ভালোবাসি তোমায় (২৩তম খন্ড)

ইঞ্জা ২৮ আগস্ট ২০১৬, রবিবার, ০৭:১১:৫৫অপরাহ্ন গল্প ২৭ মন্তব্য

images (3)

 

আসলে আমার পছন্দের তেমন কোনো জায়গা নেই কিন্তু কখনো নির্জনে থাকতে চাইলে আমি আশুলিয়া চলে যায়, অভি মোনালিসাকে বললো।
ঠিক আছে তাহলে সেখানেই যাওয়া যাক, মোনালিসা রাজী হয়ে গেল।
আনকেল আপনিও চলেন?
না না অভি, তোমরা যাও আমি বাসায় চলে যায়, একটু রেষ্টও করতে পারবো।
তাহলে আনকেল ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি আপনাকে বাসায় পোঁছে দিয়ে আসবে।
হক সাহেবকে গাড়ীতে তুলে দিয়ে অভি আর মোনালিসা অভির গাড়ী নিয়ে বের হলো আশুলিয়ার উদ্দেশ্যে, মোনালিসা জিজ্ঞেস করলো, গাড়ীতে মিউজিক কি শুনেন আপনি?
রবীন্দ্র সঙ্গিত, নজরুলগীতি, গজল।
প্লেয়ারটা চালু করুন শুনি।
অভি প্লেয়ারটা চালু করে দিলো।
অভি আপনার চয়েজের তারিফ না করে পারছিনা, দারুণ দারুণ গান গুলিই আছে।
আপনার পছন্দ হয়েছে তাহলে, হেসে অভি জিজ্ঞেস করলো।
পছন্দ না হয়ে পারে, মিষ্টি হেসে জবাব দিলো মোনালিসা, হঠাৎ করে প্রশ্ন করলো, অভি আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে?
অভি হেসে জবাব দিলো, সারাদিন কাজকর্মে থাকি গার্লফ্রেন্ড কই পাবো।
কাউকে পছন্দ?
অভি চুপ করে গেলো।

রবিন তুমি কই, সেল ফোন থেকে কল করলো ছোট চাচা, গাড়ী ড্রাইভিং করছে ছোট চাচী, দাদী আর অবণী পিছনের সিটে বসেছে।
হোটেলে আছো যখন তাহলে থাক, আমরা একটু শপিংয়ে যাচ্ছি, ওকে ওয়েট আমি তোমার আন্টিদের জিজ্ঞেস করি, এই শুনো রবিন রাতে আমাদের তাদের বাসায় খেতে বলছে, কি বলো, উনার ওয়াইফের মতামত চাইলেন।
চলো, এই সুযোগে ওর বাবা মার সাথেও দেখা করে আসা যাবে, কি বলেন মা?
হাঁ চল ঘুরে আসি, সাথে অবণীরও বেড়ানো হবে, অবণীর দাদী জবাব দিলেন।
ওকে রবিন আমরা আসবো ডিনারে, ওকে টেইক কেয়ার, বাই বলে ছোট চাচা কল কেটে দিলেন।
শপিংমলে যখন পোঁছাল তখন বেলা ১১টা কিন্তু মনে হচ্ছে যেনো ভোর হয়েছে, সবাই ঘুরে ঘুরে প্রথমে উইন্ডো শপিং করতে লাগলো, এক দোকানের সামনে দেখলো বিভিন্ন ধরণের কোটের সম্ভার, সবাই মিলে ভিতরে প্রবেশ করে ওভারকোট আর গরম কাপড় দেখতে লাগলো তারপর ছোট চাচা আর চাচী মিলে পছন্দ করে ২টা ওভারকোট, মাফলার, সোয়েটার সহ আরো কিছু দরকারি কাপড় কিনলেন অবণীর জন্য, সব শেষে অবণীকে ছোট চাচী জিজ্ঞেস করলেন অবণীকে, মা তুই আর কিছু কিনবি?
না ছোট মা আর লাগবেনা।
তাহলে চল লাঞ্চ করেনিই, তুমি কি বলো, সামির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
তুমি খাওয়ালে আমি কি না করবো, হাসতে হাসতে জবাব দিলেন ছোট চাচা।
না তুমি খাওয়াবে, এই চল মা বলেই অবণীকে নিয়ে বেড়িয়ে এলেন আর পিছু পিছু অবণীর দাদীকে ধরে চাচা বেড়িয়ে এলেন, চাচী অবণীকে নিয়ে মলের ভিতরেই এক ইতালিয়ান রেস্তোরায় প্রবেশ করে একটা টেবিল দখল করে বসলেন, তা কি খাবি বল, এইখানকার পাস্তা অনেক ভালো, চাচী জিজ্ঞেস করলেন।
ছোট বাবারা আসুক।
উনারা আসবেন, তোর দাদীর হাটতে তো সময় লাগে জানিস।
তাও উনারা আসুক আমরা বসি।

বেশ সুন্দর জায়গাটা কিন্তু এর চাইতে সুন্দর হ্রদ আমাদের চট্টগ্রামে আছে, যেমন ভাটিয়ারী, ফয়েজ লেইক, রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই, বান্দরবন আরো অনেক বড় বড় হ্রদ আছে আর এ ছাড়াও সিবিচ, কক্সবাজার সহ অনেক কিছু আছে দেখার, বলেই অভির দিকে তাকালো মোনালিসা আর খেয়াল করলো অভি কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে। মোনালিসা জিজ্ঞেস করলো, অভি আমি কি বলেছি শুনেছেন?
চমকে উঠে অভি বলল, আঁ কিছু বলছো আমাকে?
কি মিস্টার, কই হারালেন?
আমি আবার কই হারাবো, তা সন্ধ্যা হয়ে গেছে চলো যাওয়া যাক।
চলুন, সায় দিয়ে এগুলো মোনালিসা।
গাড়ীতে উঠে অভি জিজ্ঞেস করলো, বলো আর কোথায় যেতে চাও?
আর কই যাবো, বাসায় যাবো।
অভি গাড়ী স্টার্ট দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে স্পীড বাড়ালো, আবদুল্লাহপুর পার হয়ে অভি বললো, চলো আজ বাইরে খায়।
আন্টিরা অপেক্ষা করবেনা?
আমি জানিয়ে দিচ্ছি বলেই অভি স্পীড ডায়াল করলো অভির মার নাম্বারে, মার নাম্বারটাকে ১ চাপ দিলেই ডায়াল হয়ে যায়, ড্যাসবোর্ডে রাখা ফোন রিং হলো তিন চারবার, স্পীকারে মার গলা ভেসে এলো, অভি কই তোরা?
মা আমরা ফিরছিলাম আশুলিয়া থেকে, আচ্ছা শুনো আমরা যদি বাইরে খায় অসুবিধা হবে নাতো?
বাইরে খাবি, ঠিক আছে খা কিন্তু তাড়াতাড়ি চলে আসিস।
ঠিক আছে মা, তাহলে রাখি?
ঠিক আছে, আল্লাহ্‌ হাফেজ।

অভি গাড়ীটা রেডিসনের ভিতরে নিয়ে গিয়ে পার্কিংয়ে রেখে দুজনে ভিতরে এগিয়ে গেলো রেস্টুরেন্টে, রেস্টুরেন্টের ভিতরে প্রবেশ করে একটা টেবিলে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো খাবারের অর্ডার দেওয়ার জন্য, ওয়েটার আসলে অভি মোনালিসাকে জিজ্ঞেস করলো, কি খাবে?
আপনিই অর্ডার দিন।
অভি লবস্টার, রেড স্নাইপার উইত অয়েস্টার সস আর ফ্রাইড রাইস অর্ডার দিলো, কোন ড্রিংক্স নিতে চাও, মোনালিসাকে জিজ্ঞেস করলো।
ওয়াইট ওয়াইন।
ওকে সাথে ওয়াইট ওয়াইন দাও, ওয়েটারকে বললো অভি।
এই প্রথম এলাম ঢাকার রেডিসনে, চট্টগ্রামেরটাতে প্রায় যাওয়া হয়, মোনালিসা জানালো, তা আপনাকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম কিন্তু জবাব পাইনি?
কি প্রশ্ন, মনে নেই, অভি বলল।
ওই কাউকে পছন্দ করেন কিনা?
অভি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, পছন্দের ছিলো, ভালোও বাসতাম কিন্তু ও অন্য কাউকে বিয়ে করে আর আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বের মধ্যেই থেকে যায়।
আর?
আর কি?
আর কাউকে লাইক করেন?
লাইক তো অনেককেই করি কিন্তু জীবন সঙ্গী হিসাবে কাউকে চিন্তা করিনি।
ওয়েটার খাওয়া নিয়ে এসে সার্ভ করে দিয়ে গেল সাথে ওয়াইন ঢেলে দিলো, অভি গ্লাসটা তুলে নিয়ে টোষ্ট করলো মোনালিসাকে তারপর নিজ গ্লাসে চুমুক দিলো।

আনকেল আসেন আসেন, সালামালেকুম, রবিন নিজেই দরজা খুলে অবণীদের স্বাগত জানালো, সবাইকে ভিতরে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে ভিতরে চলে গেল, একটু পর ওর বাবা মাকে নিয়ে ভিতর থেকে বেড়িয়ে এলো, আরেহ ভাই, ভাবী কেমন আছেন, খালাম্মা আপনার শরীর কেমন, রবিনের বাবা এসেই জিজ্ঞেস করলেন আর ছোট চাচী উঠে গিয়ে রবিনের মাকে জড়িয়ে গলাগলি করলেন।
জি ভাই আমরা ভালো, আপনারা কেমন আছেন, অনেকদিন পরে দেখা, অবণীর ছোট চাচা জবাব দিলো।
রবিনের মা এগিয়ে এসে অবণীকে জড়িয়ে ধরলেন আর বললেন, বাহ অনেক সুন্দর হয়েছো তুমি, তোমাকে আমরা দেখেছি তখন অনেক ছোট ছিলে, কেমন আছো তুমি?
জি ভালো, ছোট করে জবাব দিলো অবণী।
তোমার বাবা কেমন আছেন মামনি, রবিনের আব্বা জিজ্ঞেস করলেন, তা প্রায় সাত আট বছর দেখা হয়না।
জি উনি ভালো আছেন।
বসো মা বসো, রবিনের মা অবণীকে পাশে বসালেন আর ছোট চাচী আরেক পাশে বসলেন।
অবণী খেয়াল করলো রবিন মিটি মিটি হাসছে।

রবিন তুই অবণীকে নিয়ে ঘর দেখিয়ে নিয়ে আয়, রবিনের মা বললো, যাও মা রবিনের সাথে যাও এইখানে বুড়া বুড়ীদের মাঝে নিশ্চয় হাফিয়ে উঠছো।
না না আন্টি আমি ঠিক আছি।
না মা যাও ঘুরে আসো।
অবণী বাধ্য হয়ে উঠে গেল রবিনের পিছে পিছে। রবিন ঘুরে ঘুরে সব দেখাতে লাগলো, বাসাটা আসলেই অনেক বড়, এই বিদেশ বিভূঁয়ে এতো বড় বাসা খুব কমই থাকে, সব শেষে অবণীকে নিজ রুমে নিয়ে এলো রবিন, প্রতিটি রুম গোছালো আর রবিনের রুম এক কাটি বাড়া, রুমে একটা রিডিং টেবিল আছে আর বড় একটা সোফা আছে।
কেমন লাগলো, রবিন জিজ্ঞেস করলো।
জি ভালো।
আসলে আমার মা সব গুছিয়ে রাখা পছন্দ করেন আর আমিও মা ভক্ত বেশী তাই মার মতো আমিও গোছালো ঘর, জিনিষ পত্র ভালোবাসি, আরে দাঁড়িয়ে কেন বসুন প্লিজ বসুন।
অবণী সোফাতে গিয়ে বসলো।
তা আপনি এইখানে কি ধরণের চাকরী করতে চান, আই মিন কোনো চয়েজ আছে কি?
জি আমি আইটি কম্পলিট করেছি আর এমবিএও করেছি, মোটামুটি ভালো একটা জব পেলে ভালো হয়।
ওকে, আপনার সার্টিফিকেট গুলো কি সব সাথে নিয়ে এসেছেন দেশ থেকে?
জি নিয়ে এসেছি।
গুড তাহলে আপনার আর চিন্তা করার দরকার নেই, আমি খবর নিয়ে আপনাকে জানাবো।
জি ধন্যবাদ।

অভি রুমে এসে ড্রেস চেইঞ্জ করে ল্যাপটপ খুলে বসলো মেইল চেক করার জন্য, মেইল চেক করে নিজ ফেইসবুক লগিন করলো, অনেকদিন ফেইসবুক খোলা হয়না, খুলে স্টাটাস গুলো চেক করতে গিয়ে দেখলো অনেক এড রিকোয়েস্ট পেন্ডিং আছে, প্রত্যেক রিকোয়েস্ট চেক করা শেষে একটা একাউন্টের ছবি দেখে অবাক হলো, অবণীর সুন্দর হাসি খুশী একটা ছবি আর একাউন্টের নাম অবণী নয় "খেয়ালি জীবন", অভি প্রফাইলটা খুলে দেখতে শুরু করলো, অবণীর প্রতিটি ছবি যেন তার সাথে কথা বলছে, অভি এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল অবণীর ছবির দিকে হঠাৎ দরজায় নক শুনে অভি দ্রুত ল্যাপটপ লগ আউট করে জিজ্ঞেস করলো, কে?
জি আমি মোনালিসা, ভিতরে আসবো?
জি আসুন, প্লিজ।
মোনালিসার পিছে পিছে প্রিয়ন্তীও প্রবেশ করলো অভির রুমে।
কি খবর তোমাদের, দুজনই এক সাথে?
ভাইয়া, মোনালিসা আপু নাকি তোমার রুমে আগে আসেননি তাই নিয়ে এলাম, প্রিয়ন্তী জানালো।
বিরক্ত করলাম নাতো, মোনালিসা জিজ্ঞেস করলো।
না না বিরক্তের কি আছে বসো, তুইও বোস।
তা কি করছিলেন?
এই কিছু অফিসিয়াল মেইল চেক করছিলাম।
আপনার রুমটা বেশ সুন্দর।
তাই?
হুম, আসলে আপনাদের বাড়ীটাই অনেক সুন্দর।
অভি হেসে জিজ্ঞেস করলো, পছন্দ হয়েছে?
মোনালিসা একটা মিষ্টি হাসি দিলো।

_____________ চলবে।

ছবিঃ Google.

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ

Thumbnails managed by ThumbPress