মা…পর্ব-৪

বন্যা লিপি ২৯ মে ২০২০, শুক্রবার, ০৯:৫০:০৫পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৭ মন্তব্য

হঠাৎ করেই একদিন আবিষ্কার করতে হয়, আমি আমার অঙ্গনে বৃন্তছাড়া হয়ে পড়েছি! কষ্ট হয়! ভীষণ কষ্ট হয় মানতে তখন। আমার ঘর, পড়ার টেবিল, আমার বিছানা, গোছানো বইগুলো, নিজ হাতে সাজানো দেয়ালে টাঙানো ছবির ফ্রেম......

 

একদিন যখন লাল বেনারশী পড়ে এ বাড়ির চৌকাঠ ছেড়ে যেতে হয়েছিলো অন্যঘর সাজাতে হবে বলে! তারপর থেকে বাবার বাড়ির নিজের ঘরটা দখল করে নেয় ছোটভাই। বুঝিয়ে দিতে, তুমি আর এখানে স্থায়ী নও।

খাবার টেবিলে বাবা বসে আর ধমক দিয়ে বলবেন না....' এটা খাবিনা সেটা খাবিনা,  তো কি নবাবী খাওয়া খাবেন রোজ রোজ?' বাবাও এখন চেষ্টায় থাকেন মেয়ে কি পছন্দ করে, সেই খাবারটা যোগাড় করতে। তবে কি সেই ধমকটাই আপন ছিলো?

ছোট দাদু মুখের ওপরে বলেই দিলেন একদিন, তুমি এখন আর এ বাড়ির কেউ না, পরের বাড়িই তোমার আপন বাড়ি' বাবার সামনেই চিৎকার করে কেঁদে ফেললাম.... এত বড় কথা বলে দিলেন দাদু?' ভাতের থালা ঠেলে সোজা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। হেলাল কাকুর আম্মা( দাদি বলে ডাকতাম) আমাকে দেখলেই জানালা দিয়ে ডাক দিয়ে ঘরে নিতেন।খুব ভালবাসতেন। চোখে পানি সামলানো হয়ে ওঠেনি, ধরা পড়ে গেলাম।' কি হইছে রে আপু? কান্দোস ক্যা?' মিথ্যে বলে এড়াতে পারিনি বলে ঝরঝর করে কেঁদে কেঁদে বলে দিলাম সব।

গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে কতশত শান্তনা দিয়ে ভোলাতে চেষ্টা! কলিজার মধ্যে জ্বলুনি কমেনা তবুও।

 

মেয়েটার জন্মের পর থেকে একটু একটু করো নিজেও মা হলাম। অজান্তেই মেয়েকে নিয়ে গড়ে নিলাম মাতৃত্বের সে এক বিশাল পৃথিবী। অভ্যস্থ্য হয়ে গেছি কখন একটু একটু করে! স্কুল পড়াশোনা সব নিজ তদারকির চেষ্টায় মেয়েকে কাছে কাছে রেখে বড় করা। পরম বন্ধু হতে চেয়েছি সবসময়। খুব কথা বলতো, খুব.... সেই ছোট বেলা থেকেই। স্কুলে কি কি করতো না করতো। কোন মিস কিরকম পড়াতো, কি বলতো, স্কুল থেকে ফিরতে ফিরতে চটরপটর করতে করতে সব বলা চাই আম্মুকে। আম্মুও খুব করে সব শুনতো,  জবাবে অনেক করে বোঝাতো। এক গন্ডি ছেড়ে আরেক গন্ডিতে মেয়ে গিয়ে ভর্তি হলো। দিনে দিনে তাঁর বন্ধুর সংখ্যা বাড়লো। আমার টেনসন বাড়ে। বন্ধু নির্বাচন করতে পারবে তো সঠিক ভাবে! যদি অসৎ বন্ধুর কারনে মেয়ে আমার বিপথে যায়! কেমন করে তবে সামাল দেবো? আমাকে ছাড়া ভয় পায়না কাউকে। বাবাকেও না।

ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে কলেজেও উঠলো। কোচিং টিউশন সব মিলিয়ে মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ততায় ছেলেদর প্রতিও দায়িত্বে অনেক খাটো রয়ে গেছি। অভিযোগ পিছু ছাড়েনি কখনো। মেয়েকে একাও কোথাও ছাড়িনি কখনো। ভাবতেই পারতামনা,  মেয়ে কখনো একা একা চলবে ঢাকা শহরের অলিগলির রাস্তায়।

সেই মেয়েকে একদিন অনার্সে ভর্তি করিয়ে দিলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে খিঁলগাও কলেজে। প্রথম ক্লাশ করতে যাবার আগেই মেয়ে সাবধান করে দিয়ে বলে উঠলো-' আম্মু! আমি এখন ভার্সিটিতে উঠছি, আর কতো তুমি আমার সাথে সাথে আসবা?' আমি বিমূঢ়; বলেকি? একা যাবে?  একা আসবে? মুহুর্তে চোখের সামনে ওর একা চলাচলের দৃশ্য ভেসে উঠতেই হার্টবিট বেড়ে গেলো। কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা। মেয়ে অনর্গল বোঝাচ্ছে 'এখান থেকে তো বেশিদূর না! এত চিন্তা কেন করো? কতজনকে পেয়ে যাবো দেখবা, একসাথে যাওয়া আসার জন্য!'

পেয়েও গিয়েছিলো। ঠিক ঘড়ি ধরে ফোন কলের অপেক্ষা।কখন ক্লাশ থেকে বেরিয়ে ফোন ওপেন করে কল দিয়ে জানাবে' আম্মু, ক্লাস শেষ, স্যারের বাসায় টিউসন আছে এক ঘন্টার' আবারো এক ঘন্টার টেনসন!

স্যারের বাসা থেকে বেরিয়ে কখন কল দেবে? নিজের জন্য ছোটোখাটো কাজের সুযোগ পেয়ে গেছে ইন্টার পরীক্ষা দেবার পরই। স্কুলের শিক্ষকের কোচিংএ সহকারী হিসেবে।

 

দিনগুলো পার হতে হতে ভাবিইনি কখনো....।

সবই তো বলে মেয়ে আম্মুকে এসে। কবে কোন ছেলে ভার্সিটিতে পথরোধ করে দাঁড়িয়ে ফুল চকলেট দিয়ে প্রপোজ করছে! বাসায় এসেই ফুল আর চকলেটগুলো আম্মুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে' কি করবো এগুলো বলো তো?' কপাল কুঁচকে তাকাতেই হাসতে হাসতে বলে কাহিনী। মা মেয়ে হাসতে হাসতে কুটিকুটি।

- তুই কি বললি?

- আমি বলছি আমার বয়ফ্রেন্ড আছে😊

- কি?

- আরে তুমি চ্যাতো ক্যা আম্মু? এগুলারে তো এমনেই দমাইতে হয়!

- তারপর?

- আমারে আবার কইলো, নেক্সট দিন যেন বয়ফ্রেন্ড সাথে করে নিয়ে গিয়ে দেখাই

- তাহলে? কি করবি তখন?

- আরে ধুর আম্মু, রাকিক আছে না?

ওরে একটা ফোন দিমু, ওরে দেখাইয়া দিমু,  এইটা আমার বয়ফ্রেন্ড।

রাকিক মেয়ের স্কুলের ক্লাসমেট। ছেলেটা অনেক হেল্প করেছে ভর্তির ব্যাপারে।

কিছুদিনে মেয়ের গল্পে একটা নাম বারবার উচ্চারিত হতে দেখে প্রশ্নঃ

- প্রিয় নামটা একটু বেশিই শুনতেছি মনে হচ্ছে!ব্যাপারটা কি? কাহিনী কি? এ ছেলের মতলবটা কি? তুমি কি কিছু বলতে চাইছো?

 

চলবে....

মা….. প্রথম পর্ব //
মা…….পর্ব-২ //
মা……পর্ব–৩//

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ