মিথ্যে কথা বলার মাঝেও একটা আর্ট থাকতে হয়। সবাই গুছিয়ে মিথ্যে বলতে পারে না। গুলিয়ে ফেলে। মিথ্যে বলতে গেলে আগপাছ ভেবে মিথ্যে বলা উচিত। চলমান ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বাসযোগ্য মিথ্যে বলা উচিত। নয়তো অনেক সময় বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়।
আজ সকালে ঘুম ভাঙল সকাল সোয়া নয়টায়। শুক্র শনিবার বলতে কিছু নেই আমার কর্মক্ষেত্রে। সপ্তাহের সব দিনেই সাইটে কাজ থাকে। সকাল আটটা হতে সন্ধ্যা অবধি সাইট চলে। আর আমি এমন এক নবাবজাদা যার আজ ঘুম ভাঙল সকাল সোয়া নয়টায়। তাও আবার আমার অ্যাসিস্ট্যান্টের ফোন পেয়ে। তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে নিলাম। সেই তড়িঘড়ি করতেও সময় লাগলো এক ঘণ্টার বেশী। একা থাকি। কর্মস্থল কুমিল্লাতে। নতুন বাসায় নতুন কুক এর সন্ধানে আছি। কিন্তু কুক জুটেনি ভাগ্যে। আহার পর্ব হোটেলেই সেরে নিচ্ছি।
সাড়ে দশটার দিকে রেস্তোরাঁয় এসে প্রাতঃ আহার সমাপ্ত করে চা পান করছিলাম। এমন সময় মোবাইল বেজে উঠলো। ডিসপ্লেতে আমার অ্যাসিস্ট্যান্টের নাম দেখতে পেলাম। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো, “স্যার আপনি কোথায়”? আমি হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলাম, “আমি ব্যাংক থেকে বের হলাম মাত্র। ব্যাংকে কাজ ছিল। হারুন স্যার কি সাইটে আছেন এখন?” অ্যাসিস্ট্যান্ট জানালো, হারুন স্যার সাইটেই আছেন আর আমাকে নাকি খুঁজেছেন।
আমার কথোপকথন শুনে আমার পাশের চেয়ারে বসা কাস্টমার আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। আমি ভ্রু কুঁচকে ফেললাম। লোকটি মুচকি হাসি দিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। আমি কিছুটা বিরক্ত হলাম লোকটির উপর।
চা পান শেষে রাস্তায় এসে রিকশা নিলাম। গন্তব্য সাইটের দিকে। মাঝপথে এসে জ্যামের কবলে পড়লাম। রিকশা স্থির দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়। আমি যাত্রী আসনে বসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। জ্যামের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। আজ গরমও পড়েছে ভালই। মেজাজটাও খারাপ হচ্ছে বেশ। রিকশাওয়ালাকেও বেশ বিরক্ত বলে মনে হল। গামছা দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল, “কই যাইতাম, শনিবারেও দেখি জাম”। রিকশাওয়ালার মুখ থেকে এমন উক্তি শুনে আমি একটু থমকে গেলাম। আজ কি শনিবার? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম। উত্তরদাতাও হলাম নিজেই। তাইতো আজ তো শনিবার। অথচ একটু আগে ব্যাংকে কাজের কথা বললাম। ছিঃ ছিঃ কি কাণ্ড! ভাগ্য ভাল যে হারুন স্যারকে সরাসরি মিথ্যেটা বলিনি। বললে নির্ঘাত ধরা খেতাম। আচ্ছা আমার অ্যাসিস্ট্যান্টও কি আমার এই মিথ্যে বলাটি ধরতে পারেনি!!
উল্লেখ্য যে, হারুন স্যার আমাদের ক্লায়েন্ট। একসময় উনি আমার বাবার কলিগ ছিলেন। আমরা দীর্ঘদিন একই কলোনিতে ছিলাম। ছোট বেলা থেকেই চিনি। তাঁকে আঙ্কেল বলে সম্বোধন করি, সম্মান করি, আবার ভয়ও পাই। সাইটে যেতে দেরী হচ্ছে বলে ফোনে মিথ্যে কথার আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু চলমান ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেই মিথ্যাটি ছিল অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে আমার এই মিথ্যে উক্তিটি হারুন আংকেলের কানে পৌঁছায়নি এটা নিশ্চিত হলাম সাইটে প্রবেশ করে। সামনাসামনি মিথ্যে বললে কি কেলেঙ্কারিই না হত!
১৮টি মন্তব্য
নুর হোসেন
মিথ্যাবাদীরা সহজেই লোকের বিশ্বাস অর্জন করতে পারে,
তারা দক্ষ আর বুদ্ধিমানও বটে।
চমৎকার লিখেছেন।
রুমন আশরাফ
ধন্যবাদ ভাই।
নুর হোসেন
শুভ কামনা রইলো।
সুরাইয়া পারভিন
হা হা হা হা,,,, দারুণ লিখেছেন।
সত্যিই তাই মিথ্যা বলার একটা আর্ট।
রুমন আশরাফ
ধন্যবাদ পারভিন আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
🤣🤣🤣🤣🤣
রুমন আশরাফ
হা হা হা
বন্যা লিপি
আমি এটা হাড়ে হাড়ে বিশ্বাস করি এবং মানি। যে মিথ্যে অন্তত কারো ক্ষতি করবেনা। সে মিথ্যে বলতেও আর্ট থাকা চাই।তবে……যে কোনো পরিস্থিতীতে সত্যের মতো সুন্দর কিছু নেই। কোনো ঝামেলাই নেই সত্য বলতে!
কি বলেন? ভালো লিখেছেন।
রুমন আশরাফ
আপনার সাথে আমি একমত বন্যা আপু। ধন্যবাদ।
নিতাই বাবু
ঠিক বলেছেন! মিথ্যে বলা সময়-গময় আর কৌশল অবলম্বন করেই বলতে হয়। নয়তো ছোটখাটো সমস্যা ই না মহা বিপদের সম্মুখীনও হতে হয়। ভাগ্য আজ আপনার অনুকূল ছিল বলে বিশ্বাস করি।
রুমন আশরাফ
একটি মিথ্যে বললে তার সাথে আরও কিছু মিথ্যে যোগ করতে হয়। তখন লাগে বিপত্তি।
তৌহিদ
যদি ধরা পড়ে যেতেন তাহলে প্রেস্টিজ পাংচার হতো কিন্তু! আমিও মিথ্যে বলতে পারিনা। বলতে গেলেই ধরা পরে যাই।
রুমন আশরাফ
মিথ্যে বলাটা একটা আর্ট। এই আর্ট আমি আপনি আরও অনেকেই পারি না। আবার অনেকেই পারে। হা হা হা
জিসান শা ইকরাম
সবাই মিথ্যে বলতে পারেনা,
আমাদের পাড়ায় একজন আমারই সমবয়সী আছেন যিনি সত্যের চেয়ে ভালো মিথ্যে বলে যান অবলীলায়।
রুমন আশরাফ
সত্যিই তাই। সবাই মিথ্যে বলতে পারে না। আবার কেউ কেউ এমন ভাবে মিথ্যে বলে যেন সত্যকেও ছাড়িয়ে যায়।
রুমন আশরাফ
মিথ্যে বলাটা একটা আর্ট। এই আর্ট আমি আপনি আরও অনেকেই পারি না। আবার অনেকেই পারে। হা হা হা
এস.জেড বাবু
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম। উত্তরদাতাও হলাম নিজেই। তাইতো আজ তো শনিবার।
কিন্তু অনেকই মিথ্যে বলতেও পন্ডিত। আবার ধরা খাওয়ার লজ্জা সামলাতেও ওদের জুড়ি নেই।
সুন্দর দিকনির্দেশনা আছে গল্পে।
রুমন আশরাফ
ধন্যবাদ বাবু ভাই।