ভালোবাসি তোমায় (৩৭তম খন্ড)

ইঞ্জা ২৫ নভেম্বর ২০১৬, শুক্রবার, ০৮:৪৭:৫৫অপরাহ্ন গল্প ২৬ মন্তব্য

 

images-10

 

 

তিন দিন পর

অবণী আর অভির মা বসে আছে নিউরোলজিস্টের সামনে, ডাক্তার বলতে লাগলেন, আমি ডক্টর হ্যারি রিচার্ডসনের সাথে কথা বলেছি এবং উনি অভি সাহেবের সব রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে যা বললেন তা হলো অভি সাহেবের অপারেশনটা বেশ কঠিন হলেও উনি আশা করছেন উনি নিজে করলে বেশি ভালো হতো আর উনার সাক্সেস রেট নব্বই পারসেন্ট আর এই ক্ষেত্রে আমার সাজেশন যদি নেন উনাকে আমেরিকা নিয়ে যেতে হবে ডক্টর হ্যারির কাছে, বলে চুপ করলেন।
আর বাকি দশ পারসেন্ট, অবণী প্রশ্ন করলো।
দেখুন ডক্টর হ্যারি কিন্তু একজন পারফেকশনিস্ট আর অভি সাহেবকে ঠিক করতে হলে আর বাঁচাতে হলে উনার অপারেশন অবশ্যই করতে হবে।
বুঝলাম না, উনাকে বাচাঁতে হলে মানে?
উনার মাথায় রক্ত খরণ হচ্ছে এতে উনার ব্রেইন স্ট্রোকও হতে পারে।
কি বলেন, তাহলে উপায়, অভির মা উদ্দীগ্ন হয়ে জিজ্ঞেদ করলেন।
উপায় একটাই, উনাকে দ্রুত আমেরিকায় পাঠাতে হবে।
কিন্তু উনি তো এখনো অনেক অসুস্থ, অবণী জিজ্ঞেস করলো।
না এই মুহুর্তে নয়, উনার পেইন গুলো ঠিক হোক, একটু উনি সুস্থ হয়ে নিন তারপর আর উনার সুস্থ হতে কমসে কম দুই মাস লাগবে, এরপর পাঠাতে পারবেন।
কিন্তু এতোদিনে ব্লিডিং হবেনা?
হবে কিন্তু এই অবস্থায় উনি ছয় মাস পর্যন্ত ঠিক থাকবেন।
ঠিক আছে, আপনি ডিক্টর হ্যারির ঠিকানা, কন্টাক্স গুলো আমাকে লিখে দিন যেন আমরা উনি একটু সুস্থ হয়ে উঠলে কন্টাক করে উনাকে নিয়ে যেতে পারি।
আমি আগেই লিখে রেখেছি, পকেট থেকে একটা কার্ড ধরিয়ে দিলেন যেটাতে সব লেখা আছে।
ধন্যবাদ ডক্টর।

অবণী আর অভির মা বেড়িয়ে এলেন ডাক্তারের চেম্বার থেকে আর কাছের এক সোফায় এসে বসলেন।
আন্টি অভি স্যারকে কিন্তু সব কথা বলা যাবেনা, অবণী বললো।
হাঁ ঠিক বলেছো কিন্তু কতটুকু বলা যায়, অভির মা স্বগতোক্তি করলেন।
শুধু অপারেশন করলেই ঠিক হয়ে যাবে এই বলা হবে, এর বেশি নয়।
ঠিক বলেছো, আচ্ছা শুনো তুমি কাল সন্ধ্যা থেকে এইখানে আছো, এখন তুমি বাসায় যাও, রেস্ট করো গিয়ে।
যাবো কিন্তু একটু পর, চলুন অভি স্যারের কাছে যায়।
চলো বলেই অভির হাটতে লাগলেন।
কিছু সময় পর অভির কেবিনে এসে প্রবেশ করলো অভির মা আর অবণী, প্রিয়ন্তী ভাইকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু অভি খেতে চাইছেনা দেখে অভির মা বললেন, কি ব্যাপার তুমি খেতে চাইছোনা কেন, তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও বাবা।
মা আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা এইসব, অভি অধৈর্য হয়ে বললো।
অবণী কাছে এসে বললো, প্রিয়ন্তী আমাকে দাও আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
আমি খাবনা খাবনা, অভি বাচ্চাদের মতো মাথা নেড়ে বললো।
অভি স্যার, আমি খাইয়ে দিলেও খাবেন না?
অভি তাকালো অবণীর দিকে, তারপর বললো দাও।
অবণী চামুচ কেটে কেটে ভেজিটেবেল স্যুপ তুলে খাওয়াতে শুরু করলে অভি খেতে লাগলো চুপচাপ আর ওইদিকে প্রিয়ন্তী হাত দিয়ে মাকে ইশারা করলো আর তা দেখে অভির মা হাসতে লাগলেন মুচকি হাসিতে।

অভি স্যার আমি আসি এখন, অবণী বিদায় চাইলো।
অভি অবণীর হাত একটি ধরে বললো, এখন যেতেই হবে?
অভির মা এগিয়ে এসে বললেন, কাল রাত থেকেই মেয়েটা আছে ওর রেস্টের দরকার না, ও যাক আমরা তো আছি নাকি, যাও মা তুমি যাও।
অবণী বললো, আসি অভি স্যার, আন্টি প্রিয়ন্তী আমি আসি বলেই অবণী বেড়িয়ে এলো, লিফটের কাছাকাছি এসে দাঁড়ালে লিফট খুলে বেড়িয়ে এলেন মি. হক আর মোনালিসা আর সামনেই অবণীকে পেয়ে মোনালিসা জিজ্ঞেস করলো, ডু ইউ নো উইচ সাইড ইজ কেবিন নাম্বার এইট ও ও থ্রি?
আপনারা কি মি. অভিকে দেখতে এসেছেন, বাংলায় জিজ্ঞেস করলো অবণী, আসুন আমি নিয়ে যাচ্ছি বলেই অবণী উনাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আবার এলো অভির কেবিনে, হক সাহেব আর মোনালিসাকে দেখে অভির মা আর প্রিয়ন্তী শক্ত হয়ে গেল।
আন্টি উনারা এসেছেন অভি স্যারকে দেখতে, অবণী জানালো।
মোনালিসা দৌঁড়ে গিয়ে অভির মাকে জড়িয়ে ধরলো এরপর প্রিয়ন্তীকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো, আমি জানি আপনারা আমাদের উপর খুব রাগ করে আছেন কিন্তু অভি জানে শীপিং বিজনেসে যারা আছে তাদের এদিক ওদিক নড়ারও সময় নাই, কি করবো বলুন।
ভাবী কয়েকদিন খুব সমস্যার মাঝে ছিলাম তাই কয়েকদিন আসতে পারি নাই, কেমন আছেন, হক সাহেব জিজ্ঞেস করলেন।
জি ভাই আমরা ভালো, আপনারা বসুন।
মোনালিসা অভির পাশে গিয়ে অভির হাত নিজের হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছো এখন?
হুম, ভালো।
অভির মা আর প্রিয়ন্তী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো মোনালিসার দিকে।

অবণী এতক্ষণ অবাক হয়ে দেখছিলো নতুন মানুষদের কান্ড কারখানা, হক সাহেবের কথা শুনে হক সাহেবের দিকে ফিরে তাকালো।
হক সাহেব অভির মাকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাবী উনাকে তো চিনতে পারলাম না?
ও অবণী, অভির প্রাক্তন সেক্রেটারি আর বর্তমান অভির অবর্তমানে আমাদের কোম্পানির সিইও।
অবণী, মোনালিসা আর হক সাহেব অভির মার জবাব শুনে অবাক হলেন।
হক সাহেব নিজেকে ঠিক করে নিয়ে বললেন, ভাবী মেয়েটি কি পারবে আপনাদের কোম্পানিটা চালাতে, আপনি বললে তো আমি মোনালিসাকে বলতেই অভির মা থামিয়ে দিয়ে বললেন, অবণী অনেক টেলেন্টেড মেয়ে আর ও ওর যৌগ্যতা প্রমান করেছে বারবার।
তা এতদিন ছিলো কোথায় মেয়েটা, তির্যক চোখে তাকালেন হক সাহেব।
আমাদের কানাডা অফিসের দায়িত্ব নিয়ে কানাডায় ছিলো, অভি এক্সিডেন্ট করেছে শুনেই চলে এসেছে।
অবণী চুপ করে রইল আর ভাবতে লাগলো এগুলো কি হচ্ছে?
হুম বুঝতে পারছি, তা অভি আর কতোদিন থাকবে হাসপাতালে?
জানিনা হয়ত আরো মাস খানেক আর ও আমেরিকাতে যাবে অপারেশনের জন্য।
অপারেশন কেন?
অভির পা দুইটাই কাজ করছেনা।
কেন কি হয়েছে, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো মোনালিসা?
মাথায় রক্ত খরণ হচ্ছে।
ওহ আই সি, লিসা চলো, ভাবী আমরা আসি, অন্য একদিন আসবো, অভি ভালো থেকো তুমি বলেই মোনালিসাকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন গট গট করে।

অবণী বাসায় গিয়ে রাত দশটার আগে আগে ফিরে এলো হাসপাতালে, অবণীর সাথে অবণীর বাবা মা দুজনেই এলেন, কিছুক্ষণ থেকে অভির মা আর প্রিয়ন্তীকে নিয়ে চলে গেলেন, উনাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে উনারা নিজ বাসায় চলে যাবেন, এখন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে অবণী রাতে অভির কাছেই থাকে বাকিরা সকালে আসে।
সবাই চলে গেলে অবণী অভিকে জিজ্ঞেস করলো, খাওয়া দাওয়া হয়েছে?
অভি চোখ লুকিয়ে বললো, হাঁ খেয়েছি।
কি দিয়েছে আজকে?
পানি।
পানি মানে?
আরে সেই পানির মতো ভেজিটেবেল স্যুপ আর দুধ, আমার খেতে ইচ্ছে করেনা, বাচ্চাদের মত নিচু স্বরে বললো অভি।
অবণী হেসে দিলো, এরপর নিজ ব্যাগের কাছে গিয়ে ব্যাগের ভিতর থেকে ছোট এক এয়ার টাইট খাবারের টিফিন বক্স বের করলো এরপর একটা চামুচ নিয়ে কেবিনের দরজা লক করে দিয়ে অভির পাশে এসে বসলো।
অভির চোখ চক চক করে উঠলো, জিজ্ঞেস করলো, কি এনেছো?
অবণী বক্সটা খুলে দেখালো।
আবার, হতাস হয়ে বললো অভি।
আবার নয়, এ আমার রান্না করা চিকেন স্যুপ, খেয়ে দেখুন একদম পানি না।
আবার চোখ চক চক করে উঠলো অভির, তাই দাও দেখি, আহা কতদিন কিছু চাবাইনা।
অবণী চামুচ কেটে তুলে খাওয়াতে লাগলো আর অভিও আগ্রহ ভরে খেতে লাগলো, খাওয়া শেষ করে অভি বললো, আহ কি যে মজা, তুমি প্রতিদিন এইভাবে নিয়ে এসো আমি খাবো।
না প্রতিদিন নয় এতে আপনার স্টমাক খারাপ হতে পারে কিন্তু মাঝে মাঝে আনবো।
আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে এক কাজ করো, আগামীবার বড় সাইজের পিজ্জা নিয়ে এসো বলেই অবণীর দিকে হাসি হাসি মুখে তাকালো।
পিজ্জা না উনার জন্য একটা হাতি এনে দেবো যেন কামড়িয়ে কামড়িয়ে খেতে পারেন।
অভি থমকে গেল এরপর বোকার মতো হেসে দিলো।

আপনি শুয়ে পড়ুন, আমি বাতি নিভিয়ে দিচ্ছি, অবণী বললো।
শুনো, অভি ডাক দিলো।
এইদিকে আসো একটু।
অবণী এগিয়ে অভির বেডের পাশে এসে দাঁড়ালো।
অভি অবণীর হাতটা টেনে নিয়ে বললো, বসো পাশে।
অবণী বেডের উপর অভির পাশে বসলো, জি বলুন।
কিছু জিজ্ঞাসা আছে আমার, ঠিক ঠিক জবাব দেবে?
হুম বলুন।
তুমি আমাকে ভালোবাসো?
অবণী থমকে গেল, কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মাথা নেড়ে হাঁ সূচক জবাব দিলো।
আর এই জন্যই তুমি খবর পেয়ে চলে এসেছো?
আবার মাথা নেড়ে জবাব দিলো, চোখ দিয়ে টপ করে কয়েক ফোঁটা চোখের জল পড়লো অভির চোখে আর তা অভি লক্ষ্য করে বললো, তুমি কাঁদছ কেন?
অবণী তাড়াতাড়ি চোখ মুছলো আরর বললো, কই নাতো?
তুমি জানো আমি তোমাকে ভালোবাসি?
অবণী হা করে অভির দিকে তাকালো।
কেন তোমাকে ফাল্গুনী কিছু বলেনি?
নাতো। (আসলে ফাল্গুনী সময় পাইনি বলার কারণ অবণী যখনই বাসাত ফিরে তখন এতো টায়ার্ড থাকে যাওয়ার পর পরই ঘুমিয়ে পড়ে আর এতে ফাল্গুনীর বলায় হয়না।)
হা এই কথাটি সত্যি আমি তোমাকে ভালোবাসি যদিও আমার বুঝতে অনেক সময় লেগেছে এরপরেও এখন বলছি ভালোবাসি তোমায়।
অবণী কাঁদতে কাঁদতে অভির হাতটি নিয়ে চুমু খেলো।
কিছু বললে না?
আমিও ভালোবাসি আপনাকে।
আপনাকে নয় তোমাকে।
অবণী হেসে দিলো, এক হাতে চোখে মুছে বললো, ভালোবাসি তোমায়।

_____________ চলবে
ছবিঃ Google.

প্রিয় পাঠকগণ,
ইচ্ছে ছিল গল্পটি এই কন্ডেই শেষ করবো কিন্তু গল্পের প্রয়োজনেই আরো কয়েকটি খন্ড যোগ করতে হচ্ছে, আশা করি আপনারা পাশে থেকে আমাকে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ অবিরাম সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ।।

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ