মোতালেব ২৬ বছর বয়সে ধার দেনা করে মালুশিয়া যায়। অভাবের সংসারে মোতালেব হয় সবার সুখের উৎস। মোট ১২ বছর প্রবাসে থেকে ৩৮ বছর বয়সে দেশে ফেরে ও। ধার সব সোধ হইছে, দুই বোনের বিয়ে দিচছে, ঘর দুয়ার কিছুটা পরিপাটি, পাকা পায়খানা, বাপ মায়ের বারোমাসি চিকিৎসা, ছোট ভাইরেও বছর খানেক আগে দুবাই পাঠাইছে। লাখ দশেক টাকার জমিও কিনেছে। দেশে এসে ক্যাশ পেয়েছে ১২/১৩ লাখ টাকার মত। আরেকটা সম্পদ করেছিল মোতালেব, ঢাকার একটা নির্মাণাধীন নতুন মার্কেটে একটা ছোট দোকান কিস্তিতে কিনেছিল যার ৮০% টাকা অলরেডি পরিশোধ। আর কয়েকমাসের মধ্যেই মার্কেটের দোকান চালু হবে। কসমেটিক্সের দোকান দেয়ার ইচ্ছে ওর।
বেশ ভাল ঘরেই বিয়ে করে মোতালেব। গেরস্ত পরিবার হলেও বড় ঘর। বেশ ধুমধাম করেই বিয়ে হয়। ৪/৫ লাখ টাকা খরচ। বাকি টাকাটা দিয়ে দোকান চালু করবে। অতঃপর বাকি জীবন এভাবেই পরিবার পরিজন নিয়ে কাটিয়ে দিবে সুখে।
কিন্তু মোতালেবদের কপালে এত সুখ নাই। খাস জমিতে জালিয়াতি করে মার্কেট বানানোয় সরকার মার্কেটের কাজ বন্ধ করে মার্কেট দখলমুক্ত করেছে। ঠিকাদার এরেস্ট। কিন্তু প্রতারিত গ্রাহকদের দায় দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না। মাথায় আকাশ ভেংগে পরে মোতালেবের। ঘরে দুই মাসের পোয়াতি বউ, ক্যাশ টাকাও কমে গেছে। চোখে অন্ধকার দেখে মোতালেব। এই দোকানের জন্য দেয়া টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য কয়েকমাস হেথায় সেথায় ঘুরেছে কিন্তু কাজ হয়নি। এর মধ্যে বাবার অসুখ আবার বেড়েছে। ষোলকলা পূর্ণ হয় যখন জানা যায় দুবাই থাকা ছোট ভাই বিদেশ যাওয়ার আগে গোপনে বিয়ে করে যায়। এখন সে টাকা পাঠায় বউ এর কাছে। পরিবারের সাথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ। কয়েকদিন বাদেই সংসারে নতুন অতিথি আসবে। কী করবে মোতালেব?
শ্বশুর বাড়ির সহায়তায় আর নিজের ক্রিত জমি বন্ধকের টাকা দিয়ে সৌদি আরব চলে যায় মোতালেব ওর মেয়ের জন্মের ঠিক তিনদিন আগে।
হ্যা, মোতালেব এখনো সৌদি। আজ ৫৫ বছর বয়স ওর। দুই বছর পর পর দুই মাসের জন্য দেশে যায়। দুই মেয়ে এক ছেলে হইছে। বড় মেয়ে এখন ক্লাস এইটে। এইবারের জেএসসি পরিক্ষায় A+ পাইছে, মেঝো মেয়ে ফোরে পড়ে আর একমাত্র ছেলের বয়স ৫ বছর। বড় মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে আর দুই চার বছর পরেই। বাড়ি ঘরের আরো উন্নতি হইছে, বউ এর শাড়ি গয়নাও হইছে, ছেলে মেয়েরা প্রাইভেট মাস্টারের কাছেও পড়ে। বাবা মা মারা যাওয়ায় এখন ঝামেলা আরো কম। জমি আরো কেনা হইছে। কিন্তু মোতালেব স্থায়ীভাবে দেশে আসার কথা ভাবতে পারে না। ছেলেটার বয়স মাত্র ৬!!! অন্তত মেয়ে দুইটার বিয়ে না দিয়ে মোতালেব দেশে ফিরবে না!!!
১৭টি মন্তব্য
রাফি আরাফাত
ভালো লাগলো
শিপু ভাই
থ্যাংকস
সুরাইয়া পারভীন
ক্ষণিকের তরে ভেঙ্গে পড়লেও আবার ঘুরে দাড়াতে পেরেছে মোতালেব। সবাই পারে না গল্প ভালো লেগেছে
শিপু ভাই
ধন্যবাদ আপু
জিসান শা ইকরাম
মোতালেবদের নিজস্ব জীবন বলতে কিছুই থাকেনা,
আজীবন কলুর বলদের মত ঘানি টানতে হয়।
শিপু ভাই
অদ্ভুত জীবন
সুপর্ণা ফাল্গুনী
প্রবাসীদের কলুর বদলের মতো প্রবাস জীবন যাপন করতে হয়। নিশ্চিন্ত জীবনের আশায় একাকীত্ব কে মেনে নিতে হয়। সুন্দর একটি লেখা। শুভ কামনা রইল শুভ নববর্ষের
শিপু ভাই
অনেক ধন্যবাদ।
রিপ্লাই দতে অনেক বেশি দেরি করে ফেললাম।
মোঃ মজিবর রহমান
এরই নাম জীবন যাদের পুর্ববর্তী কিছু না থাকে। তারই একজন মোতালেব।।
শিপু ভাই
এই মোতালেবদের সংখ্যা কিন্তু কম নয় এদেশে
সাবিনা ইয়াসমিন
এভাবেই মোতালেবরা প্রবাসী হয়ে যায়। ভবিষ্যতে আরেকটু ভালো থাকা, পরিবারকে আরেকটু ভালো রাখার প্রয়াসে পার করে প্রথম যুগ। তারপর ফেরার সময় হলেও ফিরতে পারে না। প্রথম যুগের ধাক্কা তাকে ফিরতে দেয় না।
বাস্তবতার আলোকে গল্পটি আর গল্প রইলো না।
আরও লিখুন শিপু ভাই।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা আপনাকে 🌹🌹
শিপু ভাই
ব্লগে লিখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ফেসবুকে যেমন ইন্সট্যান্ট লিখি ব্লগে সেভাবে লেখাটা উচিৎ মনে করি না। ভেবেচিন্তে একটা পোস্ট তৈরি করতে হয় ব্লগের জন্য। মানসিক স্থিরতা নাই অনেক বছর।
সুপায়ন বড়ুয়া
এইতো জীবন !
থাকেনা থেমে ?
মোতালেব রা ভাল থাকুক !
সাথে লেখক ও।
শিপু ভাই
আপনিও ভাল থাকুন
নিতাই বাবু
ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি শ্রদ্ধেয় দাদা।
শিপু ভাই
দুঃখিত দাদা
দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ছিলাম ব্লগে।
শিপু ভাই
আপনিও ভাল থাকুন