যাদুর দেশ কামরূপ কামাখ্যা

কামাল উদ্দিন ২১ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার, ০৯:০৯:০২অপরাহ্ন ভ্রমণ ২৪ মন্তব্য

আসামের রাজধানী গৌহাটি বা গুয়াহাটি থেকে ট্রেন ছাড়বে রাত সাড়ে এগারটায়, আমাদের গন্তব্য ডিমাপুর হয়ে নাগাল্যান্ড। হাতে আছে আড়াই ঘন্টা সময়। আসাম এবং নাগাল্যান্ড ভ্রমণ শুরু করার পর থেকেই আমার মনে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল, যদি সুযোগ হয় কামরূপ কামাখ্যা দেখার। আমাদের ভ্রমণ লিডার মনা ভাইকে আগেই বলে রেখেছিলাম একটু সময় বের করে যেন আমাদেরকে কামরূপ কামাখ্যা থেকে ঘুরিয়ে আনে। ছয় জনের টিমের তিনজনই আড়াই ঘন্টা সময় হাতে নিয়ে কামরূপ কামাখ্যায় দৌড়াতে রাজী হয়নি। কিন্তু আমি যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেলাম।

সেই ছোট বেলা থেকেই হাটে বাজারে ক্যানভাসারদের নানা রকম যাদু দেখে আসছি, কখনো মানুষের মাথা কাটে তো কখনো ছেড়া কাগজ দিয়ে চকচকে নতুন টাকা, বিস্কুট, চকলেট বানায়। আর এমন সব যাদুই ওনারা শিখে এসেছে রহস্যে ভরা ল্যাংটার দেশ কামরূপ কামাখ্যা থেকে। জাদু টোনার দেশ কামরূপ কামাখ্যা নারী শাসিত একটা দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চল। ওখানে গেলে কেউ আর ফিরে আসতে পারেনা, নারী রাজ্যের নারীরা কাউকে জীবন সঙ্গী, আবার কাউকে পাথর বা ভেড়া বানিয়ে এখানেই রেখে দেয়। ভূত-পেত্নী আর ডাকিনী-যোগিনীর দেশ থেকে কিন্তু আমাদের তাবিজ বিক্রি করা ক্যানভাসাররা ঠিকই ফিরে এসে আমাদের চকলেট খাওয়াচ্ছেন।

উবারের ট্যাক্সি নিয়ে ছুটে চললাম গুয়াহাটি শহরের পশ্চিমাংশে নীলাচল পর্বতে অবস্থিত আমার সেই কাঙ্খিত মন্দিরে। কামরূপ মূলত গৌহাটির একটি জেলার নাম, আর কামাখ্যা হলো সেই জেলায় অবস্থিত একটা মন্দির মাত্র। গৌহাটি স্টেশন থেকে দুরত্ব কতোটা তা ঠিক বলতে পারবো না, তবে পাহাড়ের ঘোরানো পেচানো পথ পারি দিয়ে ২০/২৫ মিনিটেই পৌছে গেলাম মন্দিরের পাদদেশে। গাড়ির রাস্তা শেষ, বাকী পথটা হেটেই উঠতে হবে। উবারের গাড়ি যেখানে নামিয়ে দিলো সেখান থেকেই শুরু হলো নানা নামের মন্দির। এই মন্দির গুলিতে দশ মহাবিদ্যা অর্থাৎ কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ধূমাবতী, ছিন্নমস্তা, বগলামুখী, মাতঙ্গী ও দেবী কমলা – এই দশ দেবীর মন্দিরও রয়েছে।

রাতে ক্যামেরায় ভালো ছবি না আসলেও ভালো ছবি তোলার চেষ্টার কমতি ছিলোনা আমার। কারণ এটা আমার স্বপ্ন গন্তব্য। ক্যামেরায় ছবি তোলার ফাঁকে ফাঁকে মোবাইলেও কিছু ছবি ধারণ করেছিলাম। তখন কি আর জানতাম ক্যামেরায় তোলা আমার সব ছবি হারিয়ে মোবাইলে তোলা ছবিগুলোই স্থায়ী হবে। আমার পিসির হার্সডিস্ক ক্রাস করায় এবং বিগত তিন বছরে তোলা কোন ছবির ব্যাকআপ না রাখায় আজ সবেধন নীলমনি মোবাইলে তোলা ছবি নিয়েই আমার আজকের পোষ্ট। আসুন মোবাইলে তোলা কিছু ছবিতে দেখে নেই আমার সেই স্বপ্নের নারী রাজ্য কামরূপ কামাখ্যা।


(২) মূল কামাখ্যা মন্দিরের প্রবেশ পথ এটা।


(৩) মূল প্রবেশ পথের সিড়ির নিচেই অঙ্কিত রয়েছে মন্দিরের কিছু ইতিহাস।


(৪/৫) মন্দির চত্ত্বরের ভেতর দিকে গিয়ে দুই পাশ থেকে তোলা দুটি ছবি। মূলত এটাই কামাখ্যা মন্দিরের পুরো ছবি।


(৬) হাতির উপর বসে আছে একটি মানুষের প্রতিকৃতি, তাতে প্রচুর সিঁদুরে মাখামাখি। জানিনা এটা কার মুর্তি।


(৭) মন্দির থেকে কিছুটা পথ নেমে নীলাচল পর্বতের বাঁকে একটা ভিউ পয়েন্ট আছে। সেখানে দাঁড়িয়ে তোলা রাতের গৌহাটি শহর।


(৮/৯) কামরূপ কামাখ্যা দেখে গৌহাটি স্টেশনে আমরা সময় মতোই ফিরতে পেরেছি, আমার ভ্রমণ সঙ্গী সহ আলোকিত স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে তোলা দুটি ছবি।

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ