প্রিয় দেশবাসী,

আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি আজ গভীর সংকটে, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশ পরাজিত শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে একাত্তরের মতো জামাত-শিবির ও অন্যান্য ধর্মান্ধ শক্তির লক্ষ্যবস্ত্ততে পরিণত হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি, নারীসমাজ ও মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শ। জামাত-শিবিরচক্র সারাদেশে সন্ত্রাসী নাশকতামূলক কার্যকলাপ চালাচ্ছে। প্রায় একশত মন্দির-বিগ্রহ ও শহীদ মিনার ভাংচুর এবং জাতীয় পতাকা ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তারা রেললাইন উপড়ে ফেলেছে, যাতায়াত ব্যবস্থা বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। ধর্মের নামে বিভ্রান্তি চালানোর জন্য মসজিদসমূহকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে পুলিশ ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, শিক্ষা ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য তথা জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চরম উৎকন্ঠা ও অনিশ্চয়তায় কালাতিপাত করছে ষোল কোটি মানুষ। অথচ এই অপশক্তির সাথে জোটবদ্ধভাবে আন্দোলন করছে প্রধান বিরোধীদল। সম্প্রতি ধর্মান্ধ উগ্রবাদীরা দেশকে মধ্যযুগে প্রত্যাবর্তনের দাবী উত্থাপন করেছে। তারা নারীর অধিকার ধূলিস্যাৎ করতে এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোর মুক্তচিন্তার পথকে রুদ্ধ করতে উদ্যত হয়েছে। এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে শাহবাগ ও দেশের সর্বত্র গণজাগরণ মঞ্চের তরুণেরা মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শকে শান্তিপূর্ণ পথে সমুন্নত রাখছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে নানা ধারার নাগরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ। অনুরূপ পরিস্থিতিতে আমরা নিম্নবর্ণিত পাঁচ দফা দাবীতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।

জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ কর :

আমরা মনে করি বর্তমানে বিচারাধীন জামায়াতে ইসলামের নিবন্ধন বাতিলের পক্ষে রায় হলে, তারা নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষিত হবে কিন্তু তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে না। আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, কিন্তু জামাত-শিবির তার কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে যে তারা ধর্মের অপব্যবহারকারী, সংবিধানবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন। সুতরাং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর অধীনে তাদের অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা উচিত।

যুদ্ধাপরাধের বিচার ত্বরান্বিত কর :

আমরা দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিরসন করার জন্য ও মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য বর্তমানে বিচারাধীন সকল শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ ত্বরান্বিত করে বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে রায় ঘোষণা ও রায় কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট ট্রাইবুন্যালকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিহত কর, আক্রান্তদের পাশে দাড়াও :

বাংলাদেশ আবহমানকাল থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। অথচ, গত কয়েক মাসে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশাসন নিষ্ক্রিয় রয়েছে, পাশে দাড়ায়নি জনপ্রতিনিধিরা। নিরাপত্তাহীনতায় আতংকিত রয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, তাদের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কমে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার মূল উৎপাটন করতে হবে। তাদের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে, সকল মন্দির-বিগ্রহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা মনে করি, এ কাজ কেবল সরকারের নয়, সমগ্র সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তদুপরি এজন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশের ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ণ এবং এক্ষেত্রে বাঙালি সংস্কৃতির প্রসার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নাও, মুক্তচিন্তার পথ খোলা রাখ :

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতিতে প্রতিফলিত হয়েছে। এই ভাবাদর্শকে সমাজে প্রতিষ্ঠা ছাড়া আধুনিক বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। আমরা মনে করি সর্বজনের ধর্মানূভুতিকে রক্ষা করুন, কিন্তু মুক্তচিন্তার পথ রুদ্ধ করবেন না।

তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তার প্রতিহত কর, নারীর অধিকার সমুন্নত রাখ

সম্প্রতি ধর্মান্ধ শক্তি তাদের ১৩ দফা দাবীর মাধ্যমে দেশকে মধ্যযুগে প্রত্যাবর্তন করাতে উদ্যত হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা এ বিষয়ে বিবিসিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার ও আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যাকে স্বাগত জানাই। বাংলাদেশের বিষ্ময়কর অর্জনের কেন্দ্রে রয়েছে নারী-পুরুষের সমবেত উদ্যোগ। এক্ষেত্রে নারীশিক্ষা ও তাদের কর্মজীবন বিপুল ভূমিকা রয়েছে। সকল রক্ষণশীলতাকে অতিক্রম করে নারীর ক্ষমতায়ন ও সমঅধিকার মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের আধুনিক যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়ার রক্ষাকবচ। সুতরাং ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে বাংলাদেশকে তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর সকল পাঁয়তারা রুখে দাঁড়াতে হবে। এই অপশক্তিকে রাজনৈতিক কৌশলের কারণে তুষ্ট কিংবা লালন করার সকল প্রয়াস রুখে দাঁড়াতে হবে। আমরা মনে করি, দেশের এই সংকটকালে প্রয়োজন একাত্তরের মতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সর্বসাধারণের জাতীয় ঐক্য যা এই অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াবে। রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও
জাতীয় সমাবেশ- ৫ অক্টোবর, সকাল দশটা্‌ , সোহরাওয়ার্দি উদ্যান, ঢাকা

জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ কর- যুদ্ধাপরাধের বিচার ত্বরান্বিত কর- সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ কর, আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াও- মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নাও, মুক্তচিন্তার পথ খোলা রাখ- তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা প্রতিহত কর, নারীর অধিকার সমুন্বত রাখএই সকল দাবীর সাথে সহমত পোষণ করলে সংহতি জানিয়ে http://www.rdbd.net/ আমাদের এই ওয়েবসাইটের নিবন্ধন ফর্ম পূরণ করে পাঠানোর জন্য সর্বসাধারণের প্রতি আমরা আহবান জানাচ্ছি। আমাদের সমবেত প্রচেষ্টায় এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াবে।

জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু । জয় প্রজন্ম , জয় তারুন্য , জয় শাহবাগ। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের , জয় হোক স্বাধীনতার ।

 

>>>> একজন নিষ্ঠাবান দেশপ্রেমিক

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ