
২৮ মে ছিলো মাসিক স্বাস্থ্য দিবস। এক সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরে নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরাম বলছে, প্রায় ৯০ শতাংশ স্কুলপড়ুয়া মেয়েরা ফার্মেসিতে যেতে লজ্জা পাওয়ার কারণে, পরিবারের অসহযোগিতার কারণে এবং বাজারে উচ্চমূল্যের কারণে মাসিক সুরক্ষা পণ্য ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করেছে। ন্যাশনাল হাইজিন বেজলাইন সমীক্ষা অনুযায়ী, মাত্র ১০ শতাংশ স্কুলপড়ুয়া কিশোরী তাদের মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে।
সমীক্ষায় বলা হয়, ৮৬ শতাংশ কিশোরী পুরানো কাপড়, ছেঁড়া ন্যাকড়া ব্যবহার করে। এর মধ্যে মাত্র ১১ শতাংশ মেয়ে সঠিক নিয়ম মেনে কাপড় ব্যবহার করে। বাকিরা ঘরের কোণায় কাপড় রাখে যা সম্পূর্ণভাবে জীবাণুমুক্ত করার আগেই ফের ব্যবহার করে।
সমীক্ষায় আরও উঠে এসেছে, এমনকি বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের যারা ঘরে থাকেন এবং কর্মজীবী নন, তাদের মধ্যে স্যানিটারি ব্যবহারের প্রবণতা মাত্র ১২ শতাংশ। দীর্ঘদিন অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহারের ফলে নারীদের জরায়ুমুখের ক্যানসার, ইনফেকশন, যৌনাঙ্গে ঘা, চুলকানি, অস্বাভাবিক সাদাস্রাব প্রভৃতি শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। দেশে প্রতিবছর ১৩ হাজার নারী মারা যাচ্ছে জরায়ুমুখের ক্যানসারের কারণে। তাছাড়া একই কাপড় বারবার ব্যবহারের ফলে কাপড় সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব না। তা ছাড়াও কোনো মেয়ে যদি সঠিক নিয়ম মেনে (গরম পানিতে ফুটিয়ে, কড়া রোদে শুকিয়ে) কাপড় ব্যবহার করতে চান, সেটি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং যেকোনো নারীর জন্য সেটি অত্যন্ত ঝামেলার। আবার এই কাপড় ৩ মাসের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।
মাসিক সুরক্ষা পণ্যের (স্যানেটারি প্যাড, টেম্পুন, মেনস্ট্রুয়াল কাপ) উচ্চ মূল্যের কারণে বেশিরভাগ নারীরা এসব সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হন। রাষ্ট্রীয়ভাবে মাসিক সুরক্ষা বিষয়টি না দেখে তাকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া ক্ষমতার অধীনে দেওয়া হয়।
মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা দিবসে ‘নিষিদ্ধ’কে ভাঙার আহ্বান :
১. বাজেটে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার খাত তৈরি এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশসম্মত মাসিক সুরক্ষা পণ্য উৎপাদন করতে হবে;
২. বাজারে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দ্বারা উৎপাদিত মাসিক সুরক্ষা পণ্যের দাম কমাতে হবে;
৩. মাসিক নিয়ে সব ধরনের পণ্যায়ন বন্ধ করতে হবে। সব প্রকার পিংক ট্যাক্স দূর করে ব্যবসায়িক স্বার্থে উৎপাদিত জেল প্যাড ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে তৈরি মাসিক সুরক্ষা পণ্যের বাণিজ্যিকিকরণ বন্ধ করতে হবে;
৪. বিনামূল্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি ক্লিনিকে নারীদেরকে প্রতি মাসে মাসিক সুরক্ষা পণ্য দিতে হবে;
৫. সব স্তরের নারীদের মাঝে ‘মাসিক সুরক্ষা বিষয়ক সচেতনতা’ ছড়িয়ে দিতে হবে;
৬. মাসিকের সময় ছুটি বিষয়টি প্রতিটি কর্মক্ষেত্রের প্রশাসনিক নীতিমালায় যুক্ত করতে হবে ; এবং
৭. করোনাকালীন ত্রাণ, দুর্যোগকালীন ত্রাণ ও রেশনে মাসিক সুরক্ষা পণ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
প্রতিজ্ঞা হোক, এগুলো নারীর অধিকার। এগুলো গোপন বা লজ্জার বিষয় না। পরিবার থেকেই এগুলোর শিক্ষা ও সচেতনতা সন্তানদের দিতে হবে। পরিবার ও সমাজের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থারও উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
★ ★ সংকোচ নয় ; সচেতনতাই স্বাধীনতা।
২৬টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
বহুল প্রচারের কারনে পিরিয়ড জনিত সমস্যা গুলো এখন নারীদের কাছে অজানা নয়। স্যানিটারি প্যাড ইউজারদের সংখ্যা তুলনামূলক কম হবার কারন অসচেতনতা বা সংকোচ নয়, মুল সমস্যা আর্থিক।
জীবন রক্ষাকারী অন্যান্য সব প্রয়োজনীয় পণ্যের মতোই আমাদের দেশে স্যানিটারি সামগ্রিও উচ্চমুল্যে ক্রয় করতে হয়। এতে বেশিরভাগ নারীরাই প্যাড ব্যবহারে অনিহা বোধ করেন। বাজারে ব্যবসায়িক/সরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বারা উৎপাদিত মাসিক সুরক্ষা পণ্যের দাম কমানো গেলে ঋতুবতী নারীদের ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ পিরিয়ড ব্যবস্থার আওতায় আনা যাবে মনে করি।
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা 🌹🌹
আরজু মুক্তা
একদম। নারীরা দেখি সবখানেই অবহেলিত।
শুভ কামনা
বোরহানুল ইসলাম লিটন
মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে
নিশ্চয় এই ধরণের বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত।
সুন্দর মানবিক ও সচেতনমূলক উচ্চারণ।
মুগ্ধতায় শুভ কামনা রেখে গেলাম পাতায়।
আরজু মুক্তা
এমন কেউ একজন এগিয়ে আসুক ব্যবসায়িক ভাবনা ছেড়ে।
শুভ কামনা
মোঃ মজিবর রহমান
নিত্য বা অপরিহার্য্য পণ্য হিসেবে এই প্রডাক্টগুলো সরবরাহ করার যাবতীয় ব্যবস্থা সরকারী ভাবে উদ্দ্যগ নেওয়া উচিত বলেই আমার মনে হই।
যেটা না হলে জীবনহানি ঘটবে তাহা অতি দ্রত ব্যবস্থা নেয়া হোক।
আরজু মুক্তা
কতো মেয়েদের যে ক্যান্সার হচ্ছে। অথচ ব্যবসায়ীরা এখানেও লাভ খোঁজে। মানবিক দিক দেখে না।
শুভ কামনা
জিসান শা ইকরাম
এ বিষয়ে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে আমাদের সামাজিক প্রথা। এটি একটি ট্যাবু। এই ট্যাবুকে ভাঙতে হবে। নারীর এই অবস্থা একটি প্রাকৃতিক অবস্থা। এটি নিয়ে সহজ ভাবেই আলোচনা করা উচিত।
স্যানিটারি সামগ্রী সহজ লভ্য করতে হবে।
অ:ক:
অক্ষয় কুমার অভিনিত হিন্দী মুভি ‘ প্যাডম্যান ‘ নিয়ে একটি মুভি রিভিউ চাই।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
দাদা প্যাডম্যান নিয়ে আমি লিখি। পারবো বোধহয়। অসাধারন মুভি, অনেকবার দেখেছি
আরজু মুক্তা
আমি লিখেছি। আজ দিবো। পরেরবার আপনার পালা।
শুভ কামনা
জিসান শা ইকরাম
এই মন্তব্যটি আমি দেখিনি আগে @রুকু।
আরজু মুক্তা দিয়েছে রিভিউ, তবে একই মুভির রিভিউ অনেকেই দিতে পারেন। এক এক জনের দেখার বিষয়ে পার্থক্য হয় অনেক।
আরজু মুক্তা
প্যাড ম্যান রেডি। কাল সবাই পড়তে পারবেন।
আরজু মুক্তা
রিভিউ দিলাম। আপনার অনুপ্রেরণা আমায় লিখতে বরাবরি সহযোগিতা করে।
শুভ কামনা
রোকসানা খন্দকার রুকু
প্যাডম্যান মুভি দেখলাম তাতে একটা প্যাড বানাতে খরচ মাত্র দুই টাকা অথচ একটা সেনোরার দাম দশ টাকা। দাম কমানো উচিত অবশ্যই সেটা সরকারী উদ্যোগে। জরায়ু ান্সারের মতো জটিল সমস্যা তাহলে হবে না।
আর্থিক সমস্যার সাথে ইচ্ছার অভাব যথেষ্ঠ। সবার জন্য সচেতনতা জরুরী।।।
আরজু মুক্তা
সবখানেই ব্যবসা খোঁজে। স্যাকরিফাইজ নাই। অথচ মা ভালো থাকলে জাতিও ভালো থাকে।
অবশ্যই সচেতনতা জরুরি।
মোঃ মজিবর রহমান
আসলে আমাদের দেশের ব্যাবস্যায়িরা অতি মুনাফা লোভী সরকারের কর্মকর্তারাও ও এখানে নীরব ভ্যাট ট্যাক্স নিবে কিন্তু জনগনের ক্রয় ক্ষমতা ও দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করা অতীব গুরুত্বপুর্ন।
আরজু মুক্তা
একদম। ভালো বললেন।
নিরাপদে থাকুন
হালিমা আক্তার
খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এখন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তবে প্যাডের দাম কমানো প্রয়োজন,যাতে সব শ্রেণীর নারীরা ব্যবহার করতে পারে। শুভকামনা। ভালো থাকবেন।
আরজু মুক্তা
নাহ্। ব্যবসায় কেমনে লাভবান হবে? নারীর স্বাস্থ্যের চিন্তা নাই। অভাগা জাতি আমি নারী
সুপর্ণা ফাল্গুনী
স্যানিটারি প্যাডের মূল্য কমাতে হবে, গ্রাম-গঞ্জে এখনো সহজলভ্য নয়। লজ্জা, সংকোচ এগুলো অবশ্যই অন্তরায়। গ্রামে মহিলা রা বাইরে তেমন যায় না তাই এগুলো কিনতে বাজারে বা দোকানে গেলেও সেখানে অনেক মুরুব্বীরা বসে থাকে তখন প্যাড কেনা তাদের সামনে হয় না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরলেন আপু। খুব ভালো লাগলো
আরজু মুক্তা
ধ্যান ধারণা এখনও অমনি। বাঁকা চাহনী। সহজলভ্য হওয়া জরুরি।
শুভ কামনা আপা
ছাইরাছ হেলাল
অব্যবস্থা আমাদের ঘিরে রেখেছে সব বিষয়ে।
উত্তরণ দেখতে চাই, জানি না তা পারবো কী না।
আরজু মুক্তা
দেখবেন একদিন কেউ না কেউ এগিয়ে আসবে।
আশাবাদী।
শুভ কামনা আপনার জন্য
হালিম নজরুল
চমৎকার লেখা।
সামাজিক ব্যাধি দূর হোক।
আরজু মুক্তা
আমরা আশাবাদী।
ধন্যবাদ ভাই
তৌহিদুল ইসলাম
খুবই চমৎকার একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন আপু। আমাদের সমাজ থেকে ট্যাবু ভাঙতে হবে। আশাকরি লেখাটি পাঠকের কাছে সমাদৃত হবে।
শুভকামনা সবসময়।
আরজু মুক্তা
ট্যাবু ভাঙ্গতে পুরুষদের সহযোগিতা লাগে। আশা করি সবাই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন যে যার অবস্থান থেকে।
শুভ কামনা ভাই