পূর্ব প্রকাশের পর :

এখন দেখতে হবে, এ সত্য দ্বীন ও ঈমানের উপর সমস্ত মানুষের ঐক্যমত্য কোন যুগে প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং তা কোন যুগ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল? তাফসিরকার সাহাবিগণের মধ্যে হযরত ইবান ইবনে কা’ব এবং ইবনে যায়েদ রা. বলেছেন যে, এ ঘটনাটি ‘আলমে-আযল’ বা আত্নার জগতের ব্যাপার। অর্থাৎ সমস্ত মানুষের আত্নাকে সৃষ্টি করে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই? তখন একবাক্যে সকল মানুষ একই আকীদাতে বিশ্বাসী ছিল, যাকে ঈমান ও ইসলাম বলা হয়।– (কুরতুবী)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন যে, এই একত্বের বিশ্বাস তখনকার, যখন হযরত আদম আ. স্বস্ত্রীক দুনিয়াতে আগমন করলেন এবং তাদের সন্তান-সন্ততি জন্মাতে আরম্ভ করল আর মানবগোষ্ঠি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে শুরু করলো। তারা সবাই হযরত আদম আ. এর ধর্ম, তার শিক্ষা ও শরিয়াতের অনুগত ছিল। একমাত্র কাবীল ছাড়া সবাই তাওহীদের সমর্থক ছিলেন।

‘মুসনাদে বাযযার’ গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাসের উদ্ধৃতির সাথে সাথে একথাও উল্লেখ রয়েছে যে, একত্বের ধারণা হযরত আদম আ. থেকে আরম্ভ করে হযরত ইদরিস আ. পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। সেই সময় সবাই মুসলমান এবং একত্ববাদে বিশ্বাসি ছিলেন। এতদুভয় নবীর মধ্যবর্তী সময় হল দশ ‘করন’। বাহ্যত এক ‘করন’ দ্বারা এক শতাব্দি বোঝা যায়। সুতরাং মোট সময় ছিল এক হাজার বছর।

কেউ কেউ একথাও বলেছেন যে, এই একক বিশ্বাসের যুগ ছিল হযরত নুহ আ. এর তুফান পযর্ন্ত। নুহ আ. এর সাথে যারা নৌকায় আরোহণ করেছিলেন, তারা ব্যতীত সমস্ত বিশ্ববাসী এতে ডুবে মরেছিল। তুফান বন্ধ হওয়ার পর যারা জীবিত ছিলেন, তারা সবাই ছিলেন মুসলমান, সত্য ধর্ম ও একত্ববাদে বিশ্বাসী।

বাস্তবপক্ষে এ তিনটি মতামতের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। তিনটি যুগই এমন ছিল, যেগুলোতে সমস্ত মানুষ একই মতবাদ ও একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং সত্য ধর্মের উপর কায়েম ছিল। [তাফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন (সংক্ষিপ্ত)-পৃষ্ঠা-107]

বারযার তার মসনদে, হাকেম তার মুসতাদরাকে এবং ইবনে জারির, ইবনে আবি হাতেম ও ইবনে মুনজির তাদের তাফসিরে বিশুদ্ধসূত্রে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের উক্তি উদ্বৃত করেছেন এই রকম-হযরত আদম ও হযরত নুহ এর মধ্যে দশটি যুগের ব্যবধান ছিল। ঐসকল যুগের লোকেরা ছিল সঠিক ধর্মের অনুসারী। পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি হয়। হযরত কাতাদা থেকে হযরত ইবনে আবি হাতেম বলেছেন দশটি যুগের ব্যবধানেই ছিলেন হযরত আদম ও হযরত নুহ। তাদের মধ্যবর্তী লোকেরা ছিলেন বিদ্বান ও পথপ্রাপ্ত। পরে তাদের একতা বিনষ্ট হয়। তখন হযরত নুহ আ. কে আল্লাহপাক নবী হিসেবে প্রেরণ করলেন। তিনি্ই ছিলেন প্রথম প্রেরিত রসুল। আতা ও হাসান বলেছেন, হযরত আদমের মহাপ্রস্থানের পর থেকে হযরত নুহ আ. এর আবির্ভাবের মধ্যবর্তী সময়ে মানুষেরা ছিল চতুষ্পদ জন্তুর মতো অবিশ্বাসী। আল্লাহপাক তখন হযরত নুহ আ.কে প্রেরণ করেন। (তাফসির মাজহারি-প্রথম খন্ড)

          বি.দ্র- উপরে উল্লেখিত তাফসিরের বিভিন্ন কিতাবাদির বর্ণনায় হযরত আদম আ. হতে হযরত নুহ আ. এর সময়কাল সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য জানা গেল। পাশাপাশি এও প্রকাশ্য হলো যে, আদম আ. হতে হযরত নুহ আ. এর মধ্যবর্তী সময়েও রাসুলগণের আগমন ঘটেছিল এবং তারা আল্লাহর বাণী প্রচার করেছিলেন। পাশাপাশি এই তথ্যও মানসপটে পরিস্কার হয়ে গেল যে, আমাদের তর্কিত সমস্যা অর্থাৎ ভাস্কর্য ও মুর্তি বিষয়ক আলোচনার আদি প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল হযরত নুহ আ. এর আগমনের পূর্বকালীন সময়ে এবং উক্ত প্রেক্ষাপটেই নুহ আ. দ্বিনী তাবলিগ করেন।(চলবে)

0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ