
রুদ্র আর অনিলা বাংলাদেশে ল্যান্ড করলো রাত নয়টার সময়, ড্রাইভার এসেছিলো ওদের নিতে।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা রেডি করতে করতেই রুদ্র ফিরে এলো কবরস্থান থেকে, বাইরের ট্যাপে পা ধুয়ে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে নাস্তার টেবিলে বসলো।
কি ম্যাডাম আজ কি খাওয়াবে?
আজ ভেজিটেবল, লুচি আর গরম হালুয়া করেছি।
দাও দাও আগামীকাল হয়তো শুকনা রুটি খেতে হবে।
কি বলছো, শুকনা রুটি কেন খাবে?
জামিন না পেলে খেতে হবেনা?
কি যা তা বলছো?
রুদ্র হো হো হো করে হাসতে বললো, দেখছিলাম তুমি রাগলে কেমন লাগে।
আর কখনো বলোনা।
রুদ্র মিষ্টি হেসে সেলফোন থেকে উকিলকে ফোন দিলো।
হ্যালো মোয়াজ্জেম সাহেব কি খবর, আমি তো আসলাম, আপনি আজকেই জামিন নেওয়ার ব্যবস্থা করুন, ঠিক আছে আমি দশটার মধ্যেই পোঁছে যাবো, ফোন ডিসকানেট করে খেতে শুরু করলো।
আহা গরম গরম সুজির হালুয়া খেতেও সেই রকম স্বাদ।
ভালো লেগেছে, অনিলা জিজ্ঞেস করলো মিষ্টি হেসে।
অবশ্যই, একদম যেন মম রান্না করেছেন।
এইটা মমই শিখিয়েছেন।
রুদ্র কফিতে চুমুক নিয়ে জিএম সাহেবকে কল দিলো।
দুপুর একটার আগেই রুদ্র জামিন পেলো নিম্ন আদালত থেকে, উকিলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে ফোন নিয়ে দেখলো আমেরিকা থেকে অসংখ্য মিস কল, দ্রুত ডায়াল করলো, দুই রিং হতেই ওর মা রিসিভ করে বললো, রুদ্র কি হলো, জামিন পেয়েছিস?
রুদ্র হেসে বললো, মম কেন এতো টেনশন করছো, আমি জামিন পেলাম মাত্র।
আলহামদুলিল্লাহ, সত্যি খুব টেনশনে ছিলাম বাবা।
মম টেনশন করোনা, ঘুমিয়ে পড়ো, আর হাঁ ভাইয়ার খবর কি, কেমন আছে?
ওকে বেডে দিয়েছে, একটু চুপচাপ হয়ে গেছে, আমাদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছে।
কি বলো মম, তোমাদের চিন্তে পারছেনা?
না, ডাক্তার বলেছে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
আচ্ছা ঠিক আছে মম, তুমি শুয়ে পড়ো, সকালে কল দিও।
আচ্ছা বাবা, ভালো থাকিস।
তুমিও ভালো থেকো মম, রাখছি।
ফোন ডিসকানেট করে অনিলাকে কল দিয়ে জানালো ওর জামিনের ব্যাপারে, সাথে এও বললো যে ও স্টিল মিলে যাচ্ছে, ওখান থেকে বাসায় ফিরবে।
রাত নয়টার পর বাসায় ফিরে এলো রুদ্র, রুদ্রের গাড়ির আওয়াজ পেয়ে অনিলা বেরিয়ে এলো গাড়ি বারান্দায়, রুদ্র গাড়ি থেকে নেমে এলে অনিলা হাসি মুখে রুদ্রর বিজনেস ব্যাগ হাতে নিয়ে রুদ্রর পিছন পিছন ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলো, কাজের ছেলে পানি দিয়ে গেলে রুদ্র পুরো গ্লাস পানি খেয়ে তাকালো অনিলার দিকে।
অনিলা মিষ্টি হেসে বললো, স্টিল মিলে কি করলে?
আজ ওখানে যাওয়ার পর যে কয়জন মারা গেছে, তাদের পরিবারকে এক লক্ষ করে টাকা দিয়েছি, সাথে প্রতি পরিবারের একজন সক্ষম পরিবারকে চাকরির ব্যবস্থা করেছি, ছোটোদের পড়ালেখার সকল দ্বায়িত্ব কোম্পানি বহন করবে এখন থেকে, এছাড়া সেইসব পরিবারের অবিবাহিত মেয়েদের বিয়ের খরচ কোম্পানি বহন করবে।
খুব ভালো করেছো।
আমি যাওয়ার সময় এলাকার থানা এসপিকে সাথে নিয়ে গিয়ে এই সকল কাজ কর্ম করে আমাদের পক্ষে রায় দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি, এখন আর মামলার ভয় নেই।
খুব খুশি হলাম, এখন চলো তুমি শাওয়ার নিয়ে চেইঞ্জ করে নাও, তারপর ডিনার খাবো, ওহ ভালো কথা আব্বু আসতেছেন দেখা করতে, এক সাথে খেতে বলেছি।
ওহ তাহলে তুমি নিচেই থাকো, আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
রুদ্র ফ্রেস হয়ে নিচে নেমে এসে দেখলো ওর শ্বশুর অনিলার সাথে গল্প করছে, রুদ্র এগিয়ে গিয়ে কদমবুচি করে জিজ্ঞেস করলো, আব্বু কেমন আছেন?
আমি ভালো আছি বাবা, অপুর ঘটনা শুনলাম, মেয়েটির জন্য কষ্ট হচ্ছে।
হাঁ আব্বু, সত্যি কষ্টকর বিষয়, খবর পেলাম আগামীকাল ওর বডি নিয়ে আসা হচ্ছে, পরশুদিন জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।
আহা এইভাবে অল্পদিনে মেয়েটি মারা যাবে তা কি তার বাবা ভাবতে পেরেছিলো?
রুদ্র বড় এক নিঃশ্বাস ফেললো।
আব্বু আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি, রু তুমি আব্বুকে নিয়ে আসো।
তা বাবা তোমার স্টিল মিলের ক্ষয়ক্ষতি কেমন হয়েছে?
তেমন বেশি কিছুনা, আমাদের অলরেডি নতুন মেসিনারিজ পোর্টে এসে গেছে, এতে আর সমস্যা হবেনা, আচ্ছা চলুন আগে খেয়ে নিই।
ঠিক আছে চলো।
অনিলা আজ মুরুগীর রোস্ট, মুরগীর কলিজি গিলা আলু দিয়ে কিমা, মিক্সড সবজি আর গরুর মাংসের ভুনা করেছে দেখে রুদ্র জিজ্ঞেস করলো, এসব কি চট্টগ্রামের স্টাইলে করা।
কেন তোমার ভালো লাগেনা, সুলতান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন।
আমার খুব পছন্দের আব্বু, অবশ্য এই প্রথম খাবো, বলেই হাসলো রুদ্র।
খাওয়া শেষে সবাই ড্রয়িংরুমে বসলে অনিলা ফ্রুট কাস্টার্ড নিয়ে এসে ওর বাবা আর রুদ্রকে দিলো।
তা তোমাদের টুর কেমন হলো ফ্রান্সে, অনিলার বাবা জিজ্ঞেস করলেন।
আমার মিটিংটা ভালোই হয়েছে আব্বু, পুরা এক বছরের অর্ডার পেলাম, ওরা ভালো পেমেন্ট দিচ্ছে।
খুব ভালো হলো।
আগামী তিন মাসের মধ্যে আপনাদের সিন্ডিকেট লোন আমি সম্পূর্ণ ক্লিয়ার করে দেবো ইনশা আল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো খবর, তা নীলের কি অবস্থা এখন?
শুনলাম একটু চুপচাপ হয়ে গিয়েছে, মমদের তেমন চিনতে পারেনি, কিন্তু ডাক্তাররা বলেছে এমন হয়, ধীরেধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
নিশ্চয় ঠিক হয়ে যাবে, তা অনিলা তোর কাস্টার্ড আজ খুব ভালো হয়েছে।
তাই এইটা মমের রেসিপি।
বেশ বেশ, শিখছিস দেখে খুব ভালো লাগলো, আমি আজ উঠছি, তোদের দেখতে এসেছিলাম।
যাবে এখন, আরেকটু বসতে।
নারে মা, তুই জানিস আমি তাড়াতাড়ি ঘুমাই, আজ আসি।
রুদ্র বাবা ভালো থেকো, তোমার মমকে আমার সালাম দিও,,আসি আজ।
রুদ্র আর অনিলা কদমবুচি সালাম করলো।
পরদিন সকালে অফিসে নিজের কেবিনে বসে ফাইলপত্র দেখছিলো রুদ্র, ইতিমধ্যে চিনুও এসেছে, জিএম সাহেব এসে প্রবেশ করে বললো, স্যার আপনি একটু বাইরে আসলে ভালো হতো।
কেন কি হয়েছে বলে রুদ্র উঠে গেলো, সাথে চিনুও এগুলো, রুদ্র কেবিন থেকে বেরিয়ে এলে দেখলো পুরো অফিসের স্টাফ অফিসাররা এসে দাঁড়িয়েছে।
অফিসের মেয়ে স্টাফ একজন এসে রুদ্রর হাতে ফুলের বুকে দিলে রুদ্র আরো অবাক হলো।
স্যার গতকাল আপনার মানবিকতার খবর আমরা জেনেছি, এতে সত্যি আমরা আপ্লুত হয়ে গেছি, এমন উদাহরণ এই দেশে খুবই কম, আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছে বেটকম গ্রুপ পরিবার, বলেই জিএম সাহেব হাততালি দিতে শুরু করলে পুরা অফিসের সবাই হাততালি দিতে শুরু করলো।
এ খুব সামান্য ব্যাপার, আমি আপনাদেরকে খেয়াল না রাখলে কে রাখবে বলুন, রুদ্র সবার উদ্দেশ্যে বললো, একটু দম নিয়ে বললো, আপনারা আমার পরিবারের অংশ, আমি নিশ্চয় চাইবোনা আপনাদের কারো ক্ষতি হোক।
অফিসের পিয়ন এসে সামনে বড় একটা কেক এনে রাখলে রুদ্র বলো, এইসব আবার কেন?
জি এম সাহেব বললেন, স্যার আপনার পরিবারের সবাই মিলে কেকটি এনেছে আজকের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে।
রুদ্র এগিয়ে গিয়ে গিয়ে সবাইকে নিয়ে কেক কাটলে সবাই হাততালি দিয়ে স্বাগতম জানালো।
আপনারা সবাই খান, আমি রুমে বসছি, চিনু আয়।
রুমে প্রবেশ করে রুদ্র চিনুকে তার ফ্রান্সের এগ্রিমেন্ট গুলো দেখালে চিনু বললো, এতো দেখি পুরা এক বছরের ডিল?
হাঁ বন্ধু, ওরা আমাদের স্যাম্পল দেখে খুশি হয়েছে, ওদের মার্চেন্টডাইজার ডাইরেকটর আসবেন আগামী মাসে, ওরা আমাদের প্রগ্রেস দেখবে।
পিয়ন এসে বড় টুকরোর কেক দিয়ে গেলো দুজনের জন্য।
রুদ্র চামুচ দিয়ে কেটে কেক খেতে শুরু করলো।
তুই একবার ফ্যাক্টরি এসে ঘুরে যা বন্ধু, এখন তো ফ্যাক্টরি খুব ধুমছে চলছে, দেখবিনা?
তুই কেক খা, আমি অবশ্যই আসবো।
তা বড় ভাইয়ের অপারেশন কেমন হলো, ভাইয়া ঠিক আছে তো?
আল্লাহর অশেষ রহমতে সব ঠিক মতো হয়ে গেছে, গতকাল বেডে দিয়েছে।
শুনে খুব ভালো লাগলো।
ভাবী বাচ্চারা ভালো তো?
হাঁ ওরা সবাই ভালো আছে।
এক কাজ করনা, আগামীকাল বন্ধ আছে, সবাইকে নিয়ে আমার বাসায় চলে আয়।
আমরা না, তোরা চলে আয়, আমরা খুশি হবো।
তাই, আচ্ছা আগামীকাল দুপুরে তোর ওখানে খাবো।
এইতো বন্ধুর মতো কথা বললি, বলেই চিনু হাত বাড়ালো দেখে অনিক হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডসেক করলো।
…… চলবে।
ছবিঃ গুগল।
১৮টি মন্তব্য
শামীম চৌধুরী
যাক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। নীলের ধীরে ধীরে সুস্থ্যতা, রুদ্রুর জামিন, ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে সাহায্য সহযোগিতা সহ রুদ্রুর বিজনেস ট্যাকনিক সবই ছিল রুদ্রুর মেধার স্বাক্ষর। আর এমন এমন লোভনীয় খাবার প্রতি পর্বে থাকায় আমাদের লোভ বাড়িয়ে দিচ্ছেন ভাই। লুচি সব্জি সঙ্গে হালুয়া। আহা…!!
ইঞ্জা
এমন সব টেকনিক আপনার ভাইয়ের আছে বলেই গল্পে আসছে ভাই, আমি জীবনেও অমানবিক হইনি।
চট্টগ্রামের খাবার এই দেশে সবার পছন্দ ভাই, কারণ এসবের প্রিপারেশন সবসময় অনন্য হয়।
ধন্যবাদ ভাই।
তৌহিদ
যাক বাবা, সব ভালোয় ভালোয় শেষ হলো। আমি নিজেই টেনশনে ছিলাম। আপনার গল্পের সাথে মিশে গিয়েছি ভাই, একদিন দেরী হলেই কেমন যেন লাগে না পড়তে পারলে।
রুদ্রর মত এদেশের সকল ইন্ড্রাস্ট্রিয়ালিস্ট যদি মানবিক হতো তাহলে কতইনা ভালো হতো! নীলের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
আজকের ছবিটাও কিন্তু দারুণ হয়েছে। ভালো থাকুন ভাই। শুভকামনা রইলো।
ইঞ্জা
সমস্যা হলো নিজেই ব্যস্তভহয়ে পড়েছি, এখন আর সবসময় লেখা যায়না ভাই।
সত্যি তাই, সকল শিল্পপতিদের তার শ্রমিক এবং স্টাফদের প্রতি মানবিক হওয়া উচিত।
ধন্যবাদ ভাই, ভালোবাসা জানবেন।
ছাইরাছ হেলাল
অনেকগুলো গুড টার্ন একদিনে !!
অশনি সংকেত কী না কে জানে !!
ইঞ্জা
জীবনে সময় সবসময় এক থাকেনা ভাইজান।
সাথে থাকুন।
ধন্যবাদ।
সুপায়ন বড়ুয়া
জামিন হওয়াতে শুকনো রুটি খেতে হলো না।
মানবিক কাজগুলো করাতে ভালই লাগলো।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
আন্তরিক ধন্যবাদ দাদা সাথে থাকার জন্য।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
একসাথে এতো ভালো খবরে ভয় লাগে আনন্দ ও লাগে। রুদ্র অনিলার পুরো পরিবারের জন্য শুভকামনা। খাবারের এমন বর্ণনা শুনলে কার না জিভে জল আসে!! ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভ কামনা নিরন্তর
ইঞ্জা
সুন্দর মন্তব্যে আপ্লুত হলাম আপু।
চট্টগ্রামের রেসিপি সবসময় অনন্য হয় যা সারা দেশে জনপ্রিয়।
শুভকামনা জানবেন।
আরজু মুক্তা
বাহবা! গল্প কিন্তু ভালোই জমছে। এখন টার্নিং পয়েন্ট গুলোতে কৌতূহল জাগছে।
ইঞ্জা
আগামী পর্ব থেকে শুরু হবে আসল টার্নিং পয়েন্ট, গল্পের শেষার্ধ শুরু হবে আগামী পর্ব থেকে।
সাথে থাকুন আপু।
ধন্যবাদ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আগের পর্ব বোধহয় মিস করেছি । তবে বুঝতে পারলাম ভালো দিকেই যাচ্ছে। চলুক।
শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
ইঞ্জা
আমার লেখা পড়ছেন এই অনেক আপু, ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
জামিন ও মানুষের প্রতি মানুষের কর্তব্য মানুষ মহান হয়। আর সবা র ভালোবাসাও পায়।
সব সামলে নিয়ে রুদ্র আরো মহৎ হোক প্রত্যাশা রাখি। আর বাস্তব বড়ই কঠিন। এই দেশে এইরকম মহৎ প্রাণ মানুষ কাল্পনিক।
ইঞ্জা
সত্যি ভাই, মহৎ প্রাণ মানুষই বাঁশটা খায় এই সমাজে।
ধন্যবাদ ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
সহমত
ইঞ্জা
❤️❤️