
আমরা ছুটে চলেছি সাগরের নীল জল ছিড়ে, চারিদিকে প্রাকৃতিক সবুজ পাহাড় মাঝে সমুদ্রের স্বচ্ছ জলরাশি, মাঝে মাঝে ডলফিনের ছুটে চলা, যা এক অপার্থিব সৌন্দর্য্যের সৃষ্টি করেছে।
প্রায় দেড় ঘন্টার মতো সময় লাগলো আমাদের পুলাও পায়ারের কাছাকাছি যেতে, দূর থেকে দেখছি পুলাও পায়ার দ্বীপের সৌন্দর্য্য, বিচের থেকে আলিশান এক জেটি গেইট সমুদ্রের বুক ছিড়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সাদর আমন্ত্রণ জানাতে।
আমরা সবাই শীপ থেকে নামার প্রস্তুতি নিলাম, একটা ছোটো বোট যার দুপাশে রেলিং দেওয়া শীপের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, সহযাত্রীরা এক এক করে বোটটাতে দাঁড়াচ্ছে এবং রেলিং ধরে রাখছে, তাদের নিয়ে বোট এগিয়ে যাচ্ছে জেটি গেইটের দিকে, তাদের রেখে ফিরে আসলে আমরাও উঠে গেলাম, এইবার আমাদের নিয়ে গেলো বোটটা, জেটি গেটে উঠে এসে চারিদিকে তাকালাম, লক্ষ্য করলাম সমুদ্রের হাঙর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সমুদ্রের কিছু দূর, অর্থাৎ বড় বড় শীপ যেখানে নোঙর করেছে, তারপর থেকেই লোহার নেট লাগিয়েছে যা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
গাইড আমাদেরকে ব্রিফ করছে এইখানে আমরা কি করতে পারবো, কি পারবোনা, মোদ্ধা কথা হলো এই দ্বীপে কোথাও ময়লা করতে পারবোনা, কোথাও ময়লা পড়ে থাকতে দেখলে তাও উঠিয়ে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।
দ্বীপের এক পাশে সমুদ্র, অন্য পাশে জঙ্গল, চাইলে হাইকিং করতে পারবো, চাইলে সমুদ্রে জলখেলি করতে পারবো, দুপুর দুটোই লাঞ্চ দেওয়া হবে, সবাই যেন খেয়ে যায় এইখানে এসে শীপে ফেরত গিয়ে, খাওয়া শেষে আবার ফিরে আসা যাবেভ।
এইখানে যা দেওয়া হবে তা হালাল খাদ্য দেওয়া হবে, বিকেল চারটা তিরিশের মধ্যে আমাদের শীপ দ্বীপ ছেড়ে যাবে, তার আগেই শীপে ফেরত যেতে হবে।
আমরা জেনে নিয়ে দ্বীপের দিকে গেলাম, দ্বীপে গিয়ে প্রথমে জঙ্গলে গেলাম, কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করে ফিরে এলাম জলের ধারে, জল দেখেই মন কেমন কেমন করতে লাগলো, দুজনেই সুইমিং ট্রাঙ্ক পড়ে পানিতে নামলাম, নেমে মজা পেলাম না, পায়ের নিচে সব পাথর, উপরে নেই ঢেউ, পায়ের আশেপাশে ছোটো ছোটো মাছ কিলিবিলি করছে, ধ্যাৎ বলে উঠে গেলাম, উপরেই শাওয়ারের ব্যবস্থা আছে, খুব করে গোসল করলাম, এরপর ড্রেস চেইঞ্জ করে চলে এলাম জেটি গেইটে, আমাদেরকে আসতে দেখে গাইড বললো, লাঞ্চ করবে, আমরাও রাজি হলাম, আমাদেরকে ছোটো বোটে শীপে নিয়ে গেলো, শীপের সিঁড়ি দিয়ে উঠে ভিতরের সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে গেলাম, সেখানে শামিয়ানার মতো টাঙ্গানো হয়েছে, আমাদের আগেও কয়েকজন এসেছে দেখলাম।
বুফে খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে, এছাড়া টেবিল চেয়ারও রাখা হয়েছে দেখে আমরা গেলাম খাবার নেওয়ার জন্য, বুফেতে ফ্রাইড রাইস, চিকেন, মাটন, পাস্তা, ভেজিটেবল সহ বিভিন্ন খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।
আমরা পছন্দ করে খাবার নিয়ে একটা টেবিল নিয়ে বসে পড়লাম।
খাওয়া দাওয়া সেরে ফিরে চললাম দ্বীপের উদ্দেশ্যে, গাইড বললো, বিকেলে এই বিচের একদম কাছে হাঙরের ছোটো ছোটো বাচ্চারা আসে খাবারের খোঁজে, শুনে অবাক হলাম।
এরপর ঘুরে ঘুরে দ্বীপের সৌন্দর্য্য দেখতে লাগলাম, দ্বীপটাও কম ছোটো নয়।
দ্বীপে বানর সহ ছোটো ছোটো জন্তু আছে যা মানুষের ক্ষতি করেনা।
এই সমুদ্র হলো স্নোরকলিংয়ের উৎকৃষ্ট স্থান, দলে দলে মানুষ স্পীড বোটে চড়ে আর একটু গভীরে যায় সমুদ্রে ডুব দেওয়ার জন্য, আমাদের অদূরেই দাঁড়িয়ে আছে মস্তবড় এক শীপ নোঙর করা আছে, সেই শীপে চড়ে নিচের দিকে নামলে পানির নিচের সব কিছুই দেখা যায়, কিন্তু এর খরচ খুবই বেশ বেশি।
দ্বীপের সৌন্দর্য্য বর্ণনাতীত, এতো সৌন্দর্য্য আমি আগে খুব কমই দেখেছি।
এরপর সময় হলো হাঙর ছানাদের দেখার, বিচে অনেকেই দেখছি হাঙর ছানাদের খাবার দিচ্ছে, ছোটো ছোটো না না জাতের ছানারা বিচের অল্প পানিতে এসেছে খাবারের খোঁজে, দেখতেও খুব ভালো লাগছে।
সময় হয়ে এলে আমরা সবাই শীপে ফিরে গেলাম, শীপ আবার সমুদ্রের নীল জল ছিড়ে ছুটে চলেছে লাঙ্কাবি দ্বীপে, মন বিষন্ন হয়ে রইলো, দূর থেকে বললাম, বিদায় পুলাও পায়ার, যদি সম্ভব হয় ফ্যামিলি নিয়ে আবার আসবো তোমার তীরে, দূর আকাশের অস্ত যাওয়া সূর্য বিদায় জানালো আমাদের।
…….. চলবে।
ছবিঃ গুগল।
১ম পর্বের লিংকঃ
https://www.sonelablog.com/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be-%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a6%a3-%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%95-2/
২য় পর্বের লিংকঃ
https://www.sonelablog.com/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be-%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a6%a3-%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%95/
২৫টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
চমৎকার লাগল প্রিয় ইঞ্জা দা
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই।
মনির হোসেন মমি
ছবি বেশী হয়ে গেছে ভাইজান আর প্রতি পর্বে পূর্ব পর্বের লিংক কই? তা না হলে যে পাঠকরা পূর্বপর্ব পড়তে আপনার প্রফাইলে যেয়ে ঘাটতে হবে।
ইঞ্জা
ভাই লিংক তো দিলাম কিন্তু ক্লিক তো হচ্ছেনা?
মনির হোসেন মমি
এভাবে নয়। ড্রাফপ্যাডের উপরে শিকলের মত লিংক বক্সে ক্লিক করে পূর্ববর্তী প্রকাশিত পোষ্টের লিংকটি কপি পেষ্ট করে এন্টার দিলেইতো হয়ে যাবার কথা।তবে যেখানে বা যে পোষ্টে লিংক দিবেন সেখানে সবার আগে গত পর্ব অথবা কোন কিছু লিখে আগেই হাইলাইট করে তারপর লিংক শিকলে ক্লিক করে কপি লিংকটি পেষ্ট করবেন।
ইঞ্জা
https://www.sonelablog.com/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%9f%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a6%be-%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a6%a3-%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%ac/#comment-277616
ইঞ্জা
এইখানে হচ্ছে কিন্তু ব্লগে হচ্ছেনা ভাই
শামীম চৌধুরী
ওয়াও
প্রকৃতির ছবিগুলি দারুন তুলেছেন।
ভ্রমন গল্পও হাঁটিহাঁটি পা পা করে আগাচ্ছে।
তবে ভাই পাখি দেখেন নাই?
শুভ কমানা রইলো।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, ছবি সব গুলো গুগলের, আমার নিজের ছবি গুলো এনালগ থাকায় সব নষ্ট হয়ে গেছে।
শামীম চৌধুরী
খুবই দুঃখজনক ও কষ্টকর ঘটনা।
ইঞ্জা
সত্যি তাই ভাই।
তৌহিদ
দুনিয়ার বেহেস্ত বুঝি একেই বলে। দেশটি আসলেও চমৎকার। আচ্ছা হালাল খাবার দেয় কি সব পর্যটকের কথা ভেবে? জেটির গঠন প্রকৃয়া মুগ্ধকর।
দারুণ ভ্রমণ গল্প পড়লাম ভাই। শুভকামনা রইলো।
ইঞ্জা
বেহেশত আমি দেখিনি কিন্তু এইসব জায়গা কোনো অংশে কম না ভাই।
হালাল খাবার দেওয়া হয় কারণ মালয়েশিয়া নিজেই মুসলিম দেশ।
ধন্যবাদ ভাই।
তৌহিদ
বুঝতে পেরেছি, ধন্যবাদ ভাই।
ইঞ্জা
❤💕❣
সুপায়ন বড়ুয়া
নীল জলরাশির বিচে সাতার কাটব
খেলব জল খেলি। তার সুযোগ কই ?
পাথুরে কণা আর মাছের জ্বালা
কক্সবাজারটা মিস করে রই।
সুন্দর বর্ণনায় মনটাই ভাল হলো।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
আমরা এক্সারা কক্সবাজারের সমুদ্রে নেমেছি তাদের এইসব পাথুরে বিচ ভালো লাগার কথা নয় দাদা।
সুন্দর মন্তব্য পেয়ে আপ্লুত হলাম। 😊
ছাইরাছ হেলাল
আপনার বর্ণনায় সৌন্দর্য আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল ভাই।
চলুক।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাইজান, লাঙ্কাবির সৌন্দর্য্য আরও বাকি আছে, সাথে থাকুন।
আরজু মুক্তা
ছবিগুলো, ভ্রমণ কাহিনীকে করেছে মনোমুগ্ধকর।
ইঞ্জা
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। 😊
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার লেখাতে একটা জিনিস খেয়াল করলাম খাবারের বর্ণনা আর জায়গার ঘটনা গুলো একদম পুরোপুরি পাই। ভ্রমণ কাহিনী গুলো এমনি হওয়া উচিত যাতে কারো কোন বুঝতে, জানতে সমস্যা না হয়। এনালগের ছবিগুলো না থাকাতে আসল সৌন্দর্যটা মিস করলাম কারন সেগুলো ছিল আপনার চোখ দিয়ে দেখা। এগুলো নেটের ছবি তাই এতে নিজের অনুভূতি টা ব্যক্ত হয়না। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকবেন শুভ কামনা রইলো
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অবিরত আপু, সত্যি বলতে কি ভ্রমণের আনন্দ যদি পুংখানুপুংখ ভাবে না দিই তাহলে ভ্রমণের দ্বাদ আপনাদের দেবো কিভাবে, একি ভাবে খাবারের বিষয়টিও কিন্তু ভ্রমণের সাথে জড়িত, এ জন্যই আমার লেখাতে এসব থাকে।
আপনার ভালো লাগে জেনে আনন্দিত হলাম। 😊
শামীনুল হক হীরা
অসাধারণ।।।।।
ইঞ্জা
ধন্য যোগ