মেয়েটির গায়ে একটি সোয়েটার

রুমন আশরাফ ৮ নভেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ০৯:১২:২৭অপরাহ্ন গল্প ১৯ মন্তব্য

নাহ একটা সোয়েটারও পছন্দ হচ্ছে না। সেলসম্যান ইতিমধ্যে বেশ কিছু সোয়েটার দেখিয়েছে আমাকে। বাচ্চাদের ড্রেস খুব বেছে বেছে কিনতে হয়। তাও আবার মেয়ে বাচ্চা। পছন্দ না হলে হয়ত ছুড়ে ফেলে দেবে না হয় গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে। পাঁচ-ছয় বৎসর বয়সের মেয়েরা “পছন্দ” ব্যাপারটি বেশ ভালই বোঝে!

 

সেলসম্যান আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। বিরক্ত নাকি হতাশ ঠিক বুঝতে পারছি না। ব্যাপারটি ভ্রূক্ষেপ না করে উল্টো দিকে ঘুরলাম। হ্যাঙ্গারে ঝুলানো থরে থরে সাজানো আরও কিছু সোয়েটার দেখা যাচ্ছে। সেলসম্যান এগিয়ে এলো।

-স্যার এগুলোও বেশ ভাল, দেখতে পারেন। তিন থেকে সাত বছরের বাচ্চাদের সোয়েটার এখানে।

-ঠিক আছে, আমি নিজেই দেখে নেবো। সমস্যা নেই। প্রয়োজন হলে আপনাকে ডাকব।

 

বিক্রয়মূল্য উল্লেখ করা আছে প্রতিটি জামায়। “এক দাম” এর শো রুম। হ্যাঙ্গার নেড়েচেড়ে একেকটি সোয়েটার দেখছি আর আড়চোখে সংযোজিত মূল্য দেখছি। সাধ্যের নাগালে আছে কিনা চোখ বুলিয়ে নিচ্ছি।

 

আকাশী আর সাদা রঙ মিশ্রিত একটি সোয়েটার বেশ নজর কাড়ল। হ্যাঙ্গার সমেত সোয়েটারটি বের করতেই চোখ গিয়ে পরল শো রুমের কাঁচের দেয়ালে। অস্পষ্টভাবে ফুটে উঠলো একটি বাচ্চা মেয়ের অবয়ব। কাঁচের দেয়ালে দুহাতের তালু আর কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি। বিস্ময় আর হাহাকার মিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দোকানের ভেতরটা দেখছে। স্বচ্ছ কাঁচটি ঈষৎ ঘোলাটে হয়ে গেছে মেয়েটির শ্বাসপ্রশ্বাসে। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির আভা ছড়িয়ে দিয়ে মেয়েটিকে দেখছি। অবচেতন মনেই হাত ইশারা করে ডাকলাম। কিছুটা ঘাবড়ে গেল মেয়েটি। দরজা খুলে মাথা বের করলাম। হাসিমুখে ভেতরে আসতে বললাম।

 

ছোটছোট পা ফেলে এগিয়ে এলো মেয়েটি। দোকানের ভেতর ঢুকেই পিটপিট করে এদিকওদিক তাকাচ্ছে। পড়নে ময়লা ছেড়া একটা ফ্রক। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। খালি পা। গায়ের চামড়া শুষ্ক আর খসখসে মনে হল। বয়স অনুমান করলাম। পাঁচ-ছয় হবে হয়তো।

 

কোনও কিছু না ভেবেই হাতে থাকা সোয়েটারটি মেয়েটির গায়ের উপর ধরলাম। মাপ যথাযথই আছে বলে মনে হল। অতঃপর মেয়েটির গায়ে পরিয়ে দিলাম সোয়েটারটি। কিছুটা ভড়কে গেল মেয়েটি। মাথা নিচু করে ফিসফিস করে বললাম, “পছন্দ হয়েছে?” মেয়েটি নির্বাক। চোখেমুখে বিস্ময় তার। অদূরে থাকা সেলসম্যানটি তাকিয়ে আছে এদিকে।

 

ক্যাশ ডেস্কে মূল্য পরিশোধ করে মেয়েটির পিঠে আলতো চাপড় দিয়ে বললাম, “ঘরে যাও, শীতে বাইরে থাকতে নেই”। মেয়েটি অকৃত্রিম আর নির্মল একটি হাসি উপহার দিল আমায়। এ হাসি বড়ই নিস্পাপ, বড়ই মায়াময়।

 

কেমন যেন ঝাপসা লাগছে চোখদুটো, ঘোলাটে হয়ে যাওয়া সেই কাঁচের দেয়ালের মত।

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ