মালয়েশিয়া ভ্রমণ (লাঙ্কাবি পর্ব ৪ ও শেষ পর্ব)

ইঞ্জা ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, সোমবার, ০৬:৫১:৩৮অপরাহ্ন ভ্রমণ ২৪ মন্তব্য

আমরা ফিরে এলাম হোটেলে, ফ্রেস হয়ে প্রথমে ডিনার করতে গেলাম, ডিনার শেষে রুমে ফিরে এসে দুজনেই শুয়ে পড়ে আমাদের পুলাও পায়ার ভ্রমণ নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করতে লাগলাম, এক সময় দুজনই ঘুমিয়ে পড়লাম, আসলে প্রচন্ড টায়ার্ড থাকার কারণেই ঘুম এসে গেলো।

পরদিন সকাল আটটায় ঘুম ভেঙ্গে গেলে উঠে গিয়ে দুজনই ফ্রেস হয়ে নিচে চলে এলাম ব্রেকফাস্ট করতে, ব্রেকফাস্ট সেরে দুজনই রুমে ফিরে এসে ভাবছি কি করা যায়, বসে থাকলে তো হবেনা, পরে দুজনই সর্টস পড়া অবস্থায় পিছনের বিচ পয়েন্টে গিয়ে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বিচে রাখা কর্টে শুয়ে বসে কাটালাম, লাঞ্চের সময় হয়ে এলে দুজনই ফিরে গেলাম রেস্টুরেন্টে, খেতে শুরু করলে ওয়েটার এসে পানি দিলে ওকেই জিজ্ঞেস করলাম এইখানে কাছাকাছি ঘুরে দেখার কি আছে?

ও জানালো, আপনারা লাঙ্কাবি স্কাই ব্রীজ দেখে আসুন, ক্যাবল কারে করে পর্বতে উঠে সেখানে এক পর্বত থেকে আরেক পর্বত পর্যন্ত নতুন স্কাই ব্রীজ করেছে, ওটা থেকে চারিদিকের ভিউ খুব সুন্দর। 

আমরাও সিদ্ধান্ত নিলাম যাবো দেখতে, খাবার শেষ করে রুমে এসে ড্রেসআপ করে বেরিয়ে পড়লাম। 

টেক্সি ক্যাব আমাদের নিয়ে গেলো স্কাই ভিউ পর্বতের নিচের ক্যাবল কার স্টেশনে, আমরা নেমে গিয়ে টিকেট কাটলাম, এরপর অপেক্ষা নেক্সট ক্যাবল কার আসার।

ক্যাবল কার আসতে বেশি সময় লাগলোনা, আমরা দুজন উঠে পড়লাম। 

আপনাদের বলে রাখি আমার acrophobia (উচ্চতা ভীতি) আছে, ক্যাবল কারে তো উঠে পড়লাম কিন্তু ক্যাবল কার নিচ থেকে উপরে উঠছে, যতই উপরে উঠছে আমার জান বের হওয়ার যোগার, নিচে তাকিয়ে দেখছি ঘন জঙ্গলের মতো তাও উপর থেকে নিচে মানে অনেক নিচে আর আমরা শূন্যে ঝুলে ঝুলে উপরে উঠছে, আমার কলিজা তো লাফ দিয়ে উঠলো, আমি জোরে জোরে কলেমা সহ যত সুরায়ে কালাম মুখস্ত আছ্র সবই পড়ছি।

বন্ধু বলছে এইভাবে ভয় পাওয়ার কি আছে?

আমি বললাম, এমনই এক ক্যাবল কার ছিড়ে গিয়ে সুইজারল্যান্ডে মানুষ সব মারা গেছে, বলেই আবার পড়া শুরু করলাম।

আমরা একবার সমান্তরাল ভাবে যাচ্ছি তো আবার উপরের দিকে উঠছি, আর উঠছি তো উঠছি সময় আর কাটছেনা, আর এদিকে সুরা পড়তে পড়তে মুখে ফেনা তুলে ফেলছি আমি, এক সময় দেখলাম সামনে দেখা যায় ল্যান্ডিং স্টেশন, তখন আমার ধড়ে আমার প্রাণ আসে। 

আমি আগেও ক্যাবল কারে চড়েছি সিঙ্গাপুরে স্যান্তোসা যাওয়ার সময় কিন্তু সেইসব ক্যাবল কার ছিলো খুব লাক্সারিয়াস কিন্তু এই ক্যাবল কার তার তুলনায় নস্যি, ছোটো এবং লোহার খাঁচার মতো। 

ক্যাবল কার এগিয়ে গেলো ল্যান্ডিং স্টেশনের কাছে, ল্যান্ডিং স্টেশনে পোঁছালে আমরা নেমে পড়লাম। 

পর্বতের আশে পাশে ঘুরে দেখতে শুরু করলাম, এ পাহাড় নয় পর্বত, নিচের ল্যান্ডিং স্টেশন এইখান থেকে মনে হচ্ছে খেলনা, দূরের ভিউটা অসাধারণ লাগছে কিন্তু স্টেশনটা ছোটো, আমরা এগুলাম স্কাই ভিউ ব্রীজের দিকে, এই ব্রীজ দুই পর্বতকে এক করেছে, যদিও দ্বিতীয় পর্বতটি প্রথমটির চাইতেও বড়, ব্রীজের উপর দিয়ে হেঁটে আমরা দ্বিতীয় পর্বতের দিকে এগুলাম, দুই পাশে রেলিং দেওয়া ব্রীজটির সৌন্দর্য্য আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করছে, আমরা হেঁটেই দ্বিতীয় পর্বতে যখন এলাম তখন ব্রীজের শেষ প্রান্তের পর্বতের চারিদিকে ব্রীজের ল্যান্ডিং করা হয়েছে যা গোলাকৃতির ব্রীজেরই শেষাংশ, বলে রাখি এই স্কাই ভিউ ব্রীজটিতেই শারুখ খান তার ডন ছবির শেষ ফাইটিং দৃশ্যের স্যুট করেছিলেন এবং তার বিপরিতে মার খাওয়া ভিলেন ছিলেন ভূবন ইরানি।

আমরা চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছি, ছবি তুলছি, এরমধ্যে সূর্য্য অস্ত যাওয়ার সময় হয়ে আসছে এবং এইখানে থাকারও সময় শেষ হয়ে এলো, আমরা আবার ফিরে চললাম প্রথম পর্বতে ক্যাবল কারে উঠার জন্য। 

ক্যাবল কার স্টেশনে এসে কার এলে উঠে পড়লাম, এখন সময় হলো নিচে যাওয়ার পালা, ক্যাবল কার তার গতিতে নামছে আর আমি আমার গতিতে সুরা পড়ছি, ওদিকে আমার অবস্থা দেখে বন্ধু আমার দম ফাঁটা হাসি হাসছে। 

এক সময় আমরা নিচে নেমে এলে আমার প্রাণ আবার ফিরে এলো, দুজনই টেক্সির অপেক্ষায় রইলাম, টেক্সি ক্যাব এলে আমরা রওনা হয়ে গেলাম হোটেলের উদ্দেশ্যে। 

এরপর হোটেলে ফিরে এসে আমরা ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম পরদিনে কুয়ালালামপুর যাওয়ার, সে গল্প আরেকদিন হবে।

আজ লাঙ্কাবি পর্বের এখানেই ইতি।

বিদায় লাঙ্কাবি। 

 

সমাপ্ত। 

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ