সেদিন ছিলো ব্ল্যাকআউট। ১লা নভেম্বর, ২০১৪ সাল। সারা বাঙলা জুড়ে অন্ধকার। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কবলে পড়েছিলো বাংলাদেশ। এক নাগাড়ে ১১ ঘন্টা দেশের কোথাও বিদ্যুৎ ছিলোনা। সেদিনটায় আমি ছিলাম ধানমণ্ডির 'মর্ডান হাসপাতালে'। বিকালে যখন বের হই তখনও জানতাম না, ব্ল্যাকআউটের কবলে পড়তে যাচ্ছি। সন্ধ্যা নামতেই কানে ভেসে আসতে থাকে, সারা বাঙলা আজ অন্ধকারে ডুবে আছে। রাত যতো বাড়ছিলো, অন্ধকারে শহরের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় ফেরার ভয় ততোই ঝাপটে ধরছিলো। তবুও ডাক্তারের পরামর্শ নিতে সাহস করে অপেক্ষা করেই যাচ্ছি। কি করবো? আম্মার যে দাঁতে অসহ্য ব্যথা। যন্ত্রণার মাত্রা তীব্র। এপয়েন্টমেন্ট নেয়া ছিলো সন্ধ্যা সাতটায়। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে শেষটায় ডাক্তার আসলেন রাত প্রায় তখন দশটা বাজে বাজে। ডাক্তার দেখিয়ে শেষমেশ নিরাপদেই অন্ধকার ভেদ করে ফিরতে পেরেছিলাম প্রায় রাত এগারোটা তখন। এ সুযোগে ব্ল্যাকআউটে ব্যস্ত নগরীর অন্ধকারে ঢেকে থাকা রাতটাও সৌভাগ্যক্রমে দেখে নিতে পেরেছিলাম।
যাহোক, যেজন্য লিখতে বসেছি, তাই বলি।
1438434593

’চিকিৎসক’ শব্দটির সাথে সেবার ব্যাপারটা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। মুলতই এটি একটি সেবামুলক পেশা। কিন্তু মানুষ আর অমানুষভেদে এই পেশার লোকজন কেউ সেবক, কেউ কসাই নাম ধারন করে। আর অনুপাতিক হারে ভালোর সংখ্যাকে ছাপিয়ে যখন মন্দের সংখ্যা সীমাহীন বেড়ে যায় তখনই তা কমন রুপ লাভ করে। বর্তমানে এই কমন রুপই হচ্ছে 'ডাক্তার মানেই কসাই'। আর এর মধ্য থেকেই কেউ কেউ প্রমাণ করেন ডাক্তার মানেই কসাই না, 'ডাক্তার মানে সেবক'। তবে সে সংখ্যা এখন খুবই কম। দুজন ডাক্তারের বিবরণ দেবো, যা থেকে সেবক এবং কসাইয়ের রুপ খুঁজে পেতে সমস্যা হবে না।

Cartoon of dentis to patient: ÒYouÕre teeth look great. But it looks like  we need to extract your tongue.Ó
Cartoon of dentis to patient: ÒYouÕre teeth look great. But it looks like we need to extract your tongue.Ó

বেশ কদিন যাবত আম্মা দাঁত ব্যথার যন্ত্রণায় অস্থির ছিলেন। সিরোসিসে আক্রান্ত অসুস্থ মা'কে তাই শান্তি দিতে একজন নামকরা (শুধু নামকরা বললে কম হয়, খ্যাতিমান) ডেন্টিস্ট এর কাছেই নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি দেখলেন, এক্সরে করালেন, তারপর পরামর্শ দিলেন। পরামর্শ শুনে আমরা একটু দ্বিধা-দ্বন্ধে পড়ে গেলাম। দ্বিধা-দ্বন্ধের কারণ জেনারেল এনেসথেসিয়া দিয়ে দাঁত উঠাতে হবে। আম্মার বয়স, উপরোন্ত সিরোসিসের প্যাশেন্ট, এক্ষেত্রে জেনারেল এনেসথেসিয়া কতোটুকু যুক্তিযুক্ত?

ডাক্তার আমাদের আশ্বস্ত করলেন। বললেন, দাঁত উঠানো ছাড়া বিকল্প কোন উপায় নেই। আর বুঝালেন, ভয় নেই, লোকাল এনেসথেসিয়াতে যেকোন সময় এনেসথেসিয়ার প্রভাব কেটে যেতে পারে, তাই জেনারেল এনেসথেসিয়া। এদিকে দাঁতের ব্যথায় আম্মা মারাত্মক কাবু। ডাক্তারের কথায় আমরা আশ্বস্ত হয়ে রাজী হয়ে গেলাম। তিনি বললেন, এ ব্যাপারে বাকী কথাবার্তা রিসিপশনে সেরে নিতে। রিসিপশন জানালো, প্যাশেন্টকে তিনদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। দাঁত উঠাতে গেলেও নাকি তিনদিন থাকতে হয়! ফিরিস্তি দিলো, অটিসহ হাসপাতাল চার্জ ৪০ হাজার + ডাক্তারের সার্জারী কস্ট ৪০ হাজার। মাড়ি থেকে দাঁত উঠাতে ৮০ হাজার টাকা!! একেতো টাকার অংক, আবার জেনারেল এনেসথেসিয়া! সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না ঠিক কি করবো। এদিকে রিসিপশনে কর্মরত লোকটা ফরম বের করে বুকিং কমফার্ম করতে প্রায় তৎপর। ওদিকে রাত বাড়ছে, আরেক টেনশন। ভাই-বোনদের সাথে ফোনালাপ করে সিদ্ধান্ত হলো, তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত না নিয়ে আরো একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর যা করার করবো। বাসায় ফিরলাম।

আমার প্রশ্ন, নামীদামী ডাক্তাররা কিভাবে রোগীর ব্যাপারে এমন সিদ্ধান্ত দেন, যে সিদ্ধান্তটি আদতেই ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। হয়তো কপালগুনে আমরা না অভিজ্ঞ, না নামীদামী অথচ প্রকৃত অর্থে একজন সেবক মানসিকতার ডাক্তারের সন্ধান পেয়েছিলাম বলেই বিড়ম্বনার হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু বেশিরভাই তো ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হয়। রোগী দেখে এনারা যে ধরণের শঙ্কা ব্যক্ত করেন, তাতে যে কারোরই অজানা আশঙ্কায় ভয় পাবার কথা। নামীদামী কিছু ডাক্তারের নীতিহীনতার উপর ভর করেই এদেশে ডায়গণস্টিক সেন্টার আর প্রাইভেট হাসপাতালগুলোও রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছে আর লোভের বলি হচ্ছে অসহায় রোগীরা।

টাকা কামানোর জন্য ছিনতাইকারীরা হাতে তুলে নেয় পিস্তল। আর এনারা বই থেকে যে জ্ঞান অর্জন করেছেন সেটা সম্বল করে হাতে তুলে নেন ছুরি-কাঁচি, কখনোবা প্রেসক্রাইভ করতে কলমের কালিকে। ছিনতাইকারীদের মানুষ চিনতে পারে, গণধোলাইও দেয় কিন্তু আফসুস, এদের মানুষ চিনতেও পারে না!!!

চলবে....

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ