
ঘাস পৃথিবীর মানুষের জন্য সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ। ঘাস আমাদের চরম পরোপকারী বন্ধুও বটে। এদেশের আনাচেকানাচে, মাঠেঘাটে, বনেজঙ্গলে, বাসাবাড়ির বাইরে ভিতরে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে পরিবেশের ভারসাম্যরক্ষায় ঘাস জন্মায়না। এ যেন প্রকৃতির সবুজ চাদর। এমনকি যারা অট্টালিকায় থাকেন তারাও আর্টিফিশিয়াল ঘাস কিনে লনের ফ্লোর সাজিয়ে সুখানুভূতি লাভ করেন।
আমরা নিজেরা ঘাস খাই, গরুছাগলও ঘাস খায়। আবার ঘাস শুকিয়ে চুলাতেও পোড়াই। ঘাসের উপর বসে চুটিয়ে আড্ডা মারি। প্রেমিক যুগলদের ঘাসের উপর বসে ডেট না করলে সে প্রেম থাকে অসম্পূর্ণ। কেউকেউতো এই ঘাসের উপরে ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই দিন পার করে দেন। আসলে ঘাসের উপকারীতা লিখে শেষ করা যাবেনা।
ভাবছেন এসব কেন লিখছি?
শামুককে সমুদ্র থেকে তুলে আনলেও সে কিন্তু সমুদ্রের গান ভুলতে পারেনা। সমুদ্র থেকে তুলে আনা শামুককে কানের কাছে ধরে দেখবেন শোঁশোঁ আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। কেবল যারা বধির তারা শুনতে পায়না। আমাদের হয়েছে সেই দশা। অকালকুষ্মাণ্ডরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিকট ঢোলের বাদ্য বাজিয়েই যাচ্ছে, আর আমরা শুনেই যাচ্ছি। কিন্তু প্রতিহত করতে গেলে নিজেদের বধির সেজে বসে থাকতে হচ্ছে। অসভ্যদের সাথে বসবাস আমাদের। এরা হচ্ছে পা কাটা শামুক।
জেনে রাখুন, প্রভাতের আলোক অতিক্রম বাধাগ্রস্ত হলেও আরেকটি আলোক সবসময়েই পথ দেখানোর জন্য প্রজ্জলিত থাকে। যারা সেই আলোকবর্তিকা খুঁজে পায় তারা বিবেকবান মানুষ। নিজেদের মনুষ্যত্বকে জাগ্রত রাখতে তারা সদা তৎপর। প্রতিধ্বনি শুনে ভীতু না হওয়া সেই মানবের পদাঙ্ক অনুসরণ যারাই করেছে অসীমে জয়ী হয়েছে তারাই। মহাকর্ষের গহীন অন্ধকার নক্ষত্রের আলোতেই সদা সুন্দর, প্রাঞ্জল একথা অনস্বীকার্য।
সৃষ্টির সমস্ত গতিপ্রবাহ নিত্যদিন একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রস্থলের দিকে ধাবিত হয়। বাহ্যিক কোন শক্তি আজ অবধি সে গতিপ্রবাহকে রুদ্ধ করতে পারেনি। জাতি-সভ্যতার বিকাশে মহান ইশ্বর সে শক্তি কোন মানুষকে দেননি। সাময়িক সব বাধা দিয়ে হয়তো মানবজাতিকে পরখ করেছেন তবে জয় ইবলিশের নয় মানুষরই হয়েছে। এখন আপনি আমি আমরা নিজেকে কোন পথে পরিচালিত করছি নিজেই ভেবে বের করুন। মানুষ হিসেবে এই দায়ভার আমাদের উপরেই বর্তায়।
আর যদি তা না পারেন তাহলে আর কি! ঘাস লাগান পরিবেশ বাঁচান। আমরা এদেশে চির সবুজ, মখমলি নরম ঘাস চাই। যেখানে আরামে শুয়ে বসে ফেসবুক, ইউটিউবে জাতি-ধর্ম উদ্ধার করে গালিগালাজ করে দিন পার করা যাবে। যে ঘাসের মর্ম বোঝে সেইতো প্রকৃত ঘাসপ্রেমিক; মনুষ্যত্বহীন ঘাস প্রেমিক।
তবে মনে রাখবেন, ঘাসের পরে ঘাস আর আকাশের ওপারে আকাশের যে সৌন্দর্য আছে তা শুয়ে বসে সাময়িক উপভোগ করা গেলেও প্রকৃত সৌন্দর্য-মাধুর্য পেতে হলে আমাদের সামনে অগ্রসর হওয়ার বিকল্প নেই। বিকশিত সভ্যতার ধারক এবং বাহকগুলিকে ভালো কাজে ব্যয় করুন। আপনার প্রাপ্তি নিহিত রয়েছে তার কেন্দ্রবিন্দুতে।
১৫টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ঘাসের উপমায় কঠিন বাস্তবতা টা তুলে ধরলেন। আমরা সবাই ঘাস খাই, ব্যবহার করি কিন্তু দিনশেষে সেই ঘাসের ই কথা ভুলে যাই। অথচ সেই ঘাস কত উপকারী। ফেসবুক ব্যবহার করতে , কোনো সংবাদ দেখতে বা পড়তে ঘৃণা লাগে এসব অসভ্যদের জন্য যারা সবকিছুতেই গালিগালাজ করে, খারাপ কথা বলে। এরা মনে হয় এসব ই শিখেছে। ভালো কথা , ভালো ব্যবহার কি এরা তা জানেই না
তৌহিদ
আসলেও তাই, ভালো জিনিসের ভালো ব্যাবহার এটা পরিবার এবং নিজের কর্মের থেকেই আসে। যারা মন্দ কাজে লিপ্ত হয় তারা ঘাসই খায়।
ভালো থাকুন আপু।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ঘাস দিয়ে অনেককিছু শিখিয়ে দিলেন, দাদা।
বাস্তবতা অনেক কঠিন।
আর যদি তা না পারেন তাহলে আর কি! ঘাস লাগান পরিবেশ বাঁচান। আমরা এদেশে চির সবুজ, মখমলি নরম ঘাস চাই। যেখানে আরামে শুয়ে বসে ফেসবুক, ইউটিউবে জাতি-ধর্ম উদ্ধার করে গালিগালাজ করে দিন পার করা যাবে। যে ঘাসের মর্ম বোঝে সেইতো প্রকৃত ঘাসপ্রেমিক; মনুষ্যত্বহীন ঘাস প্রেমিক।
খুবি মর্মার্থ লেখনী।
তৌহিদ
ধন্যবাদ দাদা, ভালো থাকুন সবসময়।
বন্যা লিপি
জয় মহান ঘাস! চলতি পথে এমন চমৎকার ঘাস নিয়ে চরম বাস্তবমুখী লেখা আপনিই লিখতে পারেন ভাউ।ইহাকে বলে ঘাস দিয়া কান চুলকানো, এক প্রকার জাগ্রত ঘুম ভাঙানো ঘাসের স্পর্শে। বাহবা আপনার প্রাপ্য।
তৌহিদ
ঘাসপাতার জয় হোক। তবে যারা জাগ্রত থাকে তারা ঘাসবনে জোনাকির আলো খোঁজে। বুদ্ধিমান তারাই।
শুভকামনা আপু।
আরজু মুক্তা
জেগে ঘুমালে কিছু করার থাকে না।
ঘাসকে উপমায় এনে দারুণ বাস্তব তুলে ধরলেন।
শুভকামনা
তৌহিদ
ধন্যবাদ, ভালো থাকুন আপু।
আলমগীর সরকার লিটন
চির সবুজ ঘাস ছাড়া চলেই না স্যালুট জানাই তৌহিদ দা
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই, ভালো থাকুন আপনিও।
রোকসানা খন্দকার রুকু
এ এক দারুন উপমা। আমি ভাবলাম শীতকালে বোধহয় ঘাস শুকিয়ে যাচ্ছে বলেই ভাই আমাদের সচেতন করছে। বুঝুক কে কিভাবে ঘাস ব্যবহার করবে!
শুভ কামনা রইলো।
তৌহিদ
ঘাসের মর্ম বোঝা মুশকিল, তবে আপনি পেরেছেন কিন্তু।
শুভকামনা আপু।
জিসান শা ইকরাম
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাতায়াত কমিয়ে দিয়েছি।
দিন দিন কাছের মানুষ হিসেবে বিবেচিত লোকদের আসল দাঁত দেখে ফেলছি ইদানিং। একারনে আজ এক দীর্ঘ বছরের বাস্তব জীবনের বন্ধুকে ফেসবুক থেকে বাদ দিয়েছি।
উপমা ভালো হয়েছে।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
অনলাইন এক্টিভিটি আমারও আর ভালো লাগেনা, বিশেষ করে ফেসবুক। বিরক্তিকর হয়ে উঠছে ভাই। কাজের চেয়ে অকাজের কাজ বেশি হচ্ছে।
ভালো থাকুন ভাই। দোয়া রাখবেন।
তৌহিদ
অনলাইন এক্টিভিটি আমারও আর ভালো লাগেনা, বিশেষ করে ফেসবুক। বিরক্তিকর হয়ে উঠছে ভাই। কাজের চেয়ে অকাজের কাজ বেশি হচ্ছে।
ভালো থাকুন ভাই। দোয়া রাখবেন।