রঙধনু আকাশ (২য় পর্ব)

ইঞ্জা ২৭ জুন ২০২০, শনিবার, ০৭:১০:২৮অপরাহ্ন গল্প ২৮ মন্তব্য

পরদিন রুদ্রর বাবাকে দাফনের পর বাড়িতে আসা সকল আত্মীয় স্বজনরা একে একে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

রুদ্র ভিতরের রুমে মার কাছে গেলো দেখা করতে, ভাবীকেও সেখানে পেয়ে বললো, ভাবী তুমি মমের জন্য খাবার নিয়ে আসো, গতকাল থেকে মম না খেয়ে আছে।

বাবা, তোরা খেয়ে নে, আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা, রুদ্রর মা ফুঁফিয়ে কান্না করতে লাগলেন। 

বিছানাতে রুদ্রর ছোটো বোন শুয়ে আছে দেখে বলল, মম রুমিও খায় নাই, আসলে ড্যাডের এইভাবে চলে যাওয়া কখনো মানার নয়, এরপরেও আমাদের চলতে হবে, ভাবী ডাইনিংয়ে খাবার দাও আমি মম আর রুমিকে নিয়ে আসছি, মম উঠো তো, এই রুমি উঠ মুখ হাত ধুয়ে নে, মম তোমরা আসো, আমি ভাইয়া কই দেখছি, বলেই রুদ্র মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে সামনে ভাবীকে দেখে বললো, ভাবী ভাইয়া কই?

উপরে আছে, ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে।

ওহ আচ্ছা আমি যাচ্ছি, ডেকে দেখি উঠবে কিনা, এখন কেমন লাগছে ভাইয়ার?

ভালো না, ডাক্তার বলেছে খুব শকড।

রুদ্র বড় এক নিশ্বাস ফেলে সিড়ি দিয়ে উপরে চলে গেলো, নীলের বউ রুদ্রর যাওয়া দেখে বড় এক নিশ্বাস ফেলে কিচেনের দিকে এগুলো।

 

নীলের দরজায় হাল্কা নক করেই থমকে গেলো রুদ্র, একটা মেয়ে নিলের মাথায় হাত ভুলাচ্ছে আর নীল হে হে হে করে হাসছে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কে আপনি, ভাইয়ার রুমে কি করেন? 

মেয়েটা ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে, আমতা আমতা করে বললো আমি রিয়া, রেনু আপুর ছোট বোন।

এই রুদ্র ও নাকি আমার শালি, হে হে হে, দেখছোস না মাথায় বিলি কাটছে।

ওহ সরি আমি আপনাকে চিনতে পারিনি, এই প্রথম দেখলাম কিনা। 

না ঠিক আছে, আপনি বসুন।

না এখন বসবোনা, চলুন টেবিলে খাওয়া দেওয়া হয়েছে, ভাইয়া চলো খেতে বসবে।

তা চল, ড্যাড নাহলে রাগ করবে।

রুদ্র থমকে গেলো, মুখে বললো, ভাইয়া ড্যাড আর রাগ করবেনা, উনি যে নেই।

কই কই, ড্যাড কি আবার আমেরিকা চলে গেছে, ধ্যত্তেরিকে ড্যাডের সাথে আমার কথা ছিলো, উনি না বলেই চলে গেলেন?

রুদ্র ছলছল চোখে ভাইকে ধরে বললো, চলো ভাইয়া খাবে। 

রুদ্ররা নিচে এসে ডাইনিংয়ে বসলে ওর ভাবী পাতে ভাত বেড়ে দিতে লাগলো দেখে রুদ্র বললো, ভাবী তুমিও বসো, আমরা নিয়ে খাচ্ছি।

 

খাওয়া শেষে রুদ্র কিচেনে গিয়ে ভাবীর পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো ডাক্তার ভাইয়ার ব্যাপারে কি বলেছে?

ওর সিটি স্ক্যান করে দেখাতে বলেছে।

কিন্তু কখনো তো এমন হয়নি ভাইয়ার?

প্রচন্ড শক থেকেই সমস্যা হয়েছে ডাক্তার বললো। 

তা তোমার বোন কখন এলো, আগে কখনো দেখিনি?

কোথা থেকে দেখবে, তুমি তো অস্ট্রেলিয়াতে ছিলে।

হুম আচ্ছা শুনো, ভাইয়ার সাথে সাথে মমকেও খেয়াল রেখো, আমি যাই। 

ঠিক আছে, রুদ্র একটা কথা বলবো?

বলো।

শেলিরা এসেছিলো, ঘন্টা খানেক থেকেই চলে গেছে। 

তাই?

হাঁ, কিন্তু ওর আরও সময় থাকা উচিত ছিলোনা?

রুদ্র ভাবীর দিকে তাকালো আর বললো, এতে কিছু বুঝাতে চাইছো ভাবী?

না মানে, আমতা আমতা করলো রেনু।

ভাবী সম্মন্ধটা ড্যাড ঠিক করেছিলেন, এতে আমার কিছু বলার ছিলোনা, এনিওয়ে আমি যাই, বলেই রুদ্র কিচেন থেকে বেরিয়ে গিয়ে মার রুমে উঁকি দিলো, মা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন দেখে আর এগুলোনা, উপরে চলে এলো নিজ রুমে।

 

চোখে ঘুম লেগে এসেছিলো মনে হয়, দরজায় নক শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, জিজ্ঞেস করলো কে?

রুদ্র আমি।

মম আসো।

রুদ্রর মা ভিতরে এসে রুদ্রর পাশে উঠে বসলেন।

মম কিছু বলবে?

আমি তোর পাশে শুই বাবা।

আসো বলে রুদ্র জায়গা করে দিলো।

রুদ্রর মা পাশে শুইয়ে পড়লেন।

মম তুমি ঘুমাও, গতরাতেও ঘুমাওনি।

ঘুম আসছেনা বাবা, জানিনা আল্লাহ আমার কপালে আর কত দুঃখ রেখেছে।

মম তুমি দুঃশ্চিন্তা করে কি লাভ, যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে, ড্যাড চলে গেছেন কিন্তু আমাদেরকে রেখে গেছেন তোমার জন্য, তুমি চিন্তা করোনা মম।

নীলও পাগলের মতো হয়ে গেছে।

মম ও কথা বলোনা,  ভাইয়া নিশ্চয় দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।

নীল যতদিন সুস্থ না হয়ে উঠছে ততদিন তুই সব কিছু সামলাতে পারবি তো বাবা?

নিশ্চয় পারবো মা, তুমি ও নিয়ে চিন্তা করোনা, তুমি এখন ঘুমাও।

রুদ্রর মা চোখ বুঝলে রুদ্র মার দিকে তাকিয়ে থাকলো, এক সময় নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো।

চারদিন পরঃ

রুদ্রর বাবা শফিক সাহেবের মৃত্যুর পর আজ রুদ্র অফিসে এসে নিজ কেবিনে বসলো, কোম্পানি সেক্রেটারিকে রুমে আসতে বললো রুদ্র, কিছু সময়ের মধ্যেই উনি এসে দরজায় নক করে প্রবেশ করলেন।

হুদা ভাই বসুন।

স্যার ঘরের সবাই ভালো।

কি আর ভালো থাকা বলুন, বাবা ইন্তেকাল করাতে নীল ভাইয়া প্রচন্ড শকড, মাথাতে গোলমাল দেখা দিয়েছে।

তাহলে তো উনি অফিস করতে পারবেন না।

আপাতত তাই তো দেখছি।

স্যার কিছু খবর আছে।

কি বলুন। 

রুপালি, জনতা এবং এবি ব্যাংক থেকে চেয়ারম্যান স্যার পাঁচশ কোটি টাকা লোন নিয়েছিলেন তাতো জানেন?

হাঁ ঐ যে টেক্সটাইল ফ্যাক্টরি দুইটির জন্য।

হাঁ স্যার।

তো কি হয়েছে? 

ব্যাংক তিনটির এমডি আপনার সাথে জরুরি মিটিং করতে চান, পারলে আজই। 

হটাৎ কি ব্যাপার? 

চেয়ারম্যান স্যার নেই এখন, এ জন্যই উনারা বসতে চান। 

তাহলে উনাদেরকে আসতে বলুন, আমি আছি আজ। 

ঠিক আছে, স্যার আরেকটি দুঃসংবাদ আছে।

কি দুঃসংবাদ?

চেয়ারম্যান স্যারের শেয়ার ইনভেস্টমেন্ট ছিলো চারশো কোটি টাকার।

হাঁ জানি। 

স্যার সব শেয়ারের দাম ফল করেছে?

কত আর ফল করবে, পুরা শেয়ার বাজারেই তো ধস নেমেছে, আবার নিশ্চয় উঠবে?

স্যার এইবারের ধসে আমাদের শেয়ারের দাম চারশো কোটি থেকে নেমে পঞ্চাশ কোটির মতো হয়ে গেছে?

রুদ্রর মাথা ধরে গেলো, দুই আঙ্গুল দিয়ে কপালে চাপ দিতে লাগলো, একটু পর বললো, জিএম সাহেব কই, ডাকেন উনাকে, সাথে ফিন্যান্স ডিরেক্টরকেও ডাকেন।

 

সবাই আসলে রুদ্র ফিন্যান্স ডিরেক্টরকে জিজ্ঞেস করলো, শেয়ারের এতো বড় ধসের কারণ কি, এ থেকে উঠার সম্ভাবনা কতটুকু?

স্যার ধস হয়েছে কিছু শয়তান দালালদের কারণে তাতো বুঝতেই পারছেন, এখন এই শেয়ার উঠে দাঁড়াবে কখন বলা যায়না, হয়তো নাও উঠতে পারে, আবার দুই চার বছরে উঠেও যেতে পারে।

আমাদের যেসব ইনভেস্টমেন্ট আছে তাদের অবস্থা কি?

আমাদের বর্তমান মেজর ইনভেস্টমেন্ট হলো টেক্সটাইলে, ব্যাংক সহ টোটাল ইনভেস্টমেন্ট প্রায় আটশো কোটি টাকা, কিন্তু সাপ্লাইয়ার আমাদের মেসিনারিজ যা পাঠিয়েছে তার সবই রিকন্ডিশন্ড, এ নিয়ে একটা কেইসও করা হয়েছে চায়নার আদালতে।

তা আমি জানি, রুদ্র বললো।

কিন্তু স্যার এইখানে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। 

কি সমস্যা।

চেয়ারম্যান স্যারের ইন্তেকালের খবরে ব্যাংক এখন তাদের টাকা সুদে আসলে ফেরত চাইছে, নাহলে ওরা আমাদের মর্টগেজকৃত সকল জমি নিলামে তুলতে চাইছে। 

ওহ গড, রুদ্রর হার্টবিট বেড়ে গেলো। 

স্যার আরও সমস্যা আছে।

আরও কি সমস্যা?

আমাদের ফার্মাসিউটিক্যালস, বেটকম ডেবলপার সহ সব প্রজেক্টেই ব্যাংক লোন আছে।

তো?

এখন সব ব্যাংকেই লোন এডজাস্টমেন্ট করতে হবে।

এখন কেন করতে হবে, আমরা নিয়ম মতো সব পরিশোধ করে দেবো, উদ্বীগ্ন রুদ্র অসহায় চোখে তাকালো। 

 

জিএম সাহেব বললো, স্যার সব লোনই আপনার বাবার নেওয়া, উনি যেহেতু নেই, নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের সকল ঋণ শোধ করে দিতে হবে। 

রুদ্র চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো, এতে সব মিলিয়ে আমাদের কত শোধ করতে হবে?

আমি হিসেব করে দেখেছি সব মিলিয়ে লাম সাম নয়শো  কোটি টাকা।

রুদ্র স্তম্ভিত হয়ে চেয়ে রইলো জিএম সাহেবের দিকে।

স্যার আমাদের একাউন্টে এই মুহূর্তে ক্যাশ আছে দেড়শো কোটি টাকার মতো, ফিন্যান্স ডিরেক্টর বললো।

মাত্র দেড়শো?

জ্বি স্যার, এছাড়া আমাদের সকল প্রজেক্টের ব্যাংক ভ্যালু করবে সাতশো কোটি।

মাথা খারাপ নাকি, সব মিলিয়ে দেড় দুই হাজার কোটি টাকার ভ্যালু হবে, রুদ্র অবাক হয়ে বললো। 

আপনার কথা ঠিক আছে, তা যদি আমরা বিক্রি করি তাহলে এর কাছাকাছি দাম হবে, কিন্তু যখন ব্যাংক ভ্যালু করবে তখন এর দাম অর্ধেকেরই কম ভ্যালু করবে, এবং এখন তারা তাই করবে। 

লোন গুলো কি আমার বা আমার মার নামে ট্রান্সফার করা যায়না?

না করা যাবেনা, কারণ ব্যাংকের নিয়মই হলো ঋণ গ্রহীতা ইন্তেকাল করলে তার স্থলে অন্য কাউকে ঋণটা দেওয়া যাবেনা, যদি আপনি লোন শোধ করে দেন তাহলেই আপনাকে আবার ঋণ দিতে পারে, তাও যদি ব্যাংক চাই।

চিন্তিত মনে রুদ্র জিজ্ঞাসা করলো, তাহলে এখন উপায়? 

কোম্পানি সেক্রেটারি বললো, স্যার একটা উপায় আছে।

রুদ্র আগ্রহ নিয়ে তাকালো। 

 

...... চলবে।

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ