রঙধনু আকাশ (১৫তম পর্ব)

ইঞ্জা ২৫ আগস্ট ২০২০, মঙ্গলবার, ১২:৫৮:১৯অপরাহ্ন গল্প ৩০ মন্তব্য

ফোনের রিংয়ের শব্দে ঘুম ভাঙলো রুদ্রর, হাতড়িয়ে ফোনটা নিলো সাইড টেবিল থেকে, চোখ পিটপিট করে দেখার চেষ্টা করলো কার কল, আননোন নাম্বার মনে হলো, এরপরেও রিসিভ করে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললো, হ্যালো।

ভাইয়া আমি সুমি, ঘুমাচ্ছো? 

না ঘুম ভেঙ্গে গেছে, তোরা ঠিক মতো পোঁছেছিস?

হাঁ ভাইয়া, সকাল থেকে বাসাটা ঘুচিয়ে নিচ্ছিলাম, ল্যান্ডফোন লাগলো সন্ধ্যায়, ভাবলাম ঘুমাচ্ছো তাই কল করিনি। 

ভালো করেছিস, ভাইয়া, ভাবী, রুহি ওরা কই? 

ভাইয়া রুহির সাথে খেলছে, ভাবী রান্না করছে।

মমকে কল দিয়েছিস? 

না ভাইয়া পরে দেবো, নিশ্চয় এখন ঘুমাচ্ছেন? 

তাই বলেই খেয়াল করলো অনিলা উঠে ওয়াসরুমে গেলো। 

সুমি, আমি বিয়ে করেছি। 

সুমি যেন থমকে গেলো ওপাশে, কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, কি বলছো ভাইয়া, স্বপ্ন দেখেছো? 

নারে সত্যি বলছি।

কি কি বলছো তুমি, তোতলালো সুমি।

আসলে এর পিছনে অনেক কাহিনী আছে, ঢাকায় গিয়ে শুনাবো। 

কাকে বিয়ে করেছো ভাইয়া? 

অনিলাকে। 

হোয়াট, তোমরা না ওর বিয়ে এটেন্ড করতে গেছো? 

সে অনেক কথারে, ওর বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিলো, এসব মম ঠিক করেছেন। 

তাই বলে আমাদেরকে ছাড়া তুমি বিয়ে করলে? 

সরি বোন, উপায় ছিলোনা। 

ভাইয়া আমি রাখছি, পরে কথা বলবো। 

আচ্ছা ভালো থাকিস।

 

রুদ্র হাই তুললো সাথে আড়মোড়া ভাঙ্গলো, উঠে গিয়ে জানালার গ্লাসের বাইরে তাকালো, উজ্জ্বল রোদ আজ।

অমিলাকে দেখলো বাথরোব পড়ে বের হতে, জিজ্ঞেস করলো, শাওয়ার নিয়ে ফেলেছো? 

অনিলা মিষ্টি হেসে বললো, হাঁ। 

আচ্ছা তাহলে আমি যাই বলে রুদ্র উঠে গেলো ওয়াসরুমে, কিছুক্ষণের মধ্যে গোসল করে বেরুলো। 

ব্রেকফাস্ট কি রুমে করবে, নাকি রেস্টুরেন্টে যাবে?

এখানেই আনিয়ে নাও, বলে অনিলা নিজের সেলফোন তুলে কল দিলো ওর বাবাকে। 

রুদ্র ইন্টারকমে কল দিয়ে ব্রেকফাস্টের অর্ডার দিলো, এরপর নিজের ড্রেস গুলো নিয়ে পড়া শুরু করলো। 

আব্বু আসবেন বললেন, অনিলা জানালো। 

তাহলে আরেকটা ব্রেকফাস্টের কথা বলে দিই। 

না আব্বু অলরেডি ব্রেকফাস্ট শেষ করেছেন, উনি আসবেন আমাদের বিদায় জানাতে। 

ওহ ঠিক আছে, দেখি মমের খবর কি। 

রুদ্র কল দিলে ওর মার ফোন রিসিভ করে জিজ্ঞেস করলেন, তোরা রেডি? 

না মম, এখন ব্রেকফাস্ট করবো। 

আচ্ছা করে নে, আমি ঘন্টা খানেকের মধ্যে আসবো। 

ওকে মম। 

রেনু কল করেছিলো আমাকে। 

হাঁ মম সুমি কল করেছিলো আমাকে। 

রেনু রাগ করেছে এইভাবে তোর বিয়ে হয়ে যাওয়ায়। 

স্বাভাবিক মম, তুমি বুঝিয়ে বলোনি?

বলেছি, কিন্তু মনে হয়না ও এতে খুশি। 

থাক মম, সব ঠিক হয়ে যাবে, তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো। 

আচ্ছা বাবা, রাখছি। 

ওকে মম।

 

ঘন্টা খানেকের মধ্যেই রুদ্রর মা এসে দরজায় নক করলে অনিলা দরজা খুলে দিলো, অনিলাকে সামনে পেয়ে রুদ্রর মা জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, অনিলা তুমি ঠিক আছো তো মা, জ্বি মম ভালো আছি বলে কদমবুচি করলো, এরপর একে একে কুমু আন্টি আর উনার হাসবেন্ডকে কদমবুচি করে ভিতরে এসে বসতে অনুরোধ করলো। 

রুদ্র তোরা রেডি?

হাঁ মম রেডি, শুধু অপেক্ষা করছি অনিলার আব্বুর জন্য। 

আচ্ছা তাহলে লাগেজ গুলো নিচে নিয়ে যেতে বল। 

রুদ্র রিসেপশনে কল দিয়ে বেলবয় পাঠানোর অনুরোধ করে ফোন রাখলো, এ সময় দরজায় নক হতেই অনিলা গিয়ে দরজা খুললে অনিলার বাবা ভিতরে প্রবেশ করলেন, রুদ্র আর অনিলা কদমবুচি করলে দুজনকেই জড়িয়ে ধরলেন উনি, সাথে সাথে দোয়া করলেন।

আব্বু ভিতরে আসো। 

সুলতান সাহেব ভিতরে প্রবেশ করে রুদ্রর মাকে সালাম দিয়ে বললেন, বেয়াইন সাহেবা আজ চলে যাবেন? 

হাঁ ভাই আজ কি এখনই রওনা হবো। 

অনিলা এই নেই, এই ব্যাগে তোর পাসপোর্ট আর কিছু ডকুমেন্টস আছে, এগুলো তোর ব্যাগে রাখ। 

কিছুক্ষণের মধ্যেই বেলবয় এসে সব লাগেজ নিচে নিয়ে গেলে, রুদ্ররা সবাই নিচে চলে এলো। 

অনিলা ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁফিয়ে কাঁদতে শুরু করলে উনি অনিলাকে গাড়ির সামনের সিটে বসিয়ে বললেন, তোরা আগামীকাল আফতাবনগরে আসিস, বেয়াইন সাহেবাকেও নিয়ে আসিস, রুদ্র বাবা তুমি আসবে তো তোমার মাকে নিয়ে? 

জ্বি আব্বু, আজ আসি।

 

বিকাল তিনটার পরে রুদ্ররা পোঁছালো ঢাকার বাসায়, গাড়ি বারান্দায় গাড়ি দাঁড়ালে বাসার লোকজন ফুল নিয়ে এসে হাজির হলো।

রুদ্র ওর মার দিকে ফিরে তাকালে ওর মা মিষ্টি হেসে বললেন, আগে আমি নামি, তারপর তোরা নামিস। 

কিছুক্ষণ পর রুদ্র নেমে অনিলাকে নামিয়ে এক সাথে দাঁড়ালে সবাই গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে ওদের বরণ করে নিলো, ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলে রুদ্রর মা দুজনকেই ড্রয়িংরুমে বসতে বলে নিজে গেলেন ভিতরে।

এই খোকন পানি দে এইখানে, রুদ্র ডাক দিলো। 

কাজের লোক এসে পানি দিয়ে গেলে দুজনই পানি খেলো, ইতিমধ্যে রুদ্রর মা এসে রুদ্রকে বললেন, তোরা রুমে যা, আমি কিছু খাবার পাঠাচ্ছি। 

মম দেড়টার দিকে খেলাম না, তুমি কিছু ফ্রুটস দিতে পারো। 

আচ্ছা পাঠাচ্ছি।

রুদ্র অনিলাকে নিয়ে রুমে এসে প্রবেশ করলে অনিলা রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছে দেখে রুদ্র জিজ্ঞেস করলো, কি পছন্দ হয়েছে? 

খুব সুন্দর, নিশ্চয় তুমিই সব করেছো? 

না না, ড্যাড আর মম করেছেন, আমাদের সব রুমই একি ধরণের। 

অনিলা জানালার পর্দা খুলে বাইরে উঁকি দিয়ে বললো, পিছনে দেখছি ছোটো চৌবাচ্চা আছে। 

হাঁ ড্যাড রঙবেরঙের মাছ রেখেছেন ওখানে, আচ্ছা শুনো আমি বেরুচ্ছি, একটু অফিসে যাবো, তুমি ড্রেস চেইঞ্জ করে একটু রেস্ট করো, মম তোমাকে পরে ডেকে নিবে।

আচ্ছা। 

 

অফিসে পোঁছেই দেখলো চিনু অপেক্ষা করছে, রুদ্র চিনুকে বললো, চল রুমে বসি। 

রুমে প্রবেশ করে রুদ্র ইন্টারকমে ম্যানেজারকে কল করে বললো, অফিসের সবার জন্য মিষ্টির ব্যাবস্থা করেন, আমার রুমে দুজনের জন্য পাঠাবেন। 

ফোন রেখে চিনুর দিকে তাকালে চিনু হাতের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, ব্যাপার কি?

বন্ধু আমি বিয়ে করেছি। 

চিনু অবাক হয়ে বললো, কি বলছিস, তুই না চিটাগং গেলি বিয়ে এটেন্ড করতে? 

দরজায় নক শুনে রুদ্র বললো, কাম ইন। 

জিএম সাহেব প্রবেশ করে সালাম দিলে রুদ্র প্রতি উত্তর দিলো। 

স্যার নাকি সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতে বললেন, কোনো গুড নিউজ? 

জ্বি জিএম সাহেব, আসলে আমি বিয়ে করেছি। 

কি বলেন স্যার, অভিনন্দন। 

রুদ্র চিনুর দিকে ফিরে শর্টকাটে সব খুলে বললে চিনুও অভিনন্দন জানালো।

জিএম সাহেব বেরিয়ে গিয়ে সবাইকে ব্যাপারটা জানালে, সবাই রুদ্রর রুমে এসে অভিনন্দন জানালো, কিছুক্ষণের মধ্যেই মিষ্টি এলো রুদ্রের রুমে, রুদ্র চিনুকে বললো, মিষ্টি মুখ কর, তারপর বল কি খবর? 

 

খবর হলো তোকে এই সপ্তাহের শেষে ফ্রান্স যেতে হবে, বিজনেস ব্যাগ থেকে কিছু ডকুমেন্টস বের করে রুদ্রকে দিয়ে বললো, এগুলো পর, বড় ইম্পোর্টার এরা, এরা প্রতিমাসে সুতা চাই, আমি কি দাম হবে না হবে সব দিয়েছি ওদের, এখন শুধু তুই গিয়ে এগ্রিমেন্ট সাইন করবি, ওদের সাথে সব বিষয়ে সেটেল করা আছে যা এই ডকুমেন্টস পড়লে বুঝবি।

তুই না বললি পরশু যেতে হবে? 

না ওরা টাইম চেইঞ্জ করেছে।

হুম, রুদ্র কিছুক্ষণ চোখ ভুলিয়েই বললো, এতো অনেক বড় ডিল, এভাবে কাজ কর‍তে পারলে আগামী বছরের মধ্যেই আমাদের সব লোন শোধ হয়ে যাবে। 

তাহলে আর কি চাই বল। 

ধন্যবাদ বন্ধু, তা তুইও সাথে চল? 

না বন্ধু, আমি গেলে টাওয়ালের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে, তুই যা, সাথে ভাবীকে নিয়ে যা, তোদের হানিমুন ওখানেই কর, কিন্তু তোদের ভিসা লাগবে বন্ধু। 

লাগবেনা, আমাদের দুজনেরই অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট আছে। 

তাহলে আর কি, যা ঘুরে আয় ভাবীকে নিয়ে। 

তা ঠিক আছে, আচ্ছা ওয়েট বলেই রুদ্র ফোন তুলে ওর মায়ের নাম্বারে কল দিলো, ওর মা রিসিভ করে বললেন, কি ব্যাপার তুই নতুন বউ রেখে অফিসে গেলি। 

মম জরুরী কাজ ছিলো তাই অফিসে এসেছি, আচ্ছা শুনোনা, কাছের কিছু আত্মীয় স্বজনকে আসতে বলো আগামীকাল, সবাই জানুক আমি বিয়ে করেছি। 

তা করা যায় বাবা। 

তাহলে আমি রতন বাবুর্চিকে ফোন করে বলছি তোমার সাথে দেখা করতে, এদিকে আমি অফিসের সবাইকে আসতে বলবো, মোটামুটি ধরো তিনশো মানুষ হবে।

ঠিক আছে আসতে বল।

আচ্ছা মম রাখছি।

 

সন্ধ্যার পরই রুদ্র বাসায় পোঁছালে লক্ষ্য করলো অনিলা সহ ওর মা বাগানে বসে আছে, সাথে ওর পাঠানো বাবুর্চিও আছে, রুদ্র গাড়ি বারান্দায় গাড়ি রাখলে অনিলা এগিয়ে এলো। 

কি কেমন লাগছে তোমার, অসুবিধা হচ্ছে নাতো, রুদ্র নেমে এসে জিজ্ঞেস করলো। 

না না কিসের অসুবিধা, ভালোই লাগছে, মম আমাকে পুরা বাড়ি ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন। 

ভালোই হয়েছে বলেই দুজনেই এগিয়ে গিয়ে রুদ্রর মার পাশে গিয়ে বসলো। 

মম হিসাব নিকাশ করেছো? 

রতন তো এলো মাত্র, এরপরেই তুই এলি। 

তা কি করতে চাও তুমি? 

কাচ্চি করি, সাথে রোস্ট, কাবাব, ফিরনী। 

মম কাচ্চি করলে বোরহানি করতে হবে, এছাড়া বুফে করলে ভালো হয়, রুদ্র বললো। 

বুফে করলে কম্পলিট চেইঞ্জ হয়ে যাবে খাবার গুলো। 

না মম, কাচ্চি, রোস্ট, কাবাব, ফিরনি থাকবে, সাথে একটা কোরমা, মিক্সড ভেজিটেবল, নারগেসি কোফতা, বাটার নান, কোক, রাইতা করো, এছাড়া ফ্রুট রাইতা করো। 

ঠিক আছে বাবা, রতন সব ব্যবস্থা তুমি করবে, সাথে ৫০০ মি.লির মিনারেল পানি রেখো। 

সব মিলিয়ে ধরো তিনশো মানুষের জন্য এরেঞ্জমেন্ট করতে হবে যেন খাওয়া কম না পড়ে, ড্রিংক্স পানি এগুলো একটু বাড়িয়ে দাও। 

ঠিক আছে রতন, তুমি সব ব্যবস্থা করো ড্যাডের জন্য যেভাবে করতে, রুদ্র বললো। 

ওকে ছোটো ভাইজান, আম্মা আমি আসি, ভাবীসাব সালাম, আমি সকালেই সব শুরু করবো। 

ওকে যাও, বলেই রুদ্র ফিরলো ওর মার দিকে, মম দাওয়াত দিয়েছো, হাঁ দিয়েছি সবাইকে, রেনুর বাবা বলেছেন উনারা কেউ আসতে পারবেননা। 

থাক মম, রাগ ভাঙ্গুক তারপর আসবে। 

অনিলা তুমি কাকে কাকে দাওয়াত দিয়েছো? 

আমি? আমি কাকে দাওয়াত দেবো বলো?

তোমার যাকে খুশি দাওয়াত দাও, মম আব্বুকে কল দিয়ে বলবেন বাকি গুলো আব্বুই দেওয়ার জন্য।

 

....... চলবে। 

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ