
“কাছে আছে দেখিতে না পাও, তুমি কাহার সন্ধানে দূরে যাও। মনের মতো কারে খুঁজে মর, সে কি আছে ভুবনে, সে যে রয়েছে মনে।”
– কবি অসম্ভব ভালোলাগে; পরিচিত হতে চাই।
– ও, এই কথা। আমি তো কবি না; কবিতা ভালোবাসি। তো কি ভালোলাগে, আমার কবিতা না আমি।
– বলতে পারেন দুটোতেই অসম্ভব ভালোলাগা।
– তাহলে যে একটু সমস্যা। মানে আমি বিবাহিত।
– তাতেও সমস্যা নেই, বন্ধু বানাতে পারেন।
– নাহ্! ও আমার অনেক আছে।
– তাহলে আত্মার আত্মীয় হয়ে যাই। কোনদিন দেখা হবে না, শুধু কথা হবে মনে মনে; ফোনে ফোনে।
– দেখা যাক। তবে কবিতার নামে যে পঁচা লিখি তা ভালোনাবাসলে কিন্তু কিছুই হবে না।
-হা হা হা হা। তাই নাকি?
*****
“মনের ভেতর বসত আর এক মনের
সে কি জানে তার খবর”- এটা কার কথা বলেন দেখি।
– আমি তো বইই পড়িনা জানব ক্যামনে। ধরে নিলাম আপনার। আপনার মতই সুন্দর।
– আবার! এটা আমার না; আমি কবিতা ভালোবাসি কিন্তু ভালো লিখতে পারিনা। কথা ঘুরাচ্ছেন, ঘুরেফিরে সেই একই! আচ্ছা বাই। পরে আসব।
-শুনুন শুনুন হ্যালো!
ভার্চুয়াল পরিচয় পর্বের এক পর্যায়ে হঠাৎই আমাদের কাউকে ভালো লেগে যায়। এ ভালোলাগা অন্যরকম। শুধুই ফোন এবং ম্যাসেঞ্জার ভিত্তিক। হয়ত মনের একাকিত্বতা কিংবা মিল থেকেই এমন হয়। এবং দিনে দিনে পরিমাণ বাড়তেই থাকে। এমন এক লেভেলে যায় আপনার সমস্ত কাজের মাঝে তাকে কিংবা তার কথা ভাবতেই ভালো লাগে। বিষয়টা যদি আপনার মাঝে থাকে তাহলে তো ভালো। ভালো লাগা একতরফা নিয়ে আপনি সুখবোধে পুড়ে পুড়ে ছাই হবেন।
সে আপনার বন্ধু, কলিগ কিংবা পরিচিত কিছুই না। এবং আপনারা দুজনেই বিবাহিত। মন তো মনই! অতশত না বুঝে অফুরন্ত সময় সে কাজে লাগাতে শুরু করে দেয়। সকাল হয়, চলে নাস্তার আয়োজনে কিন্তু মনে কারও জন্য অপেক্ষা। বড়ই মিষ্টি সে অপেক্ষা।
অতঃপর ম্যাসেজ – “গুড মর্নিং”। সমস্ত সকাল ভালো লাগায় ভরে যায় অতটুকুতেই। আশেপাশের সব মধুময়। সকালের সমস্ত কাজ নিমিষেই শেষ।
পুরো দুপুরও শেষ করলেন তাকে ভেবে ভেবে, গুনগুন করে গান গেয়ে গেয়ে। বিকেলের সোনারোদে মনে হল তাঁরই ছোঁয়া। এ জীবনে এমন অনুভূতি আগে কখনই হয়নি। পাশের মানুষটি আছে হয়ত তাকে দায়িত্বে ফেলেছেন কিংবা আগে এমন অচেনা মনে হয়নি।
অনেকদুর এগিয়ে গেছেন। কথায় কথায় তুমি, তুই এসব হয়েছে। দীর্ঘ সময় চ্যাটিং, ফোনে কথা বলা চলে নির্বিবাদে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরেরর সময় শুধু তার জন্য। । সন্ধ্যায় একদম ফাঁকা। এ সময়টাই সবচেয়ে রোমাঞ্চকর। ফোন কিংবা ম্যাসেজের আশায় অস্থিরতা বেড়ে যায়। কোন কারনে কেউ ব্যস্ত থাকলে মিস্ করতে করতে শুরু হয় ঝগড়া। তাও মিষ্টি ঝগড়া। ভালো লাগে সে ঝগড়া করতে। তাকে আপন আপন লাগে, যেন খুব কাছের।
– কি কর?
– তোমাকে ভাবি।
– কি সেটা ;
– প্রশান্তি।
– বাপরে! এরকম; কিন্তু কতদিন!
– প্রশান্তি তো সারাজীবনের। এটা কখনও ছাড়া ও যায় না; বাদও যায় না।
– শোন আমার বেলায় শুধু প্রশান্তি আর ভাল্লাগেনা। শুধু এসবে কাজ হয়। অন্যকিছু ভাব। দেয়া নেয়া বাড়াও না হলে শুধু এসবে আর চলছে না।
-কথা তো এমন ছিলনা। বলেছিলে শুধুই আত্মার সম্পর্ক থাকবে। তেমাদের মত মানুষের বিশ্বাস নেই।
-অতশত ভেবে কি আর চলে তখন মনে হয়নি কিন্তু এখন অন্যচাওয়াও এসে গেল। তোমাকে কাছে পেতে মন চাইলে আমি আর কি করতে পারি বল?
-কিন্তু আমি তো এটা করতে পারবনা। আবার তোমার সাথেও সম্পর্ক ছাড়তে চাইনা। যেমন চলছিলো ভালোই তো ছিল; চলতে থাকুক।
-নাহ্! আমি আর পারছি না। তুমি ভেবে দেখ যদি না পারো তাহলে অফ থাকি।
মনের নেই কোন বাদবিচার। অভ্যাস, অভ্যস্ততা বদলাতে কষ্ট হয় তার। মনের ভেতরের যুদ্ধে শুরু হল দুর্বিষহ জীবন যাপন। সে আপনাকে এড়িয়ে চলছে আর আপনি চাইছেন অষ্টে পিষ্টে আঁকড়ে ধরতে। যতটুকু ভালোলাগা ছিল এখন তারচেয়ে আরও বেশি। কাউকে ফিরে পেতে চাইলে অবশ্যই তার ডিমান্ড ফুলফিল করতে হবে। এটা যে চরমতর অন্যায় মন সেটা জেনেও বারবার করবে। এ সময় মানুষকে চরমতর বেহায়া হতে হয়। সমস্ত বেহায়াপনা ও সাধ্যটুকু দিয়ে চেষ্টা করা হয়।
কিন্তু কতদিন? একসময় হয় আপনি ফিরবেন নতুবা সেই ফিরে যাবে। আর চলে যাওয়া মানুষের কিছুই হয়না; কিংবা অনেক কিছুই জীবন থেকে হারিয়ে যায়। অনেক সংসার ভেঙে যায় আবার থাকলেও চরম জোড়াতালি দেয়া। আগের সেই মানুষটির আর নেই সেই ভালোলাগা।
তাহলে কি আমরা ভার্চুয়াল পরিচয় বা সম্পর্ক বন্ধ করব? অবশ্যই না; কারন বেঁচে থাকার জন্য কিছু বন্ধু, কিছু কাছের মানুষ লাগে। শুধু সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে ভীষন হিসেবি হতে হবে। বিচক্ষণ হতে হবে। ধরন ও আঁচ বুঝে নিজেকে ও অন্যকে সচেতন করতে হবে। আমাদের সবার নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে, নিজেকে ভালোবাসতে হবে। তাহলেই জীবন সুন্দর হবে। সবার জন্য শুভকামনা।🌹🌹
১৬টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
আত্মমর্যাদাবোধ মানুষের জন্য সব কিছুই সহজ। যার মন মানসিকতা জটিল সে প্রতিটি ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করবে
রোকসানা খন্দকার রুকু
প্রথম মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল।
শুভ কামনা রইল।🥰🥰
বোরহানুল ইসলাম লিটন
খুব সুন্দর উপস্থাপন।
সুন্দরভাবে বাঁচতে হলে অনেক কিছুই মেনে চলতে হয়
আবার পরিহারও করতে হয় অনেক কিছু
শুধু তার জন্য চাই সুচিন্তনে আত্মসচেতনতা।
সত্যিই চলনের পথে অনেক হিসেবি হতে হয়
তবেই আসে জীবনের জয়।
ভীষণ মুগ্ধতায় অন্তহীণ শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানিয়ে গেলাম।
রোকসানা খন্দকার রুকু
বাহ্ দারুন বললেন। আমার চেয়েও ভালো। আন্তরিক ধন্যবাদও শুভ কামনা রইল।
আরজু মুক্তা
হুম। ভাববার বিষয়। নিজেকে বদলানোর আগে আরও বেশি ভাবতে হয়। বন্ধু নির্বাচনে ধীর হতে হয়। নিজেকে পরিবর্তনে আরও চিন্তাশীল হতো হয়।
শুভকামনা সবসময়
রোকসানা খন্দকার রুকু
হুম। আমরা মনে করি সবাই বন্ধু। তা কিন্তু মোটেও নয়।
সতর্কতা জরুরি।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ও ভালোবাসা।🥰🥰
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
কি দারুন একটা লেখা
পড়ে ভালো লাগল
শুভকামনা রইল সদা
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো।🌹🌹
খাদিজাতুল কুবরা
সাম্প্রতিক মহামারীর চেয়ে কম নয় এই ভার্চুয়াল অনাকাঙ্ক্ষিত সম্পর্কের মোহনজাল।
দারুণ লিখেছ বন্ধু!
এটি নিয়ে আরও লেখার অনুরোধ রইল।
এতে একজন ও যদি সচেতন হয় সেটাই লাভ।
অনেক ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছা রইল
রোকসানা খন্দকার রুকু
সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে পারিনি। কিন্তু তুমি ঠিকই ধরতে পারলে। শান্তি পেলাম। তোমার মত পাঠক পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার। অনেক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা❤️❤️🥰🥰
তৌহিদ
ভার্চুয়াল জগত হচ্ছে মাকাল ফলের মতন। সেই মোহে যারা এমন সম্পর্কে জড়ায় তাদের বোকা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারিনা।
আমরা অনেকেই ভার্চুয়াল ম্যানার জানিনা, বুঝিনা কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে। সবাই বন্ধু এখানে তবে অনুভবের তারতম্য বুঝতে হবে।
ভার্চুয়াল পরিচয়ে কত সংসার ভেঙে যাচ্ছে তার ইয়াত্তা নেই। অথচ কিছু মানুষের নির্লজ্জতা দেখলে ঘৃণা লাগে।
চমৎকার একটি বিষয় নিয়ে লিখলেন আপু। শুভকামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ঠিক বলেছেন ভাইয়া। অসাধারণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা রইলো।
রেজওয়ানা কবির
খুবই সমসাময়িক বিষয় অহরহ এরকম ঘটনা ঘটছে আমাদের সামনে। তবে মন বড় অদ্ভুত কখন কি চায় বোঝা বড় মুশকিল। তবুও মনকে সবসময় প্রশ্রয় না দিয়ে সম্পর্ক গড়ার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করতে হবে।ভালো লিখেছো আপু,ভালো থেক। শুভকামনা ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভালো লাগলো তোমার অসাধারণ মন্তব্য।
কিছমিছু লেখ পড়ি। শুভ কামনা রইলো।😍😍
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মনের জানালা কখন যে কার জন্য অস্থির হয় তা শুধু সময় ই জানে। অবাধ্য মন অনেক সময় নিয়ন্ত্রণে রাখা অসম্ভব। বন্ধু ছাড়া আমরা থাকতেই পারিনা তাই বন্ধু নির্বাচনে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ভার্চুয়াল সম্পর্কগুলো খুব ই ঠুনকো, কৃত্রিম। সমসাময়িক একটি বিষয় নিয়ে লেখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু যা এখন সংক্রমিত হয়েছে মহামারীর মত।
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
রোকসানা খন্দকার রুকু
খুবই চমৎকার করে পটিয়ে ফেলছে আর কেউ বুঝতেই পারছে না। সেও জালে ফেসে যাচ্ছে। এসবে সচেতনতা জরুরি। ধন্যবাদ দিদিভাই😍😍