মাস্তানের কবলে একদিন

কামাল উদ্দিন ২২ মে ২০২০, শুক্রবার, ০৮:৫১:০৬অপরাহ্ন ভ্রমণ ২৬ মন্তব্য

একপাশে সু-উচ্চ পাহাড় শ্রেণী, অন্য পাশেও বিশাল গাছে গাছে পরিপূর্ণ এলাকা। মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে দুইটি সমান্তরাল রেলপথ। দূরে পাহাড়ের ঢালুতে ছাড়ানো ছিটানো কয়েকটি আধিবাসি কুড়ে দেখা যাচ্ছে, পাহাড়ের উপারে অস্তমিত সূর্যের আলোকচ্ছটার কিছু ভাঙ্গা অংশ কয়েকটি গাছের মাথায় শোভা পাচ্ছে। পাখিদের কিচির মিচির বাদ দিলে একেবারেই শুনশান। একটা রেল স্টেশন এতো শুনশান হয় কি করে? স্টেশনের নাম মাস্তান নগর। স্টেশনের মূল বিল্ডিং এর ভেতর কয়েকটি গরু বাঁধা দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না যে স্টেশনটা পরিত্যাক্ত। তো এই বেলায় ক্যমেরায় ভালো ছবি আসার কোন কারণ নাই, ক্যামেরা প্যাকআপের আগে তাও কিছু ছবি উঠাই।

আমি আর আমার সঙ্গী আলোচনা করছি স্টেশনটার এমন একটা নাম কি করে হলো? স্টেশন থেকে বের হওয়ার পথে ছোট একটা মুদি দোকানের সামনে দু'জন লোক বসা। পেছন থেকে ডাকলো ভাইজান একটু শুনবেন? আপনারা কিসের ছবি তুললেন? আমি বললাম প্রকৃতির। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এর পথে রেল লাইন ধরে হেটে মাস্তান নগর এসেছি জেনে এতো বড় হা করলেন যেন ওখান দিয়ে আস্ত একটা রেল গাড়ি চলে যেতে পারবে। সে আরো অনেক প্রশ্ন করলো কিন্তু আমাদের উত্তর সেই একটাই। কাউকে ফোন দিলো, আর আমাদের জন্য চা বিস্কুটের অর্ডার দিলো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আমাদেরকে এখনি এখান থেকে বের হয়ে ঢাকার বাসে চড়তে হবে এসব বলে পার পেলাম না। কেক চা খেলাম এবং বেড়িয়ে আসলাম স্টেশন থেকে।

আসল চমক যে বাকী ছিল তা টের পেলাম একটু পরেই। সামনের কাঁচা মাটির পথ ধরে মোটর সাইকেল নিয়ে তিনজন এসে নিমিষেই আমাদের ঘিরে ধরলো। ইতিমধ্যে আরো একটা সিএনজি এসে ওদের দলটা তিন থেকে পাঁচে উন্নীত করলো। সিএনজি থেকে দুজন নামল চকচকা দুইটি চাপাতি নিয়া। মুহুর্তেই মনে পড়ে গেলো দিনে দুপুরে শত শত লোকের সামনে পুরান ঢাকার দর্জি বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যা করা হয়েছিলো এমন চাপাতি দিয়া। আর সাথে সাথেই মোটর সাইকেল আরোহীদের একজন ওর জামা উঠিয়ে দেখিয়ে দিলো ওর কাছে রয়েছে একখানা পিস্তল। আশে পাশে সাহায্য পাওয়া যাবে কিনা চারিদিকে চোখ বুলিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারকে আরো কালো করে দেওয়া একটা ইট ভাটার চিমনি দিয়ে প্রচন্ড গতিতে বেড়িয়ে আসা কালো ধোয়া ছাড়া আর কিছুই নজরে এলো না। আবারো আমাদেরকে সেই পুরোনো বকবকানি চালাইতে হলো। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, রেল লাইন ইত্যাদি ইতাদি....

এক সময় মোটর সাইকেল চালকের নির্দেশে আমাদেরকে সিএনজি তে করে সামনের দিকে রওয়ানা হলো। মনের ভেতর কু ডাক ডাকছে। এক সময় সামনে ছোট্ট একটা বাজারে প্রবেশ করলাম। আমাদের নিয়ে বসাল একটা গরিবানা রেষ্টুরেন্টে। এই বাজারের চারিদিকের সব মানুষকেই শত্রু পক্ষের মতো মনে হলো। কিন্ত চাপাতি ওয়ালারা এখানে আমুল বদলে গেলো। আমাদের আপ্যায়নের জন্য বেশ তৎপরতা শুরু করে দিলো। কিছু না খেলে ছাড়বে না দেখে এক কাপ চা খেতে চাইলাম। চা খাওয়ার পর ওরাই সিএনজি ভাড়া দিয়ে আমাদের বারইয়ারহাট বাসষ্টেন্ডে পাঠিয়ে দিলো। ঘাম দিয়ে জ্বর সারল। আমি জানি এসবই হচ্ছে আমার সাংবাদিক মার্কা ক্যামেরাটার গুণে বা দোষে।

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ