“মাহরিবা” শব্দটি “মাহরাবুন” এর বহুবচন। অর্থ হলো উঁচু জায়গা অথবা সুন্দর অট্টালিকা, উদ্দেশ্য ‍উঁচু উঁচু অট্টালিকা, বিশাল বিশাল বাসভবন বা মসজিদ ও উপাসনালয়। “তামাছিলা” শব্দটি “তামাছিলুন” এর বহুবচন অর্থ প্রতিমা, মুর্তি। এ মূর্তি অপ্রাণীর হতো। অনেকে বলেন, পূর্ববর্তী আম্বিয়া ও নেক লোকদের মূর্তি মসজিদে নির্মাণ করা হতো যাতে তা দেখে মানুষ আল্লাহর ইবাদত করে। তবে এ অর্থ ঐ সময় নেওয়া সঠিক হবে, যখন এটা মেনে নেওয়া যাবে যে, সুলায়মান আ. এর শরিয়াতে মুর্তি ‍নির্মাণ বৈধ ছিল। আর একথা সঠিক নয়। পক্ষান্তরে ইসলাম র্মুর্তি নির্মাণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করে দিয়েছে। “জিফানুন” শব্দটি “জাফনাতুন” এর বহুবচন অর্থ বিরাট পাত্র, “জায়াবিন” শব্দটি “জায়াতুন” এর বহুবচন অর্থ হউজ, ছোট চৌবাচ্চা যাতে পানি জমা রাখা হয়। অর্থাৎ চৌবাচ্চার মত বড় বড় পাত্র “ক্বুদওয়ারুন” ডেগ “রাসিয়্যাতুন” অর্থ স্বস্থানে স্থাপিত। বলা হয় যে, এই সকল ডেগ পাথর খোদাই করে নির্মাণ করা হত স্থানান্তর করার যোগ্য ছিল না। যাতে এক সাথে এক হাজার মানুষের খাবার রান্না হত। আর এসকল কাজ জ্বিনরা করত। (তাফসির আহসানুল বয়ান-748 পৃষ্ঠার 93 নং টীকা বা ব্যাখ্যা)

হযরত সোলায়মানের অনুগত হিসাবে তারা এসব কাজ করতো।তার জন্য ইচ্ছামত বড় বড় উপাসনালয়, মূর্তি, চৌবাচ্চার মতো বড়বড় পাত্র ও বড়বড় ডেগসমূহ নির্মাণ করত।“মাহারিব” অর্থ এবাদতের স্থান। আর তামাছিল দ্বারা বুঝানো হয়েছে তামা কিংবা কাঠের তৈরী মুর্তি বা ভাস্কর্য। “জাওয়াব” জাবিরার বহুবচন। এর অর্থ পানি সংরক্ষেণের চৌবাচ্চা। জ্বিনেরা হযরত সোলায়মান আ. এর জন্য চৌবাচ্চা সদৃশ বড় বড় খাবারের পাত্র বানাত। তারা রান্না করার জন্য যেসব ডেগ বানাতো সেগুলো এতা বড় ছিল যে, সেগুলোর একাংশ পুতে রাখা হত। এসব হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক অনুগত বানানো জ্বিনেরা হযরত সোলায়মানের জন্য যেসব কাজ করত তার কিছু নমুনা। এগুলোর সবই মুযেযা ও অলৌকিক ঘটনা এবং আল্লাহ তায়ালারই করা। এর একমাত্র ব্যাখ্যা সম্ভবত এটাই। অন্য কোন ব্যাখ্যা দেয়ার কোনই উপায় নেই।

এ বর্ণনার শেষভাগে হযরত দাউদের বংশধরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, ‘ হে দাউদের বংশধর তোমরা শোকরের কাজ কর।’ অর্থাৎ আমি দাউদ ও সোলায়মানের মাধ্যমে এতো কিছুকে তোমাদের আয়ত্তাধীন করে দিলাম। কাজেই হে দাউদের বংশধর। তোমরা অংহকার ও দাম্ভিকতা দেখানোর জন্য নয় বরং আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য কাজ কর। বস্তুত সৎ কাজ হচ্ছে আল্লাহর বিরাট কৃতজ্ঞতা। (তাফসির ফি জিলালিল কুরআন-16 তম খণ্ড- পৃষ্ঠা-224)

শোকরের কাজ করার বিষয়ে অর্থাৎ মহান আল্লাহর এতো নেয়ামত ভোগ করার পরে দাউদ আ. এর বংশধর কর্তৃক আল্লাহর শোকরগুজারির নমুনা বর্ণিত হয়েছে কিতাবাদিতে। যেমন-

হযরত দাউদ আ. ও সোলায়মান আ. এবং তাদের পরিবারবর্গ মৌখিকভাবে ও কর্মের মাধ্যমে এই আদেশ পালন করেছেন। তাদের গৃহে এমন কোন মুহুর্ত যেত না যাতে ঘরের কেউ না কেউ্ এবাদতে মশগুল না থাকত। পরিবারের লোকজনকে সময় ভাগ করে দেয়া হয়েছিল। ফলে দাউদ আ. এর জায়নামায কোন সময় নামাযী শুন্য থাকতো না। (ইবনে কাসির)

বুখারী ও মুসলিমের এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ স. বলেন- আল্লাহ তায়ালার কাছে হযরত দাউদ আ. এর নামায অধিক প্রিয়। তিনি অর্ধ রাত্রি ঘুমাতেন, অতঃপর রাতের এক তৃতিয়াংশ এবাদতে দন্ডায়মা্ন থাকতেন এবং শেষের এক ষষ্ঠাংশে ঘুমাতেন। আল্লাহ তায়ালার কাছে হযরত দাউদ আ. এর রোযাই অধিক প্রিয়। তিনি একদিন অন্তর অন্তর রোযা রাখতেন। (ইবনে কাসির) [তফসির মাআরেফুল কুরআন- (সংক্ষিপ্ত- পৃষ্ঠা নং-1106)]

[ পরিশেষে বলব উপরের আলোচনায় প্রত্যেক হৃদয় গভীরে সমকালীন ইস্যু নিয়ে তৈরী হওয়া সমস্যা এসংক্রান্ত প্রশ্নের সঠিক সমাধান উঠে এসেছে বলে  মনে করছি মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সহিহ সমযদার করুন আমিন]  

 

 

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ