মাহবুবুল আলম

রমজান হলো ইসলামী বর্ষপঞ্জিকার নবম মাস। এবং ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি
স্তম্ভ। এ মাসেই সারা বিশ্বে মুসলিম এক মাস
সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের নৈকট্য লাভের জন্য উপবাস
থেকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করে থাকে।

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের বাণী নিয়ে বিশ্বের মুসলমানদের দুয়ারে আবারও উপস্থিত হয়েছে পবিত্র রমজান। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা এবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর কাছে নতমস্তকে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করে থাকে।

এ মাসে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম ব্যক্তির উপর সাওম পালন ফরয, কিন্তু অসুস্থ, গর্ভবতী, ডায়বেটিক রোগী, ঋতুবর্তী নারীদের ক্ষেত্রে তা শিথিল করা হয়েছে। রোজা বা সাওম হল সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা গুনাহের কাজ এবং (স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে) সংগম থেকে বিরত থাকা।

এ মাসে মুসলিমগণ অধিক ইবাদত করে থাকেন। কারণ অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মাসের লাইলাতুল কদর নামক রাতে কুরআন নাযিল হয়েছিল, যে রাতকে আল্লাহ তাআলা কুরআনে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলেছেন। এ রাতে ইবাদত করলে হাজার মাসের ইবাদতের থেকেও অধিক সওয়াব পাওয়া যায়।
এ মাসে সিয়াম সাধনার দ্বারা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মানুষ যে নাজাতের পথ খুঁজবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। হাজার রজনীর শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুল কদর রমজান মাসকে করেছে বিশেষভাবে মহিমান্বিত। এ রাতেই রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) ওপর সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন।

কিন্তু এ বছর এক ভিন্ন প্রেক্ষিত ও অবস্থার মাঝে
এসেছে রমজান মাস। কোভিড-১৯ এর আক্রমনে পৃথিবী আজ বিপন্ন ও বিপর্যস্ত। এ পর্যন্ত করোনা
ভাইরাসে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ আক্রান্ত
হয়েছে, আর মারা গেছে ২ লক্ষের অধিক।
আর করোনা মহামরিতে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৫৪১৬ আক্রান্ত হয়েছ এবং মৃত্যুবরণ করেছে ১৪৫ জন। তাই রোজার কারণে যাতে আমাদের
শরীরের রোগ প্রতিরোধ অবস্থা ভেঙে না যায়
তার প্রতি রোজাদার প্রত্যেক নর-নারীকে সজাগ
দৃষ্টি রাখতে হবে। এব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিবিসি বাংলার একটি রিপোর্টের অংশবিশেষ এখানে তুলে ধরছি-
"যখন কোন মহামারি চলে তখন রোজা রাখার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়। ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্স-এর রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক একজন গবেষক বলেন, সংক্রমণের বিরুদ্ধ লড়াই করার জন্য শরীরে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন।
দীর্ঘ সময় ধরে খাবার এবং পানি পান না করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সুতরাং ইফতারের পর আপনি যেসব খাবার খাবেন সেখানে যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি থাকে সেটা নিশ্চিত করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে দুটো বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে।
. কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট বা চর্বি
. ভিটামিন, যেমন - ভিটামিন সি এবং আয়রন
বিভিন্ন ধরণের খাবার খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। বিশেষ করে নানা রংয়ের সবজি, ফল, ডাল ও বাদাম।
রোজার সময় শরীর পানিশূন্য হয়ে যেতে পারে। এর ফলে শরীরের ভেতরে শ্বাস-প্রশ্বাস নেবার জায়গা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
কিন্তু আপনি যদি পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম এবং মানসিক চাপমুক্ত থাকেন তাহলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকরী থাকতে পারে।
সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, আপনি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হবার বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে হাত ধোয়া এবং বাসায় অবস্থান করা।

আসুন করোনা মহামারির অবরুদ্ধ কালের
এ সময়টা ইবাদাত বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে
মহান আল্লার দরবারে প্রার্থনা আরজি রাখি
হে আল্লাহ পবিত্র মাহে রমজানের উছিলায় করোনা মহামারির থাবা থেকে পৃথিবীর সব মানুষকে রক্ষা করুন। আমীন।

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ