রঙ্ধনু আকাশ (১১তম পর্ব)

ইঞ্জা ৭ আগস্ট ২০২০, শুক্রবার, ০৯:৩২:৩৩অপরাহ্ন গল্প ৩৪ মন্তব্য

এক সপ্তাহ পরঃ

ভাবী, ভাবী তোমরা রেডি? হাঁক দিলো রুদ্র, সুমিকে ব্যাগ নিয়ে আসতে দেখে বললো, তুই রেডি?

হাঁ ভাইয়া, আমি ভাইয়া ভাবীদের নিয়ে আসছি, তুমি যাও।

আচ্ছা আমি কাউকে বলছি ব্যাগ গুলো নিয়ে যেতে, বলেই রুদ্র নিচে নেমে গেলো।

আধা ঘন্টার মধ্যেই দুই গাড়িতে করে সবাই রওনা হয়ে গেলো এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে, সুমি এবং নীলের পুরা ফ্যামিলি আজ আমেরিকা যাচ্ছে, রুদ্র জোর করেই নীলের চিকিৎসার জন্য পাঠাচ্ছে, রুহি তো মহা খুশি, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে এই প্রথম এরোপ্লেনে চড়বে সে। 

রুদ্র আর তার মা থাকবে দেশে, অবশ্য আগামী মাসের প্রথম দিকেই রুদ্র আমেরিকা যাবে ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে। 

রাত দশটায় সবাই পোঁছে গেলো সবাই, রুদ্র সবার জন্য ট্রলির ব্যবস্থা করে লাগেজ গুলো উঠিয়ে নিয়ে কনকর্স হলের দুইটা টিকেট নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।

চেকইন শুরু হয়ে গেছে দেখে রুদ্র ওর মাকে বসিয়ে বাকিদের নিয়ে গেলো চেকইন করাতে, সবার বোর্ডিং পাস নিয়ে ফিরে এলো আবার, রুহি তো রুদ্রের কোলে উঠে বসেছে। 

ফ্লাইট আজ রাত বারোটা তিরিশে, এজন্য সবাই বিদায় নিলো রুদ্র আর মায়ের কাছ থেকে, রুদ্র রেনু আর সুমিকে বুঝিয়ে দিলো শেষবারের মতো, এরপর এগিয়ে দিয়ে এলো সিকিউরিটি চেক গেইটে। 

মম চলো, ওরা তো ভিতরে চলে গেছে।

চল বাবা, বলে রুদ্রর মা এগুলেন।

 

মম আশা করি ভাইয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে এইবার, ড্রাইভিং করতে করতে রুদ্র বললো। 

ইনশা আল্লাহ নিশ্চয় হবে, নীলের জন্য কষ্ট হয়, আমার মেয়েটাও চলে গেলো, বলেই বড় এক নিশ্বাস ফেললেন রুদ্রর মা। 

কাম অন মম, তুমি কোথায় ওদের জন্য দোয়া করবে, সেখানে তুমি মনে কষ্ট পাচ্ছো। 

রুদ্রর মা হেসে দিয়ে বললেন, মা কি কখনো দোয়া না করে থাকে বাবা, বলেই উনি হাত বাড়িয়ে রুদ্রর চূল গুলো নেড়ে দিলেন।

আচ্ছা আগামীকাল যাওয়ার জন্য তুমি রেডি তো? 

আমি কি আমেরিকা যাচ্ছি নাকি যে রেডি হতে হবে, কয়েকটা কাপড় নেবো এই তো। 

হাঁ তা ঠিক আছে।

তা তুই চারদিন আগেই চলে যাচ্ছিস কেন, বিয়ে তো চারদিন পর? 

মম আমার কাজ আছে ওখানে, সিতাকুন্ডুতে শীপ ভিড়েছে, আমাদের স্টিল মিলের জন্য বাল্ক আয়রন ওখান থেকেই তো আসে। 

তা কত টাকার মাল নিবি এইবার?

আসলে ওদের সাথে একটা ডিল হচ্ছে এইবার, ওরা সব মাল আমাদেরকে দেবে, প্রায় পঞ্চাশ কোটিরও বেশি দামের মাল।

আমাদের স্টিল মিলের কি অবস্থা এখন? 

মম আমাদের স্টিল মিল ড্যাড থাকতেই সেরা দশে ছিলো, এখন আমার চেষ্টা হলো প্রথম হওয়া। 

আল্লাহ তোকে আরও তৌফিক দান করুন।

 

পরদিন সকাল আটটায় রুদ্র ওর মাকে নিয়ে বাই রোডেই রওনা হয়ে গেলো, পথেই পড়বে ওদের স্টিল মিল, রুদ্রর ইচ্ছে ওর মাকে স্টিল মিল ঘুরিয়ে দেখাবে, মেঘ্না ব্রিজের পাশেই ওদের স্টিল মিল, রুদ্র আজ নিয়ে এসেছে ওর বাবার হ্যারিয়ার এসইউভি, ঘন্টা খানেকের মধ্যেই স্টিল মিল পোঁছে গেলো।

ফ্যাক্টরি গেটেই ওদেরজে রিসিভ করলো মিলের ম্যানেজার, পুরা মিল ঘুরিয়ে দেখালো ওদেরকে। 

মম বেশি গরম লাগছে কি?

তাতো লাগবেই বাবা, আগুনের গরমে পুরা ফ্যাক্টরিই তন্দুরের মতো গরম হয়ে আছে।

আচ্ছা চলো অফিসে একটু বসি, ম্যানেজার সাহেব আমাদেরকে ঠান্ডা কিছু খাওয়ান।

রুদ্র ওর মাকে নিয়ে অফিসে গিয়ে বসলো, কিছুক্ষণের মধ্যেই কোক, সেভেন আপ, কেক দিয়ে গেলো পিয়ন, রুদ্ররা কিছুক্ষণ আলাপ সেরে রওনা হয়ে গেলো। 

দুপুর একটার পর ওরা চট্টগ্রাম পোঁছে গেলো, হোটেল পেনিন্সুয়ালায় আগে থেকেই রুম রিজার্ভেশন করা ছিলো, ওখানেই উঠলো ওরা। 

রুদ্রর রুমের যাস্ট সামনেরটাই ওর মার রুম, রুদ্র ওর মাকে রুমে দিয়ে নিজের রুমে এসে প্রথমে শাওয়ার নিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে সিগারেট ধরালো, এরপর ইন্টারকমে ওর মাকে কল দিয়ে বললো, মম খাবার কি রুমে দিতে বলবো, বাকি রেস্টুরেন্টে খাবে? 

রুমেই দিতে বল, আর বেরুতে ইচ্ছে করছেনা।

ঠিক আছে, তা কি খাবে তুমি? 

আমার জন্য মাছের অর্ডার কর।

ঠিক আছে মম।

 

লাঞ্চ দিয়ে গেলে মা ছেলে দুজনেই আরাম করে খেলো।

রুদ্রর মা উঠে গিয়ে হাত ধুইয়ে এসে রুদ্রর পাশে বসলেন। 

মম তোমার কোনো প্ল্যান আছে আজকের, আমি একটু বন্ধুদের সাথে দেখা করবো ভাবছি।

প্ল্যান অলরেডি হয়ে গেছে, আমার বান্ধবী কুমু আসছে আমাকে নিতে, রাতে ওর ওখানেই খেয়ে ফিরবো। 

তাই, তাহলে তো খুব ভালো হয়েছে, আমি চিটাগাং ক্লাবে যাবো সন্ধ্যায়, আসতে হয়তো দেরি হবে, তুমি ফিরে এলে শুয়ে পড়ো, আমার কথা চিন্তা করোনা।

রুদ্রর মার রুমের ইন্টারকম বেজে উঠলে রুদ্র উঠে গিয়ে রিসিভ করে কথা বলে বললো, উনাকে পাঠিয়ে দিন।

মম তোমার বান্ধবী এসে গেছেন।

তাই, ভালো হয়েছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই উনারা এসে দরজা নক করলে রুদ্র গিয়ে দরজা খুলে সালাম দিলো। 

শেলির কাছে এসেছিলাম।

জ্বি আন্টি ভিতরে আসুন।

উনারা ভিতরে আসলে রুদ্রর মা উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন বান্ধবীকে, বললেন কেমন আছিস?

তুই এসেছিস তো অনেক ভালো আছি এখন, তোর সাথে তো আমার বরের পরিচয় নেই, এ হলো হাসান। 

সালামালেকুম ভাই, বসুন প্লিজ। 

কমু আন্টি বললেন, একি তোর ছেলে বড়টা?

না কুমু, রুদ্র আমার ছোটো ছেলে, বড়টা আমেরিকা গেছে চিকিৎসা করতে। 

ওহ আচ্ছা, তা এতো হ্যান্ডসাম ছেলে তোর হলো কি করে, তোর তো নাক বোচা, বলেই হি হি করে হাসলেন কুমু আন্টি।

আমার নাক নয়, তোর মুখটাই থ্যাবড়া, বলেই রুদ্রর মাও হাসতে লাগলেন।

আচ্ছা তোরা রেডি তো, চল বেরিয়ে পড়ি, বাবা চলো। 

সরি আন্টি, আমি যাবোনা আজ, মমকে নিয়ে যান। 

 

এই রুদ্র কফি দিতে বল আমাদেরকে, তোর আন্টি আবার এক্সপ্রেসোর প্রচন্ড ভক্ত। 

আরেহ না না, বাসায় চল আগে।

দাঁড়া না, একটু কফি খেয়ে যায়। 

রুদ্র গিয়ে ফোন করে কফি দিতে বললো। 

তা বাবা, তুমি কি করো, কুমু আন্টির হাসবেন্ড জিজ্ঞেস করলেন। 

ভাই, ও এখন আমাদের সব ব্যবসা সামলাচ্ছে, ওর বাবা হটাৎ ইন্তেকাল করাতে বড় ছেলে প্রচন্ড শকড হয়ে যায়, এতে ওর মাথায় গন্ডগোল দেখা দেয়, এ জন্য রুদ্রই সব সামলাচ্ছে। 

ওহ সো স্যাড। 

তা ভাই আপনি কই আছেন?

আমি ব্যাবসা করি। 

ও আচ্ছা। 

রুমের দরজা নক হলে রুদ্র গিয়ে দরজা খুলে ধরলে রুম সার্ভিস এক্সপ্রেসো কফি দিয়ে গেলো সবার জন্য। 

রুদ্র সবার হাতে হাতে তুলে দিলো কফির কাপ। 

তআ তোর বাচ্চারা তো বড় হয়ে গেছে, কুমুকে জিজ্ঞেস করলেন রুদ্রর মা। 

তা বড় হয়ে গেছে, বড় মেয়ের বিয়ে দিলাম, ছোটো মেয়ে এইবার অনার্স ফাইনাল দিলো। 

ওহ গুড, ওর মেজর কি? 

কুমু হেসে বললেন, তোরটা। 

একাউন্টিং বাহ, তা কোথা থেকে দিলো? 

চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি থেকে। 

খুব ভালো। 

কফি খাওয়া শেষ হলে রুদ্রর মা রুদ্রর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। 

রুদ্র গেলো নিজের রুমে।

 

সন্ধ্যা সাতটার পর রুদ্র বেরুলো গাড়ি নিয়ে, চিটাগাং ক্লাবে পোঁছেই গাড়ি নিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে উঠে গেলো উপরে, উপরেই পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে, সেখানেই গাড়ি রেখে ক্লাবে প্রবেশ করলো, এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো বন্ধুদের, খেয়াল করলো ওরা বাগানে চেয়ার টেবিল লাগিয়ে বসে আছে, ওদের দেখে রুদ্র এগুলো। 

রুদ্র আসতে দেখলে বন্ধুদের একজন বলে উঠলো, এই যে আমাদের রুদ্র এসে গেছে, দোস্তো আয় আয়। 

রুদ্র সবার সাথে হ্যান্ড সেইক করে বসলো।

বন্ধু জামাল বললো, কি দোস্তো শুনলাম আন্টি সহ এসেছিস, কি কোনো প্রোগ্রাম আছে নাকি?

তা আছে, আগামীকাল একটা ডিল করবো আর পরশুদিনের পর এখানেই একটা বিয়ে আছে।

ওহ সুলতান সাহেবের মেয়ের বিয়ে তো, আমিও দাওয়াত পেয়েছি। 

তাই তাহলে তো খুব ভালো হয়েছে, দেখা হবে নিশ্চিত।

তা কি খাবি বল, বদকা চলবে? 

না আমাকে জ্যাক ড্যানিয়েল দিতে বল, সাথে বাদামের সালাদ। 

তোর এখনো মনে আছে দেখছি, বেশ বেশ। 

বেয়ারা এসে সবাইকে বদকা, রুদ্রর জন্য জ্যাক ডানিয়েলস সাথে লেবুর রস আর সালাদ দিয়ে গেলে রুদ্র নিজের গ্লাস তুলে টোস্ট করলো।

 

রুদ্রর ফোনে কল এলে রুদ্র ডায়ালে দেখে কল রিসিভ করে হ্যালো বললো।

রুদ্র কই তুই, রুদ্রর মা জিজ্ঞেস করলেন।

মম আমি তো ক্লাবে, আচ্ছা শুন খবর পেলাম এবি ব্যাংকের এমডি সাহেবকে হাসপাতালে দিয়েছে। 

কি বলছো মম, কখন? 

তোর কমু আন্টির হাসবেন্ডের বন্ধু ফোন করে জানিয়েছে। 

কোন হাসপাতালে দিয়েছে তুমি জানো? 

হাঁ, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে দিয়েছে, তুই যাবি? 

যাওয়া তো উচিত। 

তাহলে তুই যা, আমি হাসপাতালেই যাচ্ছি তোর আংকেলের সাথে, এই আধা ঘন্টার মধ্যেই পোঁছে যাবো। 

মম, তুমি যাও, আমিও আসছি, বলেই ফোন ডিস্কানেক্ট করে ঝিম মেরে চিন্তা করছে কি হলো? 

কি ব্যাপার বন্ধু, ড্রিংক্স শেষ কর।

রুদ্র লাস্ট পেগটা এক ঢোকে খেয়ে উঠে বললো, বন্ধুরা সরি আমাকে উঠতে হচ্ছে, এবি ব্যাংকের এমডি সুলতান সাহেবকে হসপিটালাইজ করা হয়েছে খবর পেলাম। 

কি বলিস, হটাৎ?  

জানিনা, আমাকে যেতে হবে। 

বন্ধু চল আমিও যাবো বলে জামাল উঠে পড়লো, অন্য বন্ধুকে বললো, দোস্তো আমি যাচ্ছি, বিলটা সাইন করে দিস তোরা, চল দোস্তো। 

রুদ্র জামালকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো ক্লাব থেকে। 

 

....... চলবে। 

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ