১৯৭২ সাল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন স্বাধিন বাংলাদেশের রাষ্টপতি। তখন তথ্য মন্ত্রনালয় দেশের অনেক পত্রিকার সাথে মাসিক মদীনার প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রায় দুই মাস মাসিক মদিনা পত্রিকা বন্ধ ,  এই সময়ে  মাসিক মদীনার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের কাছে ফরিদপুর টুঙ্গিপাড়া থেকে একটি চিঠি এলো । পাঠিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফুর রহমান।
শ্রদ্ধেয় সম্পাদক সাহেব।
সালাম নিবেন। আশা করি কুশলেই আছেন। পর কথা হল, আমি মাসিক মদীনার একজন নিয়মিত গ্রাহক। গত দু'মাস ধরে মদীনা পত্রিকা আমার নামে আসছে না। তিন মাসের বকেয়া বাকি ছিল। তাই হয়তো আপনি পত্রিকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। আমি  আমার ছেলে মুজিবকে চিঠি লিখে বলে দিব সে যেন আপনার টাকা পরিশোধ করে দেয়। আমি বৃদ্ধ মানুষ। প্রিয় মদীনা পত্রিকা ছাড়া সময় কাটানো অনেক কষ্টকর। আশা করি আগামী মাস থেকে মদীনা পড়তে পারব। আমার জন্য দোয়া করবেন। আমিও আপনার জন্য দোয়া করি।
ইতি
শেখ লুৎফুর রহমান
টুঙ্গিপাড়া, ফরিদপুর।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান পড়েই বুঝতে পারলেন কে এই চিঠি পাঠিয়েছে । তৎক্ষনাত তিনি  চিঠি নিয়ে সোজা বঙ্গভবন চলে গেলেন। বঙ্গবন্ধু উনাকে দেখে বললেন “ তুই এতোদিন পরে আমাকে দেখতে এলি। এখানে বসার পর সবাই যেন দূরে চলে গেছে , সবাই পর হয়ে  গেছে।“

( ১৯৫১ সালের কথা। মুহিদ্দীন খান জীবনে প্রথম ঢাকায় এসেছেন। তৎকালীন স্বনামধন্য ইসলামিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী ছিলেন উনার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু । তিনি থাকতেন উনার প্রতিষ্ঠিত লালবাগ মাদরাসায়। মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরীর কাছেই মাওলানা মুহিউদ্দীন খান থাকতেন ।তখন মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরীর কাছে নিয়মিত আসা যাওয়া করতেন তৎকালীন তুখোর তরুন ছাত্র নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। সেখান থেকেই মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের সাথে বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানের পরিচয় । পরিচয়  থেকে ঘনিষ্টতা। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বঙ্গবন্ধু থেকে বয়সে ছোট ছিলেন বিধায় বঙ্গবন্ধু মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে ছোট ভাইয়ের স্নেহে তুই করে ডাকতেন। ৫২ ভাষা আন্দোলনের সময় মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান উভয় কারাগারে বন্দি ছিলেন । তখন প্রায় দেড় মাস জেল খাটেন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সাহেব। )

 

মাওলানা মুহিদ্দীন খান বললেন “ আমার পত্রিকা মাসিক মদিনা প্রকাশনা তথ্য মন্ত্রনালয় বন্ধ করে দিয়েছে।“

বঙ্গবন্ধু বললেন "তুই তো রাজাকার ছিলি না, তাহলে তোর পত্রিকা ওরা বন্ধ করবে কেন? ”

এরপর পিএসকে বললেন “তথ্য সচীবকে কল লাগাও"। (বিস্তারিত দেখুন, আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে, শাকের হুসেন শিবলী)
তখন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান উনার শেরওয়ানীর পকেট থেকে বঙ্গবন্ধুর বাবার পাঠানো চিঠিখানা বের করে বঙ্গবন্ধুর হাতে দিলেন। বাবার হাতের পরিচিত লেখা দেখেই তিনি এক নিশ্বাসে চিঠিটা পড়ে ফেললেন। পড়তে পড়তে বঙ্গবন্ধুর দুই চোখ পানিতে ভরে গেল।  মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকলেন। বললেন “ তুই আমার কাছে আরো আগে আসলি না কেন?  হারামজাদাদেরকে তো ইসলামি কোন পত্রিকা বন্ধ করতে বলিনি। আমার বাবাত আর দুনিয়াতে নাই। গত কয়েকদিন আগে তিনি ইন্তেকাল  করেছেন। “

বঙ্গবন্ধু পরে তথ্য সচীবকে ফোন করে বকাঝকা করলেন। এখন মদীনার ডিকলারেশন চালু করে দিতে হুকুম দিলেন। এরপর বঙ্গবন্ধু হাত ধরে তার স্নেহভাজন মাওলানা মুহিউদ্দীন  খানকে গাড়িতে তুলে বাসায় নিয়ে গেলেন। সেখানে সাথে বসিয়ে দুপুরের খাবার খাইয়ে তারপর ছাড়লেন।
( সাপ্তাহিক মুসলিম জাহান মার্চ ২০০৯, আস সিরাজ, মুহিউদ্দীন খান সংখ্যা) hqdefault

11 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ

Thumbnails managed by ThumbPress