রঙধনু আকাশ (১৮তম পর্ব)

ইঞ্জা ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, শনিবার, ১০:২০:৪২অপরাহ্ন গল্প ১৮ মন্তব্য

রুদ্ররা ডিনার করছে, অনিলা আর রুদ্রর মা খাবারের সুনাম করছে, রুদ্রর মা জিজ্ঞেস করলেন, রুদ্র এইসব খাবার সম্পর্কে কিভাবে জানিস?

মম এইসব আমি আগেও খেয়েছি অস্ট্রেলিয়ার বন্ধুটির বাসাতে, এদের অনেক খাবার অবশ্য আমাদের মুখে রুচবেনা, খেতে জঘন্য, আবার বেশ কিছু খাবার খুব ভালো হলেও বেশ দামী এবং পরিমানে কম।

তাই, তাহলে এটাই ভালো, বলেই স্টেক মুখে পড়লেন রুদ্রর মা। 

রুদ্রর সেলফোন বাজছে শুনে অনিলা তাকালো রুদ্রের দিকে, মুখে বললো, ফোন রিসিভ করো, নিশ্চয় তোমার অফিস থেকে কল করছে। 

রুদ্র ফোন চেক করে বললো, না আমেরিকা থেকে কল আসছে, বলেই রিসিভ করলো। 

রুদ্র তোমরা কই, মম কই পাচ্ছিনা ফোনে, রেনুর কণ্ঠ। 

মম আমার সাথে প্যারিস এসেছেন, দেবো? 

না থাক, আসলে আর ছয়দিন পর তোমার ভাইয়ার মাথায় অপারেশন হবে ক্লট রিমুভ করার জন্য।

তাই, তাহলে আমরা আসছি। 

না দরকার নেই, কেন কষ্ট করবে বলো?

কি যে বলোনা ভাবী, ভাইয়ার অপারেশন আমরা আসবোনা? 

আচ্ছা আসলে এইখানে তিরিশ হাজার ডলার লাগবে, নিয়ে এসো। 

ও তুমি চিন্তা করোনা, কালকের মধ্যেই তোমার একাউন্টে ট্রান্সফার করে দেবো। 

ঠিক আছে, রাখছি। 

 

কি কি হয়েছে রুদ্র, নীলের অপারেশন হবে, উৎকন্ঠা নিয়ে রুদ্রর মম জিজ্ঞেস করলেন। 

হাঁ মম ভাইয়ার অপারেশন হবে, আমাদেরকে তাড়াতাড়ি  যেতে হবে ওখানে। 

তাহলে তোর কাজ? 

তা আমি আগামীকাল শেষ করে ফেলবো, তুমি চিন্তা করোনা, সুখবর হলো ভাইয়া সুস্থ হয়ে যাবে। 

আলহামদুলিল্লাহ।  

অনি তুমি এক কাজ করো, আগামীকাল তুমি মমকে নিয়ে আইফেল টাওয়ার আর জাদুঘর ঘুরে আসো, সরি এইখানে তোমাদের নিয়ে ঘুরতে না পারলেও আমেরিকা ঘুরে বেড়াবো। 

অনিলা হেসে বললো, কি যে বলোনা, আগে ভাইয়া সুস্থ হয়ে নিক, তারপর নিশ্চয় অনেক ঘুরবো আমরা। 

ধন্যবাদ তোমাকে। 

ছিঃ ছিঃ পাপ লাগাবে নাকি, বলেই হি হি হি করে হাসতে লাগলো অনিলা, সাথে রুদ্রর মাও হাসতে লাগলেন।

রুদ্র একটা হাত বাড়িয়ে অনিলার হাত ধরে একটা চাপ দিয়ে বললো, আই লাভ ইউ। 

রুদ্র অপারেশনের কত লাগবে কিছু বলেছে?

হাঁ মম তিরিশ হাজার ডলার লাগবে।

এই সময়ে এতো টাকা খরচা হবে? 

ওহ মম তুমি চিন্তা করোনা।

 

হোটেলে ফিরে রুদ্র ওর মাকে রুমে দিয়ে নিজে এলো নিজ রুমে, এসেই ঢাকার অফিসের জিএমকে কল দিয়ে বললো, কাল সকালের মধ্যেই যেন তিরিশ হাজার ডলার জমা করানো হয় রেনু ভাবীর আমেরিকান ব্যাংক একাউন্টে, ফোন রেখে রুদ্র চেইঞ্জ করে নিয়ে ভোর ছয়টায় ওয়েক আপ কল দিতে বললো রিসেপশনে কল দিয়ে, এরপর বিছানায় শুয়ে পড়লো।

অনিলা কিছুক্ষণ রুদ্রর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, তুমি কিছু চিন্তা করছো রু?

হাঁ ভাবছি ভাইয়া সুস্থ হয়ে উঠলে আমার জন্য ভালোই হবে। 

কেমন? 

ভাইয়া ছিলো আমাদের বেটকম গ্রুপের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর, উনার অবর্তমানে আমি সব সামলিয়েছি। 

তাতো ভালো কথা। 

তা নয়, ভাইয়া সুস্থ হয়ে গেলে উনাকে সেই দ্বায়িত্ব ফিরিয়ে দেবো আমি। 

ভালোই তো। 

হাঁ খুব ভালো হবে, আচ্ছা শুনো ভোর ছয়টায় উঠবো আমি, তোমরাও উঠে গেলে এক সাথে ব্রেকফাস্ট করে আমি বেরিয়ে যাবো, সাড়ে আটটায় মিটিং আমার, তুমি মমকে নিয়ে ঘুরে এসো। 

অনিলা রুদ্রের বুকে নিজেকে সঁপে দিয়ে বললো, তুমি থাকলে ভালো লাগতো। 

আমারও ভালো লাগতো, কিন্তু কি করবো বলো। 

একটা কিছু করার তো আছে তোমার। 

কি করার আছে বলো, আমি নিশ্চয় করবো। 

আমাকে ভালোবাসা দাও, অনিলার চোখে মুখে দুষ্টামির হাসি। 

রুদ্রও চোখের ভ্রু নাচালো। 

 

ইন্টারকমের রিংগিংয়ের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো রুদ্রের, ফোনটা রিসিভ করে বললো, থ্যাংক ইউ ফর থে কল, বলেই রেখে দিলো ফোন, পাশ ফিরে দেখলো অনিলা নেই, নিশ্চয় ওয়াসরুমে গেছে, নিজেকে নিজেই বলে উঠে পড়লো, উঠে গিয়ে সোফায় বসে পানির বোতল খুলে পুরা বোতলের পানি খেলো ঢকঢক করে। 

অনিলাকে বাথরুম থেকে বেরুতে দেখে অবাক হয়ে দেখলো গোসল করে বেরিয়েছে অনিলা। 

তুমি কখন উঠলে?

এই পনেরো মিনিট আগে, যাও ফ্রেস হয়ে নাও। 

আচ্ছা যাচ্ছি বলে রুদ্র ব্যাগের দিকে এগুলো শেভিং কিট নেওয়ার জন্য। 

আমি ওয়াসরুমে রেখেছি রেডি করে। 

তাই, ইউ আর সো সুইট বলে রুদ্র এগুলো বাথরুমের দিকে, অনিলাকে বললো, তুমি মমকে উঠিয়ে দাও। 

আচ্ছা। 

রুদ্র ফ্রেস হয়ে এসে দ্রুত বিজনেস স্যুট পড়ে নিলো, নিজের হ্যান্ড ব্যাগের কাগজপত্র চেক করে নিয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে, এরপর মায়ের রুমে নক করলো। 

ওর মা বেরিয়ে এলে সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে গেলো, রেস্টুরেন্টে পোঁছেই ওরা একটা টেবিল নিয়ে বসলো। 

মম, অনি তোমরা যাও ব্রেকফাস্ট নিয়ে এসো, আমি বসছি। 

তুইও আয় বাবা, এক সাথে নিয়ে নিবো। 

রুদ্র সবাইকে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে প্লেট নিলো সবার জন্য, এরপর ফ্রেঞ্চ ক্রসোন, ফ্রেঞ্চ ব্রেড, বাটার জ্যাম, ফ্রেঞ্চ অমলেট, সসেজ, হোয়াইট বিন, মাসরুম ফ্রাই আর অরেঞ্জ জুস নিয়ে খেতে বসলো, সাথে রুদ্র নিলো ক্যাফে কফি, অনিলারা নিলো মিল্ক কফি। 

 

রুদ্রর মিটিং সাক্সেসফুল ভাবে শেষ হলো দুপুর দুটোই,  বারোটায়, বায়ার কোম্পানির ডিরেক্টররা রুদ্রকে লাঞ্চে আমন্ত্রণ করে নিয়ে গেলো লাঞ্চে, লাঞ্চ শেষে রুদ্র বিদায় নিয়ে ওলা (যা উবারের মতো) কল করলো, গাড়ি আসতে আসতে রুদ্র পাশের এক স্মোকিং জোনে গিয়ে সিগারেট ধরালো, গাড়ি আসলে সিগারেট নিভিয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে উঠে পড়লো। 

এখন যাচ্ছে থাই এয়ারলাইন্সের অফিসে, আধা ঘন্টার মতো লাগলো পোঁছাতে, বিল মিটিয়ে নেমে গেলো ও, এরপর এয়ারলাইন্সের অফিসে প্রবেশ করে নিজেদের টিকেট চেইঞ্জ করে আমেরিকার টিকেট বুক করলো সাথে নিয়ে আসা তিনজনের পাসপোর্ট দিয়ে, এইসব শেষ করে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলো। 

ইচ্ছে করছিলো অনিলাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে ওরা কোথায় কিন্তু অনিলা বা ওর মার ফোনে রোমিং নেই ভেবে আফসোস করলো।  

পথে রুদ্র খেয়াল করলো প্যারিসের সবচাইতে বড় শপিংমল লেস কোয়াট্রে টেম্পস, ভাবলো কিছু শপিং করি, যেই ভাবনা এলো সে ওলা ক্যাবকে বললো শপিংমলটাতে ওকে নামিয়ে দিতে। 

ক্যাব থামলে ও বিল পে করে নেমে গিয়ে এগুলো মার্কেটের দিকে, ভিতরে প্রবেশ করে হাটতে লাগলো উইন্ডো শপিং করে করে।

 

রুদ্র এক পারফিউম শপে প্রবেশ করে বিভিন্ন পারফিউম চেক করছে, শপের মেয়েরা এক এক ব্রান্ডের পারফিউম দেখাছে, রুদ্র ট্রাই করছে, হটাত কেউ একজন রুদ্রের হাতের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে গা ঘেষে দাঁড়ালে রুদ্র চমকে উঠে ফিরে তাকালো। 

হাই রু, তুমি আমার জন্য পারফিউম কিনছো, বলেই ফিক করে হাসলো, পাশে ওর মাও হাসছেন। 

হোয়াট আ সারপ্রাইজ, তোমরা এইখানে?

আমাদেরও তো একি প্রশ্ন, তুই এইখানে, রুদ্রর মা হেসে জিজ্ঞেস করলেন। 

এই কাজ শেষ, তাই হোটেলে ফেরার পথে এইখানে নামলাম, তোমরা কখন এসেছো, হাতে অনেক গুলো প্যাকেট দেখছি? 

আমরা এই ঘন্টা খানেক আগে এসেছি, আচ্ছা চলো পারফিউম দেখি, অনিলা বললো।

চলো দেখি, মম তুমি কোনটা নেবে দেখো, সাথে সুমী আর ভাবীর জন্য নিও। 

সবাই ঘুরে ঘুরে পারফিউম দেখতে লাগলো, রুদ্র ভারসাসির জেন্টস পারফিউম নিলে অনিলা স্যানেল নিলো, রুদ্রর মাও বেশ কয়েকটা কিনলে রুদ্র ডেস্কে গিয়ে পেমেন্ট করে সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে এলো, কিছুদূর হেটে গেলে একটা টয়ের দোকান পেয়ে অনিলা ভিতরে প্রবেশ করলে রুদ্ররাও সাথে গেলো। 

 

অনিলা টয়ের দোকানে জিজ্ঞেস করলো বার্বি ডলের লেটেস্ট কালেকশন আছে কিনা, থাকলে দেখাতে বললো। 

ওরা র‍্যাক থেকে লেটেস্ট বার্বি ডলের কম্পলিট সেট দিলে অনিলা হাতে নিয়ে ভালো করে চেক করতে লাগলো, তারপর বললো এই গিফট প্যাক করে দিতে, স্লিপ নিয়ে রুদ্র পে করতে গেলে অনিলা না করে বললো, প্লিজ এইটা আমাকে করতে দাও। 

রুদ্র প্রথমে অবাক হয়ে তাকালেও সরে দাঁড়ালো, অনিলা গিয়ে নিজের আনা ডলার দিয়ে পেমেন্ট করলো।

টয়ের দোকান থেকে বেরুলে রুদ্র জিজ্ঞেস করলো, কার জন্য নিলে এতো দামি সেটটা? 

আমার মার জন্য। 

তোমার মা, অবাক হয়ে তাকালো রুদ্র। 

রুহি আমার মা তুমি জানোনা? 

রুদ্র হেসে বললো, তাই বলে এতো দামি জিনিস, সামলাতে পারবে ও? 

নিশ্চয় পারবে, মায়ের জন্য কম দামী কিছু নিতে নেই। 

রুদ্র হেসে বললো, আচ্ছা চলো কিছু চকলেট নিতে হবে। 

চলো। 

মম খিদে পেয়েছে? 

হাঁ খিদে তো পেয়েছে। 

ঐ যে সামনে বিগ বার্গার দেখা যাচ্ছে, চলো ওখানে আগে খেয়ে নিই। 

রুদ্র সবাইকে নিয়ে এগুলো। 

 

...... চলবে।

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ