ভার্চুয়াল বনাম রিয়েলিটি

শায়লা শারমিন ২৭ অক্টোবর ২০১৯, রবিবার, ০৮:৫৫:০২অপরাহ্ন রম্য ৩২ মন্তব্য

অবস্থা আজকাল এমন দাঁড়িয়েছে আমি পৃথিবীতে বাস করি না ফেসবুকে বাস করি বুঝতে পারি না। দেখা যায় আমি পৃথিবীতে থাকতে চাইলেও পৃথিবীবাসী আমাকে অথবা আমাদেরকে ফেসবুকবাসী বানিয়েই ছাড়বে। এমনিতে আমি ফেসবুক নামক খোলা বইটিতে খুব বেশি নিয়মিত নই; সংসার, কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততা, সর্বোপরি সদিচ্ছার(!?) অভাবেই আমার ফেসবুকে খুব বেশি যাওয়া হয় না। মাঝে মাঝে ছবি আপলোড দেই, ছবিগুলো যাতে একেবারে হারিয়ে না যায় সে উদ্দেশ্যে। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি ফেসবুকে মানুষের যে চেহারাটা দেখা যায়, বেশিরভাগটাই মেকি। অন্তত আমার নিজের বেলায় এটা শতভাগ সত্যি। তাতে আসলে কোন সমস্যা নেই, সমস্যা তখনি হয় যখন অনেকেই আমার ফেসবুক সত্তার সাথে বাস্তব সত্তাকে গুলিয়ে ফেলেন। এক গুরুজন, যিনি আমাকে সামনাসামনি প্রথমবার দেখেছেন, তিনি হঠাৎ বলে বসলেন, এই তুমি তো অনেক শুকনা, ছবিতে কিন্ত মোটা দেখায়। চোখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে তাকাতেই তিনি বললেন তিনি আমার অমুক বন্ধুর তমুক মিউচুয়াল ফ্রেন্ড।

একবার এক জুনিয়র ছোটবোন বলল, আপু, ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হইছে নাকি? আমি তো অবাক! ঝগড়া যদি হয়েও থাকে এর তো জানার কথা নয়! বললাম নাতো, কেন? সে বলে, না, তোমার প্রোফাইল পিক এ তো সবসময় ভাইয়া থাকে এই প্রথম দেখলাম ভাইয়া নাই, শুধু তোমার মেয়ে। আমি প্রোফাইল পিকচারের সাথে ঝগড়ার সমীকরণ সমাধানে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম যে বেচারির প্রশ্নের উত্তর আর দেওয়া হলো না।

বাচ্চার জ্বর, কাশি। এক আত্মীয় অভিযোগ করলেন, ফেসবুকে তো দেও নাই, জানি ও না। তাইলে একটু খোঁজখবর নিতাম।

এসব ঘটনা দেখে ও শুনে মনে হতেই পারে ফেসবুক হচ্ছে আমাদের জগতের পাশাপাশি একটা প্যারালাল ইউনিভার্স।

কয়েকদিন আগে সিলেট ঘুরতে গিয়েছিলাম। দর্শনীয় সব জায়গায়ই ঘুরেছি, প্রচুর ছবিও তুলেছি, কিন্ত অভ্যাসগত আলসেমির কারণে একটাও পোস্ট করা হয়নি। আমার কলিগ ছবি দেখতে চাইলেন, দেখাতে পারলাম না, ছবিগুলো সব বরের মোবাইলে তোলা হয়েছে। জিজ্ঞেস করলেন, আপলোড দিবা কবে? বললাম, দিব, দিব। কয়েকদিন পরে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এই সত্যি তোমরা গেছিলা, নাকি চাপা মারতেছ? আমি তো হাঁ। বললাম, চাপা কেন মারব? উনি বললেন, ফেসবুকে তো একটাও দেও নাই, বুঝব কেমনে আসলেই গেসিলা!!

আমরা এতটাই ভার্চুয়াল হয়ে গেছি, আমার মাঝে মাঝে ভয় হয়, রিয়েলিটি থেকে না হারিয়ে যাই!!

গল্প শেষ করছি আমার প্রিন্সিপাল স্যারের বক্তব্য দিয়ে। প্রেক্ষাপট একটু বলে নেই, ছুটি নিয়ে দার্জিলিং ঘুরতে গিয়েছিলাম পরিবার সমেত। ৮ দিনের ছুটির প্রথম কয়েকদিন মহা উৎসাহে দিনের ছবি দিনে পোস্ট করলেও পরে ক্লান্তি, আলসেমি আর ঘোরাঘুরির আধিক্যের কারণে পরবর্তী ছবিগুলো পোস্ট করতে দেরি হয়ে যায়। ছুটি শেষে যেদিন কলেজে গেলাম, সেদিনই মিরিক ভ্রমণের ছবি দিয়েছি। তো প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে যোগদানপত্র আর দার্জিলিং এর চা নিয়ে হাজির হতেই স্যার বললেন, একি, তুমি না ইন্ডিয়া? স্যার,ছিলাম, আজ জয়েন করতে এসেছি। আমার উত্তর। স্যার বললেন, ফ্লাইট থেকে নেমেই কলেজে আসছ? স্যারের কথা ঠিক ধরতে পারছিলাম না, বললাম না স্যার, গতকাল এসেছি। স্যার বললেন, অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে, আমি তো একটু আগেই তোমার পাহাড়ের মধ্যে ছবি দেখলাম। এতক্ষণে ঘটনা বুঝতে পেরে আমিও দাঁত কেলিয়ে বললাম, স্যার ক্যাপশন দেখেন নাই, ওটা লেট পোস্ট ছিল।

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ