মানব-উন্নয়ন (প্রথম পর্ব)

দালান জাহান ২ সেপ্টেম্বর ২০২০, বুধবার, ০৪:২১:৪০অপরাহ্ন ছোটগল্প ২৩ মন্তব্য

 

 

দেয়ালে লেখা আছে , " এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ , প্রস্রাব করলে দশটা জুতার বাড়ি" ফারুক সাহেব ডায়াবেটিসের রোগী। টানা দুই কিলোমিটার ঘুরে ও এমন উপযুক্ত স্থান তিনি পাননি। এদিক-ওদিক তাকিয়ে, ফারুক সাহেব কাজটা সেরে ফেললেন। একটা শীতল প্রশান্তি নেমে এলো। এ-ই মাত্র যেন সমস্ত পৃথিবীর ওজন নেমে গেলো তার শরীর থেকে। কপাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা ঘামের দলা। ফারুক সাহেব অনেকক্ষণ পর বুক ভরে দম নিতে পারছেন। 

প্রকৃত প্রশান্তি অনুভব করতে হলে, যন্ত্রণার দরকার হয়। যন্ত্রণার ক্লান্তি নিঃশেষ হয়ে গেলে মানুষ বিশুদ্ধ প্রশান্তি পায়। এজন্যই কথায় বলে, সুখে থাকতে ভূতে কিলায়, আসলে ভোতে কিলায় না নিরঙ্কুশ সুখ অনেক সময় সুখ অনুভবকে একঘেয়ে করে ফেলে তখন সুখটাও স্বাদহীন আনন্দহীন হয়ে পড়ে। তাই মানুষ নিজের অজান্তেই বিশুদ্ধ সুখ অথবা প্রশান্তির আয়োজন করেন।

কিন্তু ফারুক সাহেবের প্রশান্তির রেস কেটে আবার যন্ত্রণার শুরু হয়েছে। ফারুক সাহেবের বস্ দয়াবক্স গত সপ্তাহে ফারুক সাহেবের চাকরি নট করে দিয়েছেন। এ নিয়ে এ-ই বছর তার তিনবার চাকরি গেলো। ফারুক সাহেবের স্ত্রী নেহা তার ব্যাপারে আগেই ধারণা পেয়েছিলেন দুই বাচ্চা আর তারা দুজন মিলে চারজনের সংসার থাকতে হয় ভাড়া বাসায়। নেহা তাই আগেভাগেই নিজের একটা চাকরির ব্যবস্থা করেছিলেন। ফারুক সাহেব লেখক মানুষ তার উপর নেহার যেমন ভরসা নেই তেমন আস্থা নেই তার প্রতি তার অফিসেরও। তাই নেহা তাকে জানিয়ে ছিলেন, "চাকরি ঠিকঠাকভাবে করো, এবার চাকরি চলে গেলে বাসায় জায়গা হবে না তোমার"।

মিস মার্লি চৌধুরী নামে একজন অসুস্থ তার দেখাশোনার জন্য দয়াবক্স ফারুক সাহেবকে নিযুক্ত করেন তার ম্যাডামের সাথে। ফারুক সাহেব অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে তাতে সম্মত হয়ে ম্যাডামের সাথে কাজ শুরু করে দেন। কিন্তু টানা তিনদিন ম্যাডামের সাথে অফিস করেও তিনি মিস মার্লি নামে কাউকে না পেয়ে হতাশ হলেন। আবার ম্যাডামকে ভয়ে জিজ্ঞেস ও করলেন না।

যাদের আত্মবিশ্বাস একেবারে খুন হয়ে যায়, তাদের ভর করে বসে অহেতুক ভয়। তখন তারা সঠিক কাজ করতেও সিদ্ধান্ত হীনতায় ভোগে থাকেন। ফারুক সাহেবেরও হয়েছে তাই। তবে এ-ই তিনদিন তিনি নিয়মিত একটি কাজ করেছেন। তার হলো, ম্যাডাম গাড়ি থেকে নামার পর একটা ঝুড়ি যার ওজন হাফ কেজি হতেও পারে আবার না ও হতে পারে তার হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। তিনি ঝুড়িটা নিয়ে একটা নির্দিষ্ট গেইট পর্যন্ত যাওয়ার পর একটি অল্প বয়স্ক ছেলে এসে নিয়ে গেছেন। তারপর ম্যাডাম ফারুক সাহেবকে গাড়িতে অপেক্ষা বলেছেন ফারুক সাহেবও তাই করেছেন।

কিন্তু আজ একটা বিপত্তি হয়ে গেলো। ম্যাডাম গেইটে দাঁড়িয়ে ফারুক সাহেবকে ডাক দিলেন, ফারুক সাহেব যাওয়ার পর ঝুড়িটা ধরিয়ে দিতে গিয়ে হোঁচট খেলেন ম্যাডাম আর ঝুড়িটা নিচে পড়ে গেল। বেড়িয়ে এলো ঝুড়ির বিড়াল। ম্যাডামের চোখ লালে হয়ে গেলো। কয়েকখণ্ড আগুনের দলা বাতাসের অক্সিজেনে মিশে তা বিকট আকারে উচ্চারিত হলো " কি করলেন আপনি , একটা ঝুড়ি ও ধরতে পারেন না? আপনি জানেন মার্লি অসুস্থ  ! তাকে আপনি নিচে ফেলে দিলেন! জানেন মার্লির পেছনে আমার কতো টাকা খরচ হচ্ছে? "

ফারুক সাহেব ভয়ে এবং জড়তায় শামুকের মতো নিজের ভেতরে ঢুকে গেলেন। তারপরও আস্তে আস্তে বললেন, "তাহলে উনিই মার্লি চৌধুরী! আমি তাকে মনে মনে খুঁজেছি ম্যাডাম! কিন্তু আমি ভেবেছিলাম সে মানুষ হবে। এখন দেখছি বিড়াল ছানা "! কথা শেষ না হতেই ম্যাডাম ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, " চুপ করুন আপনি! কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষ। দেখি আপনার চাকরি থাকে কী করে.?

চাকরি যাওয়ার কথা শোনে ফারুক সাহেব ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন। মনে মনে বলতে লাগলেন যা ভাবছিলাম তাই হলো। তার চোখ অন্ধকার হয়ে আসলো। তিনি অনুভব করলেন সূর্যের কণাগুলো তীরের তীক্ষ্ণ ফলার মতো বিঁধে যাচ্ছে তার বুকে। ফারুক সাহেব মাথা ঘুরিয়ে নিচে পড়ে গেলেন। বিড়ালের ঝুড়িটা ছিটকে গিয়ে পড়লো একেবারে ট্রাকের নিচে।  (চলবে)

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ