রঙধনু আকাশ (১৬তম পর্ব)

ইঞ্জা ২৯ আগস্ট ২০২০, শনিবার, ১২:১৯:১৬পূর্বাহ্ন গল্প ২৯ মন্তব্য

রুদ্ররা ঘরে প্রবেশ করে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করে সোফায় বসলে কাজের লোক এসে কফি ও কুকিজ দিয়ে গেলে রুদ্র কাপ তুলে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, মম তুমি অনিলার বাবাকে কল দিয়ে দাওয়াত দাও এবং বলে ফাও উনার পক্ষের লোকজনকে নিয়ে আসতে।

এক কাজ করনা বাবা, তুই কল দে, তুই বল। 

আমি বললে হবে মম। 

আমিও কথা বলবো। 

অনি আব্বু এসে গেছেন কি? 

অনিলা অবাক হয়ে তাকালো রুদ্রের দিকে, অনি শুধু ওর মা ডাকতো, অনেকদিন পর রুদ্রর মুখে শুনলো। 

কি হলো, আব্বু এসেছে কি ঢাকায়? 

নিশ্চয় এসে গেছে। 

রুদ্র এক কাজ করনা, তুই বউকে নিয়ে যা ওর বাবার কাছে, দাওয়াতও দিয়ে আসলি। 

রুদ্র ওর মার দিকে তাকিয়ে ক্ষণিক চিন্তা করে বললো, তা ভালো হবে মম, ভালোই বলেছো। 

তাহলে রেডি হয়ে যা। 

অনি তুমি রেডি হয়ে যাও, আমি তো রেডিই আছি। 

অনিলা উপরে চলে গেলে রুদ্র বললো, মম ভাবীর সাথে কথা বলেছো? 

হাঁ বলেছি। 

কি বললো?  

বললো ওদের ছাড়াই বিয়ে যখন হয়েছে, তাহলে প্রোগ্রাম করতে দোষ কি? 

আচ্ছা মম আমিই কথা বলছি, বলেই রুদ্র সেলফোনে আমেরিকার নাম্বারে কল দিলো। 

 

কল রিসিভ করলো রেনু, হ্যালো বলার পর এদিক থেকে রুদ্র বললো, ভাবী তুমি নাকি রাগ করেছো? 

না করার কিছু আছে, তুমি এভাবে হটাৎ বিয়ে করবে তাতো চিন্তায় করতে পারিনি। 

ভাবী তুমি তো সব শুনেছো, এটা হটাৎ হয়ে গেলো যে কি করবো বুঝে উঠতে পারিনি। 

হটাৎ বিয়ে ভেঙ্গে গেলো কেন, নিশ্চয় মেয়েটিরই কোনো সমস্যা আছে। 

কি বলছো ভাবী, সমস্যাটা তো আমাদের সামনেই হলো, এখন অনিলা আমার ওয়াইফ। 

ওটা একটা মেয়ে হলো নাকি, আমি আরও ভেবে রেখেছিলাম রিয়াকে তোমার জন্য আনবো, তুমি সব পানি করে দিলে। 

কি বলছো ভাবী আমি রিয়াকে কেন বিয়ে করতাম? 

থাক আর কথা বলে লাভ কি, বিয়ে তো হয়েই গেছে। 

আমিও তাই বলছি, ক্ষমা করে দাও ভাবী। 

কেমনে করবো, তুমি আমার এক মাত্র দেবর, বাদ দাও। 

ভাবী আমি তোমার শুধু দেবর নই, ভাইও। 

কিভাবে রুদ্র এই কাজ করলে, আমরা আসতাম তারপর চিন্তা ভাবনা করে তোমাকে বিয়ে করাতাম।

এখন যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন মাফ করে দাও। 

আগামীকাল নীলকে ডাক্তার দেখাবো। 

হাঁ দেখাও, কোনো সমস্যা হলে কল দিও। 

আচ্ছা রাখি।

রুহি কই? 

ও সুমির সাথে বাইরে খেলছে।

আচ্ছা রাখছি। 

ওকে ভাবী, ভালো থেকো। 

 

ফোন ডিসকানেট করে রুদ্র ওর মাকে বললো, মম ভাবী কি কখনো বলেছে রিয়াকে এই ঘরের বউ করতে চাই?

নাতো, অবাক হলেন রুদ্রর মা। 

ভাবী কি বলছে এইসব, নিজে নিজেই প্ল্যান করে নিজেই যদি রাগ করে তাহলে কেমনে চলবে? 

আশ্চর্য হলাম, রুদ্রর মা মুখে হাত দিলেন।

ভাবী তো এমন না মম, এখন কি হলো? 

আমিও তা ভাবছি। 

দুঃখজনক, ড্যাড চলে গেলেন আজ ছয় মাস হয়, এ কমাসে এতো চেইঞ্জ হয়ে গেলো ভাবী? 

বাদ দে বাবা, তুই উঠ অনিলা আসছে, ওকে নিয়ে গিয়ে দাওয়াত দিয়ে আয়। 

মম মনটা খারাপ হয়ে গেলো, ধ্যাৎ কি যে করলাম, এ নিয়ে সংসারে অশান্তি শুরু হয়ে গেলো। 

তুই চিন্তা করিসনা বাবা, আশা করি এসব ঠিক হয়ে যাবে ওরা এলে। 

আচ্ছা মম আমরা আসি। 

আয় বাবা, আল্লাহ হাফেজ। 

রুদ্র অনিলাকে বললো, একটু ওয়েট করো, খোকন ড্রাইভারকে বল আমার গাড়িটা বের করতে। 

ড্রাইভার গাড়ি বের করে দিলে রুদ্র অনিলাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো আফতাবনগরের উদেশ্যে।

 

অনিলার বাবা অনিলা রুদ্রকে দেখে অবাক হলেও আনন্দিত হয়ে জড়িয়ে ধরলেন। 

আব্বু তুমি কেমন আছো? 

এতক্ষণ সব খালি খালি ছিলো, এখন আবার ভরে গেলো মা, রুদ্র বাবা আসো ভিতরে আসো। 

রুদ্রদের ড্রয়িংরুমে বসিয়ে কাজের লোকদের ডাক দিলেন, সবাই এসে অনিলাকে দেখে খুশি হয়ে গেলো, সাথে নতুন জামাই এসেছে দেখে সবাই আরও খুশি। 

তোমরা কি দেখছো, নতুন জামাই এসেছে, খাবার দাবারের ব্যবস্থা করো গিয়ে। 

আব্বু আপনি কষ্ট করবেন না, আমরা এসেছি আপনাকে দাওয়াত দিতে। 

কি ব্যাপার রুদ্র কিসের দাওয়াত? 

জ্বি যাস্ট একটা গেট টুগেদার, আত্মীয় স্বজন নাহয় কম্পলেইন করবে।

তুমি না ফ্রান্স যাচ্ছো? 

জ্বি একটু সময় পিছিয়েছে, আগামী শুক্রবার যাবো। 

গুড তা প্রোগ্রাম নিশ্চয় রাতে? 

জ্বি আগামীকাল সন্ধ্যায়, আপনি আব্বু আপনার এদিক থেকে যাদের নিয়ে যাবেন তাদের দাওয়াত দিয়ে দিন। 

আমার তো আত্মীয় স্বজন তেমন নেই ঢাকাতে, অবশ্য ব্যাংকারদের নিয়ে আসতে পারি। 

জ্বি উনাদের দাওয়াত দিয়ে দিন।

আচ্ছা দিয়ে দিচ্ছি আমি, তোমরা খেয়ে যেও। 

না না আব্বু আপনি কষ্ট করবেন না প্লিজ, আমাদের শুধু চা দিতে বলুন, অন্য সময় এসে খাবো।

 

পরদিন ভোর সাড়ে পাঁচটাই ঘুম থেকে উঠে গেলো রুদ্র, ফ্রেস হয়ে গোসল সেরে বেরিয়ে নামাজ পড়লো, অনিলার ঘুম ভেঙ্গে গেলে ও উঠে বসে রুদ্রর নামাজ পড়া দেখলো, রুদ্রর নামাজ পড়া শেষে জিজ্ঞেস করলো, এতো ভোরে উঠো তুমি? 

ঘুম ভেঙ্গে গেলে উঠে নামাজ পড়ি, তুমি ঘুমাও আমি বেরুচ্ছি। 

কই যাচ্ছো? 

ড্যাডের সাথে দেখা করতে, উনি যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন যায়। 

আচ্ছা যাও, একদিন আমাকে নিয়ে যেও। 

রুদ্র হেসে বললো, ওকে নিয়ে যাবো, এখন ঘুমাও, আসি।

বাই। 

রুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে নিচে এসে দরজা খুলে বাইরে বেরুলো, দরজাটা লক করে গেইটের বাইরে বেরিয়ে রিক্সা ডাকলো।

কবরস্থানে পোঁছাতে পনেরো বিশ মিনিটের মতো লাগলো, স্যান্ডেল খুলে ভিতরে হেঁটে এগুলো, ওর বাবার কবরে যাওয়ার পথে দুইটা ভাঙ্গা কবর দেখে থমকে দাঁড়ালো, এরপর এদিক ওদিক তাকিয়ে অন্য কবর গুলোর দিকে তাকালো, যতদূর চোখ যায় প্রায় সব কবরই ঠিকঠাক, শুধু এ দুইটি ছাড়া, রুদ্র খেয়াল করলো ছোকরা গোরখোদক এগিয়ে এলো, আগে ছেলেটার বাবাই কবর দেখা শুনা করতো, এখন ও করে। 

 

ছেলেটা সালাম দিলে রুদ্র ইশারা করে ডাকলো। 

স্যার আফনের বাবার কবর দেইখে শুনে রাখছি। 

ঠিক আছে, আচ্ছা এ দুইটা কবর কার জানো? 

জানিনা, তয় আফনের বাবা এই দুইটা কবর ঠিকঠাক রাখার জন্য টেহা দিতো, অহন আফনের বাবাই নাই তাই কে আর দেখবে, তয় হুনছিলাম উনারা দুইজন স্বামী স্ত্রী আছিলো। 

আচ্ছা ঠিক আছে, শুনো তুমি এই দুইটা ঠিক করে দিও, এখন থেকে আমিই টাকা দেবো। 

অয় স্যার, এহন ঠিক করতাছি। 

রুদ্র পকেট হাতড়ে এক হাজার টাকা দিয়ে সামনে এগুলো চিন্তিত মনে, হাজার প্রশ্ন ওর মাথায়। 

বাবার কবরের সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ ফাতিহা পাঠ করে মুনাজাত করলো, এরপর রওনা হলো ফিরতি পথে, খেয়াল করলো ছোকরাটা কবর দুইটি ঠিক করছে মাটি দিয়ে, কি মনে করে রুদ্র দাঁড়িয়ে ফাতিহা পড়া শুরু করা শুরু করলো, এরপর দুজনের জন্য দোয়া করে মুনাজাত  করে ফিরতি পথে এগিয়ে গেলো, ওর জানা নেই এ দুইটি ওর নিজেরই মা বাবার কবর। 

কবরস্থানের বাইরের এক টং দোকানের চা খেলো, এরপর রিক্সায় চড়ে রওনা হলো।

বাসার গেউট দিয়ে প্রবেশ করে দেখতে পেলো বাবুর্চি আর তার লোকজন কাজে নেমে পড়েছে, রুদ্র বাইরের পানির কলে পা ধুয়ে নিয়ে এগুলো বাবুর্চি দিকে। 

সালাম ছোটো স্যার। 

ওয়া আলাইকুম আসসালাম, খোকন সব নিয়ে এসেছো?

জ্বি স্যার, দুপুরের খাওনও এইহান থেইক্কা দিমু। 

আচ্ছা ঠিক আছে, এক কাজ করো, চিকেন স্যুপ বানাও ঘরের জন্য, পরোটা দিয়ে খাবো ঘরে, এই সাত আট জনের জন্য করো। 

ঠিক আছে স্যার। 

 

রুদ্র ঘরে প্রবেশ করে দেখলো ওর মা সিঁড়ি দিয়ে নামছে, রুদ্র এগিয়ে গেলে উনি জিজ্ঞেস করলেন, বাবা তুই কি কবরস্থানে গিয়েছিলি? 

হাঁ মম। 

আচ্ছা তুই ফ্রেস হয়ে আয় আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করছি। 

মম তুমি আজ পরোটা বানাতে বলো, খোকন স্যুপ করছে, তা দিয়ে খাবো। 

তুইও দেখছি তোর বাবার মতো পছন্দ করিস। 

রুদ্র হেসে উপরে উঠে গেলো, রুমে প্রবেশ করে দেখে অনিলা নেই, বাথরুমের শাওয়ারের আওয়াজ হচ্ছে। 

রুদ্র দুই গ্লাস পানি খেয়ে একটা সিগারেট ধরালো। 

সিগারেট প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এরমধ্যে অনিলা বেরুলো বাথরুম থেকে। 

রুদ্রকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, চলে এলে? 

হাঁ, তুমি এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেলে? 

অনিলা কাছে এসে ঝুকে রুদ্রর ঠোঁটে হালকা এক চুমু দিয়ে বললো, জনাব এইটা আমার বাপের বাড়ি নয়, শ্বশুর বাড়ি, নিশ্চয় মম উঠে গেছেন? 

হাঁ উঠেছেন। 

তাহলে আমি ঘুমাই কি করে? 

রুদ্র হেসে বললো, বড় ভাবী উঠেন নয়টায় আর তুমি আগেই উঠে গেলে? 

আমি চাইনা আমার শ্বাশুড়ির কোনো কম্পলেইন থাকুক। 

 

...... চলবে। 

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

২৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ