গত ০৭/০২/২০১৫ তারিখ ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকগন দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করনীয় সম্পর্কে এক আলোচনা সভায় বসেছিলেন। উক্ত সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য গতকাল মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে চিঠি দেয়া হয়।

আজকের (১০/০২/২০১৫ ইং তারিখ) দৈনিক সমকালের একটি খবর হচ্ছে যে, গণফোরামের সহযোগী ছাত্রসংগঠন ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘সচেতন নাগরিক এবং সুশীল সমাজকে নিয়ে যারা উপহাস করেছেন, তারা অসুস্থ।’

এটা ঠিক যে, সাত তারিখের উক্ত সভা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। সমালোচনাকারীগন মনে করেন যে, উক্ত সভায় বিএনপিকে দেশের ক্ষমতায় বসানোর ষড়যন্ত্র হয়েছে। দেশব্যপী বিএনপি-জামাতের সহিংসতা নিয়ে ওখানে কোন কথা হয়নি, শুধু সংলাপ যাতে হয়, এই বিষয়টির উপরই বারবার জোর দেয়া হয়েছে। যেখানে মাসাধিককাল ধরে সারাদেশব্যপী পেট্রোলবোমা মেরে এক সেকেন্ডের মধ্যে মানুষকে জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, অঙ্গার করে দেয়া হচ্ছে, সেখানে সেটার বিরুদ্ধে কোন কথা হবেনা, এটা কেমন করে সমালোচনাকারীরা বিশ্বাস করেন! আসলে ওখানে বিএনপিকেও সহিংসতা থামানোর জন্য চাপ প্রয়োগের বিষয় যেমন এসেছে, একইসাথে সরকারী দলকেও আলোচনায় বসার বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একপেশেভাবে বলা হচ্ছে যে, ওখানে বিএনপির পেট্রোলবোমাসহ সহিংসতা থামানোর বিষয়ে কোন আলাপই হয়নি। এজন্য সুশীল সমাজের লোকজনকে উপহাস করা হয়েছে এবং প্রতিউত্তরে ড. কামাল হোসেন উপহাসকারীদেরকে অসুস্থ বলেছেন।

ড. কামাল হোসেনকে অনেকে জাতীর বিবেক বলে সম্বোধন করেন আমাদের বাহাত্তরের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা হিসেবে। অনেকে আবার বলেন, যাঁর কাছে একজন লোক দেখা করতে গেলে সেটার ফি হিসেবে লাগে দুই লক্ষ টাকা, তিনি আবার রাজনীতিতে কী গুনগতমান আনবেন? জনগণকে যিনি সাক্ষাৎ-ই দেননা, তিনি জনগণের জন্য কী-ই বা করবেন! সংকটময় মুহুর্তে রাজনৈতিকভাবে কিছু একটা করছেন, এরকম একটা ভাবমূর্তি অজর্নই তাঁর মূল লক্ষ্য বলে আমার মনে হয়। তবুও অনেকদিনের পরিচিতি, আর সম্মানিত একজন ব্যক্তি হিসেবে তিনি কিছু একটা করছেন, এটাও আমাদের কিছুটা হলেও হতাশা থেকে নিস্কৃতি দেয়।

এরকম একজন ব্যক্তি অন্যকে অর্থাৎ সমালোচনাকারীকে অসুস্থ বলেন কী করে? এটা তাঁর কী ধরনের মানসিকতা বুঝলামনা। তাঁদেরকে যাঁরা উপহাস করছেন, তাদেরকে তিনি বুঝাবেন, যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করে তাঁদের কাযর্ক্রম তুলে ধরবেন অতি শান্তভাবে, সমালোচনাকারীরা যে ভুলভাবে, একটা ভ্রান্ত চিন্তার বশবর্তী হয়ে সমালোচনা করছেন, এটা উনি তাঁদেরকে বুঝিয়ে না বলে সরাসরি যে অসুস্থ বললেন, এটার প্রতিক্রিয়া কিন্তু হবে অনেক, অর্থাৎ এটা আমাদের মধ্যকার বিরজিত যে বিভাজন, তাকে আরো বাড়িয়ে তুলবে।

জনগণের জন্য গত ছয় বছর কোন কাজ না করে জণবিচ্ছিন্ন-হয়ে-পড়া বিএনপি শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করে গেছে সবর্ক্ষণ। এজন্য হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে গেছে সবসময়। আর সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধীদের  পর পর কয়েকটা ফাঁসির রায় হলো এবং বিএনপি-নেত্রীর কিছু মামলা পরিণতির দিকে যাওয়ার উপক্রম। একারনে বিএনপি উপায়ান্তর না দেখে সন্ত্রাসী-জঙ্গী সংগঠন জামাত-শিবিরকে নিয়ে দেশব্যপী জ্বালাও-পোড়াও কাযর্ক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যে মানুষ বিএনপির আপনজন হতে পারত, সেই জণতাকে পুড়িয়ে মারার নীতিতে আজ এককাট্টা ২০ দলীয় জোট। আজ আমাদের প্রথম কাজ, এখন এবং এখনি জ্বালাও-পোড়াও বন্দ্ব করার জন্য বিএনপি-জামাত জোটের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করা । ‘আমরা করিনা এসব’, এসমস্ত কথা চলবেনা। যেহেতু তারা এটার বেনিফিশিয়ারি এবং আন্দোলন করছে বিএনপি আর জ্বালাও-পোড়াও করছে আওয়ামী লীগ, এটা কেউ বিশ্বাস করবেনা, এটা হতে পারেনা, এজন্য এসমস্তকাজ ২০-দলীয় জোটই যে করছে, সেবিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। অতএব এই সন্ত্রাস অবশ্যই থামাতে হবে ওদেরকে আগে। তারপর সংলাপ হতে হবে অবশ্য, অবশ্যই।

অনেকে সুশীল সমাজকে তারা বিএনপি-জামাতকে ক্ষমতায় আনার জন্য উদগ্রীব, এই দোষে দোষী করে থাকেন। আমি এটা বিশ্বাস করিনা। কারন সুশীল সমাজে দলকানা ছাড়াও অনেক নিদর্লীয় লোক আছেন, সন্দেহাতীতভাবে যাঁরা দেশের ভাল চান। এজন্যই তাঁরা ‘জাতীয় সনদ’ তৈরীর কাজ করছেন।

পাঁচ বছর পর পর আমাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার পট পরিবতর্নের সময় আসে, আর এই সময়েই শুরু হয় হিংসাত্মক কমর্কান্ডসহ যতরকমের সমস্যা। আমাদের সাংবিধানিক পদসমূহকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগী হয়না কোন সরকারই, নিজেদের কর্তৃত্বাধীন রাখতে চায়, রাখেও। আর বিনা বাক্যব্যয়ে এসমস্ত সাংবিধানিক প্রধানগন তা মেনেও নেন অবলীলায় এবং সরকার যেমনটা চায়, সেভাবেই কাজ করেন তারা। রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে অবৈধভাবে সম্পদ গড়া যায়, রাষ্ট্রীয় কাঠামোই সে ব্যবস্থা করে দেয়। রাষ্ট্রযন্ত্র এধরনের অবৈধতাকে প্রশ্রয় দেয়, সুরক্ষা করে। দুর্নীতিতে তাই আমদের অবস্থানটা বছর বছর উপরের দিকেই হয়।  জাতীয় সংসদ নিবার্চনের সময় প্রার্থী বাছাইয়ে দলগুলি ইচ্ছামত সিদ্ধান্ত নেয়। একারনে মহান জাতীয় সংসদে ব্যক্তিত্ববান, চরিত্রবান মানুষের পরিবর্তে সুবিধাবাদী মানুষের উপস্থিতি লক্ষনীয়। আর এসমস্ত কারনে সাংবিধানিক প্রধানগনসহ অনেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ সুবিধাভোগের কাছে নতি ন্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন আর চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশ। স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছর পরও তাই দেশের অবস্থা এই।

শোনা যায়, সুশীল সমাজ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত জাতীয় সনদে এসমস্ত বিষয়ের প্রতিফলন থাকবে এবং দুই দলকেই উক্ত সনদে স্বাক্ষর করানোর প্রক্রিয়া থাকবে। খুবই ভাল কথা। তবে আগে পেট্রোলবোমা থামানোর জন্য বিএনপি-জামাত জোটকে বাধ্য করার প্রক্রিয়া সুশীল সমাজের থাকতে হবে।

এটাকে সবোর্চ্চ অগ্রাধিকারে নিয়ে না আসলে তাঁদের শত ভাল ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।       

0 Shares

১২টি মন্তব্য

    • আজিজুল ইসলাম

      সুশীল সমাজের রাজনীতি করার সাধ নাই। রাজনৈতিক দলগুলিই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে পাঁচ বছর পর পর যে, ওঁদেরকে আসতেই হয়। না আসলে সমাধানও হয়না। বিভিন্ন সময় এমনটি-ই দেখা গেছে। দেশে অপরাজনীতি বন্দ্ব হোক, ইনারা আর আসবেননা। আর রাজনীতি কাকে বলা হচ্ছে? লুটপাট, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, এসবকে? কে বলেছে এসব রাজনীতি? সুশীলরা এসব রাজনীতি করেনা।
      একজন মানুষ সুশীলদের কোনদিন বেহায়া বলতে পারেনা, এমনকি কোন মানুষকেও না।

  • আজিজুল ইসলাম

    সহমত হতে পারলামনা।
    তবে জঙ্গীদমন এমুহুর্তে সবচেয়ে প্রধান কাজ, এটাতে কোন দেরী করা উচিৎ নয়। জঙ্গীদেরকে একেবারে ছারখার করে দেয়া উচিৎ। কারন মানুষ, সে নিরীহ-ই হোক আর না হোক, তাকে মেরে ফেলার মত অন্যায় কাজ আর হতে পারেনা। এটার সর্বেোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিৎ।

  • মারজানা ফেরদৌস রুবা

    কি করে বুঝবো যে তাঁরা বিএনপিকেও সহিংসতা থামানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন, এমন কোন শব্দ তো কানে আসেনি। তাঁরা কি একবারও বিএনপি’র কাছে এর কৈফিয়ত তলব করেছেন? করেননি তে? টকশো গুলো দেখলে কেবলই শুনা যায় সংলাপ! সংলাপ!
    আরে! সংলাপ কেনো জরুরী? যারা বর্তমানে দেশ পরিচালনা করছেন তাঁরা কি খারাপ চালাচ্ছেন? গত একবছর তো কোন সমস্যা ছিলোনা। কোন প্রকার জন অসন্তোষও ছিলোনা।
    আজকের এই পরিস্থিতি কাদের সৃষ্টি? একটাই তো কারন। তাঁদের নির্বাচন চাই? তো! অপেক্ষা করুক না। যথাসময়ে নির্বাচন যদি সরকার না দেয়, তখন দেখা যাবে। তাঁদের ইচ্ছায় তো আর রাষ্ট্রের নিয়ম চলতে পারেনা। হ্যাঁ, চলতে পারে; যদি জনগণ চায়।
    কাজেই সুশীলকাকাদের এজেন্ডায় দেশের এই অবস্থায় এই মুহুর্তে ‘সংলাপ’ নিয়ে কোন কথাই আসার কথা নয়। দেশ পুড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছে আর তিনারা বসেছেন দুই নেত্রীকে নির্বাচন সংক্রান্ত সংলাপে বসানোর চেষ্টায়।হাউ ফানি!! জাতির বিবেক!!!
    শুধুমাত্র তাঁদের এই ভূমিকার জন্যই বিএনপি নেত্রী নিজেও বুঝতে পারছেন না তিনি কতোটা অন্যায় করছেন জাতির সাথে।
    ভুল বলে থাকলে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিন।
    তাঁদের বরং বিএনপি নেত্রীর কাছে জানতে চাওয়া উচিৎ, কেনো তিনি ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য মানুষের জীবনকে পুড়িয়ে কয়লা বানাচ্ছেন।

  • আজিজুল ইসলাম

    আপনি বলেছেন, দেশ তো খারাপ চালাচ্ছেননা তাঁরা। আসলে দেশ খারাপ চলছে কি-না, তা বোঝা সহজ নয়। এদেশে চলমান দুর্নীতি চিত্রগুলির দিকে তাকালে বোঝা যাবে দেশ খারাপ চলছে কি ভাল চলছে। এ চিত্র আসলেই ভয়াবহ।
    একানব্বইয়ের পর এদেশে প্রতিটি সরকারই তার আগের সরকারের চেয়ে ভয়াবহ রকমের বেশি অদক্ষতা এবং দুর্নীতিগ্রস্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। ভাল করে লক্ষ্য করলে এই ধারাবাহিকতা পরিলক্ষিত হবে। আগামীতে বিএনপি এলে বর্তমানের আওয়ামী লীগের শাসনামল অপেক্ষা আরো ভয়াবহ রকমে এসমস্ত কাজ করবে।
    বিএনপি যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করতে চাচ্ছেনা, আপনার কাছে প্রশ্ন, আওয়ামী লীগ কী খালেদা জিয়ার অধীনে নির্বাচন করবে? অবশ্যই করবেনা, করা উচিত-ও না। কারন কারচুপি সবাই করে এবং করবে। বাকী থাকলো য়ুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার প্রক্রিয়া বিনষ্ট করার প্রশ্ন।
    হাঁ, অবশ্যই বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্দ্ব করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। চুরানব্বই সালে জনাবা জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে প্রচন্ড আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল; তখন বিএনপি-ই ক্ষমতায় ছিল। আবার ২০০৬-এ বিএনপি সরকারই কিন্তু জনমতের প্রবল চাপে জঙ্গীনেতা আবদুর রহমানসহ বাংলা ভাইদের গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়েছিল। ২০১৩-তেও যখন দেখা গিয়েছিল যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে যাচ্ছে, জন্ম হয়ে গিয়েছিল তখন গণজাগরন মঞ্চ। এসমস্ত কথা বলছি এজন্য যে, এদেশের মানুষ কখনোই এবিষয়ে কোনরকম আপোষ করবেনা, করতে জানেনা। তাই আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলেই যে যুদ্ধাপরাধদের বিচার হবেনা অথবা রায় কার্যকর হবেনা, এটা এদেশের মানুষের উপরোক্ত উদাহরনগুলির সাথে যায়না। মানুষ এবিষয়কে কোনদিনই মানবেনা। বিবেক তাঁদের প্রজ্জ্বলিত থাকবে সবসময়।

  • আজিজুল ইসলাম

    অবশ্য ক্ষমতায় যাওয়া অনেক দুরের ব্যাপার। যে কাজ তারা করছে, তাতে জনগণের সমর্থণ পাওয়া অনেক কষ্টকর হবে তাদের। বরং এসমস্ত কাজের জন্য আগে তাদের এসমস্ত বন্দ্ব করানোর জন্য প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করা এবং তারপর বিচারের আওতায় আনা জরুরী। অত:পর নির্বাচনের বিষয়ে সংলাপের আয়োজন করা উচিৎ।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ