
পহেলা মে সরকারি ছুটির দিন। বিশ্বব্যাপী মে দিবস পালন একধরনের সংস্কৃতিতে পরিনত হয়েছে। মে দিবসের এই ছুটি মানুষে মানুষে ঐক্য, একত্রীকরণ এবং পুনর্জন্মের দিন। সবাই একত্রিত হয়ে নিজেদের জীবনকে উদযাপন করার দিন।
ঊনিশ শতক থেকে বিশ্ববাসীর কাছে মে দিবস নতুন আবহে একটি অর্থ হয়ে এসেছে। মে দিবসটি শ্রম অধিকারের জন্য “আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস” নামে পরিচিতি পেয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে “আট ঘন্টা কর্ম দিবস” হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ তাদের বিশ্বাসের সাথে মে দিবসকে প্রান্তিকীকরণে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য তৈরি করেছে।
ইউরোপীয় এবং আমেরিকানরা ফুলের মুকুট, মেপোলের নাচ এবং প্রিয়জনের সাথে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্য ফুলের ঝুড়ি তৈরি করে একে অপরকে উপহার দিয়ে মে দিবসটি উদযাপন করে।
হাওয়াই দীপপুঞ্জে মে দিবসটি “লেই ডে” নামে পরিচিত। এটি “আলোহা স্পিরিট” হিসেবে উদযাপন করা এবং ফুল দেওয়া নেওয়া করা তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। নিজেদের প্রিয় মানুষদের সাথে এভাবে মে দিবস উদযাপনের চেয়ে অন্য ভাল কোন পদ্ধতি আর হতে পারেনা।
গতকাল সকালে পত্রিকাওয়ালা এসেছিলো পত্রিকা দিতে। যেখানে লাল রঙে বোল্ড অক্ষরে হেডিং লেখা ছিলো – “আজ মে দিবস”
বললাম- আজ না মে দিবস!
তার উত্তর ছিলো- স্যার আমি ছুটি কাটাইলে পত্রিকা পড়বেন কেমনে?
দুপুরে বাসায় ডিশের লাইনম্যান এসেছিলো বিল নিতে। জিজ্ঞেস করলাম – ছুটি নেই?
ভাইয়া বিল না তুললে বেতন হবেনা। আমার বাসায় আজ টাকার প্রয়োজন। তার এই উত্তর শুনে আমি নিজেই নিরুত্তর ছিলাম।
উন্নত বিশ্বে মে দিবসে মালিক শ্রমিক নিজেরা সম্প্রীতির মেলবন্ধনে আবদ্ধ হয়। অথচ আমরা নিজেদের বাসার কাজের মানুষটাকেও এই একদিন ছুটি দেইনা। জন্মদাতা মাকেও বলিনা মা আজ তোমার ছুটি। আজ আমি তোমার সব কাজ করে দেব। নিজের বাবাকে বলিনা একদিন বিশ্রাম নিন, আজ বাজার আমি করবো।
যে সহধর্মিণী বছরের তিনশত পঁয়ষট্টি দিন সংসারে রান্না করে খাওয়ায় তাকেও বলতে ভুলে যাই আজ তুমি বিশ্রাম নাও, আমি রান্নাবান্না করে দেই। কারন আমরা যে পুরুষ! বুকের ছাতি ফুলিয়ে আমরা প্রমাণ করতে ভালোবাসি আমরা পুরুষ! ফুল দেয়া নেয়া, উপহার সামগ্রী আদানপ্রদান সেটাতো অনেক দূরের বিষয়।
কিসের মে দিবস আর কিসের শ্রমজীবীদের প্রতি সহানুভূতি! গদিতে বসে যারা মে দিবস নিয়ে কলাম লেখেন তাদের লেখা আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়া সেই পত্রিকাওয়ালা কি শ্রমিক নয়?
অট্টালিকার এসি রুমে বসে যা টিভি চ্যানেল পরিচালনা করে এই ডিশম্যানরা না থাকলে টিভিতে শুধু লেবুর বাম্পার ফলনই দেখতে হতো। এসব কথা কি তারা জানে না? অবশ্যই জানে কিন্তু তারা নিজেরটা বোঝে ষোলআনা।
সব বাটপার চাটুকার মিলেমিশে যেখানে একাকার সেখানে মে দিবসে শ্রমজীবী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা, সহানুভূতি জানানো ছাড়া আমার মত অনেকেরই আর কিছু করার নেই আসলে।
জগৎসংসারের সকল মেহনতি মানুষদের প্রতি হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি।
৩০টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসাধারণ হয়েছে আপনার একান্ত অনুভূতি। সহমত পোষণ করছি। চমৎকার পোষ্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো
তৌহিদ
আরে না না অসাধারণ কিছু নয়, মনের কথাগুলোই বললাম আর কি! সহমতের জন্য ধন্যবাদ দিদি। শুভকামনা রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
এ সব দিবস-ফিবস সব ভুয়া/ফালতু।
যাদের জন্য দিবস তাদের খবর কে রাখে!
তৌহিদ
সমস্যা এখানেই, কেউ তাদের খোঁজ রাখেনা।
ফয়জুল মহী
অসাধারণ লেখা। খুবই ভালো লাগলো।
তৌহিদ
ধন্যবাদ মহী ভাই। ভালো থাকবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমাদের দেশে সব দিন, বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোকে উৎসব হিসেবেই দেখি। যেখানে শুক্রবারের সাপ্তাহিক ছুটিকেও কেউ জুম্মা দিবস হিসেবেই মানি। সেখানে, কোন দিনের কি তাৎপর্য এসব দেখার সময় কই! বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশে গুলোতে শ্রমিকদের নিয়ে অনেক আয়োজন থাকলেও আমাদের দেশ ও নিম্ন আয়ের অনেক দেশেই শ্রমজীবীদের এই দিনে শ্রদ্ধা আর সহানুভূতি ছাড়া বেশি কিছু দিতে পারবো না, পারিও না। আর শ্রমজীবীরা তাদের পারিশ্রমিক পেয়েই খুশি হতে চান, যা দিয়ে তারা তাদের পরিশ্রমকে মূল্যায়ন করেন, ছুটি দিয়ে যেটা হয় না।
মে দিবসে আপনার একান্ত অনুভূতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্যে ধন্যবাদ তৌহিদ ভাই।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা রইলো 🌹🌹
তৌহিদ
আসলে আমরা মেহনতি মানুষকে অনেকেই মুল্যায়ন করিনা। যাদের ঘারে ভর করে মালিকেরা উপার্জন করে তাদের কথা ভাবা উচিত অথচ করি তার উলটো।
এখানে ছুটির চেয়েও বড় বিষয় সহমর্মিতা যা আমাদের নেই। ভালো থাকবেন আপু।
শুভকামনা রইলো।
ইঞ্জা
অপ্রিয় হলেও সত্যটিই বলেছেন ভাই, সবাই আমরা ফাঁকা বুলিই আওড়িয়ে যায়, কিন্তু সত্যিকার অর্থে কেয়ার কয়জনই বা করি, আর ডিসিশন মেকারদের কথা বলতে চাইলে এখন মুখ ভর্তি গালি আসে, সব বাটপার, সবটাই চিটার।
তৌহিদ
এটাই সত্য ভাই। শ্রমিকদের মূল্যায়ন কেউ করে না, শুধু মুখে বড় বড় বুলি তাদের।
ভালো থাকবেন দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আমরা আজও শ্রমিকদেরকে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারিনি। তাঁরা যুগেযুগে বরং বহু লাঞ্চিত হয়েছে।
.
কথাগুলো অপ্রিয় হলেও সত্য দাদ
তৌহিদ
হ্যা এটাই সত্য দাদা। ভালো থাকবেন সবসময়।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আমরা আজও শ্রমিকদেরকে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারিনি। তাঁরা যুগেযুগে বরং বহু লাঞ্চিত হয়েছে।
.
কথাগুলো অপ্রিয় হলেও সত্য দাদা।
সাধুবাদ যথার্থ উপস্থাপনের জন্য
তৌহিদ
হ্যা এটাই সত্য দাদা। ভালো থাকবেন সবসময়।
সুপায়ন বড়ুয়া
অপ্রিয় সত্য কথা অস্বীকার করি কেমনে।
এটাও এক ধরনের স্বীকৃতি। জরুরী বলতে একটা বিষয়
যেটার কোন ছুটি নাই।
ছুটির দিনে সবাই একসাথে নাওয়া খাওয়া বেড়ানো এটা ও বা কম কিষে।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
সকল মেহনতি মানুষের জয় হোক। ভালো থাকবেন দাদা।
সুরাইয়া নার্গিস
চমৎকার লেখা ভাইয়া।
সহমত পোষন করছি,পত্রিকাওয়ালা, শ্রমজীবি মানুষ এরা শ্রমিক না? কথা গুলো ভালো লাগছে। আমাদের বাবা মাকে একদিন ছুটি দেই না অথচ আমাদের ওয়ালে মে দিবসের বড় বড় পোষ্ট দেই।
এটাই আমরা, আমাদের চারপাশ শুধু বড় বড় কথায় শ্রমিককে শ্রদ্ধা জানাই কিন্তু বাস্তব তা উল্টো।
শ্রদ্ধা আমাদের বাবা মা সহ সকল শ্শ্ররমজীবি মানুষদের জন্য।
ভালো থাকুন,
তৌহিদ
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু। মন্তব্যে ভালোলাগা রইলো। আসলে সংসারের পিছনে যারা অক্লান্ত শ্রম দেয় তারাও কিন্তু শ্রমিক। সবাই সুখে থাকুক এটাই কাম্য।
জিসান শা ইকরাম
কোনো দিবসকেই আমরা আর আসল ভাবার্থে পালন করিনা। একটা অনুষ্ঠান এর মত পালন করি। মে দিবসটা শুধু শ্রমিক শ্রেনীর ভাবি। বাস্তবে সমস্ত চাকুরীদের কর্মঘন্টাই হচ্ছে আট ঘন্টা।
আমাদের দেশে মালিক শ্রমিক সু- সম্পর্ক হতে পারেনা। এই সময়ে গার্মেন্টস খুলে দেয়াই এর প্রমান।
ভালো লিখেছেন।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
একদম ঠিক ভাই। এদেশে মালিক শ্রমিক সুসম্পর্ক কোনদিন হবেনা। মুখেই সবাই অনেক কিছু বলি কার্যত কিছুই করিনা।
ভালো থাকবেন ভাই।
সুরাইয়া পারভীন
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন ভাইয়া। মালিকেরা কখনোই শ্রমিকদের মানুষ ভাবে না। মালিক-শ্রমিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হলে যুগে যুগে অত্যাচার, শোষন, নির্যাতন, নিপীড়ন করবে কাদের?
সবাই শুধু নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত। দরিদ্র শ্রমিকদের হক নিয়ে ভাবার সময় কই!
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময় ভাইয়া
তৌহিদ
সুন্দর এবং সঠিক বললেন আপু। আসলে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য শ্রমিকদের এক কাতারে আমরা দাঁড়াতে দেইনা।
ভালো থাকবেন আপু।
কামাল উদ্দিন
আমাদের দেশে মে দিবসে বিশেষ কিছু শ্রমিক ছাড়া বাকীদের ছুটি নেই বা নিজেরাই কাজে লেগে থােন, ঐ যে, নুন আন্তে পান্তা ফুরায়।
তৌহিদ
সমস্যা সেখানেই ভাই। একদিন বের না হলে খাবার জুটবেনা। মালিকরাও এর সুযোগ নেয়।
ভালো থাকবেন ভাই।
সঞ্জয় মালাকার
দাদা, অপ্রিয় সত্য কথা অস্বীকার করি কেমনে,
আমরা যে স্বর্থ পিছে দৌড়াতে দৌড়াতে মরছি মিথ্যে আনন্দে।
চমৎকার উপস্থাপন দাদা, ভালো থাকবেন সব সময় শুভ কামনা।
তৌহিদ
আপনার জন্য শুভকামনা দাদা। ভালো থাকবেন।
নিতাই বাবু
যাঁদের নিয়ে এসব দিবস কাহিনি ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়েছে। তাঁদের খবর ক’জনে রেখেছে? রাখেনি! কিন্তু ওইসব দিবসের উছিলায় আজ বিশ্বের অনেকেই বিত্তশালী বনে গেছে। এটা কেউ একবার ভেবেও দেখা না, শুধু দিবস পালনের জন্য ব্যস্ত থাকে।
লেখা পড়ে ভালো লাগলো দাদা। আমিও কিন্তু এক দিনমজুর!
তৌহিদ
আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি দাদা। সকল মেহনতি মানুষকে লাল সালাম জানাই।
ভালো থাকবেন দাদা।
হালিম নজরুল
মুগ্ধ হলাম আবার।
তৌহিদ
ভালোবাসা জানবেন ভাই।