রঙধনু আকাশ

ইঞ্জা ২৪ জুন ২০২০, বুধবার, ১০:৩০:১০অপরাহ্ন গল্প ৩৪ মন্তব্য

রুদ্র, এই রুদ্র উঠ না বাবা, এতো দেরি করলে চলে, আরেহ এখনো ঘুমায় ছেলেটা?

মম ডিস্টার্ব করোনা, ঘুমাতে দাও। 

রুদ্রর মা শায়লা আহমেদ ছেলের পাশে বসে পড়ে ছেলের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে গালে এক চুমু দিতেই রুদ্র মার গলা জড়িয়ে ধরে বললো, আই লাভ ইউ মম।

পাগল ছেলে, আই লাভ ইউ টু, এখন উঠে যা। 

রুদ্র উঠে বসে মার হাতটা নিজের মুঠোই নিয়ে বললো, মা আজ না ফ্রাইডে, তুমি সকাল সকাল তুলে দিলে কেন?

আজ না শপিংয়ে যাবো আমরা?

তোমরা যাবে, আমি কেন?

আরেহ, তোর বিয়ে, তোর জন্য শপিং করতে হবেনা?

ধ্যাত বলেই রুদ্র উঠে পড়লো, ড্যাড কি করে, উঠে পড়ছে?

হাঁ, এতক্ষণে নিশ্চয় বাগানে পায়চারি করছে, যা দ্রুত ফ্রেস হয়ে আয়, আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করছি।

রুদ্র বাথরুমে গেলে ওর মা নিচে চলে গেলেন। 

 

রুদ্ররা তিন ভাই বোন, বড় ভাই নীল আহমেদ বাবার সাথেই ব্যবসা দেখা শুনা করে, রুদ্র মেঝো, মাত্রই অস্ট্রেলিয়া থেকে এমবিএ শেষ করে দেশে ফিরে নিজেদের কোম্পানিতে সিইও হিসাবে জয়েন করেছে, ছোটো বোন রুদ্রর বিয়ের পরেই ত্রিপল ই পড়তে আমেরিকা চলে যাবে, সবকিছুই রুদ্রর বাবা শফিক আহমেদের প্ল্যান মোতাবেক এগুচ্ছে।

শফিক আহমেদ  বেটকম গ্রুপের চেয়ারম্যান,  বাংলাদেশের নামকরা শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আর মা  শায়লা আহমেদ কোম্পানির কো-চেয়ারপারসন হলেও উনি কোম্পানির কাজে মাথা ঘামান না। 

রুদ্রর বড় ভাবীও গৃহীনি, উনার একমাত্র মেয়ে রুহীর বয়স মাত্র পাঁচ, রুহী মা বাবার চাইতে রুদ্রর ন্যাওটা বেশি, রুদ্র চাচু আব্বিই ওর সব, ওর যত আবদার, আদর সবই রুদ্রর জন্য, আবার রুদ্রও জান হলো রুহী, বাসায় থাকলে সারাক্ষণ রুহীকে নিয়ে মেতে থাকে ও।

রুদ্রর বাবাই উনার এক ঘনিষ্ট ব্যবসায়ী বন্ধুর মেয়ের সাথেই বিয়ে ঠিক করেছেন, অলরেডি এনগেজমেন্টও হয়ে গেছে, উনারা এখন দ্রুতই ছেলের বউ নিয়ে আসতে চান।

 

রুদ্র মাথা মুছতে মুছতে বের হয়ে দিকে দ্রুত ড্রেস পড়া শুরু করলো, সেলফোনে রিং হচ্ছে শুনে স্ক্রিনে নজর ভুলিয়ে মুচকি হেসে রিসিভ করে স্পিকার অন করে দিতেই অপর পাশ থেকে ওর হবু বউ শেলি বলে উঠলো, জানু কেমন আছো? 

হাঁ ভালো। 

আচ্ছা শুনোনা, আজ তোমরা শপিংয়ে যাচ্ছো তাহলে আমিও যেতে চাই।

কেন, এতো আমাদের শপিং?

না জানু তোমরা আমার ঘাগড়াটা কিনলে হবেনা, আমি নিজেই চুজ করে নেবো। 

ওতো আমার মম কিনবেন, নিশ্চয় তোমার ভালো লাগবে।

না না জানু, ওগুলো আমি কিনবো, আমার বিয়ের ড্রেস আর ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড ড্রেস আমিই কিনবো, তুমি এক কাজ করো, তোমার ড্যাডকে বলে বিশ লক্ষ টাকা আমাকে দিয়ে দাও, আমি নিজেরটা নিজেই কিনে নেবো।

হটাৎ রুদ্রর মাথায় যেন আগুন লাগলো, কঠিন স্বরে বললো, আমি আমার ড্যাডকে এইসব বলতে পারবোনা, তুমি তোমার পাপার থেকে চেয়ে নাও, আমি ফোন রাখছি, বলেই ফোন ডিস্কানেক্ট করে ঠান্ডা মাথায় চুলটা আঁচড়ে নিলো, এরপর পারফিউমের বোতলটা নিয়ে দুই  কানের নিচে স্প্রে করে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

 

নাস্তার টেবিলে বসে মাকে ডাক দিলো, মম ড্যাড কি খেয়েছে?

ডেকে নে বাবা, আমি ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি।

রুদ্র উঠে গিয়ে বাগানে পায়চারি রত ওর বাবাকে ডাক দিলো, ড্যাড আসো ব্রেকফাস্ট রেডি।

ভাবীকে আসতে দেখে বললো, ভাবী ভাইয়া কই?

মিষ্টি হেসে ভাবী জবাব দিলো, আসছে।

রুহী?

ঐ যে রুমির সাথে আসছে।

রুদ্র মাথা ঘুরিয়ে দেখলো রুহিকে, ডাক দিলো প্রিন্সেস আসো।

রুহি ওর ফুফুর হাত ছেড়ে দিয়ে লাফাতে লাফাতে চলে এলো রুদ্রর কাছে, এসেই হাত বাড়িয়ে দিলে রুদ্র কোলে তুলে নিয়ে চকাম করে এক চুমু দিলো আর বললো, আব্বিরটা কই?

রুহি রুদ্রর দুই গালে চুমু খেয়ে বললো, চাচু আব্বি তুমি আমাকে শপিংয়ে নিয়ে যাবে?

সিউর প্রিন্সেস।

তুমি আমাকে নিউ বার্বি ডল কিনে দেবে? 

সিউর হোয়াই নট। 

রুহি আবার গালে চুমু খেলো। 

চলো আমরা ব্রেকফাস্ট করে নিই, রুহিকে কোলে নিয়েই রুদ্র  ডাইনিং টেবিলে বসলো।

মা আজ কি করেছো?

মুগ ডাল আর ভেজিটেবল, নে শুরু কর, তোমাকে কি দেবো, রুদ্রর বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন?

ডাল দাও। 

 

রুদ্রর বড় ভাই এসে বাবার পাশে বসে বললো, ড্যাড তুমিও যাচ্ছো তো? 

না আমি আজ রেস্ট করবো, তোরা যা। 

ড্যাড তাহলে আমিও থাকছি, এই সুযোগে তোমার সাথে  ব্যবসায়িক কিছু আলাপ সারতে পারবো।

রুদ্র ভাবীর দিকে তাকালে ভাবী ঠোঁট উল্টে বললো, অসুবিধা নেই তুই আছিস না, ও গেলে বরঞ্চ বিরক্ত করবে।

রুদ্র হেসে দিয়ে বললো, আসলেই ভাইয়া বোরিং ফিল করবে।

খাওয়া শেষে রুদ্রর বাবা আর বড় ভাই উঠে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসে আলাপ করতে লাগলো, রুদ্রও কফিটা হাতে নিয়ে উনাদের সাথে জয়েন করলো।

রুদ্র তোকে নাকি শেলি কল করেছিলো কিছু সময় আগে, রুদ্রর বাবা জিজ্ঞেস করলেন। 

হাঁ ড্যাড। 

ও যা চেয়েছে তা না করে দিলি কেন?

ড্যাড ওর এক্সেস চাওয়া আমার পছন্দ না, মা যা কিনে দেবে তাই পড়বে ও। 

শফিক সাহেব হেসে দিয়ে বললেন, এতো কঠিন হলে চলে বাবা?

সরি ড্যাড, এসব বিষয়ে কেন কম্প্রোমাইজ করতে হবে, আই ডোন্ট লাইক দিস, শী ইজ আস্কিং ফর টয়েন্টি লাখ, ইটস নট আ জোক।

আহ তুমি এতো সিরিয়াস কেন যে হও, সে আবদার করে চেয়েছে, নীল তুমি টাকাটা পাঠিয়ে দিও।

 

রুদ্র এসির ঠান্ডাটা বাড়িয়ে দে তো, গরম লাগছে, বলেই উনি পাঞ্জাবির কলার টানলেন।

রুদ্র রিমোট নিয়ে চেক করে বললো, ড্যাড এসির টেম্পারেচার অলরেডি হাই পয়েন্টে, বলেই তাকালো ওর বাবার দিকে, খেয়াল করলো ওর বাবা বুক চেপে ধরে রেখেছেন।

রুদ্র দ্রুত বাবাকে ধরে বললো, ড্যাড কি হয়েছে?

বুকটাতে চাপ লাগছে, বলতে বলতেই উনি ঢলে পড়লেন, রুদ্র ড্যাড ড্যাড বলে দ্রুত উনাকে শোয়ায়ে দিয়ে পাঞ্জাবির বোতাম খুলে দিলো, ঘরের সবাই দৌড়ে এলো।

ভাইয়া তুমি হাস্পাতালে ফোন করো, বলো ড্যাডকে নিয়ে আসছি, ড্যাড তোমার কেমন লাগছে?

রুদ্রর বাবা তখন বাতাসের জন্য হাসফাস করছেন দেখে রুদ্র আর দেরি করলোনা, উনাকে পাজাকোলা করে নিয়ে ফ্লোরে শুইয়ে দিয়ে সিপিআর দেওয়া শুরু করলো, বুকের বাম পাশে হার্ট বরাবর জোড়ে জোরে চাপ দিতে লাগলো, আবার মুখটা হা করিয়ে মুখে বাতাস দিতে লাগলো, এইভাবেই কিছুক্ষণ সিপিআর দিতেই থাকলো, হটাৎ খেয়াল করলো ওর বাবা চোখ উল্টিয়ে রয়েছেন, শ্বাসপ্রশ্বাস নেই।

রুদ্র ড্যাড ড্যাড বলে চিৎকার করে উঠলো, ওর মা বোন দুজনেই শফিক সাহেবের উপর আঁচড়ে পড়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো। 

 

রুদ্র এই রুদ্র, ড্যাডের কি হয়েছে, রুদ্রের বড় ভাই নীল জিজ্ঞেস করছে।

রুদ্র শূন্য চোখে তাকালো বড় ভাইয়ের দিকে, মাথা নাড়লো এদিক ওদিক।

না না না চিৎকার করে উঠে নীল সেন্স হারালো, রুদ্রর ভাবী কাঁদতে কাঁদতে স্বামীকে জড়িয়ে ধরলো।

রুদ্র মাথায় হাত দিয়ে বাবার মৃতদেহের দিকে শূন্য চোখে চেয়ে রইলো, চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে দুই গাল দিয়ে। 

ওর মা উঠে এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন, বোন বাবার বুকে পড়ে কাঁদছে।

ছোটো রুহী দাদার পাশে গিয়ে বসে পড়ে দাদু উঠো না বলছে, ছোট রুহী জানেনা ওর দাদু আর ফিরে আসবেনা কোনদিন। 

 

...... চলবে। 

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ