মৃত্যুর কাছাকাছি

নাসির সারওয়ার ১ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ১২:১৩:৫১অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩৫ মন্তব্য

 

প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতেই আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু তার যে একটা কদর্য রূপও আছে, তা আমরা দেখতে চাই না। দেখাতো দূরের কথা আমরা তা নিয়ে কথা বলতে বা শুনতেও চাইনা। তারপরও দেখতে হয়, শুনতে হয়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম যা আমরা ইচ্ছে করলেও এড়িয়ে যেতে পারিনা। বৃষ্টির দিকে থাকিয়ে আনন্দে দেহ মন ভেজাবো। তবে ঝড় এলেই পাখিদের মত ডানা ঝাঁপটিয়ে কোথাও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নেবো। সমুদ্রের জলে খেলা-আনন্দে নিজেকে ডুবিয়ে দেবো। কিন্তু বন্যার পানি থেকে শত হাত দুরে থাকবো। আরও কত না সৌন্দর্য-ভয়ঙ্কর রূপে প্রকৃতি আমাদের নিয়ে খেলা করে। সময়ে অসময়ে আমাদের তার হরেক রূপের ধরণ মনে করিয়ে দেয়। আনন্দের সাথে একটু কষ্টের ভাগও নাও।

বাড়ির পাশে বড় রাস্তা। তার ওপারেই আমাদের একটা আড্ডাখানা আছে। ছোটবেলার স্কুলের সাথীদের নিয়ে দুয়েক মাসে একটা আড্ডা। প্রধান বিষয় বস্তু, ছোটবেলার মজার গল্পে হাসির রোল আর সাথে খানাপিনা দিয়েই সামাজিক দায় দায়িত্ব শেষ করা। এক রোজার দিনে ইফতারির আয়োজন। আড্ডাবাজিই যে প্রধান উদ্দেশ্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। যার যার যা মন চায়, নিয়ে হাজির। একজন নিজের গাছের দুটো ঢাউস আকারের কাঁঠাল এনে গলা ফাটিয়ে ফেলার অবস্থা করে ফেলছে। “এতো বড় কাঁঠাল অন্য কোন গাছে জন্মাতেই পারেনা”। আহা, কি আড্ডাবাজি সাথে সেই সব শৈশবের মধু মাখা গল্প। কে উঠতে চায়, তবুও উঠতে হয়। কোন মতে ইফতারি শেষ করেই বিশেষ তাগিতে উঠতেই হলো।

বড় রাস্তাটা পার হতেই পরলাম এক মহা বিপদের মুখে। হঠাৎ প্রকৃতি তার ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে হাজির হলো মুহূর্তের মধ্যে। কথা নাই বার্তা নেই প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস। এতোটুকু বয়সে এরকম তড়িৎ বেগে প্রকৃতির চোখ উলটানো কী কখনো দেখেছি! চারিদিকে কত কী যে উড়ে বেড়াচ্ছে, তা দেখার সময় কোথায় আমার! আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিনা আবার হাঁটতেও পারছি না। মনে হচ্ছে এবার আমার আকাশে উড়ার শখ মিটে যাবে। আট দশ হাত দুরে একটা পুলিশ বক্স। নাহ, অতটুকুও যাওয়া হচ্ছে না। ডান পাশে একটা দেয়াল, কোনমতে নিজেকে টেনেটুনে নিয়ে পাশে দাঁড়ালাম আর তিন চারজনের সাথে। অপেক্ষা শুরু,এ তাণ্ডব কখন শেষ হবে।

চোখ থাকিতে অন্ধ কথাটার ভালোই প্রয়োগ দেখছি। চশমার ফাঁকা দিয়ে চোখে ডালপালা, ইষ্টক পাথর সবই ঢুকে পরছে। আশেপাশে কী হচ্ছে দেখার উপায়ও নাই। তারপরও চোখ খুলে যায় অবচেতন মনে। বিড়াল হলে হয়তো দেয়ালটাকে খামচে ধরা যেতো। কারণ দাঁড়িয়ে থাকাটা বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। পাশে কেউ একজন জোড়ে চিৎকার করে তার মা কে ডাকছে। অন্য একজন আজান দিচ্ছে। আরেকজন তার ঈশ্বরের নাম জপছে। কী আকুতি সেই ডাকে। এ এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারের দৃশ্য। পাশের দেয়ালটা যেন আর দেয়াল নয়। সাপের ফণার মত ফোঁসফোঁস করছে। এ যেন ভয়ংকর এক নৃত্য যার শেষ হবে তার বিষ ছড়িয়ে দিয়ে। তাহলে এইই কী শেষ! পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখার কত কী বাকী রয়ে গেলো। আর কী তা দেখা হবেনা! আমিতো এই সৌন্দর্য দেখতে দেখতে বড় অভ্যস্ত হয়ে গেছি। যে প্রকৃতির রূপকে ভালবেসে এতোটুকু পথ চলে আসলাম, সেই প্রকৃতিই কী না আমাকে অন্ধকার এবং ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখিয়েই নিয়ে যাবে! আমি যেতে চাই না। আমার ভালবাসার মানুষগুলো ছেড়ে যেতে চাই না।

একসময় ঘুম ভাঙল সাদা আকাশের নীচে। আকাশ তো নীল হবার কথা। অথচ চারিদিকের বেড়াগুলো নীল রঙের। স্বপ্ন দেখছি কী না যাচাইয়ের জন্য চিমটি কাটতে চাইলাম। হাত দুটো ভারি অলস, নড়তে চাচ্ছে না। নড়বেই বা কি করে। হাত সহ সারা শরীরটাকেই তো মমি বানিয়ে রেখেছে কারা যেন। মনে পড়ছে না আমি এখানে এলাম কী করে। একসময় একজন সবুজ পোশাকধারী নারী এলেন হাসি মুখের অভিনয় নিয়ে। নাহ, ভালো অভিনেত্রী সে নয়। খেই হাড়িয়ে বলে ফেললেন, “ঈশ্বর মহান”।

হাতিয়ে বেড়াচ্ছি নিউরনেরা কে কোথায় কেমন আছে। আরে, এইতো, এইতো মস্তিষ্ক কাজ করছে। অন্ধকার দৃশ্য ভেসে বেড়াচ্ছে। দেয়ালটা সাপের মত ফণা তোলেনি, সমুদ্রের ঢেউ তুলেছিল। আর সেই ঢেউ এসে একসময় আমার উপড়ে আছড়ে পড়লো। আমার সাথে আরও কয়েকজন মিলে সেই ঢেউয়ের নীচে পড়ে রইলাম। পরক্ষণেই দেখি পাশে দুটো খোলা চোখ নিস্পলক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। সেই চোখ দুটো করুন ভাবেই আমাকে যেন কী জিগ্যেস করেছিলো। আমিতো চোখের ভাষা পড়তে জানি। কী যেন বলেছিল,

ও হ্যাঁ, মনে পরেছে,“আমি কি বেঁচে গেছি”?

 

ছবিঃ নেট থেকে নেয়া

কিছু তথ্যঃ নেট সংযোগ

১) ঝড়ে দেয়াল ধ্বসে বাড্ডায় তিন জনের মৃত্যু 

২) ঝড়ে রাজধানীতে ৩ জনের মৃত্যু আহত ১৬  

৩) সোনেলা ব্লগে পোষ্ট : ব্লগার নাসির সারওয়ার আহতাবস্থায় চিকিৎসাধীন

 

0 Shares

৩৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ