তারা ছিলেন চার ভাই, লক্ষীপৎ, জগপৎ, মহীপৎ ও ধনপৎ। কোথাও কোথাও পাওয়া যায়, তারা বর্গি-দস্যু ছিলেন, আবার কোনো বর্ণনা মতে তারা ছিলেন ব্যবসায়ী। যাই হোক, এই চার ভাই জগৎশেঠের সহযোগিতায় তৎকালীন নবাবের কাছ থেকে ১২শ টাকায় ৩২ বিঘার এই বাগানটি কিনে নেন মন্দির নির্মাণের জন্য।
জানা যায়, এই চার ভাই কাঠ ও বহু মূল্যবান মণি-মুক্তার ব্যবসা করতেন। আবার কেউ বলে, তাদের কাঠের গোলা বা গুদাম ছিলো— সেই থেকে কাঠগোলা নাম হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, চারপাশে যে কাঠগোলাপের বাগান রয়েছে, সেখান থেকেই কাঠগোলা নামকরণ হয়েছে। তবে, এখানকার গোলাপের জুড়ি মেলা ভার। তবে আমি ওখানে গোলাপ বাগান পেলেও কোন কাঠ গোলাপ দেখিনি।


(২) এটা কাঠগোলা বাগানের প্রধান ফটক।


(৩) প্রধান ফটক দিয়ে কাঠগোলা বাগানের পথে ঢুকলেই চোখে পড়বে দুইপাশে সারিবদ্ধ দেবদারু তার পরই সুপ্রশস্ত এবং পরিচ্ছন্ন আম বাগান। এ আম বাগানকে পেছনে ফেলে বেশ খানিকটা পথ এগুলেই আরেকটি গেট। ও ই গেইট পেরোতে হলে ২০ টাকার টিকেট লাগে।


(৪) টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট নিয়েই ঢুকে গেলাম এই প্রাচীন কাঠগোলা বাগান বা কাঠগোলা প্রাসাদে।


(৫) বিশাল প্রাসাদ ছাড়াও এখানে বাগান, প্রাচীন সংগ্রহশালা, চিড়িয়াখানা, গোপন সুরঙ্গপথ, আদিনাথ মন্দির, শ্বেত পাথরে বাঁধানো পুকুর, জলসাঘর ইত্যাদি থাকায় কাঠগোলা বাগান পর্যটকদের কাছে সত্যিই অনন্য।


(৬) প্রাসাদের কাছে যেতেই চমৎকার একটা পাখির ডাক শুনতে পাচ্ছিলাম। এতো চমৎকার এবং নানা রকম ডাক একটা পাখি ডাকতে পারে সেটা বিশ্বাস হচ্ছিল না। বাম দিকে হাটতে থাকলাম পাখির ডাক অনুসরণ করে, এক সময় ওকে পেলাম একটা গাছের পাতার ভেতরে। দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের কমলা বউ পাখির মতো। কমলা বউ পাখির ডাক অবশ্য আমি কখনো শুনিনি। এই পাখির ডাক শুনার জন্য আরো অনেক বার ওখানে যেতেও আমার আপত্তি নাই।


(৭) ভেতরে আরো একটা চমৎকার গেইট রয়েছে। এই গেইটের ভেতরে রয়েছে একটা প্রাচীন ইদারা আর গুপ্ত পথ। আমার ভ্রমণ সঙ্গী মনা ভাই, সেই গেইটে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে।


(৮) এই সেই ইদারা, উপর থেকে ইদারায় ঝুলছে একটা শেকল আর মোটা রশি। ওগুলো মাথায় কি বাধা আছে জানা হয়নি।


(৯) আর এটা হলো গুপ্ত পথ। কথিত আছে এই গুপ্তপথ ভাগীরথী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। এই প্রাসাদ থেকে দুই কিলোমিটার দূরেই জগৎশেঠের বাড়ি। জানা যায়, প্রাসাদের এ গুপ্ত পথ দিয়ে নাকি জগৎশেঠের বাড়িতেও যাওয়া যেতো। ইংরেজ বণিকরাও আসা যাওয়া করতেন জগৎশেঠের বাড়িতে। জগৎশেঠের সঙ্গে এই পরিবারের ছিলো দহরম-মহরম। পলাশী পরবর্তী অনেক হটকারী ঘটনারই সাক্ষী এ প্রাসাদ ও বাগানবাড়ি।


(১০/১১) পাখ পাখালিও এখানে দেখলাম ভালোই আছে।


(১২) এই বাগানের মাঝখানে রয়েছে একটি উচু মঞ্চ। এটি নাচঘর বা জলসাঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মঞ্চটির চারদিকেই খোলা। চারদিকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এখান থেকে বাগান ও প্রাসাদটিকে আরও ভালোভাবে দেখা যায়। কলকাতা, লখনৌ, দিল্লি থেকে নামকরা নর্তকীরা এখানে এসে শেঠজিদের মনোরঞ্জন করে নিজেদের ধন্য মনে করতেন। চারদিকে বাগান আর মাঝখানে জলসাঘর, নাচগান-আভিজাত্য ও রুচিবোধের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ।


(১৩) ফুলে ফলে সাজছে করমচা গাছটি।


(১৪) জলসাঘর পার হয়ে একটু এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ে বিশাল গোলাপ বাগানের শেষে আদিনাথ মন্দির। কিছু সংস্কার কাজ চলছে এখন।


(১৫) মূল মন্দিরে যাওয়ার আগে রাস্তার ধারে রয়েছে আরো কিছু স্থাপনা আর দেব দেবীর মুর্তি।


(১৬) মন্দিরের প্রবেশ পথ।


(১৭) মন্দিরের দরজায় দাঁড়িয়ে আমি।


(১৮) একটা কাঠ বেড়ালী উঁকিঝুঁকি মেরে দেখছিল আমাদের।


(১৯/২০) কাঠগোলা প্রাসাদের ছাদে দাঁড়িয়ে তোলা দুটি ছবি।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ