
করোনাভাইরাসের কারনে ২০২০ সালে ভিন্ন এক বাস্তবতায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে পুরো পৃথিবীর ধর্মপ্রাণ মুসলমান সম্প্রদায়। যার রেশ পড়েছে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষদের মাঝেও। এর প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। এই ঈদের তেমন কোন উচ্ছ্বাস নেই, মানুষের মুখে হাসি নেই। সবার মুখে কেমন যেন অস্পষ্ট বেদনাময় অনুভূতি। ছোটছোট নিষ্পাপ শিশুরাও কি করে যেন বুঝে গিয়েছে সবার মন খারাপ। বাজারে যাওয়া যাচ্ছেনা, নতুন পোষাকের বালাই নেই। চাঁদরাতে ঈদ যেন হতাশাগ্রস্থের মত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছিল সবাইকে।
কিছুদিন আগেই আঘাত হেনেছে ভয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এদেশের উপকূলবর্তী মানুষসহ উত্তরপূর্বের জেলাসমূহে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী সকলের জীবনযাপন কেমনযেন উলটপালট হয়ে গিয়েছে এই ঝড়ে। কেমন আছে তারা? অন্যসবার মত কিঞ্চিত ঈদের আনন্দ কি তাদের মাঝেও বিরাজমান? এই প্রশ্নে নিজেই উদ্বেলিত হচ্ছি আজ।
এবারের ঈদে মনে থাকার মত অনেক কিছু ঘটে গেলো। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে গত দু’তিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, মৃতের সংখ্যা রেকর্ড পরিমান বেড়েছে। কেমন আছে তাদের পরিবারের মানুষগুলো? ঈদের আনন্দ তাদের ছুঁয়ে যায়নি নিশ্চিত। আমরা কি কেউ তাদের খোঁজ নিয়েছি? নাকি স্বার্থপরের মত নিজেরা করোনায় আক্রান্তের ভয়ে এড়িয়ে গিয়েছি? কাল কি হবে কে জানে!
জীবনের প্রথম এই কোন ঈদে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যাইনি, কেনা হয়নি নতুন কোন কাপড়। আমার মতো এই অবস্থায় বেশিরভাগ মানুষই আছে এটা ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছি। অন্তত খেয়ে পড়ে সুস্থ্যমত বেঁচে আছি এইবা কম কিসে! অনেকেই শতনিষেধ সত্ত্বেও বাজারে গিয়েছে ঈদের বাজার করতে। বাঁচার জন্য খাবার কিনতেই হবে তাইবলে ঈদে নতুন পোষাক নিতেই হবে এই মানসিকতা যাদের তাদের জন্য করুণা ছাড়া আর কিছু নেই আমার মনে।
আন্তর্জাতিক ইসলামিক সংস্থা- “ওআইসি” এ বছর করোনাভাইরাসের কারনে মধ্যপ্রাচ্যসহ সকল দেশে একযোগে একইদিনে ঈদ পালনের সিদ্বান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেসব দেশের সাথে চাঁদ দেখা যাবার সময়ের তারতম্যের কারনে তা পালনকরা সম্ভব হয়নি। ব্যতিক্রম শুধু পাকিস্তান। তারা মধ্যপ্রাচ্যের সাথে একযোগেই ঈদ পালন করেছে। চাঁদের গতিবিধি নির্ণয় করে বেশিরভাগ দেশ আগামী পাঁচ বছরের জন্য ঈদ ক্যালেন্ডার তৈরী করেছে যাতে কোন বছর কখন ঈদ হবে তা মানুষ জানতে পারে।
সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি সৌদিআরবের সাথে মিল রেখে এদেশের কিছু জেলায় একদিন আগেই ঈদ পালন করা হয়। তারা কেন এমনটা করেন তা জানিনা। তবে আমার মনে একটা প্রশ্ন জেগেছে- যদি সৌদিআরবের নিয়মেই তারা এদেশে ঈদ পালন করেন তাহলে সেহেরি ইফতার এসব এদেশের সময়ে করেন কেন? সেসব জেলার পরিচিত কেউ থাকলে আমার অনুসন্ধিৎসু মনে জাগা এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।
ফেসবুকে দেখলাম গত দু’দিন আগে একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য এম্বুলেন্সসহ পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার একটি বাসার সামনে অপেক্ষমান দাঁড়িয়ে আছেন। কারন হচ্ছে করোনা পজিটিভ সেই ব্যক্তি ঈদের বাজার করার জন্য বাজারে গিয়েছেন। এই খবরে হাসবেন কি? দুঃখপেলেও একটু হাসুন। করোনার এই বেদনানন্দ সময়ে আপনার আমার সামান্য হাসিও পরিবারের সবার ঈদ আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে।
ফিচার ছবিটি “আলোর পথে যাত্রা”- বাংলাদেশের একজন ইউনিসেফ সুপারস্টার ইব্রাহিম খলিল আকাশের অঙ্কিত যে বিশ্বাস করে, আমরা নিয়ম মেনে চললে খুব শীঘ্রই পৃথিবী করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগ কাটিয়ে সুস্থ হয়ে উঠবে। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আপনার সতর্ক জীবনযাপনই আপনিসহ অন্যকেও করোনা সংক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখবে।
ভালো থাকুক পৃথিবীর মানুষ, ঈদ আমাদের সবার মাঝে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ। সোনেলার সকল পাঠক, লেখক, শুভাকাঙ্ক্ষী, উপদেষ্টা মণ্ডলী এবং এডমিন প্যানেলের সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা রইলো।
ঈদ মোবারক।
১৮টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
এ আঁধার কেটে ভোরের সূর্য উঠবেই
সেদিনের আছি প্রতীক্ষায়।
ঈদ মুবারক।
তৌহিদ
সুদিন আসবেই দাদা। ভালো থাকুন সবসময়।
ছাইরাছ হেলাল
আমাদের বিপদ মুক্তির জন্য শুধু আবেদন ও অপেক্ষা করে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই
করার নেই। মৃত্যু ক্রমাগত থাবা বিস্তার করে এগুচ্ছে, সাবার শান্তি -ই একমাত্র কাম্য।
ইদ মুবারক।
তৌহিদ
অপেক্ষার প্রহর শেষ হোক এটাই প্রার্থনা। ঈদ মোবারক ভাই।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আজকের এ পবিত্র দিনে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা হউক
ঈদের আনন্দে মুছে যাক সকল গ্লানি,
সবার মাঝে নিয়ে আসুক সুখ আর শান্তি।
ঈদ মোবারক।
শুভকামনা দাদা।
পৃথিবীর সবাই ভালো থাকুক।
তৌহিদ
সুন্দর বললেন দাদা। এ প্রার্থনা আমাদের সকলের। ভালো থাকুন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার মতো আমার ও এমন অনেক প্রশ্ন মনে আসে। কেন একই দেশে থেকে একই চাঁদের আলোয় কিভাবে অন্য দেশকে ফলো করে? যারা নতুন জামা কিনতে এই অবস্থায় দোকানে যায় তাদের মন মানসিকতা কোন পর্যায়ে ? যেখানে সৌদি সরকার জামাত নিষিদ্ধ করেছে, মক্কা পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছে সেখানে আমাদের দেশের লোকজন মসজিদে নামাজ পড়া নিয়ে সরকারের বিরোধিতা করছে। সবদেশে লোকসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, মন্দির, মসজিদ, গীর্জা,প্যাগোডা বন্ধ রাখা হয়েছে শুধুমাত্র নিরাপত্তার খাতিরে আর আমরা সারাবিশ্বের দেখানো উল্টোপথে হাঁটছি। শপিং করছি, গ্রাম থেকে শহরে আসছি, রাজধানীতে আসা যাওয়া করছি অবাধে, গাদাগাদি করে। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। ঈদের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
তৌহিদ
এসব প্রশ্নের উত্তর যাদের জানা তারা নির্বিকার। জবাব দেয়ার কেউ নেই দিদিভাই। কাজেই নিজেদের সচেতন হতে হবে সর্বদা।
ভালো থাকুন।
আতা স্বপন
প্রকৃতির যে নিয়ম স্রষ্টা দিয়েছেন তার বাইরে আমরা যাব না। এটাই সঠিক হবে। ঈদ যেখানে যেভাবে আসে আসুক কোন ক্ষতি নেই। কথা হলো সবাইকে পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে ধর্মীয় বিধি ঠিক রেখে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে হবে। যাতে কোন ঝুকি না থাকে। গাদাগাদি করে মানুষ ঈদে শপিং করে এর কারণ মানুষকে শপিং করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে সরকারী পৃষ্টপোষকতায়। মানুষ গাদাগাদি করে বাড়ি যায় কারণ সরকার বলেছে নিজস্ব ব্যবস্থপনায় বাড়ি যেতে পারবেন। কাজেই যে যার ব্যবস্থামত যাচ্ছে। এদেশের মানুষ বেশির ভাগেরই প্রাইভেট গাড়ী নেই কিনা ওদের গাদাগাদিই ভরসা। ওদের সচেতন করারা কথা বলছি একদিকে আরেকদিকে এমন সব কথা বলছি যার কারনে তাদের কাছে কোন কথারই দাম নাই। নিজের বুঝেই চলে। সেটা ভালো কি মন্দ সেটা দেখে না।
নতুন জামা কেনার জন্য শপিং করতে যেতো না। যদি শপিংমল খোলা না থাকত। স্বামী বেচারতো মার্কেটে না যেতে পারলেই বাচে। কিন্তু শপিং মল খোলা স্ত্রী আর ছেলেপেলে কি আর বোঝে? যে দেশে মা করোনায় আক্রান্ত হলে সন্তনরা ফেলে দেয় সেখানে স্বামীর বাচামরার পরোয়া থেকে মার্কেটিং অনেক বড়। রেলেশন ঠুঙকো।
যাই হোক শেষ কথা হল আল্লাহর খাস রহমতই পারে আমাদের রক্ষাত করতে । তাই এই ঈদের প্রর্থানা-
কল্যান এর মাঝে অকল্যানের হোক লয়।
সবার জীবন হোক করোনা মুক্ত।
হোক আনন্দময়।
দুঃখের মাঝে সুখের বাতাস!!!
ঘুচে জাক জড়া
উবে যাক সর্বনাশ।
ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক।
তৌহিদ
নিজেদের সচেতনতাই কেবল পারে করোনা থেকে মুক্তি দিতে। সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই। আল্লাহ প্রার্থনা কবুল করুন।
ভালো থাকবেন সবসময়।
ফয়জুল মহী
ভিন্ন পরিবেশে ঈদ । আনন্দ প্রিয় মানুষকে বন্দি করেছে প্রকৃতি । ধুয়ে যাক মুছে যাক সব গ্লানি । ঈদ মুবারক।
তৌহিদ
ঈদ মোবারক ভাই। ভালো থাকুন।
জিসান শা ইকরাম
এমন ভাবে কখনো ঈদ পালন করতে হবে তা কেউ কখনো ভাবিনি। আজ ভয়ে ঈদের নামাজ পড়তেই যাইনি।
সৌদি আরব আর আমাদের দেশে সময়ের তারতম্যের কারনেই এক দিনে ঈদ পালন সম্ভব নয়। সময়ের পার্থক্যই যদি না থাকরো, তাহলে তো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়া উচিত সৌদি সময় অনুযায়ী।
আজ সংক্রামন সনাক্ত ১৯৭৫। মোট মৃত্যু পাঁচশত অতিক্রম করলো। এর শেষ কোথায় তা আমরা কেউই জানিনা।
ভালো পোস্ট। শুভ কামনা।
ঈদ মুবারক।
তৌহিদ
ভাই লকডাউন শিথিল করার ফলে মানুষের কাজকারবার দেখে মনে হচ্ছে যেন করোনা বলে কোন কিছুই নেই। আমাদের নিকট ভবিষ্যৎ অতি সংকটাপন্ন!
ভালো থাকুন ভাই।
সঞ্জয় মালাকার
এই আঁধার কেটে ভোরের সূর্য উঠবেই,
সেইদিরে প্রতীক্ষায় আছি।
মুছে যাক সব দুঃখ গ্লানি । ঈদ মুবারক
তৌহিদ
সেই আশা নিয়েই আছি দাদা। শুভেচ্ছা জানবেন।
শামীম চৌধুরী
মৃত্যুর আগে এমন ঈদ করতে হবে ভাবিনি। রক্ত সম্পর্কীয় ভাই বোন, পাড়া-পড়শী ও বন্ধু বান্ধব কেউ আসলো না। সবাই বেঁচে থাকতে চায়।
তৌহিদ
মনে রাখার মত অনেক কিছুই হচ্ছে ভাই এই করোনায়। আত্মীয় পরিজন সবাই যেন পর হয়ে যাচ্ছে! কবে যে মুক্তি পাব!
ভালো থাকুন ভাই।