
কাটুয়া চিল বা কালো ডানা চিল এসিপিট্রিডে পরিবারভূক্ত চিল প্রজাতির ছোট্ট শিকারী পাখি। খোলা মাঠে ও উন্মুক্ত তৃণভিমিতেই এদের সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। লম্বা পাখাবিশিষ্ঠ এ পাখিটির ডানায় ধূসর অথবা সাদা রঙের সাথে কালোর এক মিশ্রণ লক্ষনীয়। বাজপাখির মতো শিকারের প্রাক্কালে পাখা মেলে নাচতে থাকে শিকারের ঠিক মাথার উপর। লক্ষ বস্তুটিকে লক করে মহুর্তে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে শূন্যে আবার উঠে যায়, সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। উড়ন্ত অবস্থায় লেজ খাটো ও কিছুটা বর্গকৃতি ভাবে দৃশ্যমান। পুরুষ ও স্ত্রী এর পালকের ধরণ একই রকম।
এদের চোখ রক্তবর্ণ ও সম্মুখে অবস্থিত। পেঁচার সাথে এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে।
কালো ডানা চিল এমন এক ধরনের প্রজাতির চিল যেগুলো সাধারণতঃ উন্মুক্ত ভূমি এবং অর্ধ-মরুময় আফ্রিকা মহাদেশের উপ-সাহারাভূক্ত এলাকা এবং উষ্ণমণ্ডলীয় এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। এছাড়াও, ইউরোপের স্পেন এবং পর্তুগালেও এদের সন্ধান পাওয়া গেছে।
ইউরোপের দক্ষিণাংশ এবং সম্ভবতঃ পশ্চিম এশিয়ায় এ পাখিটির আবাস উপযোগী পরিবেশ বিদ্যমান।
সমভূমিতে এদেরকে দেখা গেলেও অনেক উঁচু এলাকা হিসেবে স্বীকৃত সিকিমের ৩৬৫০ মিটার উঁচুতেও এদের আবাসস্থল রয়েছে।২৬৭০ মিটার উঁচুতে দোদ্দাবেত্তা, নীলগিড়ি এবং ২০২০ মিটার উঁচু এলাকা নাগাল্যান্ডেও এ পাখিটি দেখা যায়।
পশ্চিম ঘাটের কিছু এলাকায় শীতকালীন পরিযায়ী পাখি হিসেবেও এ পাখিকে দেখা যায় বলে কেউ কেউ বলে থাকেন।
অবস্থানভেদে কালো ডানা চিল বছরের বিভিন্ন সময়ে বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে। এদের বাসাগুলো বছরের সমসময়ই দেখা মেললেও এপ্রিল এবং মে মাসে ডিম পাড়তে দেখা যায় না। আওয়াজ সহকারে পাখি জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে। একবার জুটি গড়লেই সাধারণতঃ তা দীর্ঘস্থায়িত্ব অর্জন করে।
এদের বাসা সাধারণতঃ ঢিলেঢালা প্রকৃতির হয় এবং স্ত্রীজাতীয় কালো ডানা চিল গড়পড়তা ৩ থেকে ৪টি ডিম পাড়ে। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখিটি অত্যন্ত যত্নসহকারে বাসা তৈরীর চেষ্টা চালায়। ফ্যাকাসে সাদা রঙের ডিমে ঘন লালচে রঙের ছিটে থাকে। উভয় পাখিই ডিম ফোটানো পর্যন্ত পালাক্রমে তা দেয়। ছানা জন্মানোর পর পুরুষটি অধিক সময় বাইরে কাটায়। সাধারণতঃ বাচ্চাদের খাদ্যের যোগান দেয় স্ত্রীপ্রজাতিটি। কখনোবা স্ত্রী পাখিটি ছানাদের জন্যেও খাদ্য সংগ্রহে নিয়োজিত থাকে। বাসার কাছাকাছি এলাকা থেকে শিকার করে। প্রায় ৮০ দিন ছানাগুলো তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। এরপরই অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিগুলো নিজেরাই খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং শূন্যে ভেসে বেড়ায়।
এদের শিকারের তালিকায় রয়েছে ঘাসফড়িং, ঝিঝিজাতীয় পোকা এবং অন্যান্য বৃহদাকৃতির পোকা, টিকটিকি ও ইঁদুরজাতীয় প্রাণী। আঘাতপ্রাপ্ত পাখি, ছোট ছোট সাপ এবং ব্যাঙ শিকার করতেও দেখা যায়।উড়ন্ত অবস্থায় কদাচিৎ এদেরকে শিকার করতে দেখা যায়।পাখার পালকের ঝাপটায় এর শিকার করে এবং খাবার খায়। কিন্তু মাটিতে বসেও এরা শিকার করে থাকে।
এ প্রজাতির পাখি দলবদ্ধ হয়ে থাকতে ভালবাসে। ১৫ থেকে ৩৫টি পাখি খুবই বড় বৃক্ষের পাতাযুক্ত আবরিত স্থানে একত্রে থাকে। এরা খুবই নীরব থাকে এবং নমনীয় শব্দে মত বিনিময় করে।তবে প্রজনন মৌসুমে এদের ডাকার ভঙ্গীমা ভিন্নতর ও ঔচ্চস্বরে হয়ে থাকে।
বাংলা নামঃ কালো ডানা চিল / কাটুয়া চিল
ইংরেজী নামঃ Black-shouldered kite / Black-winged kite
বৈজ্ঞানিক নামঃ Elanus caeruleus
ছবিগুলি উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে তোলা।
১৮টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
কালো ডানা চিল। নতুন দেখলাম। ও পাখি তুমি নেবে কি আমায়, তোমার ডানায়?
শামীম চৌধুরী
নিবো আমার ডানায়
দেনা দিতে হবে মুক্তায়।
হা হা হা…!!
আমিওতে আপু এদের ডানায় ভর করে উড়তে চাই।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আরজু মুক্তা দারুন বলেছেন- ও পাখি নেবে কি আমায় তোমার ডানায়। আমারও ইচ্ছে করছে।
**এদের চোখ রক্তবর্ণ ও সম্মুখে অবস্থিত। পেঁচার সাথে এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে।***
পেঁচার চোখ আরও বড় হয়। কি আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য। লাল চোখেও কত সুন্দর।
শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
শামীম চৌধুরী
আমারও সবার মতন পাখির ডানায় চড়ে আকাশে উড়তে মন চায়।
শুভ কামনা আপনার জন্যও রইলো।
প্রদীপ চক্রবর্তী
পাখিটা দেখতে খুবি খুবি সুন্দর, দাদা।
এমন পাখি তার সাথে লেখা মুগ্ধ।
বারবার পড়তে মন চায় দাদা।
শামীম চৌধুরী
অনেক কৃতার্থ দাদাভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বাপরে লাল টকটকে চোখ দেখে ভয় লাগলো। শিকারি চোখ। পাখার পালকের ঝাপটায় শিকার করে দারুন তো ব্যাপারটা । শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
শামীম চৌধুরী
দিদিভাই,
যেহেতু এ বছর শরতে পুজা হচ্ছে না। তাই আমি আপনাকে হেমন্তীয় শুভেচ্ছা জানালাম। পুজার আনন্দে মেতে থাকুন সর্বসময়।
শুভ কামনা রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
পাখিটি দেখতে ভালোই লাগে , কিন্তু টকটকে লাল চোখের দিকে তাকালে আর পাখি পাখি লাগে না।
করোনাকাল শেষে আবার বের হয়েছেন বলেই আবার তাজা ছবি দেখতে পেলাম।
শামীম চৌধুরী
টক টকে লাল যে কেন বিধাতা দিয়েছেন তিনিই সেটা ভাল জানেন। আমার কাছেও খুনী মনে হয়।
শীতে যদি করোনার প্রকোপ না বাড়ে তবে বেশ কিছু পরিযায়ী পাখির সঙ্গে পরিচয় করাতে পারবো।
শুভ কামনা রইলো।
জিসান শা ইকরাম
কালো ডানা চিল শেষ কবে দেখেছি মনে নেই।
এর জীবন যাপন সম্পর্কে জানলাম। স্ত্রীরাই আসলে লক্ষ্মী, সুন্দর বাসা বানানো, খাবার সংগ্রহ সব প্রাণীদের ক্ষেত্রে স্ত্রীরাই করে থাকে।
করোনার আতঙ্ক হতে ধীরে ধীরে বেড় হোন ভাই। অবশ্যই শতর্ক থেকে।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
জ্বী ভাইজান।
আপনিও ভাল থাকবেন।
তৌহিদ
কালো ডানার চিল সম্বন্ধে আজই প্রথম জানলাম আপনার লেখার মাধ্যমে। আমি শুধু জানতাম চিল এক প্রজাতিরই হয়। আপনার মাধ্যমে আরও কত কিছু যে জানবো!
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
শামীম চৌধুরী
পৃথিবীতে ৪২ প্রজাতির চিল আছে। তাদের আবার উপর্রজাতিও আছে। কিছু আবার বাজ উপপ্রজাতীয়।
সুপায়ন বড়ুয়া
কালো ডানার চিল যে হয় সেটাই এখন জানলাম
তাই তো আমি মজা নিয়ে এক নিমিষে পড়লাম
ভাইয়ের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানালাম।
শামীম চৌধুরী
কবির কাছে
কৃতজ্ঞ রইলাম।
সাবিনা ইয়াসমিন
পাখিটা অদ্ভুত রকমের সুন্দর, ভয়ংকরও মনে হচ্ছে। চোখ গুলোকে দৃষ্টি আটকে যায়, বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে কেমন জানি লাগে!
আপনার কল্যাণে কত পাখির নাম জেনেছি তার আর হিসেব নেই। ভালো থাকুন নিজের মতো করে।
শুভ কামনা নিরন্তর 🌹🌹
শামীম চৌধুরী
পৃথিবীতে ৪২ প্রজাতির কাইট বা চিল আছে। তারমধ্যে কিছু উপপ্রজাতির বাজ পাখিও আছে।
কালো ডানা চিল খুবই দূধর্ষ এক শিকারী চিল। এদের ১০০ টি শিকারের মধ্যে ১০০ টিই সফল। শতভাগ নিশ্চিত না হলে শিকারের জন্য থাবা দেয় না।