রঙধনু আকাশ (৭ম পর্ব)

ইঞ্জা ১৪ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার, ০৯:৩৬:৪৭অপরাহ্ন গল্প ৩০ মন্তব্য

অনিলার বিদায়বেলায় ঘরের সবাই গাড়ি বারান্দায় সবাই এলো, অনিলা রুহিকে খুব করে আদর করে চুমু খেয়ে বললো, আমার তো মা নেই, আজ থেকে তুমিই আমার আম্মু, ঠিক আছে?

রুহি ফোকলা দাঁত দেখিয়ে হেসে বললো, আমি টুমার আম্মু।

অনিলা আবার চুমু খেয়ে রেনুর কোলে দিয়ে বললো, ভাবী খুব ভালো লাগলো আপনাদের, একদিন আমাদের বাসায় আসলে খুশি হবো, রুদ্রর মাকে বললো, আন্টি আজ আসি। 

এসো মা, খুব ভালো লাগলো তোমাকে দেখে। 

সুমি, রুদ্র ব্রো আসি।

বাই।

বাই।

অনিলা গাড়িতে উঠে বসলে সবাই হাত নাড়লো, সাথে অনিলাও হাত নেড়ে বিদায় জানালো।

অনিলার গাড়ি গেট দিয়ে বের হয়ে গেলে, রুদ্র রেনুকে জিজ্ঞেস করলো, ভাবী রিয়াকে দেখলাম না সারাবেলা? 

রিয়ার খুব জ্বর, গেস্ট রুমে ঘুমাচ্ছে?

কি বলো, ডাক্তার দেখিয়েছিলে?

না না এতো তাড়াতাড়ি ডাক্তার কিসের, আমি এইস দিয়ে দিয়েছি, দেখা যাক। 

কি বলছো ভাবী, চলো দেখে আসি। 

আচ্ছা চলো। 

গেস্ট রুমে এসে প্রথমে রেনু প্রবেশ করে রিয়াকে দেখলো ফ্যান ছেড়ে বসে আছে, রেনু রুদ্রকে বললো আসো।

রুদ্রকে প্রবেশ করতে দেখে রিয়া তাড়াতাড়ি নিজের ওড়না টেনে নিলো। 

হাই, শুনলাম অসুস্থ, এখন জ্বর কেমন?

এই কিছুক্ষণ আগে পড়েছে।

কিছু খাওয়া তো হয়নি নিশ্চয়, চলো আমার সাথে খাবে, ভাবী তুমি, ভাইয়াও তো খাওনি, চলো এক সাথে বসি।

 

এক সপ্তাহ পরঃ

 রুদ্র অফিসে ব্যস্ত, সেলফোনে কল আসছে দেখে ডায়ালে দেখলো চিনুর কল, রিসিভ করে বললো, বল বন্ধু কি খবর?

বন্ধু তুই অফিসে আছিস?

হাঁ আছি।

শুন টাওয়ালের বায়ার পেয়েছি, দশ লাখের অর্ডার, সুতো থেকে শুরু করে সব আমরা দেবো, ওরা দুই লাখ ডলার এডভান্স দেবে৷ আমি অফিসে আনতে চাইছি।

দাঁড়া দাঁড়া কি বলছিস তুই, আমাদের ফ্যাক্টরি তো এখনো রেডি না, এতো বড় অর্ডার কিভাবে সামলাবো, রুদ্র উদ্বীগ্ন  হলো।

তুই ওসব আমার উপর ছেড়ে দে, আমি রেডি আছি, ফ্যাক্টরিও রেডি আছে, তুই থাক আমি নিয়ে আসছি।

তাই, তুই ভালো বুঝিস। 

আচ্ছা থাক আসছি, আমাদের তো লাঞ্চের অর্ডার দে, ওরা চারজন আছে। 

ঠিক আছে আসছি। 

রুদ্র জিএম সাহেবকে ফোন দিয়ে সব খুলে বলে লাঞ্চের ব্যবস্থা করতে বললো, সেলফোন বাজছে শুনে ফোন রেখে রিসিভ করলো।

হ্যালো।

রুদ্র তুমি ভালো আছো?

জ্বি সালামালেকুম স্যার, ভালো আছি।

আমি তোমার অফিসের সামনে দিয়ে যাবো, ভাবলাম তুমি অফিসে থাকলে দেখা করে যায়।

সিউর স্যার আসুন, আমি আছি। 

 

কিছুক্ষণের মধ্যেই এমডি সাহেব এসে প্রবেশ করলেন সাথে আরও দুইজন ভদ্রলোক। 

সালাম স্যার, আসুন প্লিজ। 

রুদ্র আমি তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিই, ইনি হোলেন রুপালি ব্যাংকের এমডি কুদ্দুস সাহেব, আর উনি হলেন জনতা ব্যাংকের এমডি, আবুল কালাম।

জ্বি সালামালেকুম, প্লিজ বসুন আপনারা। 

রুদ্র আপনার সাথে পরিচিত হয়ে আনন্দিত হলাম, জনতা ব্যাংকের এমডি বললেন। 

ধন্যবাদ, উনারা তোমার প্রম্পট একশন দেখে খুশি হয়েছেন, সুলতান সাহেব বললেন।

আপনারা কি খাবেন বলুন, লাঞ্চ আজ আমার এখানেই করুন।

না রুদ্র আজ নয়, আমাদেরকে বললো তো তোমার পরবর্তী স্টেপ গুলো, তুমি ব্যবসা নিয়ে কি চিন্তাভাবনা করছো।

রুদ্র প্যান্ট্রিতে কল দিয়ে কফি বিস্কিটের কথা বলে শুরু করলো, আমি প্রথমেই ড্যাডের রেখে যাওয়া কম্পোজিট টেক্সটাইল ফ্যাক্টরি শুরু করেছি, আজ এর প্রথম অর্ডার পাচ্ছি দশ লাখ টাওয়াল দিয়ে, এর সুতো থেকে শুরু করে সব আমরাই প্রডিউস করবো, আমাদের প্রপার্টি বিজনেসের শেষ কাজটি আমরা শেষ করেছি ড্যাড থাকা কালিন, এই মুহূর্তে সরকারের পদ্মা ব্রিজের প্যানেল তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে চলছে, আগামী মাসে সব প্যানেল আমরা ডেলিভারি করে ফেলবো, আমাদের ফার্মাসিউটিক্যালসে করোনার প্রতিষেধক উৎপাদনের অর্ডারের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে, প্রতিদিন আমাদের উৎপাদন হচ্ছে পাঁচ লক্ষ ইঞ্জেকশন, আমাদের স্টিল মিলের কাজও দ্রুত গতিতে চলছে।

ব্যাস ব্যাস আর লাগবেনা, রুপালির এমডি সাহেব বাধা দিয়ে বললেন, তার মানে তোমাদেরবেখন কোনো সিক কোনো ইন্ডাস্ট্রি নেই। 

রুদ্র, তুমি কি আগামী মাসের পেমেন্ট সঠিক সময়ে দিতে পারবে, সুলতান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন।

স্যার আল্লাহ যদি রহম করে নিশ্চয় এর আগেই দিয়ে দেবো।

ওকে, তুমি যেদিন পেমেন্ট দেবে সেদিন থেকে দশ দিনের মধ্যেই শফিক ভাইয়ের লোন আমরা রিসিডিউল করে তোমাদের নামে করে দেবো, এতে অবশ্যই তোমার কাজের ব্যাঘাত হবেনা।

রুদ্র উঠে হ্যান্ড সেইক করে বললো, আমার অনেক বড় উপকার করলেন আপনারা, স্যার।

 

ব্যাংকারদের বিদায় দেওয়ার সময় ইন্টারকম বেজে উঠায় রুদ্র রিসিভ করলে রিসেপশনিস্ট জানালো, মি. চিন সু প্রু এসেছেন গেস্টদের নিয়ে।

ওকে, উনাদেরকে কনফারেন্স রুমে বসতে বলো, আমি আসছি। 

এরপর ব্যাংকারদের বিদায় দিয়ে রুদ্র বেরিয়ে এসে ফিন্যাস ডিরেক্টর হুদা সাহেবকে বললো, হুদা ভাই ফরেন বায়ার এসেছে, আমি মিটিংয়ে বসছি, রিসেপশনিস্টকে বলে দেন যেন আপাতত আমাকে কোনো কল দেওয়া না হয়, বলেই রুদ্র কনফারেন্স রুমের দিকে এগুলো। 

ভিতরে প্রবেশ করে রুদ্র সবাইকে সম্ভাষণ জানিয়ে সবার সাথে পরিচিত হলো, এরপর বললো যেহেতু লাঞ্চের সময় হয়ে গিয়েছে, প্লিজ চলুন আমরা ডাইনিং রুমে যায়, লাঞ্চ শেষে আমরা বসবো।

রুদ্র সবাইকে নিয়ে ডাইনিংরুমে এসে খেতে বসলো, খেতে খেতেই ওরা আলাপ করতে লাগলো নতুন প্রডাক্টের বিষয়ে। 

লাঞ্চ শেষে সবাই আবার কনফারেন্স রুমে বসলো, বায়ারদের লিডার মি. সিমস বললো, মি. রুদ্র তোমার কথাবার্তার স্টাইলে গ্রেট ব্রিটেনের টান আছে, কিন্তু তুমি বাঙ্গালী, কিভাবে? (ইংরেজিতে)

আসলে আমি অনেক বছর অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ কুইন এলিজাবেথে পড়াশুনা করেছি। 

আই সি, এজন্যই টানটা ভালোই রপ্ত করেছো। 

আরেকজন টাওয়ালের এক সেট স্যাম্পল এগিয়ে দিয়ে বললো, এই হলো আমাদের স্যাম্পল।

রুদ্র হাত বাড়িয়ে নিয়ে তিন সেটের একটি টাওয়াল নিয়ে ভালো করে দেখতে দেখতে বললো, চিনু এতো অনেক উন্নতমানের, এই কাজ করতে পারবো?

এটা আমাদের দেশেরই তৈরি এবং আমার হাত দিয়েই কাজ হয়েছে।

 

খুব ভালো, এর সুতো কিভাবে করবি?

এরচেয়েও ভালো মানের সুতা বানানো যাবে আমাদের ফ্যাক্টরিতে। 

কি বলছিস, এতো উন্নতমানের মেসিনারিজ ড্যাড তাহলে বসিয়ে রাখলো কেন?

ওসব বাদ দে, এখন এই তিনটির সেট লাগবে উনাদের।

মানে হলো তিরিশ লক্ষ পিছ।

হাঁ। 

মি. সিমস আমরা করতে চাই, লেটস টক এবাউট ইউর টার্মস এন্ড কন্ডিশন। 

আমরা আপনার ফ্যাক্টরি আজ ঘুরে দেখেছি, এবং আমরা প্লিজড।

খুব ভালো কথা। 

আমরা আপনাদেরকে টোটাল তিন মাসের সময় দেবো, এখন দুই লাখ ডলার দেবো, স্যাম্পল সাপ্লাইয়ের পরে আরও তিন লাখ ডলার দেবো।

মি. চিনু এসব ডিলস ফাইনালাইজ করবে। 

চিনু দরদাম করা শুরু হলো, চিনু পরে ফাইনাল করলো প্রতি সেট পাঁচ ডলার করে, মাল ডেলিভারির পর পরই দশ দিনের মধ্যেই বাকি পেমেন্ট দিতে হবে, মানে ব্যাংকের মাধ্যনে সেটেল করে ফেলতে হবে। 

এমন সব সিদ্ধান্তের পর এগ্রিমেন্ট সাইনিং হলো, শেষে বিদায়ের পালা এলে রুদ্র এগিয়ে গিয়ে বিদায় দিয়ে এলো, সাথে অফিসের গাড়িকে নির্দেশ দিলো ফরেনারদের হোটেলে দিয়ে আসতে।

চেকটা নিয়ে ফাইনান্স ডিরেক্টরের হাতে দিয়ে বললো, এইটা এইচএসবিসির আমাদের জয়েন্ট একাউন্টে জমা করে দিন।

চিনু আয় আমার রুমে বলে রুদ্র এগুলো নিজের রুমে।

 

আই এপ্রেসিয়েট ইন ইউর প্রগ্রেস বন্ধু। 

থ্যাংক ইউ বন্ধু, এতো সামান্য, সামনে আরও অনেক কিছু করার আছে, আগামী সোমবার সোয়েটার কিনতে আসছে আরেকটা দল, লিনডিংয়ের নাম শুনেছিস? 

কেন চিনবোনা, বিশ্বের বড় বড় শহর গুলিতে ওদের ব্রাঞ্চেস আছে, বিশ্বের নামকরা চেইন কোম্পানির একটা। 

ওরা পঞ্চাশ লক্ষ সোয়েটার, হ্যান্ড গ্লাভস, উলেন হেড গিয়ার কিনতে চাই, বলেই চিনু কৌতুকের চোখে তাকালো রুদ্রর দিকে। 

রিয়েলি, এ আমাদের দ্বারা সম্ভব? 

কেন নয় বন্ধু, তুই জানিস না আংকেল কি জিনিস রেখে গেছেন তোর জন্য, ইট'স আ ডায়মন্ড মেকিং মেসিন?

রুদ্র উঠে বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে বললো, আমি খুব খুশি বন্ধু। 

রুদ্র আমাদের অনেক কাজ করতে হবে, এই দুইটা ফ্যাক্টরিতে সামনে বিশ হাজার মানুষ কাজ করবে তিন শিফটে, পারবি তো? 

অবশ্যই পারবো বন্ধু, অবশ্যই পারবো। 

বন্ধু এইসব কাজ আমাদেরকে মিলিয়নস অফ ডলার এনে দেবে। 

অবশ্যই বন্ধু, উই উইল বি রিচ, চিনু বললো। 

বন্ধু তুমি এগিয়ে যাও, লোকজন দ্রুত রিক্রুট করার ব্যবস্থা করো।

শিওর বন্ধু। 

চল এখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, বাসায় যাবো, আগামীকাল আমি ফ্যাক্টরিতে যাবো।

ঠিক আছে বন্ধু দেখা হবে। 

দেখা হবে।

 

রুদ্র অফিস থেকে বেরিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো, মাঝপথে ফোন আসায় গাড়ি এক পাশে পার্ক করে ফোন রিসভ করলো।

রুদ্র তুমি কই?

বাসায় আসছি।

তাহলে তাড়াতাড়ি আসো, আমার বাবা এসেছে।

আসছি ভাবী, ফোন ডিস্কানেক্ট করে গাড়ি ছোটালো, বিশ মিনিটের মধ্যে পোঁছে গেলো রুদ্র, বাসায় প্রবেশ করে দেখলো নীলের শ্বশুর শ্বাশুড়ি বসে আছে, রুদ্র সবাইকে সালাম দিয়ে বসলে নীলের শ্বশুর বললো, রেনুকে নিয়ে যেতে এসেছি। 

অসুবিধা কি, ভাবী অনেকদিন যায়নি, ঘুরে আসুক।

রুদ্রর মা ছলছল চোখে বললো, উনারা রেনুকে একেবারের জন্য নিয়ে যেতে চান।

হোয়াট।

রুদ্র আমাদের মেয়ে একটা পাগলের সংসার আর করতে পারবেনা, আমরা রেনুকে নিয়ে যাবো।

রুদ্র রেনুর দিকে তাকালো, এরপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো, আপনাদেরকে আমি সম্মান করি, তাই বলে আপনারা আমার ভাইকে নিয়ে এসব কি বলছেন?

আমরা ঠিকই বলছি, তোমার ভাই আসতো এক পাগল, ওর সংসারে আমার মেয়ে থাকবেনা।

রুদ্রর হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেলো।

রেনু বলে উঠলো, এ আমার সংসার, তোমরা কে এসেছো আমার হাসবেন্ড, আমার পরিবারকে নিয়ে কথা বলতে, তোমরা এই মুহূর্তে বেরিয়ে যাও এ ঘর থেকে, নাহলে আমি ভুলে যাবো তোমরাই আমাকে জন্ম দিয়েছো। 

রেনু তুই ভুল করছিস, আমরা দরকার হলে তোকে অন্য জায়গায় বিয়ে দেবো।

শাটআপ, রেনু রাগে ফুসতে লাগলো। 

 

........ চলবে।

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ