরোদিন পরঃ

 

রুদ্র চিনুকে নিয়ে বসেছে উলেন সোয়েটারের অর্ডারের ব্যাপারে, কিভাবে কাজ শুরু হবে, কতদিন লাগবে, খরচা কি হচ্ছে এইসব নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে, রিসেপশনিস্ট কল দিয়ে জানালো চেয়ারপারসন ম্যাডাম এসেছেন, উনার রুমে গেছেন। 

আচ্ছা ঠিক আছে, বলে ফোন রেখে চিনুকে বললো, টাওয়ালের কি অবস্থা?

আড়াই লাখ পিছ হয়ে গেছে, এখন প্যাকেজিং চলছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই চট্টগ্রাম পোর্টে পোঁছে যাবে। 

গুড, তাহলে তুই এক্সপোর্ট ম্যানেজারের সাথে সব কাগজপত্র ঠিক করে নে, শিপমেন্টের জন্য ব্যবস্থা নে।

১১৮তে কল দিয়ে ডেকে নিস, আমি আসছি মমের কেবিন থেকে।

আন্টি এসেছেন?

হাঁ।

তাহলে যাওয়ার সময় পরিচিত হয়ে নেবো।

আচ্ছা হোস, আমি আসছি, বলে রুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, মায়ের কেবিনে নক করে প্রবেশ করলো।

রুদ্র আয়, বস। 

মম তুমি আসবে বললে নাতো?

আজ ফ্রি ছিলাম বলেই আসলাম, তা কি অবস্থা?

আজ ব্যাংকের পার্সিয়াল পেমেন্ট জমা হচ্ছে, চেক নিয়ে সকালেই লোক চলে গেছে। 

খুব ভালো, টেক্সটাইলের কি অবস্থা?

ভালোই কাজ এগুচ্ছে, আগামী সপ্তাহে শিপমেন্ট আছে, তা নিয়েই কাজ চলছে, আর হাঁ টেক্সটাইল বিজনেসের আলাদা নামে রেজিস্ট্রেশন করেছি।

খুব ভালো করেছিস, কফি দিতে বলতো। 

 

কিছুক্ষণের মধ্যে কফি আসলে দুজনেই চুমুক দিলো কফিতে।

মম কিছু ডাকু মেন্ট  সাইন লাগবে তোমার, নিয়ে আসতে বলি? 

উনি মাথা নেড়ে বললেন ঠিক আছে, রুদ্র ফিন্যান্স ডিরেকটরকে বললো ডকুমেন্টস গুলো পাঠিয়ে দিতে।

নীলটা তোর পাশে থাকলে কত উপকারই হতো।

রুদ্রও ভাবুক হয়ে গেলো, কিছুক্ষণ পর বললো, মম আমি ভাবছিলাম ভাইয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভাবী সহ সুমীর সাথে আমেরিকা পাঠাই, এতে নিশ্চয় ভাইয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরবে। 

এখন এই অবস্থায় ওকে পাঠানো মানে খরচা না? 

ও নিয়ে চিন্তা করোনা মম, ও আমি সামাল দেবো। 

সামাল দিবি ঠিক আছে কিন্তু যা করবি বুঝে শুনে, এতে যেন আমাদের ব্যবসার সমস্যা না হয়। 

ঠিক আছে মম, তুমি চিন্তা করোনা।

ইন্টারকমে কল এলে রুদ্র হাত বাড়িয়ে নিজেই রিসিভ করলো।

রিসেপশনিস্ট বললো, স্যার এবি ব্যাংকের এমডি স্যার এসেছেন।

ওকে চেয়ারম্যানের কেবিনে পাঠিয়ে দাও। 

সিউর স্যার। 

 

দরজায় নক শুনে রুদ্র নিজেই উঠে গিয়ে দরজা খুলে ধরে সালাম দিয়ে বললো, স্যার আসুন প্লিজ। 

সুলতান সাহেব রুমে প্রবেশ করলে রুদ্র বললো, স্যার উনি আমার মা আর মম উনি এবি ব্যাংকের এমডি স্যার, উনার মেয়েই অনিলা। 

সালাম ভাই সাহেব, আসুন বসুন। 

সালাম ভাবী, আপনার সাথে পরিচিত হয়েছিলাম কক্সবাজারে আপনি আর শফিক ভাই বেড়াতে গিয়েছিলেন, সাথে আমি আমার ওয়াইফ সহ ছিলাম। 

আরেহ সুলতান ভাই নাকি, আমি আসলেই চিনতে পারিনি, তা প্রায় পঁচিশ ছাব্বিশ বছর হবে।

আসলে না চেনারই কথা, দাঁড়ি রেখেছি, সাথে বয়সও হচ্ছে।  

ভাই সাহেব বসেন প্লিজ, রুদ্র আমাদের জন্য কিছু স্ন্যাক্স আনতে বল। 

না ভাবী আমি শুধু কফি খাবো।। রুদ্র ইন্টারকমে কফি আর বিস্কিট দিতে বললো। 

তা বলুন কেমন আছেন, অনিলা আপনার মেয়ে জানতাম না, অবশ্য ওর মুখে শুনলাম ভাবী নেই, ইশ কি যে ভালো ছিলেন উনি, আমাদের সাথে যখন দেখা হলো তখন সন্তান সম্ভবা ছিলেন উনি। 

হাঁ অনিলার অপেক্ষায় ছিলাম আমরা, ওই আমাদের একমাত্র সন্তান। 

 

মেয়েটা আমার বেশ লক্ষ্মী, রুদ্রর মা বললেন। 

আজ ওর ব্যাপারেই এলাম, আপনাকে পেয়ে ভালোই হলো ভাবী, আগামী সপ্তাহের আট তারিখে ওর বিয়ে।

কি বলেন ভাই, মাশা আল্লাহ, এতো সুখবর, এই রুদ্র মিষ্টি আনা, সবাই মিষ্টি মুখ করি। 

ভাবী এখন নয়, আমি দাওয়াত দিতে এসেছি, চট্টগ্রামেই বিয়ে হবে, ক্লাব 24 এ সাত তারিখ গায়ে হলুদ, আট তারিখ বিয়ে হবে চিট্টাগাং ক্লাবে।

খুব ভালো আয়োজন করছেন ভাই।

আপনারা সবাই এলে আমি খুব খুশি হবো ভাবী, রুদ্র তুমি তোমার মাকে সহ ঘরের সবাইকে নিয়ে অবশ্যই  আসতে হবে। 

ভাই সাহেব, আমি হয়ত আসতে পারবোনা, রুদ্র যাবে। 

ভাবী, অনিলা আমার মা মরা মেয়ে, আপনি যদি নিজে এসে দোয়া করতেন আমি খুব খুশি হতাম। 

রুদ্রর মা হেসে বললো, তাহলে তো যেতেই হয়, ঠিক আছে ভাই সাহেব, আমরা নিশ্চয় আসবো। 

খুব খুশি হলাম ভাবী।

পিয়ন এসে কফি দিয়ে গেলে উনি কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন, রুদ্র আজকে তোমার পেমেন্ট জমা হয়েছে দেখলাম।

 

জ্বী স্যার, আজই জমা দিলাম। 

দেখলাম আজ, খুব ভালো করছো তুমি, তুমি একটা এপ্লিকেশন দিয়ে দাও যেন শফিক ভাইয়ের করা লোনটা তোমার নামে বা তোমাদের কোম্পানির নামে করে দিতে লেখো। 

ঠিক আছে স্যার, আমি আগামীকালই পাঠিয়ে দেবো, তা কবে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম? 

আমি আগামী শুক্রবার চলে যাচ্ছি, একেবারে বিয়ের সকল আনুষাঙ্গিক প্রোগ্রাম শেষ করেই আসবো, এরপর তোমার লোনটা করে দেবো। 

আন্তরিক ধন্যবাদ স্যার। 

ভাবী তাহলে উঠছি, বিয়েতে চট্টগ্রামে আসলে আমি খুব খুশি হবো। 

জ্বি ভাই সাহেব,  নিশ্চয় দেখা হবে। 

আসি এখন, সালামালেকুম। 

ওয়া আলাইকুম আসসালাম।  

রুদ্র নিজে গেলো এগিয়ে দিতে, কিছুক্ষণ পর ফিরে আসলো। 

মম তোমার সাথে চিনুকে পরিচিত করে দিই।

তোর বন্ধুটা? 

হাঁ। 

ঠিক আছে, আসতে বল। 

কিছুক্ষণের মধ্যেই চিনু এলো, এসে আদাব জানালো। 

আদাব বসো। 

আন্টি ভালো আছেন?

হাঁ ভালো আছি, তোমাদের কাজকর্ম কেমন চলছে?

জ্বি আন্টি ভালোই শুরু করলাম, এই মাসের পঁচিশ তারিখ সুতার অর্ডার পাবো আমরা, প্রায় পঞ্চাশ কোটি টাকার অর্ডার হবে। 

ভালো তো, গুড গোয়িং। 

ধন্যবাদ।  

 

...... চলবে। 

ছবিঃ কালেক্টেড।

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ