রঙধনু আকাশ (৬ষ্ট পর্ব)

ইঞ্জা ১১ জুলাই ২০২০, শনিবার, ০৭:৩৩:২৬অপরাহ্ন গল্প ৩২ মন্তব্য

রুদ্র ওর বন্ধুকে নিয়ে টেক্সটাইল ফ্যাক্টরি দেখাতে নিয়ে এসেছে, চিনু পাশাপাশি দুইটা ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখে বললো, আমি এক কাজ করি বন্ধু, প্রথমেই কয়েকটা মেকানিক এনে সব মেশিন চেক করে নিই, এই মেসিন গুলো সেকেন্ড হ্যান্ড হলেও অনেক উন্নত, তুই লোক নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা নে, ততদিনে মেশিন গুলো রেডি হয়ে যাবে, প্রডাকশন করার মতো অবস্থায় এলে আমি ক্লায়েন্ট (বায়ার) ধরবো।

তারমানে হলো তুই দ্বায়িত্ব নিচ্ছিস, রুদ্র চিনুর চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলো। 

চিনু হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ইয়েস।

রুদ্র হ্যান্ডশেক না করে চিনুর হাতে চাবি গুলো দিয়ে বললো, এখন ফ্যাক্টরি তোর দ্বায়িত্বে দিলাম, এখন চল অফিসে, বাকি ফর্মালিটি করে নিই, এই গার্ড তুমি গেইট গুলো লাগাও, বলেই রুদ্র চিনুকে নিয়ে গাড়ির দিকে এগুলো।

রুদ্ধ  আবার বললো, এক নম্বরে একটা অফিস আছে, এখন থেকে তুই বসবি, কেমন লোক লাগবে তা আজই লিস্ট দিয়ে দিবি, সাথে তাদের স্যালারি স্ট্রাকচার গুলো, মাসে কেমন খরচা পড়বে, অফিসার কাদের নিবি সব তোর দ্বায়িত্বে। 

ঠিক আছে চিন্তা করিস না।

প্রথম বছরে তুই আমাকে প্রফিট এনে দিবি, এরপর তোর সাথে এগ্রিমেন্ট করে নিবো।

ধন্যবাদ বন্ধু, সত্যি আমি কৃতজ্ঞ।

না বন্ধু,,আমি জানি এসব তোকে দিয়েই সম্ভব এবং তুই সেই বিশ্বাস রাখবি।

অফিসে এসে সব কাগজপত্র রেডি করে রুদ্র জিএম সাহেবকে সব বুঝিয়ে চিনুকে বললো, টাকা কিছু লাগলে এডভান্স নিতে পারিস।

না বন্ধু এখন কিছু লাগবেনা।

সেলফোনে রিং হচ্ছে শুনে রুদ্র পকেট থেকে ফোন নিয়ে রিসিভ করে বললো, হাঁ ভাবী বলো।

রুদ্র তুমি ব্যস্ত? 

না ভাবী ফ্রি আছি বলো।

আজ তো রুহির জন্মদিন, ছোটো একটা কেক নিয়ে আসতে পারবে?

হায় হায়, রুহির আজ জন্মদিন বলবেনা, তাহলে ওর বন্ধুদের দাওয়াত দেওয়ার ব্যবস্থা করতাম।

না রুদ্র, এখন এসব আমাদের মানায় না, ঘরোয়া ভাবেই করবো।

না ভাবী তা হতে পারেনা, বড় না করো এটলিস্ট ওর কাছের কিছু বন্ধুদের আসতে বলো, ডিনারের আয়োজন তুমি করো, বাকি সব আমি নিয়ে আসছি।

আচ্ছা ঠিক আছে কথা কিন্তু বেশি কিছু করোনা।

আচ্ছা ঠিক আছে আমি এক ঘন্টার মধ্যেই সব নিয়ে আসছি, রাখছি এখন।

ঠিক আছে।

রুদ্র ফিরে তাকালো চিনুর দিকে, আর কিছু বন্ধু?

না এখন আর দরকার নেই, আগামীকাল আমি মেকানিক নিয়ে সব মেসিন চেক করে নেবো।

ঠিক আছে বন্ধু, তাহলে তুই বাসায় যা, ভাবীকে আমার সালাম জানাবি।

ওকে বন্ধু বাই, সি ইউ সুন।

সি ইউ সুন। 

রুদ্র জিএম সাহেবকে ডেকে নতুন কিছু নির্দেশনা দিয়ে বের হলো, কাছেই গুলশান মার্কেটে যাবার উদ্দেশ্যে বের হলো।

গুলশান মার্কেটে পোঁছাতে দশ মিনিটের মতো লাগলো, গাড়ী পার্কিংয়ে রেখে সামনের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় চলে এলো, প্রথমে এদিক ওদিক ঘুরে ড্রেস খুঁজতে লাগলো রুহির জন্য, একটা দোকানে প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করলো বাচ্চা মেয়ের ভালো কিছু ড্রেস দেখান তো।

আরেহ রুদ্র ব্রো দেখছি, আপনি এখানে, ডাক শুনে রুদ্র ফিরে তাকালো, ওর পাশে এসে দাঁড়ালো অনিলা।

হাই আপনি এখানে, শপিং করছেন বুঝি?

এই টুকটাক কিছু শপিং করছি, আপনি এখানে?

ওহ হাঁ, আজ রুহির জন্মদিন মানে আমার ভাইয়ের মেয়ের, তাই একটা ভালো ড্রেস খুঁজতেছি।

তাই, তা চলুন আমার সাথে, উনাদের আরেকটা দোকান আছে, ওখানেই পাবেন ভালো সব ড্রেস, আসুন প্লিজ।

রুদ্র ফলো করলো অনিলাকে, কয়েক দোকান ফেলেই আরেকটা দোকানে নিয়ে গেলো অনিলা, ওখানে গিয়ে বললো, বাচ্চাদের জন্মদিনের জন্য ভালো ড্রেস দেখান তো।

দোকানদার হাসি মুখে একে একে অনেক গুলো ড্রেস দেখাচ্ছে, হটাৎ রুদ্রর চোখ গেলো বাচ্চাদের জন্য তৈরি ডানার দিকে, রুদ্র  বললো, ঐ ডানাটা দেখান তো।

দোকানদার ফ্রেস দেখে ডানা বের করলো, তা দেখে রুদ্রর চোখ জ্বলে উঠলো, মুখে বললো, খুব সুন্দর।

অনিলা একটা ড্রেস চয়েজ করে ডানার পাশে রেখে বললো, দেখেন কেমন লাগছে? 

ম্যাগনিফিসেন্ট লাগছে, এই কম্পলিট সেট প্যাক করে দিন। 

দোকান থেকে দুজনেই বেরিয়ে এলো, রুদ্র বললো, আপনার সফট ডিংক্স চলবে?

চকলেট নেবেন না।

তাতো নেবোই, আগে গলাটা ভিজাই বলেই সামনের ড্রিংক্স কর্ণার থেকে দুইটা কোকের ক্যান নিয়ে একটা অনিলাকে দিয়ে বললো, এমডি স্যার কেমন আছেন?

আব্বু ভালো আছেন, উনার মুখে তো আপনার আব্বার অনেক গল্প শুনলাম, সত্যি উনি নাকি মাটির মানুষ ছিলেন।

আসলে স্যারকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত, আমাদের অনেক বড় উপকার করলেন উনি।

তাহলে চলুন বাসায়, ধন্যবাদ জানিয়ে আসবেন।

না না আজ না, বাসায় পোঁছাতে হবে, আপনিও আসুন, আসলে খুশি হবো?

না ধন্যবাদ, আজ আর নয়, চলুন সামনের দোকান থেকে চকলেট কিনে নিই।

চলুন। 

চকলেট কিনে দুজনই নিচে নেমে এলো, রুদ্র জিজ্ঞেস করলো, আপনার গাড়ি এনেছেন?

হাঁ ঐ যে, আর আপনার গাড়ি?

হাঁ সামনেরটাই আমার।

ওয়াও জিটিএস, দারুণ তো।

আপনার পছন্দ?

হাঁ অনেকদিনের শখ আমার।

চালাতে চাইলে এখনই ট্রাই করতে পারেন।

অনিলার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠেই ধপ করে নিভে গেলো, বললো আজ না, বাবাকে আনতে যেতে হবে। 

এনিওয়ে আপনি চাইলে যেকোনো সময় ট্রাই করতে পারেন। 

হুম করতে পারি যদি আপনি আমাকে আপনি আপনি বলা বন্ধ করেন।

রুদ্র হাসলো, আচ্ছা আসি আজ, রুহি অপেক্ষা করছে, ভালো থাকবেন, সরি ভালো থেকো, যদি বাসায় আসো খুশি হবো।

অনিলা হেসে বললো, বাই। 

বাই। 

রুদ্র বাসায় পোঁছাতেই রুহিকে দেখলো বাগানে, রুহি দৌড়ে আসছে দেখে রুদ্র তাড়াতাড়ি গাড়িটা গাড়ি বারান্দায় নিয়ে গিয়ে নিজে বেরিয়ে এলো, কাজের ছেলেকে বললো, গাড়িতে কিছু জিনিস আছে, সাবধানে নিয়ে গিয়ে ভাবীকে দাও।

রুহি এসে দুহাত বাড়িয়ে দিলো কোলে নেওয়ার জন্য, রুদ্র দ্রুত কোলে নিয়ে চুমু খেলো। 

চাচু আব্বি আজকে আমার জুন্মুদিন (জন্মদিন)।

জন্মদিন, বলো জন্মদিন।

জন ম দিন।

গুড। 

আমার গিফত (গিফট) তই? 

রুদ্র পকেট থেকে একটা স্নিকারস চকলেট নিয়ে দিলো রুহিকে, হ্যাপি বার্ডে প্রিন্সেস। 

থনকু (থ্যানক ইউ)। 

রুদ্র আবার চুমু খেয়ে রুহিকে কোলে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো।

রুদ্র এসেছিস বাবা, বোস।

কাজের ছেলে এসে পানি দিয়ে গেলে রুদ্র পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিয়ে বললো, মম ভাবী কই? 

আসছি, কিচেন থেকে ডাক দিয়ে জবাব দিলো রেনু, কিছু সময়ের মধ্যেই রেনু এসে বললো, খোঁজ করছিলে তুমি?

হাঁ ভাবী যা যা এনেছি দেখেছো? 

হাঁ খুব সুন্দর হয়েছে, সত্যি তোমার চয়েজ আছে।

ও আমার চয়েজে নয়, অনিলা চয়েজ করে দিলো।

রেনু ভ্রু কুঁচকে তাকালো রেনু, তিনি কে গো দেবর সাহেব?

অতো ভ্রু কুঁচকাতে হবেনা, অনিলা হলো এবি ব্যাংকের এমডি সাহেবের মেয়ে, আমার অফিসেই নিয়ে এসে ছিলেন ওদিন, আজ গুলশান মার্কেটে দেখা হয়ে গেলো। 

ওহ আই সি। 

এই তোমার ওসব ফালতুমি রাখো তো, আমি যাই ফ্রেস হয়ে আসি।

সন্ধ্যার পর রুদ্র রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো, ঘর ভর্তি মেহমান, বাচ্চাদের কলকাকলীতে ভরপুর, কেক কাটার প্রস্তুতি চলছে, এই মুহূর্তে দারোয়ান এসে খবর দিলো, ছোটো ভাইজানের মেহমান এসেছে, বাইরে অপেক্ষা করছেন, রুদ্র দ্রুত বেরিয়ে এলো বাইরে কে দেখার জন্য, অনিলাকে দেখে অবাক হয়ে বললো, তুমি?

ভাবলাম দাওয়াত যখন দিয়েছেন তাহলে একবার আসা উচিত, এছাড়া চকলেট গুলো আমার কাছেই রয়ে গিয়েছিলো, এসব ছাড়া জমবে কি করে?

ওহ সরি সরি, আসো ভিতরে আসো। 

অনিলা চকলেট গুলো রুদ্রর হাতে দিয়ে নিজে গাড়ি থেকে প্রমান সাইজের একটা টেডি বিয়ার নিলো। 

রুদ্র অনিলাকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ড্রয়িংরুমে বসতে বলে বললো, তুমি বসো, আমি মমকে ডেকে আনছি, সামনে ভাবীকে দেখতে পেয়ে ডাক দিলো, ভাবী এদিক আসো।

রেনু আসলে বললো, ভাবী এ হলো অনিলা।

ভাবী বড় বড় চোখ করে বললো, হাই অনিলা, কেমন আছো? 

জ্বি আমি ভালো, কেমন আছেন? 

আমি ভালো। 

রুদ্র ওর মাকে ডেকে এনে পরিচয় করিয়ে দিলো, সবাই এক সাথে গল্প করছে, ইতিমধ্যে নীল এসে হাজির।

রুদ্র অনিলাকে বললো, আমার ভাইয়া। 

নীল বাচ্চাদের সাথে খেলছে দেখে অনিলা অবাক হয়ে দেখছে খেয়াল করে রেনু বললো, আসলে ড্যাডের হটাৎ  মৃত্যুতে ও খুব শকড হয়েছে, মাথায় একটু গোলমাল হয়ে গেছে ওর।

আহা, কষ্ট পেলাম, আশা করি দ্রুতই সুস্থ হয়ে যাবে ভাইয়া। 

কেক কাটার সময় রেনু অনিলাকে নিজের পাশে নিয়ে দাঁড়ালো, বাচ্চারা সবাই ঘিরে ধরেছে রুহিকে, সবাই এক স্বরে গাইছে, হ্যাপি বার্থডে টু রুহি।

রুদ্র নিজের ফোন দিয়ে ছবি তুলে চলেছে, রুহিকে কেক কেটে দিলে রুহি প্রথমে ওর মাকে, দাদুকে, রুদ্রকে খাইয়ে দিলো, এরপর অনিলা নিজেই হাত বাড়িয়ে কেক কেটে  প্লেটে প্লেটে সার্ভ করতে লাগলো দেখে রুদ্র মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বললো, তুমি ওসব ছাড়ো, আসো বসি।

অনিলা দুই প্লেট কেক নিয়ে একটা রুদ্রকে দিয়ে নিজে একটা নিলো, চলুন।

রুদ্র সামনেই সুমিকে পেয়ে পরিচয় করিয়ে দিলো, অনিলা এ হলো আমার ছোটো বোন সুমি, সুমি এ অনিলা, এবি ব্যাংকের এমডি সাহেবের মেয়ে। 

সুমি অনিলাকে নিয়ে সোফায় বসে গল্প করছে, এরমধ্যে রুহি সুমির পাশ ঘেষে দাঁড়িয়েছে দেখে অনিলা হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকলো, রুহি কাছে গেলে সোফায় রাখা টেডি বিয়ারটা রুহিকে দিলে রুহি খুশি হয়ে উঠে পুতুলটাকে ভালো করে দেখতে লাগলো। 

তোমাদের বাসাটা অনেক বড় দেখছি, অনিলা সুমিকে বললো।

হাঁ বাবা বানিয়েছিলেন।

আজকাল এতো বড় তাও ডুপ্লেক্স বাড়ি দেখা যায়না, কয়টা রুম এখানে? 

উপরে নিচে মিলিয়ে আটটা রুম, সার্ভেন্ট কোয়াটার আলাদা। 

চমৎকার বাড়িটা। 

আপনার ভালো লেগেছে?

বাড়িটার চাইতে তোমাদেরকে বেশি ভালো লেগেছে, আজকালকার দিনে পুরা ফ্যামিলি এক সাথে থাকেনা, যা তোমরা আছো। 

...... চলবে।

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ