বন্দর নগরী চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসসহ সাধারণ চিকিৎসা সেবা এবং সুযোগের ক্ষেত্র ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়েছে আশঙ্কাজনক হারে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাইভেট ক্লিনিকগুলো সাধারণ চিকিৎসা সেবা না দেয়ার কারণে। তাছাড়া ডাক্তার সাহেবরাও চেম্বারে রোগী দেখছেন না।  ফলশ্রুতিতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর পাশাপাশি বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও ভীড় বেড়েই চলেছে প্রতিনিয়ত।  অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে বা হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা এবং  চিকিৎসকদের সুরক্ষা উভয় ধরণের  সরঞ্জামের অপ্রতুলতা রয়েছে প্রচুর। অনেক হাসপাতালেই কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাও নেই। নেই ভেন্টিলেটর, আই সি ও বেড এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামসহ চিকিৎসা সেবার সুযোগ এবং ব্যবস্থা।
চট্টগ্রামের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবকরা চাইলে অতি দ্রুত ২০/২৫ টা হাসপাতাল র তৈরি করে দেয়া অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়। সমস্যা হচ্ছে চট্টগ্রামে উদ্যোগী ব্যবসায়ী এবং দেশ ও জনদরদী রাজনীতিবিদ নেই বললেই চলে ।

পি এইচ পি গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাহেব চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের জন্য গত ১৮ মে’২০ তারিখে এক কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। আগামীতে আরও এক কোটি টাকা দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেছেন। ইতিপূর্বে তিনি ৮৫০ শয্যার নতুন হাসপাতাল ভবনের জন্য তিন কোটি টাকা অনুদান প্রদান করেছেন। পাশাপাশি গত ৫ জুন’২০ মা ও শিশু হাসপাতালে করোনা টেস্টের জন্য একটি উন্নতমানের আধুনিক পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যবসায়ী ৮০ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন। তাছাড়াও উক্ত ব্যবসায়ী হাসপাতালের করোনা ইউনিট চালুর জন্য দিয়েছেন ৮ লক্ষ টাকা। গত ৮ জুন’২০ হাসপাতালের করোনা রোগীদের সেবার জন্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যবসায়ীর নিকট থেকে একটি এ্যাম্বুলেন্স অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে। গত ১০ জুন’২০ করোনা ওয়ার্ডের জন্য দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান এস,আলম গ্রুপের নিকট থেকে ৮৫ লক্ষ টাকার ২টি ভেন্টিলেটর এবং ২টি হাই ফ্লো নজল ক্যানোলা অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে এবং আরও ১০টি নজল ক্যানোলা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এই শিল্প প্রতিষ্ঠান। গত ১৭ জুন’২০ চট্টগ্রাম --১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ সাহেব ২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দান করেন। তাছাড়াও গত ২০ জুন’২০ তারিখে মহসিন আহম্মদ, সভাপতি জালালাবাদ এসোসিয়েশন ও আজীবন সদস্য মমতা আহম্মদ ১টি হাই ফ্লো নজল ক্যানোলা যার ক্রয়মূল্য ৬,৪০,০০০ টাকা দান করেছেন। গত ২১ জুন’২০ আজীবন সদস্য ডাঃ ফজিলাতুন্নেছা করোনা ইউনিটের জন্য ৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ১০টি বেড দান করেছেন। একই দিনে করোনা ইউনিটের চতুর্থ তলায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপনের জন্য ট্র্যাভেল এজেন্সীস ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ৭ লক্ষ টাকা দান করেছেন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ফুড ম্যানুফ্যাকচারার্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পক্ষ থেকেও করোনা ইউনিটের চতুর্থ তলায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপনের জন্য ৭ লক্ষ টাকা অনুদান পাওয়া গেছে।  বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থানরত চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর এ,এস,এম ফজলুল করিম গত ২২ জুন’২০ তারিখে করোনা ইউনিটের ৪,২৭,৫০০ টাকা দান করেছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দানের পরিমাণ ১৫ লক্ষ টাকায় উন্নীত করবেন ফলে প্রতিশ্রতি দিয়েছেন। { সূত্রঃ মা ও শিশু হাসপাতালের পাঠানো এস এম এস }। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে গত ৬ জুন’২০ তারিখে করোনা বিভাগ উদ্বোধন করা হয়েছে। এতক্ষণ চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের উন্নয়ন, নতুন ভবন নির্মাণ এবং করোনা ইউনিটের উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তি, শিল্প ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গ, আজীবন সদস্যদের অনুদান এবং দানের একটি চিত্র সকলের সামনে তুলে ধরেছি যাতে বুঝা যায় হাসপাতালের কার্যকরী কমিটির আন্তরিক, সৎ, মানবিক উদ্যোগের ফলে বিভিন্ন ধরণের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে সবাই এগিয়ে এসেছে।  আসছে এবং ভবিষ্যতেও আসবে। এ মহৎ উদ্যোগের জন্য চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যকরী কমিটি আন্তরিক ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য।

কেডিএস, পেড্রোলো, প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপ, এশিয়ান গ্রুপ, সাদ মুসা গ্রুপ, বনফুল, এস আলম গ্রুপ, কবির স্টিল, আবুল খায়ের গ্রুপ, বিএসআরএম স্টিল, ইস্পাহানি গ্রুপ, পি এইচ পি গ্রুপ, ফিনলে গ্রুপ, ফিনলে এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের পরিচালক শওকত সাহেব, রিজেন্ট ও হাবীব গ্রুপ, সাবেক মেয়র মঞ্জু সাহবের মোস্তফা হাকিম ও তাহের ব্রাদার্স, সেলিম এন্ড ব্রাদার্স,  বর্তমান ভূমি মন্ত্রী জাভেদ এম, পি সাহেবের আরামিট গ্রুপ, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ সাহেব, সাবেক মন্ত্রী  জনাব আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক মেয়র মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, বর্তমান মেয়র, জনাব এম এ লতিফ এম পি, শিক্ষা উপ মন্ত্রী জনাব নওফেল এম পি, ইয়াং ওয়ান গ্রুপ, সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম, মীর গ্রুপ, দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক জনাব মুজিবুর রহমান,দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক জনাব রমিজ উদ্দিন এবং  দৈনিক আজাদীর সম্পাদক জনাব আব্দুল মালেক সহ চট্টগ্রাম শহরে অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তি, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, শিল্প গ্রুপ আছেন যারা যে কোনো মহৎ উদ্যোগে আশা করি সাড়া দেবেন।  পাশাপাশি চট্টগ্রামের অনেক ব্যবসায়ী আছেন যারা বিভিন্ন  প্রাইভেট ব্যাংক এবং বীমা কোম্পানির পরিচালক তাঁরাও চাইলে স্ব স্ব ব্যাংক এবং বীমা থেকে স্বাস্থ্য খাতের জন্য অনুদানের ব্যবস্থা করতে পারেন।  তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরেরও অনেক অলস অর্থ পড়ে আছে বলে পত্রিকার খবরে প্রকাশ। এখন প্রয়োজন এক বা একাধিক সৎ, নিষ্ঠাবান, জনদরদী সংঘটকের যারা আন্তরিকভাবে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে উন্নত করে নতুনভাবে ঢেলে সাজাবেন। পাশাপাশি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা WHO এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা করোনাভাইরাস খুব সহসা পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে না। এমতাবস্থায় চট্টগ্রামে ক্রমবর্ধমান করোনা আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য অতি দ্রুত সুচিকিৎসা দেয়ার জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সুরক্ষা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা খুব জরুরি হয়ে উঠেছে। এখন নতুন হাসপাতাল নির্মাণের মতো প্রচুর সময় হাতে নেই।  এখানে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালকে আমরা মডেল হিসেবে গণ্য করতে পারি। তাই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, পরিত্যক্ত রেলওয়ে হাসপাতাল, ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে অর্থাৎ যেখানে চিকিৎসা সেবা দেয়ার মতো অবকাঠামো আছে সেগুলোতে ঔষধ, চিকিৎসা এবং সুরক্ষা সরঞ্জামের সুব্যবস্থা করে চট্টগ্রামবাসীর চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য অনায়াসে দ্রুততার সঙ্গে গড়ে তোলা সম্ভব যদি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী, শিল্প প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে এগিয়ে আসা যায়। এ ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রী জাভেদ সাহেব এবং শিক্ষা উপ মন্ত্রী নওফেল সাহেব মিলে এই মহতী উদ্যোগ নিতে পারেন বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। তাঁদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য সৎ যোগ্য কর্তব্যনিষ্ঠ ক্লিন ইমেজের ব্যবসায়ী, সমাজকর্মী, রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী, অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকবৃন্দ এবং সমাজের বিশিষ্টজনদের যুক্ত করা যেতে পারে। । পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানকে স্বয়ং সম্পূর্ণ করে চট্টগ্রামের উপজেলা পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা বিস্তৃত করা অবশ্যই সম্ভব। এখন প্রয়োজন একটা ভালো উদ্যোগ এবং বিত্ত্বশালীদের আর্ত মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা। আশা করি মানবতার জয় হবে।  সুপ্রতিষ্ঠিত হবে “মানুষ মানুষের জন্য” কথাটি। প্রত্যাশা চট্টগ্রামবাসীর চিকিৎসা সঙ্কট অচিরেই দূর হবে ইন শা আল্লাহ্‌।

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ