ভালো আছি, ভালো থেক দেশ

রোকসানা খন্দকার রুকু ৩০ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার, ০৬:১৭:৫৮অপরাহ্ন চিঠি ২০ মন্তব্য

বল্টু ভাই,

কেমুন আছেন? সাতদিনের রিমান্ডে আপনার পেছন দিয়ে কয়টা আন্ডা গেল জানতে পারলে ভীষন সুখ পাইতাম। যেমুন- এই সকালে লাল চায়ে ফ্যাসকা কমদামী টোস্ট ভিজায়া খাইতে সুখ পাইতেছি, তেমুন।

কত্তো বড় কইলজা আপনের, মুখও ঢাকলেন না। নাকি আপনে দেখতে সুন্দর তাই! আপনে নাকি এর আগেও কি, কি করছিলেন। আপনার সাহস আছে কি কন? ডিম গেলে যাক!

খবর তো শুনছেন, একদিকে আপনারে ধরে নিয়ে ডিম লাগাইতেছে। অন্যদিকে ভালোমত পদ্মা সেতুর বল্টুতে সুপার গ্লু, সিমেন্ট লাগাইতেছে। এরপর আবার বেশ যত্ন নিয়ে পদ্মা সেতুর সকল নাট বল্টু চেক করা হইতেছে। যাতে আর কেউ খুলবার না পারে। এই কাজটা আপনার জন্যই হইতেছে বলা যায়। না হইলে তো আমাদের স্বপ্নের নাট বল্টু সব হাওয়া হইয়া যাইতো। আপনাকে ধন্যবাদ।

ভাবতে পারেন বল্টু ভাই, এই যে দ্যাশে এতো বড় বড় বাজেট হয়। তারপর সে কাজটা শুরুর পর তদারকির বড় অভাব দেখা দেয়। কন্সট্রাকশন কোম্পানি শেষ সময় এসে বিল নিয়া টানাটানি করে, গাফিলতি করে কাম বাকি থুইয়া পালায়।

বাংলাদেশের কতো সেতু, রাস্তা,বিল্ডিং এমুন পইরা আছে। কওয়ার কেউ নাই। কইবো কে, মুখ ফসকাইলেই শক্তিশালী সুপার গ্লু মুখে লাগায় দিয়া পাছায় গরম ডিম দিবো। এই ভয়ে সব চুপ!

চুপ থাকেনা, কেউ না কেউ জান কোরবান দিয়া হলেও প্রতিবাদ করে। আর তাই তো আমরা ভাষা পাই, স্বাধীনতা পাই, অধিকার পাই। আরও এগুলা ধরায় দেয়ার জন্য আপনার মতো সাহসী লোক দরকার। ভুল যারা ধরায় দেয় তারা কিন্তু ভালো হয় না। তবে একসময় আপনাদের উপর কৃতজ্ঞ হইতে হয় কারন ডিম গেলেও, মাইর হইলেও অন্তত আমাদর স্বপ্ন ঠিকঠাক থাকুক!

জানি মাইরের পর আপনার কোমর পইরা যাবে। তারপরও বাইর হয়া দেখবেন কোথায় কোথায় অসংগতি আছে। রেল লাইনের অর্ধেক বল্টুই থাকে না। কে বা কারা নিয়া যায। সিকিউরিটি পরে পরে ঘুমায়।

ঘটনা তো দেখছেন, পদ্মা সেতুর পাশের বেড়া জনগন কাইট্টা ফাঁক করছে। সেদিক দিয়া যাওয়া আসাও করতেছে। এসব কঠোরভাবে দেখার লোক নাই। জানেনই তো, সমাজটা ভোগীদের, তাইতো কাউকে না কাউকে ত্যাগী হইতে হয়। আপনি মন খারাপ কইরেন না।

 

মন ভালো করতে আসেন আপনারে আমার গল্প শোনাই-

সাত সকালে ফ্যাসকা টোস্ট বিস্কুট লাল চায়ে ডুবায় খায়া  কামে যাই। বউ আবার শখ করছে পোয়াতি হবে, তাই সকালে উঠতে পারে না। আমিও ডাকি না, হাতি ঘোড়া তো আর রান্না করবে না।

রাইস কুকারে ভাত বসায় দিয়া তার কপালে আদর দিয়া গেলাম। অতি বৃষ্টিতে রাস্তার পিচ উঠে গেছে। শহরে ঢুকতে  বাসের ঝকর ঝকর তার উপর জ্যাম। এদিকে আবার দেরিতে গেলে বেতন কাটা। তাই সকাল সকাল বাইর হই।সারাদিন তিনকাপ চায়ে তিনটা পাউরুটি ডুবায়া খাইছি।

ও সাথে বউ ফোন দিয়া কইছিল- অর্কিডের বাবা, অর্কিড পেটে লাফ দিচে। আর কি ক্ষুধা বা খাওয়া লাগে কন? বউ শৌখিন, তার বড়ই শখ বাচ্চার নাম 'অর্কিড' রাখবে।

কাল রাইতেই বউ কইছিল - মিষ্টি খাবার মন চাইছে।

তাই একটু তারাতারি ফিরতেছিলাম। বাসে উঠলে সিটে মাথার পেছনে হাত দিয়া ঘুমানো অভ্যাস আমার। ঘুম ভাঙ্গলে দেখি পেছন থাইকা কে যেন হাতের আঙ্গুল শক্ত কইরা ধইরা আছে। বছর খানেকের বাচ্চা আমার আঙ্গুল মুট পাকায় ধইরা নিশ্চিন্তে ঘুমাইতেছে। তার মা আবার ছবিও তুলতেছে। আমি হাসলাম, তারও মাথায় আমার সমান ঋনের বোঝা। এমনিতেই দীর্ঘশ্বাস পরলো। আমরা কি পারি এদের সঠিক  সুরক্ষা দিতে?

বউকে রিকসায় নিয়া গেলাম মালাই পাটিসাপটা খাইতে। অর্ধেক খায়া কয়, রুচি নাই।

কইলাম- অনেক দাম নিছে খাও। আর মিষ্টি খাইলে বাচ্চার মেধা হয়। দুধে আলতা রঙ হয়!

পাশে দুজন নান, গ্রিল, মুরগি পোড়া খাচ্ছিল। তারা খ্যাক খ্যাক করে হাসল। গরীবের আবার মেধা, রঙ আছে নাকি!

দুজন হাত ধরে হাঁটলাম, তারপর বাড়ি। সারাদিন না খায়া এবার পেট চো চো। হাঁড়ি উল্টায় দেখি, সেই সকালের ভাত আছে। কিন্তু ক্যামন নরম হয়া গেছে। ক্ষুধায় জীবন যায়, যায়। তাই ভাতে পানি ঢাইল্লা দিলাম। শুধু পিয়াজের দাম এবার কম। বাজারের বাকি জিনিসের দাম তো নাগালের বাইরে। দিনে দিনে সব সাধ্যের বাইরে চইল্লা যাইতেছে। মাছ, মাংস ছিল না তাই রান্ধেও নাই।কি আর করা পিঁয়াজ, কাঁচামরিচ, সরিষার তেল দিয়া দিলাম ভাত মাখা। হাত ছপছপে হয়ে ভাত চকচক করতে লাগলো। প্রেমিকার ঠোঁটে কড়া দুটো চুমু পাবার পর যেমন হয় তেমনি একটা কালার। পেট ভরে খায়া নিলাম।

বউরে কইলাম- দুই নলা খাও? সে পান্তা দেইখা বমি করে। বউরে ভালো ডাক্তার দেখানো দরকার কিন্তু টাকা নাই।

শুনছেন তো, ২৫ হাজার টাকা মাসে কামাইলেই এখন কর দিতে হইবে। এই সামান্য আয়ের টাকার মাসে বাসা ভাড়াই দেই ৮ হাজার। বাড়িতে বাবা- মা আছে, ছোট বইনটাও আছে। অথচ যাদের কর দেয়ার কথা তারা না দিয়া টাকা পাঠাইতেছে বিদেশে। ক্যামনে কি হইবে কন? নাহ্ ওভার টাইম লাগাইতে হবে। তবুও যদি দেশ আগায়।

মনটা কেমন খারাপ হয়া গেল। মাথার নিচে হাত দিয়া শুইয়া আছি। অসময়ে ফোন বাজে। বিরক্ত হয়ে ধরতে গেলাম, রিসিভ না হয়ে, কেটে গেল। জরুরি হইতে পারে তাই কল ব্যাক করলাম। অপর পাশ থেকে কলার টিউন বাজে- 'আপনি যাকে ফোন দিয়েছেন তিনি একজন বিরাট ইম্পর্টেন্ট লোক'।

দুইবারের বেলায় এবার ফোন রিসিভ হইল - হ্যালো, আসসালামুআলাইকুৃম।

- ওয়ালাইকুম সালাম। আপনি কে?

- আপনি ফোন দিছেন, আপনি কন কে?

- ভাই, মিসড কল আসছিল!.

- দুর মিয়া কি কন, আমি মিসড কল দেই না।

- আচ্ছা ঠিক আছে ভাই দেন না। তা বলেন আপনি কে?

- ক্যান টোন বাজিতেছিল শোনেন নাই। ( আপনি যাকে কল দিয়েছেন তিনি একজন বিরাট ইম্পর্টেন্ট লোক,,,)

পরিচিত কেউ মজা করলো, কলার টিউন লাগায়া। বউ এর হাসি আর থামে না। দুপুরে নাকি তারও একটা ফোন আসছিল। প্রেম করতে চাইছে। বউ বলছে- করবো ভাই। পেটের বাচ্চাটা হউক তারপর!

বল্টু ভাই দ্যাখেন এতোকিছুর পরও আমরা ক্যামনে হাসি। আপনেও ভাই ডিম ঢুকায় দিলে কাঁদবেন না, হাসবেন। কারন কারও কারও জন্য ফ্রী শুধু হাসি।

আমার পান্তা খাইলে রাতে ঘুম ভালো হয়, তাই চোখ বুঝে আসতেছে। আপনিও ঘুৃমানের চেষ্টা করেন। শুভরাত্রি।

 

ইতি, বাংলাদেশ ❤️❤️❤️❤️

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ