সত্যি ছেলে হয়ে জন্মানোটা উপরওয়ালার বিশেষ কৃপা।বাবা হয়েছি প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল। তেমন কোন কষ্ট করা ছাড়াই জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহুর্তটি অর্জন ও তৎপরবর্তী সময়টা উপভোগ করছি। কষ্ট বলতে যেটা করেছি সেটা বলতে গেলে পোষ্টের শিরোণামে ১৮+ব্যবহার করতে হব। তাই আর ডিটেইলসে গেলাম না। চাকরির কারণে ওর গর্ভাবস্থায় বা ছেলেটি হওয়ার পর পর ওর পাশে থাকার পরিমাণ অতি সামান্য। যদিও দূরালপনীতে বারংবার, “এই তুমি সকালে নাস্তা করেছ তো? বাথরুমে কিন্তু সাবধান। বাসে বা ট্রেনে কিন্তু সাবধানে উঠানামা করবে, ঔষধগুলো খেয়েছিলে তো, বমি বমি লাগছেনা তো” বলে আত্মস্লাঘায় ভুগেছি, আমি কি অসাধারণ! কি কেয়ারিং! আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ হাজবেন্ড।

আর আমার হোম মিনিষ্টার চাকুরীজীবি আর চাকরির জায়গাতে যেতে হত ট্রেন, সি এন জি, ভ্যান এবং সর্বশেষ হন্টন এর সাহায্যে। খেতে হয়েছে রাস্তার পাশের হোটেলের খাবার। এত কষ্টের পর আবার অপারেশন টেবিল আর তার পরবর্তী হাসপাতালে অবস্থান। তারপরে হতে পেরেছে মা। নাহ! আসলেই আমি ভাগ্যবান, পুরুষ হয়ে জন্মেছি বলে। কত সহজে অল্প পরিশ্রমে বাবা হয়ে গেলাম।

এত কিছুর পরেও আজ সকালবেলায় যখন ও ছেলেটিকে খাওয়াতে খাওয়াতে বলছিল, “হুমম মায়ের এই ঋণ কিভাবে শোধ করবি?” তখন ওকে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা বলতো ও তোমার কাছে ঋণী কেন বা কি কারণে? তারপর দু’জনে আলোচনা করে দেখলাম এবং একমত হলাম (কি আশ্চর্য্য দুজনে একমত 😮  😮 )আসলে আমাদের ছেলে কোনভাবেই আমাদের কাছে ঋণী নয়।
- কেননা এই বাচ্চাটি পৃথিবীতে আসার জন্য আমাদের কাছে কোন অনুরোধ জানায়নি, আমাদের দু’জনেরই দরকার ছিল ওকে। তাই ঋণী যদি কেউ হয় আমরা দুজন।
- ও মায়ের গর্ভে থাকার সময় ওর মাকে যেই শারিরীক ও মানসিক কষ্ট আর বাবাকে মানসিক দুশ্চিন্তার (বিশাল কাজ কইরা ফালাইছি :v  :v ) মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে সেটা অপারেশন থিয়েটারেই ও দূর করে দিয়েছে যখন ওকে আমরা স্পর্শ করেছি।
- রাতের বেলা বারবার ঘুম থেকে উঠে ওকে খাওয়ানো আর কাপড় পালটে দেয়ার কষ্টের ঋণ এক নিমিষেই শোধ হয়ে যায় ওর একটি হাসিতে।
- কিছুদিন আগে ইউরোপ ভ্রমনের একটি সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল, যাইনি, কারণ ছেলে আর তার মায়ের যাওয়ার সুযোগ ছিলনা। আমি কি এ কাজ করে ওকে ঋনী করে ফেললাম। না, ও এই বয়সে ইউরোপের কি ই বা বুঝবে। আমি যাইনি আমার ভাল লাগবেনা বলে। নিজের স্বার্থটাই বড় ছিল এক্ষেত্রে।
- ভবিষ্যতে ওকে একটু ভাল রাখার জন্যে কত কিছুই না করব, কিন্তু তাতেও কি নিজের স্বার্থ টাই বড় ভূমিকা রাখবেনা? “দেখ দেখ এই তুখোড় ছেলেটির বাবা মা এরা” এই কথাটি শোনার জন্যই কি আমরা খেয়ে বা না খেয়ে ওর পড়ার ব্যবস্থা করব না?

তাই যদি হয় এই ঋণ কথাটি কেন আসছে? তাই দু’জনে মিলে ঠিক করলাম ‘মা বাবার প্রতি সন্তানের ঋন’ এই মনোভাবটি কখনই নিজেদের মনে স্থান দেবনা। কারণ পাওনাদার প্রায়ই ঋন পরিশোধের জন্য দেনাদারের উপর অন্যায় চাপিয়ে দেয়।

সবাই দোয়া করবেন আমাদের ছেলেটি যেন ঋণী হয়ে বড় না হয়।

 

***** এই লেখাটি এর আগে অন্য একটি ব্লগে লিখেছিলাম http://www.somewhereinblog.net/blog/beautifulmind007/29759850

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ

Thumbnails managed by ThumbPress