
মধ্যবয়সী একজন মহিলা রাস্তায়; দৈনন্দিন কাজের শেষে বাড়ি ফিরছেন। অসহায় বৃদ্ধ কিছু সাহায্য চাইল, দশটাকার কড়কড়ে নোট তার হাতে দিয়ে মহিলা চলে যাচ্ছেন। হঠাৎ বুড়োর হাত মহিলার বুকে লেগে গেল, চমকে গেলেন তিনি। কিন্তু ভেবে নিলেন বুড়ো মানুষ ঠান্ডায় বেখেয়ালে হাত লেগে গেছে। এটা ইচ্ছে করে নয়। খেয়াল করলেন বুড়ো নিজ মনে হেলে দুলে হাঁটছে। অভুক্ত, জীর্ন শরীর, হাতে লাঠি, গরীব, অথর্ব। এবার হাত লাগল কিশোরীর বুকে, সেও চমকে গেল এবং পেছন ফিরে শারিরীক অবস্থা দেখে ধরে নিল ভুলে হয়েছে।
“ওরে বুড়ো ভাম, এবার তুই থাম”। কিন্তু বুড়ো থামছে না। সারাদিন এই বুড়ো মনোযোগ দিয়ে এ কাজটি করেই যাচ্ছে। ভিক্ষা তার বাহানা, খেলা তার নপুংসক শরীরের এক অজানা আসক্তির। দুদিন আগের ঘটনা এটি হলেও, বাস্তবে কিছু ঘটনায় চলুন দেখে আসি এই বুড়োরা তাদের অসহায়ত্ব ও বয়সের সুযোগ নিয়ে কিভাবে নারীদের যৌনহয়রানী করে?
ছয়- সাত বছর বয়সের মেয়েটি বাংলা সিনেমার অতি ভক্ত। প্রতি শুক্রবার বিটিভিতে বাংলা সিনেমা হয়। গ্রামের দুএকটা বাড়িতে টিভি তাই যেন শুক্রবার মহাআসর বসে। ছোট্ট মেয়েটিও সেই আসরে শামিল হয় কিন্তু তার বসার জায়গা নেই। পাশে বসা বুড়ো মানুষটি তাকে কাছে টেনে কোলে বসিয়ে নেয়। সেও আরাম করে বসে থাকে। তিনঘন্টা ধরে সবাই বাংলা সিনেমায় মগ্ন। আর বুড়ো মগ্ন থাকে তার বিশেষ অঙ্গ ও হাত মেয়েটির ছোট্ট শরীরের যেখানে- সেখানে নানা কায়দায় ও কৌশলে।
পাশের দোকানীর কাছে মা পাঠায় ছোট ছোট জিনিস কিনে আনতে। দোকানী চাচা প্রায়ই চকলেট দেয়। একদিন সন্ধ্যায় একা পেয়ে দোকানী চাচা তাকে জাপটে ধরে ওম দিল। সাথে মুখে মুখ ও গাল ঘসে তারপর খরচাপাতি দিল। বলল, ভীষন ভালো মেয়ে তুমি; আবার এসো।
স্কুল পেড়িয়ে কলেজ পড়ুয়া মেয়েটি প্রতিদিন বাসে যাতায়াত করে। প্রায়ই সিট না পেয়ে দাড়িয়ে যায় কিংবা যুবক ছেলের পাশে না বসে বয়স্ক কারো পাশে নিশ্চিন্তে বসে। তিনি বেশ যত্নে পিঠের পাশ দিয়ে হাত দিয়ে জায়গা দেন কিংবা আরাম করে বসতে দেন। কোন এক ফাঁকে নাম পরিচয় জানতে চান। কিন্তু তার হাত থাকে পিঠে কিংবা অন্যকোথাও।
ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েটিও বাসে একা যাতায়াত করে। পাশে মেয়ে না পেয়ে টিকেট কাউন্টার থেকে একটু বয়স্ক দেখে তার সাথে সীট করে দেয়। জার্নির ক্লান্তিতে মেয়েটি ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ ঘুম ভেংগে বুঝতে পারে, সিটের মধ্যবয়সী লোকটি নির্বিগ্নে উডুতে হাত দিয়ে কিছুই হয়নি কিংবা অজান্তেই হাত দিয়েছে এমন ভাব করে বসে আছে। মেয়েটি টের পেলে সরিও বলে নিচ্ছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত বাস থেকে নেমে যাবার সময়, পেছনে হাত দিয়ে ধরা অহরহ ব্যাপার তো আছেই!
বাড়ির মালিক শেষ বয়সী দাদু রিটায়ার করেছেন অনেকদিন। একা একা থাকেন। প্রায়ই উঠতি বয়সি ভাড়াটে মেয়েটির সাথে গল্প করেন। তার মা তেমন কিছু বলেন না। বুড়ো মানুষ একটু আনন্দে থাকুক। একদিন বলতে শোনা গেল, “এসো দেখি, মেপে দেখি তুমি লম্বা না আমি।”
মেয়েটি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাপল। দাদু তাতে তুষ্ট না। তিনি বললেন,”নাকে নাক লাগিয়ে বুড়ো দাদুর সাথে হাইট মাপো তাহলে সঠিক বোঝা যাবে”।
যখন দুজনের নাকে নাক ছুঁই ছুঁই। তখন ঘটনা কিন্তু অন্য, কিশোরীর বুক লেপ্টে গেছে দাদুর বুকে। বুড়ো দাদু পিঠে হাত দিয়ে কৌশলে এগিয়ে নিয়েছে। উদ্দেশ্য কিন্তু ছিল এটাই!
ফেসবুকে রিকোয়েস্ট এসেছে। তিনি বয়োজোষ্ঠ এবং সম্মানীয়। এদের আমরা মাথায় তুলে রাখি। টপাক করে একসেপ্ট করি। জ্ঞানী ও বৃদ্ধ মানুষ তাদের কাছে অনেক শেখার আছে। একসেপ্ট করার পর দেখা গেল তিনি একমিনিটের মাথায় হ্যালো, মা মনি দিয়ে শুরু করলেন। এরপর চলতে থাকল ম্যাসেজিং। তার অফুরন্ত সময় কাজে লাগাতে থাকলেন। আর আপনি কিছু বলতে না পেরে তাকে সময় দিতে থাকলেন। কায়দায়- কৌশলে তিনি বিবাহিত জীবনের গোপন গল্পও করে ফেললেন।
ভার্চুয়ালি এই বুড়ারাই সেরা- যাদের শরীরটা আর চলে না, তারা চশমার ফাঁক দিয়ে একবার কাছে, একবার দুরে নিয়ে উল্টে পাল্টে ছবির বিশ্লেষণ করেন। বিশেষ দৃষ্টি থাকে,বিশেষ জায়গায় কিছু পাওয়া যায় কিনা। অতঃপর নিঃস্ব, নুন্জ্য শরীর হলেও; কাপাঁ কাপাঁ হাতেই নারী শরীরগুলো চেটেপুটে খেতে চেষ্টা করেন। দেখা যায় ছবি- টবিতে এমন সব কমেন্ট করেন যেটা যথেষ্ট লোলুপ-লালশা কাতরতায় ভরা।
গল্প শেষ করি,সত্তুর বছরের বুড়ো মানুষ তিনি। টাকা পয়সা অনেক। তিনি প্রায়ই পাশের গোডাউনে যান। লোকে ভাবে বেড়াতে যান। কারণ ছেলে-মেয়ে গুলো যেখানে কাজ করে সেখানে গিয়ে বসে থাকেন। কোন কোনদিন দুজন ছেলে মেয়ে সাথে নিয়ে কোথায় যেন যান। অনেকদিন পর জানা গেল, টাকা দিয়ে তিনি এদুজনকে ভাড়া করে নিয়ে যান তার পরিত্যক্ত বাড়িতে। সেখানে তারা বুড়োর সামনে শারিরীক সম্পর্ক তৈরি করে। বুড়ো যেহেতু নিজে অথর্ব তাই এ দৃশ্য দেখে দেখে মজা নিয়ে বিদায় হন।
স্কুল- কলেজে বুড়ো শিক্ষক, অফিসে বুড়ো বস, মাদ্রাসায় বুড়ো হুজুর, বুড়ো পীর-দরবেশ, দয়াল বাবা সহ বয়স্করা নানা অজুহাতে, বাহানায় যৌন হয়রানী করে থাকে। কখনো গালে হাত দিয়ে, পিঠে হাত বুলিয়ে, কাঁধে হাত রেখে, হাতে হাত রেখে, উরুতে হাত রেখে যৌন- হয়রানী করে থাকে। আমরা প্রয়োজনে কিংবা বিপদে পরে কিছু বলতে পারি না। তবে আমাদের বলতে হবে। প্রতিবাদী হতে হবে।
আমাদের সমাজে নারীরা কারও দৃষ্টি বা শিকার থেকে রক্ষা পায় না। কি বুড়ো; কি ছেলে। আমরা বুড়ো মানুষ বলে এড়িয়ে চলি, কিছু মনে করি না। সচেতনভাবে আমাদের মনে করতে হবে এসব যৌন হয়রানী। কারন শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সী নারীরা তাদের চলাচলে প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। যেখানেই মেয়েদের সাথে কোন রকম যৌনহয়রানী হবে, সাথে সাথেই তার প্রতিবাদ করতে হবে। কারন আজকাল বুডোরাও কম যান না। বুড়ো ভামরাও যথেষ্ট ভয়ংকর।
সবাই ভালো থাকুন। মেয়েদের সম্মান করতে শিখুন। শুভ রাত্রি।🌹🌹
ছবি- নেট থেকে।
১৬টি মন্তব্য
তৌহিদ
আমাদের নোংরা মানসিকতা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এ যেন হীন পুরুষত্ব দেখানোর পায়েতারায় বন্দী বজ্জাতগুলো। এরকম দেখলে মাথা গরম হয়ে যায় আমার। একবারতো এক ছেলেকে চলরি বাসে চড়ই মেরে বসেছিলাম। শিক্ষা হয়েছে কিনা জানা নেই।
চমৎকার লেখাটির জন্য ধন্যবাদ আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।শিক্ষা হয় না আবার একই কাজ করে। শুভ কামনা ভাই।
জিসান শা ইকরাম
লোকলজ্জা, সমাজের কথা ভেবে প্রতিবাদ করা হয়না নারীদের। প্রতিবাদ এবং স্পপ্টে জুতাপেটা করা হলে এ ধরনের যৌন হয়রানি কমে আসবে।
নারীদের প্রতি সমাজের মানসিকতা বদলাতে হবে।
ঘটাগুলোর নিখুত বর্ননা এবং পোষ্টের উদ্দেশ্য সুন্দরভাবে তুলতে পেরেছেন। আপনার লেখা পড়ে শিখছি। শেখার কোনো বয়স নেই।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমার লেখা পড়ে শিখছেন । গুরুর মুখে এ কি কথা!
এত বড় কমপ্লিমেন্ট আমার বিরাট পাওয়া ভাই। এ জন্যই লিখি॥ ভালো থাকবেন
জিসান শা ইকরাম
জানার কোনো শেষ নেই।
প্রচুর লিখতে হবে,
শুভ কামনা।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
বিকৃত মানষিকতা সম্পন্ন মানুষ ছিল আছে হয়তো আগামীতেও থাকবে।
এদের সংখ্যা কিন্তু খুব বেশি না।
সবাই সচেতন হলে অতি সহজে এদের থামানো সম্ভব।
আসলে ভালো মানুষগুলো একজোট হতে চায় না।
আন্তরিকতায় শুভেচ্ছা রেখে গেলাম অন্তহীণ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হ্যাঁ মেয়দের তাতক্ষনিক প্রতিবাদ করতে হবে তাহলেই বন্ধ হবে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
যৌন বিকৃতি, কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল ব্যবহার ঘরে বাইরে সবখানে। শিক্ষা , ধর্মীয় অনুশাসন ও রীতি নীতি অনুসরণ না করলে আমাদের নারী সমাজের যেন রক্ষা নেই। হে পাষান্ড পুরুষ তুমি কি কোনো মায়ের গর্ভে ধারণ করো নি। তোমার বোন , খালা, ফুফু কি নেই। কেন তুমি এমন অমানুষের মতো আচরণ করছ। আল্লাহ্ সবাইকে হেদায়েত করুণ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
এদের তো বোধ নেই থাকলে হয়তো এমন করত না।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আসলেই এদের কোনো বোধ শক্তি আছে বলে মনে হয়না আপা। সুস্থ আর ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এসব কুরুচিপূর্ণ মানসিকতা বুড়োদের মধ্যে বেশি দেখা যায় কারণ তাদের বয়সের কারণে সবাই তাদের উপর সন্দেহ করতে পারে না সেই সুযোগের ফায়দা লুটে । তবে শিশু, নারী কোনো পুরুষের কাছেই নিরাপদ নয় একমাত্র বাবা ও আপন ভাই ছাড়া। নোংরা মানসিকতার পরিবর্তন হোক এই কামনা রইলো। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। শুভ রাত্রি
রোকসানা খন্দকার রুকু
এই বুড়োরা অতি ভয়ংকর। সাবধান হতে হবে।
শুভ কামনা রইলো দিদিভাই🥰🥰
আরজু মুক্তা
আমি দেখেছি, নাবা যে স্কুলে পড়তো। সেখানে দ্বিতীয় শ্রেনি থেকে এ ব্যাপারে কাউন্সিলিং করা হয়। আমি যা বলতে পারিনি। সেটা ষে শিখে এসেছে। এটা প্রসংশনীয়। এমন প্রতিটা স্কুলে চালু হোক।
আর যারা বড় তাদপর বলবো। দুই চারটা চড় দেয়া শিখেন। যা হবার তা তো হলোই। অতএব চুপ থাকা নয়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কাউন্সিলিং ও সাহসীকতার বিকল্প নেই। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইলো।😍😍
পপি তালুকদার
বেশ ভালো বলছেন বেশির ভাগ সময় বুড়ো বলে এড়িয়ে যাওয়া হয়।কিন্তু এদের লিপ্সা থাকে অন্য কিছু। এ ব্যাপারে সচেতন ও প্রতিবাদী হতে হবে।শুভ কামনা রইল।
রোকসানা খন্দকার রুকু
শুভ কামনা রইলো আপুনি🥰🥰