মৈমনসিংহ গীতিকা : চন্দ্রাবতী (প্রথম পর্ব)
মৈমনসিংহ গীতিকা : চন্দ্রাবতী (দ্বিতীয় পর্ব)
মৈমনসিংহ গীতিকা : চন্দ্রাবতী (তৃতীয় পর্ব)
(৯) মুসলমান কন্যার সাথে জয়চন্দ্রের ভাব
পরথমে হইল দেখা সুন্ধা নদীর কূলে।
জল ভরিতে যায় কন্যা কলসী কাকালে।।
চলনে খঞ্জন নাচে বলনে কুকিলা।
জলের ঘাটে গেলে কন্যা জলের ঘাট লালা।
“কে তুমি সুন্দরী কন্যা জলের ঘাটে যাও।
আমি অধমের পানে বারেক ফির্যা চাও।।
নিতি নিতি দেখ্যা তোমায় না মিটে পিয়াস।
প্রাণের কথা কও কন্যা মিটাও মনের আশ।।
পরকাশ কইরা কইতে নারি মনের ধর।
তুমি কন্যা এই জগতে প্রাণের দোসর।”
সরমে মরণ আইল কথা কওয়া দায়।
জলের ঘাটে গিয়া নাগর উকিজুকি চায়।।
লিখিয়া রাখিল পত্র ইজল গাছের মূলে।
এইখানে পড়িব কন্যা নয়ন ফিরাইলে।।
“সাক্ষী হইও ইজল গাছ নদীর কূলে বাসা। *
তোমার কাছে কইয়া গেলাম মনের যত আশা।।
এইখান আসিব কন্যা সুন্দর আকার।
এই পত্র দেখাইও আমার সমাচার।।
অন্ধকারের সাক্ষী তোমরা চান্দ আর ভানু।
এইখানে আসিবে কন্যা সোনার বরণ তনু।।
সোনার বরণ তনু কন্যা চম্পকবরণী।
তার কাছে কইও আমার দুঃখের কাহিনী।।
ফির্যা আসে জলের ঢেউ পায়ের কাছে খাড়া।
এইখান বসিয়া আমি দেখিন পশরা।।"
ভাবিয়া চিন্তিয়া নাগর যুক্তি স্থির কৈল।
কালি প্রাতে তুলতে ফুল পুষ্পবনে গেল।।
যে খান ফুট্যাছে ফুল মালতী-মল্লিকা।
ফুট্যা আছে টগর-বেলি আর শেফালিকা।।
হাতেতে ফুলের সাজি কপালে তিলক-ছটা।
ফুল তুলিতে যায় কুমার মনে বিন্ধ্যা কাঁটা।।
* ইজল : হিজল গাছ
(১০) দুঃসংবাদ
ঢুল বাজে ডাগর বাজে জয়াদি জুকার।
মালা গাঁথে কুলের নারী মঙ্গল আচার।।
এমন কালে দৈবেতে করিল কোন কাম।
পাপেতে ডুবাইল নাগর চৈদ্দ পুরুষের নাম।।
কি হইল কি হইল কথা নানান জনে কয়।
এই যে লোকেরা কথা প্রত্যয় না হয়।।
পুরীতে জুড়িয়া উঠে কান্দনের রোল।
জাতিনাশ দেখ্যা ঠাকুর হইল উতরুল।।
“কপালের দোষ, দোষ নহে বিধাতার।
যে লেখ্যা লেখ্যাছে বিধি কপালের আমার।।
মুনির হইল মতিভ্রম হাতীর খসে পা।
ঘাটে আস্যা বিনা ঝড়ে ডুবে সাধুর না।।”
পাড়া-পড়সি কয় “ঠাকুর কইতে না জুয়ায়।
কি দিব কন্যার বিয়া ঘটল বিষম দায়।।
অনাচার কেল জামাই অতি দুরাচার।
যবনী করিয়া বিয়া জাতি কৈল মার।।”
শিরেতে পড়িল বাজ মঠের মাথায় ফোড়।
পুরীর যত বাদ্যভাণ্ড সব হৈল দূর।।
ধুলায় বসিল ঠাকুর শিরে দিয়ে হাত।
বিনাদোষে হইল যেন শিরে বজ্রপাত।।
(চলবে)
Thumbnails managed by ThumbPress
১৭টি মন্তব্য
অন্তরা মিতু
লিখিয়া রাখিল পত্র ইজল গাছের মূলে।
এইখানে পড়িব কন্যা নয়ন ফিরাইলে।।
“সাক্ষী হইও ইজল গাছ নদীর কূলে বাসা। *
তোমার কাছে কইয়া গেলাম মনের যত আশা।।
কাফি রশিদ
সুন্দর।
সাতকাহন
প্রথম পেইজে একজনের তিনটি লেখা ক্যাম্নে থাকে ???? আমি মডারেটরে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি…। একটু জানাবেন, জানালে খুশি হবো।
আদিব আদ্নান
থাকলে থাকুক , আমাদের কোন সমস্যা নেই ।
সাতকাহন
ব্লগের নিয়ম এটা হতে পারে না, আর এমনই যদি হবে তাহলে তাহলে বলেন, আমি এখানে ব্লগিং করা ছেড়ে দেবো। একটি নিতীমালা অন্তত থাকা দরকার।
কাফি রশিদ
প্রথম পাতায় একজনের পোস্ট একটার বেশি থাকা যাবে না অ্যামন কোন নিয়ম কোথাও আছে?
সাতকাহন
ব্লগিং করতে আসছেন নিয়মটা ভালো করে যেসে আসবেন না ?
জিসান শা ইকরাম
@আদিব আদ্নান এর সমস্যা না থাকলেও অনেকের সসস্যা হতে পারে । এ কারনে অনেক ব্লগার আর একটি বড় ব্লগে পোস্ট দেন না ।
জিসান শা ইকরাম
@ সাতকাহন , নীতিমালা তৈরী করছি , দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে সব কিছু ।
আদিব আদ্নান
লেখা পড়ে নদীর কূলে যাইতে মুঞ্চায় ।
কোন কাজ হবে এমন ভরসা তো পাচ্ছি না ।
কাফি রশিদ
আগে চন্দ্রাবতী পেতে হবে। তারপর নদীর কূলে অন্য কোন নারীর জন্য গ্যালে পেতেও পারেন। 😛
মিসু
দারুন লাগছে ভাইয়া ।
কাফি রশিদ
ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
অসাধারন (y)
আচ্ছা সুন্ধা নদীর কূলে – সুন্ধা কি ? আমাদের এখানে নদীর নাম সুগন্ধা ।
কাফি রশিদ
সুন্ধ্যা নদীর তীরে যে গ্রাম তার নামও সুন্ধ্যা।
শিশির কনা
অসাধারন । ছন্দের অপূর্ব মিল।
বনলতা সেন
তখন ও দেখছি ফুলে কাঁটা ছিল । তাই মনে হয় এখনও কাঁটা রয়েই গেছে ।