যেখানে স্বপ্ন ভিজে অশ্রু কণায়

হালিমা আক্তার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, শনিবার, ০১:০৮:৪৯পূর্বাহ্ন সমসাময়িক ১৭ মন্তব্য
  1. মেয়েটি স্কুলে এসেছে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে। এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। মেয়েটির চোখ গুলো ফোলা। দেখে মনে হলো খুব কান্না করেছে। শ্রেণি শিক্ষক কারন জিজ্ঞেস করতেই , অঝোরে কেঁদে দিল। এ যেন ছুঁয়ে দিতেই বাঁধ ভেঙে যাওয়া।

মেয়েটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার চোখে অনেক স্বপ্ন। তার  সেই স্বপ্ন তে বাধ সাধলেন তার বাবা-মা। তারা মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছেন। মেয়েটি লেখাপড়া করতে চায়। অভাবের সংসার তাই মেয়ের লেখাপড়ার ভার বহন করতে পারবেন না। খবর নিয়ে জানা গেল মেয়েটির লেখাপড়ার খরচ মেয়েটির বাবা বহন করেন না। তার পড়ালেখার খরচ চালায় তার এক মামা। মনে হল মেয়েটি বাবার কাছে বোঝা হয়ে গেছে। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে তিনি সেই বোঝা নামাতে চাচ্ছেন। নভেম্বরে এসএসসি পরীক্ষা। তিনি পরীক্ষা পর্যন্ত সময় দিতে নারাজ। মেয়েটির বাবা-মাকে স্কুলে আসার জন্য অনুরোধ করা হলো। দুইদিন অপেক্ষা করা হলো।  তারা আসলেন না। মেয়েটির ভাষ্যমতে তার মা পীর বাবার সাথে কথা বলেছেন পরামর্শের জন্য। পীর বাবা বলেছেন, মেয়েদের লেখাপড়া করানো দরকার কী। যত তাড়াতাড়ি পারো বিয়ে দিয়ে দাও।

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সহ আমরা মেয়েটির বাড়িতে যেতে চাইলাম। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিব। কিন্তু মেয়েটি খুব ভয় পাচ্ছিল। সে জানালো আমরা তার বাড়িতে গেলে। তার উপর আরো মানসিক অত্যাচার করবে। এমনকি এটাও হতে পারে যে, আজকের মধ্যেই হয়তো তড়িঘড়ি করে বিয়ে দিয়ে দেবে। মেয়েটি আরও জানালো- প্রয়োজনে বাসা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র বা গ্রামে চলে যাবে। যাতে মেয়েটি পরীক্ষা দিতে না পারে।

স্কুল কর্তৃপক্ষও প্রশাসনিক ঝামেলা এড়িয়ে আগাতে চাইলো। আমাদের এক শিক্ষক মেয়েটির কাছ থেকে তার নানী ও মামার নাম্বার নিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করলেন।  কেউ মেয়েটির সরাসরি দায়িত্ব নিতে চাইলেন না। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকল। এক সময় আমরা সফলতা লাভ করলাম।

এতক্ষণ যে মেয়েটির  কথা বললাম তার নাম রত্না। এ যাত্রায় রত্না হয়তো বেঁচে গেল।  কিন্তু ওর চোখে যে স্বপ্ন আঁকা,  সে স্বপ্ন কখনো পূরণ হবে কি। না কি রত্নার পথচলা অসমাপ্তই থেকে যাবে।

রত্নের মতো আমাদের অনেক শিক্ষার্থীই বাবা-মার অসচেতনতার বলি হয়ে আটপৌরে সংসার জীবনে প্রবেশ করে। অধিকাংশই আমাদের অগোচরে হয়। বিশেষ করে মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে বিয়ে দিয়ে আসে। সেখানে আমাদের আর কিছু করার থাকে না।

এভাবে বাল্যবিবাহের করাল গ্রাসে রত্নাদের মত অনেক মেয়ের স্বপ্ন অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যায়। বাল্যবিবাহ রোধে আইন আছে। কিন্তু আইন সামাজিক সমস্যা সমাধানে কতটুকু কার্যকর। আমাদের সমাজে বাবা মার উপরে কেউ কোন কথা বলতে পারে না। আমার মেয়ে আমি বিয়ে দিব তাতে কার কি। সমাজে মানুষের মধ্যে সচেতনতা না আসলে বাল্যবিবাহ রোধ করা কষ্টকর। আমরা চাই না, রত্নাদের স্বপ্নগুলো অশ্রু কণায় ভিজে যাক।

ছবি সংগ্রহ- নেট থেকে।

 

 

 

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ