মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব

কামাল উদ্দিন ৯ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০১:৪০:৪৮অপরাহ্ন ভ্রমণ ২৫ মন্তব্য

বৈসাবী বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার প্রধাণ ৩টি আদিবাসী সমাজের বর্ষ বরণ উৎসব। বৈসাবী নামকরনও করা হয়েছে এই তিনটি উৎসবের এর প্রথম অক্ষর গুলো নিয়ে। বৈ শব্দটি ত্রিপুরাদের বৈসু থেকে, সা শব্দটি মারমাদের সাংগ্রাই থেকে এবং বি শব্দটি চাকমাদের বিজু থেকে। চৈত্রের শেষ দুই দিন আর পয়লা বৈশাখ এই তিন দিন আদিবাসীদের এই উৎসবে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম থাকে মুখর। আমি একবারই মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব দেখেছি, তাও পয়লা বৈশাখের একদিন মাত্র।

সাংগ্রাই মুলত মারমা আদিবাসীদের বর্ষবরণের উৎসব। খেযাং, খুমি, চাক'রা ও এ উৎসব পালন করে থাকে। মারমাগণ সবাই বুদ্ধএর ছবি সহকারে নদীর তীরে যান এবং দুধ কিংবা চন্দন কাঠের জল দিয়ে এ ছবিটিকে স্নান করান। তারপর আবার এই ছবিটিকে আগের জায়গায় অর্থাৎ মন্দির বা বাসাবাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মারমা সম্প্রদায় সেই আদিকাল থেকে অন্যান্য সম্প্রদায় থেকে ভিন্ন আঙ্গিকে পুরনো বছরের বিদায় এবং নতুন বছরের আগমনকে স্বাগত জানাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করে আসছে, যা মারমা ভাষায় সাংগ্রাই নামে পরিচিত। মূলত 'সাক্রাই' (সাল) শব্দ থেকেই 'সাংগ্রাই' শব্দ এসেছে বলে ধারণা করা হয়। যা বাংলাই 'সংক্রান্তি' বলে পরিচিত। মারমা সম্প্রদায়ের 'সাংগ্রাই জ্যা'র (মারমা বর্ষপঞ্জি) গঠনের মাধ্যমে সাংগ্রাইয়ের দিন ঠিক করা হয়ে থাকে। মাইংমা ১৩৫৯ খ্রিস্টাব্দের আগে থেকেই এ 'সাক্রাই' বা সাল গণনা করা হয়, যা 'জ্যা সাক্রই' নামে পরিচিত। সময় স্বল্পতায় আমি মাত্র একদিনের জন্য ওদের উৎসবে যোগ দিতে পেরেছিলাম, সেটা ছিলো আমাদের ১লা বৈশাখ। আসুন দেখি আমার ক্যামেরায় সাংগ্রাইয়ের খন্ড চিত্র।


(২) বৈশাখের ভোরে মারমা জনগোষ্টির লোকদের প্রধান গন্তব্য ছিলো খাগড়াছড়ির পানখাইয়া পাড়ার দিকে।


(৩) নানা সাজে নানা বাধ্য বাজনা সহকারে সবার গন্তব্য ছিলো একই দিকে।


(৪/৫) কিছুক্ষণের মধ্যেই পানখাইয়া পাড়ায় ওদের নির্ধারিত অনুষ্ঠান স্থল নানা রঙে নানা বর্ণের রঙিন পোষাক পড়া তরুণ তরুণীদের দ্বারা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেলো।


(৬/৭) আমাদের ক্যামেরার সামনেও ওনারা বেশ সাবলীল পোজ দিচ্ছিল।


(৮) ওনাদের এই চমৎকার ছাতার নিচে ঠান্ডা কতোটা তা পরিক্ষা করতেই একবার দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম।


(৯) বাদ ছিলোনা শিশুরাও


(১০) এম সময় ওদের নেতৃবৃন্দ মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।


(১১/১২) অতঃপর ওদের র‌্যালি ছুটে চলে খাগড়াছড়ি শহর অভিমুখে, র‌্যালি থেকে পানি ছিটিয়ে রাস্তার লোকদের ওরা ভিজিয়ে দিচ্ছিল, আর রাস্তার পাশের লোকজন ও ওদের দিকে পানি ছিটিয়ে নিজেদের আনন্দ প্রকাশ করছিলো।


(১৩) পুরো শহর হয়ে উঠলো উৎসব মুখর, কিন্তু আমাদের ক্যামেরা ম্যানদের হয়েছে যত জ্বালা, কখন কোন দিক থেকে পানি এসে আমাদের ক্যামেরা ভিজিয়ে দেবে সেই জন্য সদা থাকতে হয়েছে তটস্থ।


(১৪/১৫) নানা বর্ণের পোষাক পড়া আদিবাসীদের আনন্দে যেন মুখরিত হয়ে পড়েছিল পুড়ো খাগড়াছড়ি শহর।


(১৬) এক সময় সব মিছিল আবার পানখাইয়া পাড়ায় এসে মিলিত হলো।


(১৭) এক দিকে এবার চলছে সাংগ্রাইয়ের মূল আকর্ষণ পানি খেলার প্রস্ততি।


(১৮) অপর দিকে মঞ্চে চলছে পাহাড়ি শিল্পীদের গাওয়া গান, আর সেখানে যুবক বুড়ো সবাই নেচে গেয়ে পানি ছিটিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা।


(১৯/২০) জলকেলী বা মৈত্রী পানি বর্ষণে মেতে ওঠেছে মারমা তরুণ-তরুণীরা। ছোট-বড় কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে তরুণ-তরুণীরা পানি খেলায় অংশ নেয়। এই জলকেলী বা পানি খেলায় বিবাহিতরা অংশ নিতে পারে না। মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে ভাবের আদান প্রদানের মাধ্যমে সম্পর্কের সেতু বন্ধন তৈরি করে পরবর্তী সময়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।


(২১) এক সময় প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ওদের তৈরী তেতুল আর গুড়ের তৈরী ফ্রি শরবত মাঝে মাঝেই খেয়ে নিচ্ছিলাম।


(২২/২৩) শেষ বিকালে ওদের পাহাড়ি সংস্কৃতির নানা রকম আয়োজন এবং পুরস্কার বিতরণে সমাপ্ত হয় তাদের সাংগ্রাই উৎসব।

পাহাড়ে এমন প্রাণের উচ্ছাস আর ওদের আথিথেয়তায় আমি আগেই মুগ্ধ ছিলাম, আরো একবার হলাম। সেই সাথে আবারো কোন বৈশাবীতে তোমাদের সাথে যোগ দেওয়ার ইচ্ছাটা তো মনের মাঝে পুষে রাখলামই

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ