
কন্যা দিবস গেল! দেখলাম ফেসবুকে গর্বিত বাবা-মায়ের পোস্ট । কন্যারা সব শুভকামনা শুভেচ্ছায় গড়াগড়ি খেল। এত গড়া গড়ির মধ্যেই গবেষকরা বলছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে এবং সেটা পরিবারে ও পরিবারের বাইরে। তারমানে নারী ও শিশু ঘরেও নিরাপদ নয়। এ বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক ধর্ষণ ও বাল্যবিবাহের রমরমা ঘটনা ঘটেছে। উঠতি বয়সী ছেলেরা অতিমাত্রায় উচ্ছশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। মধ্যবয়সী বুড়োরাও বাদ যাচ্ছে না অঘটনে। আর এ কারণেই বাবা-মাও অনিশ্চিয়তার মধ্যে।মেয়েদের ক্ষতির আশংকায় বাল্যবিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। এতেই বাল্যবিয়ের হার বেড়ে যাচ্ছে।
আদতে আমরা কন্যাদের কতটুকু সমান অধিকার দেই বা সেভাবে মানুষ করি। পুত্র সন্তান ও কন্যা সন্তানকে কি একই চোখে দেখি বা একই ভাবে মানুষ করি ? ছেলেদের অতি আদর, অধিকার দিলে তারা যেমন লাগামহীন হয় তেমনি মেয়েদের কোনঠাসা করে রাখলে তারা হীনমন্যতায় ভোগে।
কোন দিবস বা আলোচনার কি দরকার আছে? আসুন ছেলে-মেয়ে নয়, কন্যাকেও সন্তান হিসেবে সমান অধিকারে বড় করি।
সন্তান জীবনের বিরাট বড় একটি অধ্যায়। আমরা তাদের আসলে কিভাবে বড় করছি? সমাজে যে সব ঘটনা ঘটছে তার জন্য কিন্তু বাবা-মাও অনেকাংশে দায়ী।
Women and child rights এ সন্তান লালন-পালন এর নিয়ম তিন ধরনের-
১. গনতান্ত্রিক
২. শাসনতান্ত্রিক
৩. স্বাধীনচেতা।
আমাদের এ তিনটির কোনটাই এককভাবে এপ্লাই করা যাবে না। একেবারে গনতান্ত্রিক না হওয়া, অতিরিক্ত শাসনও না করা, আবার ছেড়েও না দেয়া।আদর,শাসন,ছাড় সব মিলিয়ে বড় করলে তবেই সুসন্তান হিসেবে গড়ে ওঠবে।
কিছু নিয়ম কানুন আছে যেগুলো প্যারেন্টিং কোর্সের মধ্যে পড়ে-
১. জন্মের পাঁচ ছয় মাস পর বাচ্চারা একটু একটু করে বুঝতে শেখে। আমরা তখন মুখে খাওয়ানো শুরু করি। অনেক সময় খেতে চায় না তখন মোবাইল ফোন হাতে দিয়ে দেই। কার্টুন দেখিয়ে খাওয়াতে অভস্থ্য করি। এটা কখনোই করা উচিত নয়। আমাদের অবশ্যই সুন্দর সুন্দর গল্প শুনিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে।
২. বাচ্চারা বুকের উপর শুয়ে ঘুমাতে পছন্দ করে আর এতে বাবা-মায়ের সাথে এটাচমেন্ট বাড়ে। বুকের উপর নিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিলে আরামও বোধ করে।
৩. কপালে চুমু দেয়া, হাতের তালুতে চুমু দেয়া, কপালে হাত রাখা, আঙ্গুলের ভেতর আঙ্গুল ঢুকানো, পায়ের পাতা মায়ের গালে ছোয়ানো, গালে গাল লাগানো এসবেও এটাচমেন্ট বাড়ে এবং তারা মানসিক শান্তি পায়। আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। বাবা-মায়ের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ে।
৪. দুই গালে হাত দেয়া, নাকে নাক ঘষা। মাথার পেছনে হাত বুলিয়ে আদর করে দেয়া। এতে বাচ্চারা মার্সি ফিল করে এবং বাবা মায়ের মিস্ করার ব্যাপারটা বুঝতে পারে।
৫. হাঁটতে শেখার পর তাদের সাথে নিয়ে আঙ্গুল ধরে, হাত ধরে ধরে হাঁটতে হবে। তাতে তারা বুজবে বাবা-মা তাদের কেয়ার করে।
৬. বছর দুয়েক হলে ঘুমানোর সময় ছড়া, ছোটদের কবিতা, মজার মজার গল্প।এছাড়াও ধর্মীয় বিষয় যেমন- সুরা পড়ে শোনাতে হবে। এতে করে বাচ্চাদের মধ্যে নৈতিকতা বোধ তৈরি হবে। ভবিষ্যতে তারা কোন অন্যায় কাজ করতে দ্বিধা করবে। টুকিটাকি ছোটদের বইও কিনে দিতে হবে।
৭. সালাম বিনিময় করতে হবে। পজিটিভ দিকগুলোতে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে।এতে তারা গর্বিত হবে এবং ভালো কাজে আগ্রহ তৈরি হবে।
৮. মোটামুটি বুঝতে শেখার সময় এলে ন্যায় অন্যায় বোঝাতে হবে। ভাই-বোন একসাথে একইরকম আচরনে বড় করতে হবে। তাহলে সমঅধিকার বিষয়টি নিশ্চিত হবে।
৯. চোখের ভাষা, আবেগ, রাগের ভাষা সন্তানদের বোঝাতে হবে। তারা যেন বুঝতে পারে আপনি কখন তার কাছে কি আশা করছেন। এবং তাদেরটাও বুঝতে হবে।
১০. সর্বোপরি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। তখন যে কোন বিষয় সহজে তারা শেয়ার করবে। মাঝে মাঝেই বেড়াতে যেতে হবে। বিশেষকরে পারিবারিক আয়োজনগুলোতে তাদের অবশ্যই সাথে নিয়ে যেতে হবে।
১১. সবসময় ইতিবাচক দিকগুলো বাচ্চাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। নেতিবাচক দিকগুলো কখোনোই তুলে ধরা বা সেরকম কোন আলোচনাও করা যাবে না।
সুসন্তান যেমন একটি পরিবারের শান্তি আনয়ন করে । তেমনি সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষাসহ অনৈতিক কর্মকান্ড থেকেও বিরত থাকে।
২৮টি মন্তব্য
রেজওয়ানা কবির
খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সমসাময়িক বিষয় তুলে ধরেছো। শিশুদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাবা মায়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ন।পরবর্তীতে শিশুদের বেড়ে ওঠা নিয়ে আরও বিস্তারিত আমি তুলে ধরব।খুবই ভালো লাগল আপু। ফিচারের ছবিটি তোমার লেখার মতই সুন্দর হয়েছে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা।
ভালো থেক॥ শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
আপনার অনুভূতিতে শিক্ষনীয় অনেক কিছু শিখলাম। দারুন লিখেছেন আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
রেহানা বীথি
খুব সুন্দর পোস্ট আপু। সন্তানকে মমতায় বড় করে তুললে নেগেটিভ চিন্তা থেকে দূরে থাকবে তারা। প্রতিটি পরিবার হয়ে উঠুক সন্তানের আনন্দ আশ্রম।
ভালো থাকুন আপু সবসময়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
পরিবার হয়ে উঠুক আনন্দ আশ্রম সুন্দর বলেছেন।
শুভ কামনা রইলো আপুনি।
ভালো থাকবেন।
খাদিজাতুল কুবরা
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিস্তারিত লেখার জন্য।
আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি। সন্তানের সামনে নিজেদেরকে ও ইতিবাচক জীবন যাপন করতে হবে।
ধর্মীয় অনুশাসন চর্চা করতে হবে। সন্তানকে ছেলে মেয়ে নয় মানুষ হিসেবে লালন পালন করতে হবে।
পরিবার থেকে নৈতিকতার ভিত তৈরি করে দিতে হবে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধর্মীয় অনুশাসন খুবই জরুরী।
শুভ কামনা রইলো আপুনি।
ভালো থাকবেন।
তৌহিদ
বিশ্লেষণধর্মী এবং শিক্ষণীয় পোষ্ট। আমাদের সবারই প্যারেন্টিং এর বিষয়টির ধারণা থাকা উচিত। তবেই আমাদের সন্তান যোগ্য হয়ে উঠবে। পরিবার, দেশ, সমাজ, জাতির উপকারে আসবে।
যদি সমান অধিকার দিয়ে ছেলে কিংবা মেয়ে উভয়েকেই যখন লালনপালন করা হয় তখনই কেবল একজন যোগ্য মানুষ এবং নাগরিক পাওয়া সম্ভব।
শুভকামনা রইলো আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনিও মূলমূল্যবান কথা বলেছেন ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো। ভালো থাকবেন।
সুপায়ন বড়ুয়া
সুন্দর একটা বিষয়বস্তু নিয়ে লিখলেন আপু।
শিশু পালনের নিয়ম গুলো যথাযত ভাবে তুলে ধরেছেন
যা ভাল লাগলো।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভালো লাগলো জেনে আনন্দিত হলাম। শুভ কামনা রইলো। ভালো থাকবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অফুরন্ত কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ আপু। আপনার প্রতিটি কথার সাথে সহমত পোষণ করছি। বিষয়গুলো দারুন ভাবে উপস্থাপন করেছেন। জন্মের পর থেকেই এমনভাবে সন্তানদের মানুষ করলে আশা করি সন্তান বিপথে যাবার আগে কয়েক বার ভাববে, সহজে নিজেকে খারাপ সঙ্গদোষে পতিত করবে না। শিক্ষনীয় পোষ্ট এর জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।কোন দিবসে আমি বিশ্বাসী নই। এগুলো এখন শোডাউন। বছরের প্রতিটি দিন, সময় সবার ভালো যাক, যার যার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করুক সেই কামনাই করছি তাহলেই এসব দিবসের আদিখ্যেতা বন্ধ হবে। শুভ কামনা রইলো
রোকসানা খন্দকার রুকু
বাবা মায়ের প্রতি নির্ভরশীল হলে সন্তান সহজে বিপথে যেতে পারে না। শুভ কামনা দিদি। ভালো থাকবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
আমরা সব চাই করতে চাইনা। এটা আমাদের রোগ। আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি ডিজিটালের উপর।
আপনার বিশ্লেষনধর্মী লেখা খুবই ঘরে পরিবারে অতিব গুরুত্বপুর্ন। কিন্তু আমি আমার ঘরনী মানিনা। এটা ঘোড়া রোগ।
আপনার লিখা খুব ভাল হয়েছে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
সুরাইয়া পারভীন
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানবেন আপু।
উপরোক্ত কথাগুলোতে সহমত প্রকাশ করছি। যদি এভাবে সন্তান মানুষ করা যায় তবে তা পরিবার সমাজ তথা দেশের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।
আমার কাছে কোনো দিবসেরই কোনো মূল্য নেই
আবার সব দিনই বিশেষ দিন
রোকসানা খন্দকার রুকু
সব দিনই বিশেষ দিন ঠিকই বলেছেন। শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
ফয়জুল মহী
খুব খুব আকর্ষণীয় লেখা । পড়ে ভালো লাগলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
এটা তো পারিবারিক।
বৈষম্য তো স্কুলগুলোতে। বাংলাদেশে চার ভাবে প্রাথমিক শুরু হয়। চার ধরণের মানসিকতার সমন্বয় ঘটে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
স্কুলে তে বৈষম্য আছেই।সেটার জন্যও চেষ্টা করে যেতে হবে।
শুভ কামনা রইলো। ভালো থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
বাড়ির বাইরের অবস্থা এটি মারাত্মক যে সমস্ত চেষ্টা দিয়েও শিশুদের রক্ষা করা কঠিন।
ভাল কিছু বিষয় তুলে ধরার অবশ্যই ধন্যবাদ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
চেষ্টা করে যেতে হবে। শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
হালিম নজরুল
আমাদের এ তিনটির কোনটাই এককভাবে এপ্লাই করা যাবে না। একেবারে গনতান্ত্রিক না হওয়া, অতিরিক্ত শাসনও না করা, আবার ছেড়েও না দেয়া।আদর,শাসন,ছাড় সব মিলিয়ে বড় করলে তবেই সুসন্তান হিসেবে গড়ে ওঠবে।
————— চমৎকার লিখেছেন আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অতিরিক্ত কোনটাই ভালো না। শুভ কামনা ভাইয়া। ভালো থাকবেন।
কামাল উদ্দিন
শিক্ষণীয় পোষ্ট, আমাদের সবারই উচিৎ সন্তানদের উপর এসব প্রয়োগ করা………ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।