নয়াচরন পাড়ায় কিছুটা বিশ্রাম করে আমরা এগিয়ে চললাম ছোট্ট গ্রাম হানজরাই পাড়ার দিকে। এতোটা চমৎকার লোকেশনে পাহাড়ি গ্রাম আমি খুবই কম দেখেছি। দুই দিকে উঁচু পাহাড় দ্বারা পরিবেষ্টিত। আর সামনে রেমাক্রি খাল, রেমাক্রি খালটাকে আমি নদী বলতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। খালের উপারে আবারো উঁচু পাহাড়। আমি সঠিক বলতে পারছি না এই গ্রামের উচ্চতা, তবে অনুমান করি ১২০০ থেকে ১৫০০ ফুট উঁচুতে এই গ্রামটি। উচ্চতা কম হলে কি হবে, এই গ্রামে পৌছতে হলে আপনাকে টপকাতে হবে অনেক উঁচু উঁচু পাহাড়, মানে অনেকগুলো উঁচু পাহাড়ের মধ্যিখানে নীচু একটা গ্রাম।
গহীন পাহাড়ি অরণ্য ঘেরা ছোট্ট গ্রামটায় মাত্র কয়েক ঘর বসতি। গ্রামটা খুব একটা গোছানো তেমন বলা যাবে না। তবে খরস্রোতা রেমাক্রি খালের পাশে এ গ্রামটিকে স্বর্গ বললে যেনো একটু কমই বলা হয়। এখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ত্রিপুরাদের বসবাস। এখানে আমাদের টিমের থামার কথানা। তবে সাথে গাইড না থাকায় ওদের কাছে কিছু তথ্য নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা। আমাদের গন্তব্য সাকা হাফং এর পায়ের কাছের গ্রাম নেফিউ পাড়াতে। ওখান থেকে গাইড নিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চুড়া সাকা হাফং সামিটের পরিকল্পনা।
কিন্তু ভাগ্য আমাদের সহায় ছিল না বলে ভুল পথে পা বাড়ালাম। আমরা চলে গিয়েছিলাম রেমাক্রির অনন্য সুন্দর একটা এলাকায়। তবে ভুল সংশোধন করতে পরে আমাদের অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছিল। যদিও ঐ ভুলের জন্য পরে আমাদের আফসোস তো ছিলোই না, মনে ছিল শুধুই প্রশান্তি। আসুন এবার আমার ক্যামেরায় দেখে আসি সেইসব।
(২) নয়াচরন পাড়া পার হয়ে ক্রমান্বয়ে আমরা নিচের দিকে নামতে থাকি, কারণ হানজরাই পাড়া এখান থেকে অনেক নিচের দিকের একটি গ্রাম।।
(৩) এক সময় আমরা নেমে আসি রেমাক্রির জলে।
(৪) খড়স্রোতা রেমাক্রির এখানে জলের উচ্চতা খুবই কম, তবে রেমাক্রি খালের ভেতরের পিচ্ছিল পাথরগুলো ছিল খুবই ভয়াবহ। ওপারে দেখা যাচ্ছে কয়েকটি ঘর নিয়ে ছোট্ট গ্রাম হানজরাই পাড়াকে।
(৫) জলের নিচের পুরোটাই এমন পাথুরে, যেখানে সুর্য্য কিরণ পড়ে আলোর খেলা খেলছে।
(৬/৭) আমাদের দেখতে ত্রিপুরা শিশুরা বেড়িয়ে আসছিলো কুড়ে থেকে।
(৮/৯) অতঃপর মায়েরা।
(১০/১১) আর নিরবে আমাদের শুভ কামনা জানিয়ে ছিল বেগুনী রঙ্গা এই পাহাড়ি ফুলগুলো।
(১২) অন্য একটা কুঁড়ের সামনে আগুন জ্বালিয়ে কিছু একটা পুড়ছিলো।
(১৩) দেখে অবাক হয়েছিলাম যে আমাদের দেশে আদিম যুগর মতো এখনো এমন মানুষ যারা উর্ধাঙ্গে কোন কিছু পরিধান করে না।
(১৪) ভুল দিকে যাত্রার শেষ সময়ে পিছন ফিরে হানজরাই পাড়ার এই ছবিটা তুলে নিয়েছিলাম।
(১৫) এবার আমরা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ পথ ধরে আমরা সামনে এগিয়ে চললাম।
(১৬) কখনো বা বিশাল বিশাল পাথরের মাধ্যিখান দিয়ে এগিয়ে চললাম, যেখানে আমরা ব্যগ নিয়ে আটকে পড়ছিলাম।
(১৭) এক সময় আমরা পথ ভুল করে হানজরাই পাড়া সংলগ্ল রেমাক্রি খালের এমন একটা পয়েন্টে এসে উপস্থিত হয়েছি যে আমরা সবাই বাকরুদ্ধ প্রায়।
(১৮/১৯) চারিদেকে সবুজ ঘাছের বেষ্টনি, মাঝখানের পুরো এলাকা জুড়ে যেন কেউ সিমেন্ট দিয়ে সিড়ি বানিয়ে দিয়েছে। আর সেই সিড়ি বেয়ে নিচের দিকে স্বগর্জনে ছুটে চলেছে রেমাক্রির জল। বর্ষায় এখানকার ছবিটা কেমন হতে পারে তা একবার কল্পনার চোখে দেখে নিয়েছিলাম।
(২০) পথ যে ভুল করেছি সেটা আমরা ভুলে গেলাম, ঝাপ দিলাম এক স্বর্গের শীতল জলে, নিমেষে আমাদের তিন দিনের পথ চলার ক্লান্তি রেমাক্রির জলের স্রোতের সাথে মিশে নিমেষেই উধাও।
ফেরার আগে পাহাড়ি সুন্দরী রেমাক্রির কানে কানে আমি শুধু একটা কথাই বলেছিলাম, আই লাভ ইউ রেমাক্রি। জবাবে সে খলবলিয়ে হেসে হেসে ছুটে চললো পাহাড়ের ঐ অজানা কোন বাঁকে।
২২টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
ভুল থেকে যদি এমন এক স্বর্গীয় সুন্দরকে দেখতে পাওয়া যায়, তবে ভুলই ভালো।
ঐ স্থানে এত সুন্দর একটি প্রবাহিত নদী থাকবে তা ভাবাই যায় না।
ছবি দেখেই বুঝতে পারছি, বাস্তবে কতটা সুন্দর এই স্থান।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাই, এমন ভুলগুলো হলে ঐ সময় কষ্ট হলেও পরে মনে খুবই আনন্দ হয়।
ছাইরাছ হেলাল
প্রাণ-জুড়ানো প্রকৃতি যেন খুলে দিয়েছে বিস্তর ডানা।
কামাল উদ্দিন
এই জন্যই বান্দরবানকে আমি বলি বাংলার স্বর্গ, শুভেচ্ছা নেবেন বড় ভাই।
তৌহিদ
আপনি ভুল পথে না গেলে এত সুন্দর সব ছবি দেখতেই পেতামনা। খুব ভালো লেগেছে সব ছবি।
ভালো থাকুন ভাইয়া।
কামাল উদ্দিন
হুমম, মাঝে মাঝে ভুল করাটাও মন্দ কিছু নয় যে সেটাই বোঝা গেল, শুভ কামনা জানবেন তোহিদ ভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভাইয়া অসাধারণ। অামাদের দেশেই অনেক নয়নাভিরাম জায়গা আছে যা সত্যিই মুগ্ধ করে। ভুল যে কখনো ফুল হতে পারে তা আপনার থেকেই শিখলাম। ভালো থাকুন শুভ কামনা রইলো।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, ভুলের সৌন্দর্য্যটা ছিল অসাধারণ……ভালো থাকবেন সব সময়।
হালিম নজরুল
আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগল বেগুণীরঙা পাহাড়ি ফুলগুলো।
কামাল উদ্দিন
এমন ফুলগুলো আমারো খুবই ভালো লাগে ভাইজান, কোথাও গেলে এমন ফুলের ছবিগুলো আমি সব সময় তুলতে চেষ্টা করি…….ধন্যবাদ।
ফয়জুল মহী
অসাধারণ উপস্থাপন । চমৎকার ভাবনার প্রকাশ।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাইজান
এস.জেড বাবু
অসাধারণ ছবিগুলো
বেষ্ট ছবি ছয় এবং সাত
অবশ্যই দুইটা
দেখা হলো অদেখা কিছু আপনার মাধ্যমে।
ভালো থাকবেন
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ বাবু ভাই, শুভ কামনা সব সময়।
প্রদীপ চক্রবর্তী
কখনো যাওয়া হয়নি।
আপনার বর্ণনা ও ছবিতে মন ভরে গিয়েছে দাদা।
ভালো লাগলো।
কামাল উদ্দিন
আমাদের টিমের ৮ জন ব্যতীত ওখানে আমাদের সভ্য জগতের আর কেউ গিয়াছে কিনা সেটা নিয়েই আমি সন্দিহান। ধন্যবাদ দাদা।
সাবিনা ইয়াসমিন
শুধু লেখা পড়ে কিছুতেই বোঝা যেতো না কতটা দুর্গম এই রেমাক্রি!! ছবি গুলো দেখে সম্পূর্ণ জানা গেলো।
৫ নং ছবিটি একদম ভিন্ন এক সৌন্দর্যের উপস্থাপনা!
অসাধারণ ছবি ব্লগ 🙂
শুভ কামনা 🌹🌹
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু শুভ কামনা সব সময়।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
দৃষ্টি নন্দন সুন্দর ছবির সমাহার , ভুল পথে পা বাড়ানোর কথা। উপভোগ্য। ধন্যবাদ ।
কামাল উদ্দিন
শুভ কামনা জানবেন আলম ভাই
আরজু মুক্তা
অনেক সুন্দর জায়গাটা
কামাল উদ্দিন
হুমম, সত্যিই অনেক সুন্দর, ভালো থাকবেন আপু।