
আগের পর্বের লিঙ্কঃ-মামাকে দেখতে যাওয়া (পর্ব-১৮)
পর্ব-১৯
১ নাম্বার জোন থেকে বের হলাম। রিক্সায় না চড়ে পায়ে হাঁটা শুরু করলাম। মূল সড়কের দুই ধারে লম্বা লেকের মতন। ভাবলাম হেঁটে যাই। অনেক সময় এই ধরনের লেকের পাশের ঝোপ-ঝাড়ে বা গুল্ম গাছে ছোট ছোট পাখি দেখা যায়। আমার সঙ্গীরাও কেউ রিক্সায় উঠলো না। রিক্সার বাহকদের বললাম ২ নাম্বার জোনের মুখে যেন অপেক্ষা করে। এরই মধ্যে আমাদের ট্যুর অপারেটর সুজিত বেরা সকালের নাস্তার জন্য কল দিলো। আমি জীতনকে নাস্তা সংগ্রহ করে ২ নাম্বার জোনে চলে আসতে বললাম। জীতেন রিক্সা নিয়ে ছুঁটে গেল। বাকী দুজন জোনের পথে ছুঁটলো।
আমরা পথ ধরে হাঁটছি। পরস্পরের সঙ্গে আলাপচারিতায় মশগুল। মাঝে মাঝে সতীর্থদের সঙ্গে রঙ্গ মিশিয়ে ঠাট্টা হচ্ছে। বনের ভিতর উম্মুক্ত জায়াগায় ধুমপান সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। তাই আমাদের মধ্যে যারা ধূমপায়ী তারা ঝোপের আড়ালে চলে গেলেন। এমন ভাবে বসলেন দূর থেকে মনে হবে পাখির জন্য বসে আছে। যাকে বলে বাঙালী। পৃথিবীর কোথাও এই জাতি মাথা নত করতে রাজি না। আর বুদ্ধির ঢেঁকি। ধুমপান শেষে সবাই এক সঙ্গে হাঁটা শুরু করবো বলে বাকিরা রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে আছি।।
হঠাৎ নজরে পড়লো একটা জংলী ফুল গাছে পাখি উড়ে উড়ে ফুলের উপর বসতে চাচ্ছে। ভাল করে খেয়াল করে দেখলাম মধুচর বা বেগুনী মৌটুসী তাও আবার ছেলে পাখি। এদের এখন প্রজননকাল। তাই দেহের রং পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। যার জন্য প্রথমে বুঝতে পারি নাই। পরে নিশ্চিত হলাম এটা মৌটুসী। আমি সামনে যেয়ে ছবি তোলা শুরু করলাম। আমার সঙ্গে যারা ছিলো তারাও ছবি তুলতে শুরু করলো। ধুমপায়ী সঙ্গীরা শাটার শব্দ শুনে দৌড়ে আসলো। তাদের বললাম সিগারেট কোথায়? কিসমত খোন্দকার ভাইয়ের থেকে উত্তর আসলো-শাটারে শব্দে নেশা দৌড়ে পালিয়েছে। আমার হাঁসি পেলো....!!
ইশ্বরের দেয়া প্রজননকালে বেগুনী মৌটুসীর দেহের সৌন্দর্য নিজ চোখে না দেখলে আমার পাঠক বন্ধুরা উপলব্ধি করতে পারবে না যে, কি অপরূপ সৌন্দর্য লেপে আছে পালকে। যদিও সবেমাত্র প্রজননকাল শুরু হয়েছে । আরো একমাস পরে পাখিটি পেলে পালকের রঙ মনের মতন পাওয়া যেত। এরা রঙ্গনফুল বা জংলী ফুলের ছোট গাছের ঝুলন্ত ডালে ঘাস ও পাতা দিয়ে বাসা বানায়। তাদের বাসা বানানোর পদ্ধতিটা ভিন্নতর। ছোট বাটির মতন বাসা বানিয়ে উপরি ভাগে ছোট্ট একটা মুখ রাখে। মেয়ে পাখি নিজেদের বানানো বাসায় ৪টি ডিম পাড়ে। আমার পাঠক বন্ধুদের বুঝার জন্য পাখিটির পোষ্ট-প্রজনন ও প্রি-প্রজনন দুটারই ছবি দিলাম।
প্রজননের পর Purple Sunbird বা বেগুনী মৌটুসী।
*
প্রজননের আগে Purple Sunbird বা বেগুনী মৌটুসী।
*
বনের ভিতর এক জোন থেকে আরেক জোনের মধ্যবর্তী স্থানে সুপেয় পানি ও চা-পানের ব্যাবস্থা আছে। আমরা হাঁটতে হাঁটতে চা-পানের জায়গায়এলাম। তখন সময় সকাল ১১টা। জীতেন নাস্তা নিয়ে হাজির হলো। সবাই নাস্তা সেরে চা ও ধুমপায়ীরা ধুমপান সেরে নিলো। জীতেন আমাদের সঙ্গে নাস্তা শেষ করে বাকী দুজনের নাস্তা সহ ২ নাম্বার জোনের দিকে রওনা হলো। আমরা হাঁটা শুরু করলাম। কিছুটা পথ হাঁটার পর আরো বেশ কয়েক প্রজাতির ছোট পাখির ছবি তুললাম। আমার অভিজ্ঞতায় যা বুঝলাম সেটা হলো, এখানে জংলী ফুল গাছ থাকায় হরেক প্রজাতির ছোট পাখির আনোগোনা বেশী। এরা মূলত মধু ও ফুলের পরাগ খাওয়ার জন্য আসে। ১ নাম্বার জোন থেকে ২ নাম্বার জোন পর্যন্ত মূল সড়কের দুইপাশে পাখির পরিবেশটা আমার খুব ভাল লাগলো। এখানে Yellow-vented Bulbuli বা হলদে বুলবুলি পাখির দেখা পেলাম।
Yellow-vented Bulbuli বা হলদে-লেজ বুলবুলি।
কিছুটা পথ হাঁটার পর হাতের ডান দিকের লেকে খেয়াল করলাম Eurasian Wigeon বা সিঁথি হাঁসের একটা ঝাঁক। এত কাছে পাখিগুলি দেখে মনটা উৎফুল্ল হয়ে গেলো। আমাদের দেশে এত কাছে কল্পনাই করা যায় না। সবাই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। বললাম হাঁসগুলি খেতে খেতে আরো সামনে চলে আসবে। অপেক্ষা করলে ফুল ফ্রেম ছবি পাবেন। আমার কথার বাহিরে কেউ কোন কথা না বলে রাস্তার ধারে বসে গেল। আমিও সঙ্গীদের সঙ্গে বসে গেলাম।
প্রায় কুঁড়ি মিনিট পর হাঁসগুলি খাবার খেতে খেতে আমাদের সামনে চলে আসলো। আমরা সবাই ছবির তোলার জন্য প্রস্তত ছিলাম । যার যার মতন করে সবাই ছবি তুললাম। সিঁথি হাঁস কাছে পাওয়ায় আমাদের সবারই অনবদ্য ফুলফ্রেম ছবি হলো। পাখিটির পরিচিতি ও ছবি আমার পাঠক বন্ধুদের কাছে তুলে ধরলাম। আশা করি পাঠক বন্ধুদের ভাল লাগবে।
Eurasian Wigeon বা ‘লালশির’ হাঁসপাখি।
Thumbnails managed by ThumbPress
২৮টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বাঙালিকে দাবাইয়া রাখা যাবে না এতো জাতির পিতাই বলে গেছেন। হাঁসের ছবিগুলো মনে হলো একদম হাতে আঁকা। বেগুনি মৌটুসী এতো সুন্দর তা আপনার ক্যামেরায় বুঝলাম।আমিতো মোবাইলে ভালো করে তুলতে পারিনি। মাঝে মাঝেই গাছে এসে বসে। আপনার কারণে নামটা জানা গেল। ভালো থাকবেন সবসময়। শুভ কামনা রইলো
শামীম চৌধুরী
আপনার জন্য রইলো শুভ কামনা।
আলমগীর সরকার লিটন
করোনাকালে ধুমপান করাঠিক নয় আমি ছেড়ে দিয়েছি মাস ৪হলো প্রিয় শামীদা
শামীম চৌধুরী
ঠিক বনেছেন ভাই। আমিতো ধূমপান করি নাই। যারা করেছেন তারা ধূমপায়ী। সুন্দর উপদেশের জন্য ধন্যবাদ।
আলমগীর সরকার লিটন
ও আচ্ছা যাক দাদা অনেক ধন্যবাদ ভাল থাকুন———–
শামীম চৌধুরী
আপনিও ভাল থাকবেন ভাই।
ইঞ্জা
আপনার বেগুনি মৌটুসি পাখির দুইটাই ছবিই অসাধারণ হয়েছে, সত্যি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলাম ভাই।
সিঁথি হাঁস আমি আগেও লন্ডন এবং ইটালির লেকে দেখেছি যদিও নাম জানতাম না।
শামীম চৌধুরী
ওদ আচ্ছা! এরা ইউরোপে আমাদের দেশীয় হাঁসের মতন বিচরন করে। ধন্যবাদ ভাই। শুভ কামনা।
ইঞ্জা
জ্বি ভাই আমি দেখেছি বলেই বললাম।
শামীম চৌধুরী
সেটা আমি জানি। আপনার দেখা ছিল।
উর্বশী
বেগুনী মৌটুসী নাম জানতাম না। জানার কোনো শেষ নেই। দেরিতে হলেও জানতে তো পারলাম।সময় করে আরও একবার পড়বো ইন শা আল্লাহ। অশেষ ধন্যবাদ অজানাকে জানানোর জন্য। ভাল থাকুন।শুভ কামনা সব সময়।
শামীম চৌধুরী
খুব ভাল লাগছে আপু। আপনাকে পাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারায়। আপনিও ভাল থাকুন। শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য।
সুপায়ন বড়ুয়া
বেগুনি মৌটুসি পাখির দুইটাই ছবিই অসাধারণ হয়েছে, সত্যি প্রশংসা করতেই হয়।
পাখি ভাই মোদের পাখির জগতে বিচরন ভালই লাগছে।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
আপনার ভাল লাগাতে আমার পরিশ্রম স্বার্থক ভাইজান। শুভ কামনা রইলো।
আরজু মুক্তা
ছবি দেখি আর মুগ্ধ হই। কতো অজানারে জানলাম।
ধন্যবাদ ভাই
শামীম চৌধুরী
অনেক কৃতজ্ঞ রইলাম আপু আপনার সুন্দর ও প্রেরনা দেবার জন্য।
শামীম চৌধুরী
অনেক খুশী হলাম আপু আপনার মন্তব্য পেয়ে। ভাল থাকবেন। শুভ কামনা রইলো স
হালিম নজরুল
মামা দেখার চাইতে যেসব ছবি দিয়েছেন সেগুলো দেখে বেশি তৃপ্তি পাইলাম ভাই।
শামীম চৌধুরী
বহুদিন পর আপনার মন্তব্য পেয়ে আমার লেখার আগ্রহ আরো বেড়ে গেল প্রিয় কবি। শুভ কামনা রইলো। ভাল থাকবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
এসব লেখার সাথে ছবি মুগ্ধতা ছাড়া আর কী আছে দাদা?
বরাবরের মতো একরাশ মুগ্ধতা রেখে গেলাম।
শামীম চৌধুরী
শুভ কামনা রইলো দাদাভাই।
ছাইরাছ হেলাল
হাঁসের ছবি দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
এবারে বলুন, একটি ছবি কখন ফুল ফ্রেম হিসেবে ধরা হয়।
শামীম চৌধুরী
ছবিটা ক্যাপচার করার পর যখন মনিটরে জুম করে দেখতে হয় না। সেটাই ফুলফ্রেম। যার রেজুলেশন থাকতে হবে ৫১০০ পিক্সেল।
ইন্টারভিউতে কি পাশ করেছি ভাইজান?
ছাইরাছ হেলাল
আপনি দেখছি খুব-ই কৃপন!! কিছুই শিখাইতে চান না!!
রোকসানা খন্দকার রুকু।
আমার জীবনে আমি এত সুন্দর সুন্দর পাখি দেখিনি।
চিনতামও না।
অসাধারণ ভাইয়া।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
আপনাকে পাখিগুলির সঙ্গে পরিচিত করে দিতে পারায় আমার পরিশ্রম সফল। ভাল থাকবেন।
তৌহিদ
মৌটুসি আর লালশির হাঁস পাখি দেখে অভিভূত হলাম ভাইজান। ভালো থাকুন সবসময়।
শুভকামনা রইলো।
শামীম চৌধুরী
শুভ কামনা রইলো তোমার জন্য।