বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার একটি ফোনালাপ সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে। ফোনালাপে তিনি একজন অবিভাবক এর সাথে কথা বলার সময় অন্য একজনকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন গালাগালি যুক্ত শব্দ উচ্চারণ করেছেন। একজন অধ্যক্ষের মুখে এমন গালাগালি যুক্ত শব্দ শোভন কিনা তা নিয়ে তোলপাড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সংবাদপত্র সমূহ।

https://www.youtube.com/watch?v=Rj136UiP63Y
এখানে অধ্যক্ষ কামরুন নাহার এর ফোনালাপটি শুনতে পারেন।

স্বাভাবিক ভাবেই আমরা বাঙালীরা সব কিছুতে দ্বিমত বা বহুমত পোষণ করি। এক্ষেত্রেও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি। দেখা যাক তাঁর ফোনালাপের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন আলোচনা এবং মতামতঃ

প্রথম দলের মতামতঃ
এই যদি হয় একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মুখের ভাষা, তাহলে তিনি কি শিক্ষা দিবেন? নৈতিকতার শিক্ষা এই মহিলার কাছ থেকে আশা করা যায় না। তিনি শিক্ষকতা পেশাকেই অসম্মান করেছেন।জাতি ধরনের গালিবাজ অধ্যক্ষের কাছে কি শিক্ষা নেবে?  ঐ পদে থাকার অধিকার তাঁর নেই, অবিলম্বে তাঁকে অধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারন করতে হবে।

দ্বিতীয় দলের মতামতঃ
তিনি অধ্যক্ষের সাথে সাথে একজন মানুষও বটে। একজন মানুষের ব্যক্তিজীবনে রাগ, অনুরাগ, ঘৃণা থাকা স্বাভাবিক। তিনি মানবিক গুনের উর্ধ্বে নন। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারে বসে এমন গালাগালি করেননি। বাইরের ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কি করেছেন তা তা তাঁর একান্তই ব্যক্তিগত ব্যপার। এমন গালাগালি আমরা তো সবাইই করি। তাঁকে অধ্যক্ষ হিসেবে নয়, একজন স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

তৃতীয় দলের মতামতঃ
তিনি নারী বলে এমন গালাগালি সবার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে। সবার কাছে খুবই অস্বাভাবিক লাগছে কারণ একজন শিক্ষিত নারীর মুখে আমরা এমন ভাষা যুক্ত গালাগালিতে অভ্যস্থ নই। তাঁর সমালোচনা একমাত্র নারী বলেই সমালোচনা। পুরুষ কেউ এমন গালাগালি দিলে আর যদি তা প্রকাশ হতো, তাহলে এমন ভাবে ভাইরাল হতো না। নারী পুরুষ সমান ভাবতে শিখুন। তিনি এভাবে রাগ প্রকাশ করে পুরুষতান্ত্রিকতার মুখে চপেটাঘাত করেছেন।গালাগালি যে পুরুষের একার সম্পত্তি নয়, তিনি তা প্রমান করেছেন।  তাঁকে অভিনন্দন।

পর্যালোচনাঃ  

তিনটি মতামতের পক্ষেই যুক্তি আছে। কার কাছে কোন মতামত বেশী যুক্তিযুক্ত তিনি সে মতাদর্শের মানুষ বলেই ধরে নেয়া যায়।

https://www.youtube.com/watch?v=1xYoSgxWyGQ
অধ্যক্ষের আমরা অডিও শুনেছি। মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল হাই এর অমৃত বচন এটি। এটির ভিডিও দেখুন।এমন ভাবে প্রকাশ্যে কখনো কোনো নারীকে গালাগালি করতে দেখিনি। একজন সাংসদ অবশ্য সংসদে তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেছিলেন .. আমিও ......মাড়ানি বলতে জানি অথবা কি একটা কথা সম্পূর্ণ মনে নেই আমার।

আমি আসলে কোন মতামতের পক্ষে? সচরাচর আমরা এমন ভাষা শ্রবণে অভ্যস্থ নই। বস্তির পাশ দিয়ে যারা যাতায়াত করেন তারা এমন শব্দ শুনলেও শুনতে পারেন। তবে রেগে গেলে মানুষের স্বাভাবিক বিচার, বুদ্ধি, বিবেক লোপ পায়। আমি খুব কম রাগ করি। তবে যখন প্রচন্ড রাগ করি, তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা। রেগে গেলে আমি কু......বা , শু......বা গালি দেই। কোনো মাতৃতান্ত্রিক গালি আমি দেই না। আমার গালি দুটোই পুরুষ বাচক। অধ্যক্ষের মত এত গালি যুক্ত শব্দ ভাণ্ডার আমার নেই। আমার গালি সব স্টাফদের প্রতি। অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে আমি গালি দিলে সেই স্টাফ হাঁসে। আমার গালি খেলে নাকি স্টাফদের ভাগ্য খুলে যায়। সকালে গালি দিলাম, বিকেলেই তাঁকে ডেকে জিজ্ঞেস করি যে দুপুরে খেয়েছো? বেতন পাও কতো? এরপর পাঁচশ বা একহাজার টাকার একটি নোট দেই বাড়ীতে কিছু  বাচ্চাদের জন্য কিনে নেয়ার জন্য। বেতনে আমি সন্তষ্ট না হলে বেতন বৃদ্ধি করে দেই।

তবে অধ্যক্ষ কামরুন নাহার এর গালাগালির মধ্যে আমার কাছে দুটো খুবই আপত্তির কথা আছে।উনি বলেছেন ঃ-
১। এই দলডা এখন সরকারে। 
২। যতদিন এই দলডা আছে, ততদিন আমার পাওয়ার আছে।

উনি এই কথা দিয়ে প্রমাণ করেছেন-
*ওনার নিয়োগ দলবাজির কারণে হয়েছে।
*আওয়ামী লীগ আছে বলেই তিনি যা ইচ্ছে করার অধিকার রাখেন।
* আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে উনি পাওয়ার লেস।
আমার প্রশ্ন এখানেই, এমন একজন পাওয়ারলেস মানুষকে আওয়ামী লীগের কেনো দরকার? যার রুট লেভেলে কোনো ক্ষমতাই নেই তাঁকে আওয়ামী লীগ কাছে এনে রাখলো কেন?
এই অযোগ্যতার কারণেই  অধ্যক্ষ পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। অবশ্য বর্তমান আওয়ামী লীগ এর কাছে এমন মানুষই হয়ত বেশী গ্রহনযোগ্য।

 

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ