“আমার ভাই এর রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু
গড়া এ ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।

আমার সোনার দেশের রক্তে
রাঙানো ফেব্রুয়ারী
-----------------------------
------------------------------
আমি কি ভুলিতে পারি।।”

গানটি যখনই শুনি, রক্তের মধ্যে একটা অদ্ভূত আলোড়ন অনুভব করি। একুশে ফেব্রুয়ারীতে ভাষা শহীদদের যে আত্মদান, সেটি আসলেই ভোলার নয়। শহীদদের সেই ত্যাগের মাহাত্বও ব্যাপক। উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার পশ্চিম পাকিস্তানীদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্রসহ দেশের আপামর জনসাধারণ যেভাবে নিজেদের জীবন বাজি রেখে ১৯৫২ সালে সংগ্রাম করেছিলেন, তার ফলশ্রুতিতেই আমরা আজ এই স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তাদের সেই সংগ্রামের ফলেই আজ আমরা বাংলায় কথা বলতে পারি, বাংলা নামের একটি বর্ণমালা পেয়েছি তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে।

সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর সহ আরো অনেক বীরের বুকের তাজা রক্তে সেদিন রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাদের সেই সংগ্রামের কারণে বাংলাকে আমরা পেয়েছি, তা নাহলে হয়তো আজও আমাদের উর্দুতে কথা বলতে হতো।পরভাষা চর্চা করতে হতো।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীতে শহীদগণ যে কারণে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন, তার মূলে ছিল দেশাত্ববোধ, মাতৃভাষাকে সবার ওপরে স্থান দেয়া। “ যত ঝঞ্ছা-বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিই আসুক না কেন, দেশের স্বার্থকে, আপন ভাষাকেই সর্বাগ্রে স্থান দিতে হবে ” – এই মূল মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরের মত দেশের সূর্যসন্তানেরা প্রাণ দিয়েছিলেন, শুধুমাত্র মায়ের ভাষাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার তাগিদে। বাংলায় কথা বলার স্বীকৃতি পাবোনা, বাংলাকে পশ্চিমারা দমিয়ে রাখবে, এই পরিস্থিতি তাদের কাছে অকল্পনীয় ছিল, তাই তারা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন। “বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করেই ছাড়বো” এই সংকল্প ছিলো বুকে।

দেশের প্রতি, দেশের স্বার্থের প্রতি তাঁদের আত্নত্যাগ এর কথা চিন্তা করলে এখন নিজের প্রতি ঘৃণা হয়, আমরা কি পেরেছি তাঁদের সেই ত্যাগর মর্যাদা ধরে রাখতে? যে ভাষার জন্য সেদিন জানা-অজানা কত মানুষ শহীদ হলেন, বুকের তাজা রক্ত ঝরালেন, সেই ভাষাকে আমরা কতটুকু মূল্যায়ন করি?

সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরেরা খ্যাতির নেশায় জীবণ বিলিয়ে দেন নি, দিয়েছেন মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে। অথচ আজ আমরা রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত প্রিয় মাতৃভাষাকে কতটুকু মূল্য দিচ্ছি?

আমাদের মাঝে অনেকেই আজকাল কারণে-অকারণে,স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা ছাড়াই বিজাতীয় ভাষাতে কথা বলতেই বেশী পছন্দ করেন। বাংলায় কথা বলা, বাংলায় লেখালেখি করা, বাংলায় ব্লগিং করাটাকে এখনও অনেকেই নিচু চোখে দেখেন। দুয়েকটি বাক্য ইংরেজীতে বলতে পারলেই নিজেদের তারা অনেক উচুতলার মানুষ বলে মনে করেন।

অথচ যে বাংলা ভাষার জন্য আমাদের দেশে ’৫২তে রক্ত ঝরেছিল, সেই ভাষাকে উপযুক্ত সন্মান দেয়া তো দূরের কথা, ন্যুনতম শ্রদ্ধাও অনেকে দেখাতে চাননা। বাংলা যারা চর্চা করেন, তাদেরকে এইসব তথাকথিত আধুনিক মানুষেরা আনকালচারড মনে করেন।

আমি বলছিনা যে ইংরেজী জানার দরকার নেই, যেহেতু ইংরেজী পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত ভাষা,আন্তর্জাতিক ভাষা, সেহেতু ইংরেজী শেখার এবং চর্চার অবশ্যই দরকার আছে, সেটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু তাই বলে কি বাংলা ভাষাকে অমর্যাদা করে? বাংলার মর্যাদা সমুন্নত রেখেও তো ইংরেজী চর্চা করা যায়।তাই নয় কি?

তথাকথিত আধুনিকতার নিষ্পেষণে চাপা পড়ে বাংলা তার মর্যাদা হারাতে বসেছে। সময় এসেছে সচেতন হওয়ার। নইলে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা হারিয়ে যাবে কালের গহ্বরে। “আমরা বাঙালী , বাংলা আমার মায়ের ভাষা, আমরা বাংলাকেই ভালোবাসি। “ এই প্রত্যয় লালিত হোক প্রতিটি বাঙ্গালীর বুকে।
(মূল লেখাঃনায়মুল ইসলাম)।

মাতৃভাষার প্রতি সম্মান জানাই স্বরচিত কবিতার কয়েকটি লাইনে-

“ইতিহাসের পাতা খুলে দেখ, 
পিছন ফিরে তাকাও
খুব বেশি দূর নয়, 
বাহান্ন সালের ক্যালেন্ডারের পাতায় 
চোখ রাখো ফেব্রুয়ারীতে,পাও কি দেখতে? 
আমার মায়ের কন্ঠ রোধ করতে চেয়েছিলো হায়েনেরা
আমার তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের কামনাকে খুন করে 
উর্দু নামক বিষ তুলে দিতে চেয়েছিলো শকুনিরা।।

রক্তের দাগ? 
একুশ তারিখে ফিরে যাও
বেয়োনেটের মুখে,স্বপ্নচারীদের ভিড়ে
দেখতে আমায় পাও?
আমিই রফিক, আমিই বরকত-সালাম
রক্তমাখা বুক চিতিয়ে গাইছি বাংলার জয়গান। 
কৃষ্ণচূড়ার লাল, রক্তের লাল মিশে একাকার
একুশ তারিখেই ছিনিয়ে এনেছি ভাষার অধিকার।।”

(পঙক্তি মালাঃ নীলকন্ঠ জয়)

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ