#যাও_পাখি_বলো_তারে_সে_যেনো_ভুলে_যায়_মোরে
প্রিয়
আসমানে ভাসমান বাষ্পরাশি, আসসালামুআলাইকুম, কেমন আছো। দীর্ঘ বিরতির পর তোমাকে চিঠি লিখতে বসলাম। হয়তো অভিমানে মুখ ফুলিয়ে বসে আছো। কেনো তোমাকে আর চিঠি লিখছি না-আমাকে না ১০২ টি চিঠি লিখার কথা ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি সাত পাঁচ ভেবে বসে আছো। আর ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছো আমার আকাশ থেকে। আমি দেখতে চাইছিলাম কতটা ভালবাস রোদ্দুরকে।দেখে নিলাম এবং বুঝে নিলাম। তুমি দূরের গেলে চলে অবশেষে। আসলেই একের প্রতি অন্যের ভালবাসাগুলো এমনই-লেনাদেনা। নিঃস্বার্থ কেউ কাউকে ভালবাসতে পারে না। মনের এক কোণে কিছুটা স্বার্থ লুকায়িত থাকেই । যখনই স্বাথে ব্যাঘাত ঘটে তখনই ঘটে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা। আড়চোখে তাকিয়ে দেখে দেখে কিছু না বলে পালিয়ে যাওয়া বা অন্য আকাশের বুকে ভেসে বেড়ানো। তুমিও অবশেষে এই কাজটিই করলে হাহাহা।রোদ্দুর মেঘকে চিনতে পারল । এ কেমন ভালবাসা-খালি নিতেই শিখলে মেঘ দিতে শিখলে না। ধ্যত্তেরি ছাই ভালবাসা কপালে নাই বুঝে গেছে রোদ্দুর।কেউ সত্যিকারের যদি কাউকে ভালবেসে থাকে তবে কিন্তু ঘুরে ফিরে বারেবারে তার বুক আকাশে উড়তে চেষ্টা করবে। কিন্তু আমার মেঘ সেটা করেনি। শরতের মেঘ যেনো এখনি হেমন্তের বিবণ মেঘ হয়ে গেলো।

উড়ে গেলো মেঘের রাশি
আমার আকাশ হতে
রোদ্দুর যদিও বসেছিলো
অপেক্ষাতে পথে।

মেঘের বাড়ি তালা মারা
মেঘ পালালো কোথায়
মেঘের লেজে ছিল নাকো
বাঁধা অটুট সূতায়।

ভালবাসা ছিল না তো
একটু মেঘের মনে
মেঘ তো ব্যস্ত ছিল জানি
স্বার্থ আহরণে।

স্বার্থের দেখা না পেয়ে কি
মেঘ যায় দূরে সরে
মেঘ তো আর রোদ্দুরের চোখে
পড়ে নাকো ঝরে।

রোদ্দুর এখন একলা একা
মেঘের জন্য কাঁদে
ইচ্ছে ছিল গো মেঘ, রোদ্দুর
মাথা রাখবে কাঁধে।

মেঘ, এজন্যই বুঝি রোদ্দুর আজকাল বড্ড তেজোদীপ্ত হয়ে জ্বলতে থাকে শহর জুড়ে। মনের জ্বালা মিটাতে রোদ্দুর জ্বালিয়ে দিচ্ছে বৃক্ষ তরুলতা সকল কিছু। আর তুমি কতটা নির্লিপ্ত হয়ে হারিয়ে গেলে অকালে অবেলায়। একবার জানিয়ে গেলেই পারতে অথচ তুমি এই কাজটি করনি। কি ভাবছিলে রোদ্দুর কেদে কেটে তোমার চোখে বৃষ্টি হবে। না রোদ্দুর ক্রোধের অনলে পুড়িয়ে মারবে তোমায় দেখে নিয়ো। রোদ্দুরের আগুনে পুড়ে তুমি মেঘ গলে যাবে। বৃষ্টি হবে আর ঝরবে তুমি ঝরবেই। ঝরা পাতার কাব্য হবে মেঘ তুমি। আচ্ছা তুমি কি খুব অহংকারী।আমার তাই মনে হয়। তা না হলে একবার হলেও উঁকি দিয়ে যেতে। কিন্তু তুমি তা করনি। আচ্ছা বলতো, মেঘ বড় না রোদ্দুর বড়। আমি জানি রোদ্দুর বড় কারণ তুমি তো শুধু আকাশটাতে থাকো আকাশ আর কতদূর হাহাহা দৃষ্টি বাড়ালেই তার সীমানা দেখা যায়। আর রোদ্দুরের কিন্তু কোনো সীমা রেখা নেই। সে মাঠে ঘাটে পুকুরে জলে নদী নালায় আকাশে বাতাসে বৃক্ষ তরুলতায় বাড়ি ঘরে পাহাড় ঝর্ণায় সব জায়গাতেই তার একছত্র অধিকার হাহাহা। এখন বল কে বড়। তোমার উপর খুব রাগ হয়েছে। ইচ্ছে করতে মেঘের কানের গোড়ায় এক ঘা লাগিয়ে দেই তখনই সব অভিমান ধূলায় মিশে যাবে।

মেঘের চোখে গুতা দিমু
কান লতিতে টোকা
বুঝবি তখন বুঝবিরে মেঘ
তুই যে কত বোকা।

অভিমানের ডিব্বা খুলে
দূরে বসে আছিস
না জানি তুই কার আকাশে
আনন্দেতে ভাসিস।

মেঘের পায়ে ল্যাং মেরে যে
ধরায় দিব ফেলে
আটার খামি বানায় তোরে
ফেলব রুটি বেলে।

সাদা মেঘ’রে কালো করবো
মাখায় দিবো কালি
ছুরি দিয়া কাটবো দেখিস
করবো ফালি ফালি।

মেঘের নাকে মারবো ঘুষি
গালে ধরে টানবো
ঢেঁকির মাঝে ফেলায় তোরে
ঢেঁকিতে ধান ভানবো।

খুব রাগ হচ্ছে মেঘের উপর । কেনো রাগ হচ্ছে জানিনা। রোদ্দুর তো জানেই মেঘ স্বার্থপর সে কখনো এক আকাশে থাকে না বা তার রং একই থাকে না।মেঘ তার রং বদলায়। মেঘের ডানা আছে-মেঘ উড়তে পারে। মেঘ কখনো ঘুড়ি হয় , নাটাইবিহীন ঘুড়ি, কখনো সে পাখি হয়,রংবেরঙের ডানা মেলে মেঘ উড়ে বেড়ায় এক আকাশ থেকে অন্য আকাশে। মেঘ কখনো পেজাতুলো মেঘ হয় তখন মেঘ থোকা থোকা থরে বিথরে সাজানো আকাশ শোকেশে থাকে। আবার ডানা মেলে উড়ে যায়। মেঘ কখনো প্রজাপতি হয়-উড়ে বসে গিয়ে মোহের পুষ্পবৃক্ষে। অথবা সে হয়ে যায় ফড়িঙ-কারো বাড়ির আঙ্গিনার দূর্বাঘাসের ডগায় উড়ে বসে মেঘ।রঙিন ডানা নেড়ে হাত বাড়িয়ে ডাকে অন্য কাউকে মোহের আবেশে। কিংবা মেঘ হয় হেমন্তের কুয়াশা। কারো দখিন জানালার শার্শিতে মেঘ উড়ে গিয়ে বসে ধূয়াশা রূপে। অবশেষে মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে কাউকে শান্তি দিতে তার মনের চালায় ঝমঝমিয়ে মধুর সুরে। মেঘ কখনো রোদ্দুর ছুঁয়ে দেখেই না। তবে কিভাবে মেঘ রোদ্দুরকে ভালবাসবে উহু। এত জানি মেঘ সম্পর্কে তবু কেনো তার উপর রাগ হয়। সে জানি না বাপু। খুব মাথা ব্যথা তাই হয়তো রাগ বেড়ে গেছে। মাথার রগ ছিঁড়ে যাচ্ছে। কিন্তু চিঠি লিখতে হবে তাই লিখছি আর রাগ ঝারছি মেঘের উপর।মেঘের কাছে আমার চাওয়ার কিছু নেই পা্ওয়ার কিছু নেই। কিন্তু মেঘকে ভালবাসিতো। তার বুকের ভেলায় ভাসতে খুব ইচ্ছে জাগে। তার শুভ্র পালকের নরম ছুঁয়ায় রোদ্দুর হতে চায় বিকেলের মিষ্টি রোদ্দুর অথবা শীত সকালের রোদ্দুর। কিন্তু এসবই আশায় গুড়েবালি। মেঘ পালিয়ে গেছে রোদ্দুরকে ছেড়ে। আর আসবে না মেঘ রোদ্দুরের আকাশে।

আজ তো বেশ ভাব ধরে আছ। পুরো আকাশ কালো করে মেঘ বুঝি এসিতে কাথামুড়ি দিয়ে ঘুমায় হা হা আমার তাই মনে হচ্ছে। সকাল থেকেই এমন বিবর্ণ আকাশ। এটা আমার আকাশ নয় যেনো... আবার গুড়্গুড় ডাকও শুনতে পাচ্ছি, কি মতলব তোমার বুঝি না বাপু! ঝরে পড়বে নাকি আচানক আমার চোখের পাতায়, এলোচুলের উদোম মাথায়... ভিজিয়ে দিবে এ অভিমানি মন আমার... মেঘ দেখো হাওয়া বইছে খুব মৃদুমন্দ, বেশ লাগছে সময়টা, তুমি হয়তো ঘুমে।

অভিমান করে মনে হচ্ছে ডাকবাক্সে হাত রাখছ না। বৃষ্টিতে ভিজে দেখ ডাকবাক্সে মরিচিকা পড়ে গেছে। তালায়ও পড়েছে বিরহের মরিচিকা... এক্টু যত্ন নিতেও জানো না, এত অবহেলা করো কেন আমায়... ভেবেই বসে আছ আমি হারিয়ে গেছি তাই অন্য আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছ নির্দ্বিধায়। আমি কিছু বলব না, চাইব না আমি তুমি সানন্দে ভেসে বেড়াও কিন্তু আজ অন্তত ডাকবাক্সটা খুলো, চিঠি পড়ো কিন্তু। আজ আর নয় -সমাপ্তিতে রোদ্দুর।

পুনশ্চঃ ভাল থেকো সুখে থেকো, মনে না রেখো এই আমারে। সোনারও পালঙ্কের ঘরে লিখে রেখেছিলাম দ্বারে, যাও পাখি বলো তারে, সে যেনো ভুলে যায় মোরে 🙁

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ